বুধবার, এপ্রিল ২৪, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

তারুণ্যের সংবাদ মাধ্যম

অথচ সেনাবাহিনীকে ‘ছেলেরা আমার’ বলতেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট দেশের রাষ্ট্রপতিকে রক্ষায় ব্যর্থতার জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডকে জাতীয় ইতিহাসে সেনাবাহিনীর জন্য চিরস্থায়ী কলঙ্ক হিসেবে উল্লেখ করেছেন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচারক কাজী গোলাম রসুল। অথচ এ সেনাবাহিনীকে ‘ছেলেরা আমার’ বলতেন বঙ্গবন্ধু, নিজের ছেলেও ছিলো সেনাবাহিনীতে।

সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশীদ অবশ্য বলেছেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাছে জাতির জনক সবসময় সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তিত্ব। কিছু অপশক্তি তাকে হত্যায় উচ্ছৃঙ্খল কয়েকজন সেনা সদস্যকে ব্যবহার করেছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে সেনাবাহিনীর জড়িত থাকার বিষয়টি আংশিক সত্য, নেপথ্যে কাজ করেছে রাজনৈতিক অপশক্তি।

‘ছেলেরা আমার, তোমরা নতুন জীবনে যাচ্ছো। মনে রেখো, তোমরা একেকজন সামরিক কর্মচারি যাদের নিচেই থাকবে আমার সৈনিক বাহিনী। তাদের কাছেও অনেক শেখার আছে। তাদের সঙ্গে মিশতে হবে, তাদের জানতে হবে, দু:খের সময় দাঁড়াতে হবে, তাদের পাশে থাকতে হবে। মনে রেখো শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে। তুমি যখন শাসন করবা সোহাগ করতে শেখ। তাদের দুঃখের দিনে পাশে দাঁড়িও। তাদের ভালোবেসো। কারণ তোমার হুকুমে সে জীবন দিবে…..,’ এভাবেই নবীন অফিসারদের পরামর্শ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান।

সেসময় কুমিল্লায় অবস্থিত বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি (বিএমএ)-তে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রথম ব্যাচের ক্যাডেটদের ৭৫’র ১১ জানুয়ারি অফিসার হিসেবে সেনাবাহিনীতে যোগদানের অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন: বহুকাল সংগ্রাম করেছিলাম যে বাংলাদেশে মিলিটারি একাডেমি হোক। কিন্তু আমরা পারি নাই তখন। আজ লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। সেজন্যেই আজ বাংলাদেশের মাটিতে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি স্থাপিত হয়েছে।

ওইদিন তিনি আরো বলেছিলেন, সৎ পথে থেকো। আমি তোমাদের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কথা বলছি না, আমি তোমাদের জাতির পিতা হিসেবে আদেশ দিচ্ছি। কারণ জাতির পিতা একবারই হয়, দুবার হয় না। প্রধানমন্ত্রী অনেক হবে, অনেক আসবে। প্রেসিডেন্ট অনেক হবে, অনেক আসবে। সেই হিসেবে তোমাদের আমি ভালোবাসি তোমরা জান। তোমরা সৎ পথে থেকো। মাতৃভূমিকে ভালোবাসো। তোমাদের কাছে আমার শুভেচ্ছা রইল। আমার আদেশ তোমরা মনে রেখ। আমার স্নেহের আবেদন তোমরা মনে রেখ।

কিন্তু, ইতিহাস সাক্ষী স্নেহের আবেদন মনে রাখার আহ্বানের সাত মাসের মাথায় বঙ্গবন্ধু যখন আক্রান্ত হন তখন সেনাপ্রধানের কাছে সহায়তা চেয়েও তিনি পাননি। সেনাবাহিনী থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত নিরাপত্তারক্ষী এবং গোয়েন্দারা যেমন দেশের রাষ্ট্রপতিকে রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে তেমনি সেনাবাহিনী যে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতেও ব্যর্থ হয়েছে তা বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচারের রায়ে ফুটে উঠেছে।

রায়ে বিচারক কাজী গোলাম রসুল লিখেছেন: “প্রাসঙ্গিকভাবে ইহা উল্লেখ না করিয়া পারা যায় না যে, এই মামলায় প্রাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ইহা প্রতীয়মান হয় যে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ বিশেষ করিয়া যাহারা ঢাকায় অবস্থান করিতেছিলেন, তাহারা তাহাদের দায়িত্ব পালন করেন নাই, এমনকি পালনের কোনো পদক্ষেপও গ্রহণ করেন নাই, যথেষ্ট সময় পাওয়া সত্ত্বেও। ইহা অত্যন্ত দু:খের বিষয় যে, বঙ্গবন্ধুর টেলিফোন আদেশ পাওয়ার পরও তাহার নিরাপত্তার জন্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় নাই। সাক্ষ্য প্রমাণে ইহা পরিষ্কার যে, মাত্র দুইটি রেজিমেন্টের খুবই অল্প সংখ্যক জুনিয়র সেনা অফিসার/সদস্য এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কেন এই কতিপয় সেনা সদস্যকে নিয়ন্ত্রণ/নিরস্ত্র করার চেষ্টা করে নাই তাহা বোধগম্য নয়। ইহা আমাদের জাতীয় ইতিহাসে সেনাবাহিনীর জন্য একটি চিরস্থায়ী কলঙ্ক হিসাবে চিহ্নিত হইয়া থাকিবে।”

সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করেছে রাজনৈতিক শক্তি
তবে, সাবেক সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারুন-অর-রশীদ, বীর প্রতিক, চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেছেন, সেনাবাহিনী বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে বলে যে কথাটা বলা হয় সেটা আংশিক সত্য। জাতির পিতাকে হত্যা করেছে অপরাজনীতি। তার হত্যার পেছনে সেনাবাহিনীর চেয়ে রাজনীতি ছিলো বেশি। হত্যাকারীরা শুধু কিছু বিপথগামী সেনা সদস্যকে ব্যবহার করেছে মাত্র।

‘আর্মিই যদি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতো তাহলে সঙ্গে সঙ্গে দেশে সেনাশাসন কায়েম করতো,’ মন্তব্য করে তিনি বলেন: সেনাবাহিনীই যদি তাকে হত্যা করতো তাহলে হত্যাকাণ্ডের পরই ক্ষমতা দখল করতো। বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পরে ৭ নভেম্বর পর্যন্ততো সেনাবাহিনী ক্ষমতা নেয়নি। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পরও তাকে সরাতে ১৯টি ক্যু হয়েছে, ২০তম ক্যুতে তিনি মারা যান।

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচারে সাক্ষী হিসেবে সেসময়ের সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল (অব.) কে এম শফিউল্লাহ এবং অন্য সেনা কর্মকর্তারাও একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন। তারা বলেছেন, বিপথগামী একটি গ্রুপ ওই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।

সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কখনো কিছু বলা না হলেও ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে সেনা সদরের সংবাদ সম্মেলনে এ সম্পর্কে কিছুটা ইঙ্গিত দেওয়া হয়।

২০১১ সালের ডিসেম্বরে চাকুরিচ্যুত মেজর জিয়ার অভ্যুত্থান চেষ্টা ব্যর্থ করে দেওয়ার পর সেনাবাহিনীর ওই সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়: মুক্তিযুদ্ধের মধ্যেই জন্ম নিয়ে যুদ্ধে জয়লাভ করা ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর’ কাঁধে ভর করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে অতীতে বিভিন্ন অপশক্তি রাজনৈতিক সুবিধা লাভ করেছে কিংবা ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু সাংগঠনিকভাবে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ওইসব ঘটনার বদনামের দায়ভার বহন করছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পেশাগতভাবে দক্ষ ও সুশৃঙ্খল সেনা সদস্যদের বক্তব্য এই যে, ‘আমরা আর এ ধরনের দায়ভার আমাদের সংগঠনের কাঁধে নিতে চাই না।’

জনবান্ধব আধুনিক সেনাবাহিনী গড়তে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু
পঁচাত্তরের ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে অফিসার হিসেবে যোগ দেওয়া প্রথম ব্যাচের একজন ছিলেন পরবর্তীতে সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) মঈন ইউ আহমেদ। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বঙ্গবন্ধুর এক খুনি ল্যান্সারের বরখাস্ত মেজর মহিউদ্দিনকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরিয়ে আনতে তার নেপথ্য ভূমিকা ছিল বলে মনে করা হয়। পরে অন্য খুনিদের সঙ্গে মহিউদ্দিনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়।

তত্ত্বাবধায়ক আমলে একাধিক অনুষ্ঠানে জেনারেল মঈন জাতির জনক সম্পর্কে তার এবং প্রতিষ্ঠান হিসেবে সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ শ্রদ্ধার কথা জানিয়েছেন, আধুনিক সেনাবাহিনী গঠনে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের কথা তুলে ধরেছেন।

চ্যানেল আই অনলাইনকে জেনারেল হারুন-অর-রশীদ বলেন, যুদ্ধ পরবর্তী বিধ্বস্ত একটি দেশে তিনি আর কতোটাই বা করতে পারতেন! তারপরও যতোটুকু পেরেছেন চেষ্টা করেছেন। হয়তো তখন মিলিটারি একাডেমি থেকে মাত্র প্রথম ব্যাচটি বের হয়ে এসেছে। তবুও এরইমধ্যে তিনি চেষ্টা করেছেন সেনাবাহিনীকে আরো বেশি আধুনিক করে তুলতে। ওই সময়ে যতগুলো আধুনিক যন্ত্রপাতি পাওয়া যেতো যেমন এয়ারক্রাফট বা গান, সবগুলো কেনার চেষ্টা করেছেন বঙ্গবন্ধু।

বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির প্রথম ব্যাচের সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানেও একইরকম কথা বলেছিলেন বঙ্গবন্ধু। ওইদিনের অনুষ্ঠানে তিনি বলেন: আমি নিশ্চয় আনন্দিত যে তিন বছরের মধ্যে, কিছু কিছু বন্দোবস্ত আমি আমার সামরিক বাহিনীর জন্য করতে পেরেছি। সকলের জন্য করতে পেরেছি। অনেক দিন লাগে একটা একাডেমি গড়তে, একদিনে গড়ে উঠে না, অনেক প্রয়োজন। ইনশাল্লাহ হবে, ভালোভাবে হবে। এমন হবে যে দুনিয়ার মানুষ দেখতে আসবে আমার একাডেমিকে এ বিশ্বাস আমি রাখি।

বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে শেখ কামাল মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানীর এডিসির দায়িত্ব পালন করেছেন। দ্বিতীয় ছেলে শেখ জামালও সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট খুনিরা লেফটেন্যান্ট শেখ জামালকেও হত্যা করে।

উল্টোযাত্রা থেকে সঠিক পথ
স্মৃতিচারণ করে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারুন-অর-রশীদ বলেন, আমরা যখন বঙ্গবন্ধুকে পেয়েছি তখন অতোটা পরিণত হইনি। অনেক ছোট তখন, ছিলাম ছোট র‌্যাঙ্কে। তবুও যতটুকু জেনেছি, বুঝেছি তিনি সেনাবাহিনীকে সবসময় প্রতিরক্ষার প্রতীক হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছেন। আর সেজন্যই তিনি পুরো দেশকে ছোট ছোট অঞ্চলে ভাগ করে এরিয়া ট্রুপস করেছিলেন জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে।

‘একটি জাতির জন্ম দিলো যে মানুষটি তাকেই হত্যা করা হলো। আর বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা মানেতো শুধু একজন ব্যক্তিকে হত্যা করা নয়, একটি প্রতিষ্ঠানকে হত্যা করা। দেশকে পেছনেও নিয়ে যাওয়া,’ মন্তব্য করে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল হারুন বলেন, তার মৃত্যুর পর থেকে ৯৬ সাল পর্যন্ত যতগুলো সরকার এসেছে সবাই দেশকে পেছনে নিয়ে গেছে। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আমাদের যতো অর্জন সব কেবল নষ্টই হয়েছে। ছিয়ানব্বই পর্যন্ত কেবল উল্টোপথেই গেছি আমরা।

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

বাংলাদেশ-কাতারের মধ্যে ১০ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই

দ্বৈতকর পরিহারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে পাঁচটি চুক্তি এবং পাঁচটিবিস্তারিত পড়ুন

বেনজীরের বিরুদ্ধে দুদকে ব্যারিস্টার সুমনের অভিযোগ 

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদেরবিস্তারিত পড়ুন

ট্রেনে কাটা পড়েছে আনু মুহাম্মদের পায়ের সব আঙুল

রাজধানীর খিলগাঁওয়ে রেলগেটে ট্রেনে বাম পায়ের আঙুল কাটা পড়েছে তেল,বিস্তারিত পড়ুন

  • দেশের কৃষক বাঁচার জন্য যা প্রয়োজন সেটাই করবে সরকার: কৃষি মন্ত্রী
  • সারাদেশে ৩ দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
  • বজ্রসহ বৃষ্টির পূর্বাভাস, থাকতে পারে টানা ৩ দিন
  • লিটার প্রতি ১০ টাকা বাড়ল সয়াবিন তেলের দাম
  • খালেদা জিয়া ডাল-ভাত খাওয়াতেও ব্যর্থ হয়েছিলেন : প্রধানমন্ত্রী
  • টানা ৩ দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়, হিট অ্যালার্ট জা‌রি
  • গবেষণায় বাংলাদেশে বিক্রি হওয়া শিশুখাদ্য সেরেলাক নিয়ে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য
  • স্বর্ণের দাম সব রেকর্ড ভাঙল
  • আগামীতে সবার অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবো: প্রধানমন্ত্রী
  • শাওয়ালের চাঁদ দেখা যায়নি, ঈদ বৃহস্পতিবার
  • জাতীয় ঈদগাহে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তার কথা জানালো ডিএমপি কমিশনার
  • শ্রদ্ধার ফুলে ভরে উঠেছে স্মৃতিসৌধের বেদি