শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

তারুণ্যের সংবাদ মাধ্যম

আসুন, পিঠের চামড়া না তুলে পিঠ চাপড়ে দিতে শিখি

আচ্ছা, সত্যি করে বলুন তো, বাংলাদেশ যে সেমিফাইনাল খেলবে, এটা কি আগে থেকেই বিশ্বাস করেছিলেন? প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ মুহূর্তে অবিশ্বাস্য পরাজয় আর ভারতের বিপক্ষে ৮৪ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর, দলটার উপর কি বিশ্বাস রেখেছিলেন? টুর্নামেন্টের দুই ম্যাচে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সাদামাটা পারফরম্যান্সের পরও, শেষ চার খেলার স্বপ্ন দেখেছিলেন?

নিউজিল্যান্ড ম্যাচের আগেও, ৬৩ ওভার বল করে মাত্র তিন উইকেট নিয়েছে, এই নিয়ে ট্রল বা হতাশা উক্তিও বেশ শোনা গেছে।

কিন্তু এখন চারদিকের আবহ দেখে মনে হচ্ছে, একটা ম্যাচের রেজাল্টই সব ভুলিয়ে দিয়েছে। এখন হঠাৎ অনেকেই বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন, বাংলাদেশ শিরোপাও জিততে পারে। সেই বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, বাংলাদেশ সেমিফাইনালে ভারতের বিপক্ষে বিশ্রী লজ্জা নিয়ে হারতেও পারে।

কারণ, এটাই ক্রিকেট। জীবনের উত্থান পতনের মতো এখানেও রয়েছে উত্থান-পতন, সাফল্য-ব্যর্থতা। একটা ব্যর্থতাতেই তাই যেমন সব শেষ হয়ে গেল বলে বিলাপ করার কিছু নেই, ঠিক তেমনি সাফল্য ক্ষণেও ভুলে যাওয়া উচিৎ নয় অতীত-অভিজ্ঞতা, সক্ষমতা ও বাস্তবতা।

বিশ্বজোড়া স্পোর্টসকে ভাবা হয়, সম্প্রীতি, ঐক্য ও ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে। যেখানে ঘৃণার চাষাবাদ করা হয়, যেখানে সংঘাত-রেষারেষিতে বিপর্যস্ত হয় মানবতা ও মনুষত্ব্য; সেখানে খেলাধুলো ছড়িয়ে দেয়, শান্তি আর সহানুভূতির বাতাবরণ। কিন্তু দূর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, আমাদের দেশে ব্যাপারটা ঠিক উলটো। যে ঘৃণার বদলে সম্প্রীতির সম্প্রসারণ লক্ষ্যে বিশ্বজোড়া স্পোর্টসকে বেছে নেয়া হয়, সেই স্পোর্টসকেই আমরা বেছে নিই প্রতিশোধ, প্রতিবাদের উপলক্ষ্য হিসেবে।

আমাদের যত ঘৃণা, ক্ষোভ উগরে দেয়ার জন্য ক্রিকেট মাঠই যেন ভরসা। পাকিস্তান-ভারত হলে তো কথাই নেই, অন্য যে কোন দেশের ক্ষেত্রেও দেখা যায় যে, শোষণ-বঞ্চনার প্রতিবাদের মঞ্চ হিসেবে আমরা ক্রিকেট মাঠকেই বেছে নিই। হ্যাঁ কখনো-সখনো ব্যাপারটা যৌক্তিক বটে, তবে খেলাধুলোর মঞ্চে সারাক্ষণ ঘৃণা-বিদ্বেষের এমন বিস্তৃতি আসলে একদিক থেকে দুঃখজনকও।

ঘৃণা-রেষারেষি, বিদ্বেষের বদলে খেলার বিনোদন, আনন্দটাকেই কি আমাদের অগ্রাধিকার দেয়া উচিৎ নয়? প্রতিপক্ষের প্রতি সম্মান দেখানোর পাশাপাশি, খেলার মাঠের সম্প্রীতিটা কি আমাদের মাঠের বাইরেও লালন করা উচিৎ নয়? এই দ্বন্ধ-সংঘাতের দুনিয়ায় খেলাধুলো কিছুক্ষণের জন্য আমাদের ভুলিয়ে দেয়, পৃথিবীর যত অশান্তি, জ্বালা-যন্ত্রণা। সেই যন্ত্রণাকে খেলাধুলোর মাঠেও টেনে আনার কোন মানে হয়? বলুন?

আমরা কথা বলি, আমাদের দেশের ক্রিকেট কালচার বা সংস্কৃতি নিয়ে। ইংল্যান্ডের মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে আমরা লড়াই করেছি প্রায় ৯৮ ওভার পর্যন্ত। তারপরও আমাদের অতৃপ্তি থাকবে কেন? প্রতিপক্ষের প্রাপ্য সম্মানটা কি আমরা দিতে শিখব না?

নিউজিল্যান্ড ম্যাচের কথাই ধরুন। ম্যাককালাম-ডৌলরা কিন্তু উইলিয়ামসন কোথায় ভুল করলেন, সাউদিকে আগে আনলেন না পরে আনলেন সেসব নিয়ে সমালোচনায় মুখর হওয়ার বদলে বলেছেন, ‘নিউজিল্যান্ডের সব ঠিক ছিল। বোলিং দারুণ ছিল। ফিল্ডিং-ও ছিল চমৎকার। কিন্তু এই দু’জন(সাকিব-মাহমুদুল্লাহ) আসলে অবিশ্বাস্য ক্রিকেট খেলেছে।’

এটাই হচ্ছে ক্রিকেট কালচার। অন্যের অসাধারণত্ব অকপটে মেনে নেয়া। এটাই হচ্ছে স্পোর্টসম্যানশিপ। যেখানে নিজের দলের প্রতি থাকবে আস্থা ও বিশ্বাস, আর প্রতিপক্ষের প্রতিও থাকবে অসীম শ্রদ্ধা ও অপার মুগ্ধতা। এভাবেই ক্রিকেট-সংস্কৃতি বা স্পোর্টস কালচার লালন করতে হয়।

পরাজয়ের দিনে, এভাবেই নিজের ক্রিকেটারদের পিঠ চাপড়ে দেয়ার পাশাপাশি, অন্যের বীরত্বে অকৃপণ হাততালি দিতে হয়। আমাদেরও রপ্ত করতে হবে ঠিক এই সংস্কৃতিটাই।

আমরা ক্রিকেটারদের সমালোচনায় মুখর হই। আমাদের দেশে ক্রিকেটারদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা একদম সোজা। আমাদের দৌঁড় ওই ফেসবুক, পত্রিকা বা ব্লগ পর্যন্তই। অথচ আমরা কি-না মাশরাফির ক্যাপ্টেন্সির গলদ নিয়ে কথা বলি। এতদূর পর্যন্ত না-হয় মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বলে, এড়িয়ে যাওয়া যেত। কিন্তু আমরা এতই ক্রিকেট বুঝি যে, মাশরাফির ক্রিকেট সেন্স নিয়ে প্রশ্ন তুলতেও আমাদের বাঁধে না।

সেই মাশরাফি, যিনি তাঁর অসাধারণ ব্যক্তিত্ব বলে, তাঁর মহোত্তম দর্শন দিয়ে, বিশ্ব ইতিহাসের হাতে গোণা ক’জন ক্রীড়াবিদের একজনে পরিণত হয়েছেন। আমরা প্রশ্ন তুলি তাঁর সেন্স নিয়ে!

‘আমি অস্ট্রেলিয়ার অমঙ্গল কামনা করতে পারি না। যারা বেটার ক্রিকেট খেলবে তাঁরাই যেন জেতে।’ নিজের লাভ-ক্ষতি জানার পরও এমন মন্তব্য করার মতো কলিজা থাকে কয়জনের? বলতে পারেন?

একটা-দুইটা ব্যর্থতায় আমরা সেই মানুষটার সমালোচনায় মুখর হই। তিনি নির্ভুল নন, তাঁর ভুল থাকতেই পারে। তাই বলে তাঁর ঠিকগুলোকে, তাঁর অর্জনগুলোকে ভুলে যাবেন? যে সেন্স নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, সেই সেন্সই তো আরেক ম্যাচে দারুণ ক্যাপ্টেন্সি করেছিল। তাহলে?

ক্রিকেট সংস্কৃতির অন্যতম অনুষঙ্গ হচ্ছে, সাফল্যের মতো ব্যর্থতাও মেনে নেয়া। অপরাজেয় দলকেও হার মানতে হয়, ক্ষুরধার মস্তিষ্ক সম্পন্ন লোকও ভুল করেন। ক্রিকেট ইতিহাসে এমন উদাহারণও আছে ভূরি ভূরি। সেসবের জন্য আলোচনা, সমালোচনা করতে বাঁধা নেই; তবে অপমান, আক্রমণ করা ঠিক নয়।

আমি সবসময়ই বলি, আমাদের ক্রিকেটাররা সমালোচনার মোটেও যোগ্য নয়। সমালোচনা যদি করতেই হয়, তবে ম্যানেজমেন্টের করুন, আমাদের ক্রিকেটের অভিভাবকদের করুন। বোর্ড-ম্যানেজমেন্টের স্বল্প সহযোগিতা সত্ত্বেও ক্রিকেটাররা তাদের সর্বোচ্চটা বিলিয়ে দেন। ক্রিকেট-উন্মাদ এই জাতির প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা, দেশের প্রতি নিবেদন থেকেই হয়তো তাঁরা এমনটা করেন।

তামিম ইকবালের শর্ট বলে দূর্বলতা ছিল বলে, ঘন্টার পর ঘন্টা নেটে কাটিয়েছেন। ক্রমাগত বলের আঘাতে পাঁজরে কালশিটে দাগ পড়ে গেছে, তাও তিনি প্র্যাকটিস ছাড়েননি। এমন সব ক্রিকেটারের দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতেও আমরা পিছপা হই না। আমাদের কখনোই ভুলে যাওয়া উচিৎ নয়, এই ক্রিকেটাররাই আগেও জিতেছিলেন। আজ হারলেও, আগামীকাল হয়তো ঠিকই জিতবেন।

একটা বৈশ্বিক শিরোপা পেতে ইংল্যান্ডের কত যুগ লেগে গেছে! দক্ষিন আফ্রিকা নিউজিল্যান্ডের কত যাতনা সইতে হয়েছে! সে হিসেবে আমাদের ক্রিকেটের তো সবে শুরু। ট্রফির গন্ধও সবে নাকে লাগতে শুরু করেছে, আজ হোক বা কাল ওই সোনা রাঙা ট্রফিটাই ঠিক চুমু দেয়া হবেই!

বিদ্বেষ না-হয় মাঠের বাইরেই থাক। সৌহার্দ্য আর সম্প্রীতির খেলাধুলোর মাঝে ওসব জঞ্জাল টেনে না আনাই ভালো। ঘৃণা-বিদ্বেষের বদলে সম্প্রীতির জয়গানই হোক, খেলাধুলোর মঞ্চে।

আর চাকরির ক্ষেত্রে যেমন থাকে পদোন্নোতি-পদাবনতি, ব্যবসায় যেমন দেখা যায় লাভ-ক্ষতি, সংসারে যেমন সাংসারিক টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে আমাদের যেতে হয়, ঠিক তেমনি ক্রিকেটেও থাকে, উত্থান-পতন, ভালো-মন্দ, জয়-পরাজয়।

একটা সময় বছরের পর বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট না খেলে কাটাতে হয়েছে আমাদের। টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পরও, একটানা জয়হীন কেটেছে প্রায় পাঁচ বছর। সমালোচকদের তীক্ষ্ণ বিদ্রুপ ছিল নিত্যসঙ্গী। এই দলটা সেসব সময় পার করে এসেছে। আজ বিশ্বমঞ্চ গাইছে আমাদের ক্রিকেটের জয়গান।

জয়গানটা গাইতে হবে আমাদেরও। চরম লজ্জার দিনেও যেন আমাদের বিশ্বাস অটুট থাকে, আমাদের ক্রিকেটাররা ফিরে আসবেন। যে দেশের কবি বলে গেছেন ‘বল বীর, চির উন্নত মম শির’ সে দেশের ক্রিকেটাররা নিশ্চয় মাথা অবনত করতে পারেন না। কঠিন লজ্জার দিনেও নিশ্চয় ঠিক সংকল্প করেন ফিরে আসার, দেখিয়ে দেয়ার, সমুন্নত শিরে মাঠ ছাড়ার।

পরাজয়ে সমালোচনার খাপখোলা তলোয়ার বের না করে, পিঠ চাপড়ে দেয়ার অভ্যাসও নিশ্চয় আমাদের তৈরী হবে। সুসময়ে যেমন উল্লাস হচ্ছে, ঠিক তেমনি কঠিন দুঃসময়েও উপহাস না করে, দলের পাশে দাঁড়ানো সংস্কৃতিও নিশ্চয় একদিন তৈরী হবে।

তেমনটা হলে, আমাদের ক্রিকেট যেমন প্রশংসা কুড়োচ্ছে, দর্শকরা যেমন প্রশংসা কুড়োয়, ঠিক তেমনি একদিন আমাদের ক্রিকেট সংস্কৃতিও হয়তো বিশ্বমঞ্চের আলোচনা দখল করে নেবে।

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

খেলার জগতের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পেশাদারি কাঠামো

লাল-সবুজের তরুণ প্রজন্মের এ সময়ের প্রিয় শ্লোগান, ‘বাংলাদেশের জান, সাকিববিস্তারিত পড়ুন

আগস্টের শোককে শক্তি হিসেবে নিতে পারি আমরা তরুণেরা

“যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তিবিস্তারিত পড়ুন

বাবা যখন ধর্ষক

যেখানে আপন বাবাই ধর্ষণ করে, সেখানে সৎ বাবার ধর্ষণ আমাদেরবিস্তারিত পড়ুন

  • দুই বড় দেশ যখন প্রতিবেশী ও প্রতিযোগী
  • মৌসুমি নৌকা শোরুম
  • ভারতবিদ্বেষ কেন বেড়ে চলেছে?
  • জনগণের কাছে শেখ হাসিনাই জয়ী
  • ‘গুলিস্তান’ নেই, তবু আছে ৬৪ বছর ধরে
  • পদ্মা ব্রিজ দিয়ে কী হবে?
  • যুদ্ধাহতের ভাষ্য: ৭০– “এখন অমুক্তিযোদ্ধারাই শনাক্ত করছে মুক্তিযোদ্ধাদের”
  • আসুন, বড় হই
  • বাড়িওয়ালা মওদুদ ও বাড়িছাড়া মওদুদ
  • ব্রিটেনের নতুন সরকার নিয়ে যে শঙ্কা!
  • আওয়ামী লীগ ছাড়া কি আসলে কোনো বিকল্প আছে?