বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

তারুণ্যের সংবাদ মাধ্যম

‘কৃষি ব্যাংক শিল্পপতিদের লুটপাটের খাত’

আর্থিক ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও লুটপাটের চিত্র হরহামেশাই দেখা যায়। এটা যেন আমাদের দেশের অর্থনৈতিক সেক্টরের একটা ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে তাদেরই নামধারী এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কর্মচারী সরকারের উন্নয়ন ও সুনাম ম্লান করে দিয়ে লেজুড়ভিত্তির মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন প্রশ্নবিদ্ধ করে সুকৌশলে স্বার্থ হাসিল করে নেয়। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যাংকই (বিশেষ করে সরকারি ব্যাংক) তার প্রমাণ। আর এসব লুটপাটের সাথে যারা জড়িত তারা সব সময়ই থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং নৈতিকতা এখন গল্পলোকের কল্পকথার মতোই।

প্রসঙ্গটি বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের বর্তমান অবস্থা নিয়ে। মূলত কৃষক এবং কৃষির উন্নয়নের জন্যই কৃষি ব্যাংকের প্রতিষ্ঠা। তাই ব্যাংকটি থেকে ঋণপ্রাপ্তির অধিকার কৃষকদেরই বেশি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে কৃষি খাতের সম্প্রসারণ এবং কৃষকদের ভাগ্যোন্নয়নের কাজ করে আসছিল বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। কিন্তু ২০০৮ সালের পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি কৃষি এবং কৃষক উন্নয়নের দিকে না গিয়ে আমদানি-রফতানি ও শিল্প বাণিজ্যিক ঋণের দিকে ঝুঁকে পড়েছে বেশি। কৃষকদের বঞ্চিত করে ঋণ দেয়া হয় শিল্পপতি ও ধনী ব্যবসায়ীদের। এসব ঋণের বড় অংশই খেলাপি হয়ে পড়েছে। ব্যাংকটিও দাঁড়িয়েছে দেউলিয়াত্বের পথে। বেসিক ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংকের মতো কৃষি ব্যাংকের অবস্থা খুবই নাজুক হয়ে পড়েছে। ব্যাংকটির দু-একজন কর্মকর্তা বলেন, কৃষক পাবেন কোথায়, ধনী ও শিল্পপতিরাই কৃষি ব্যাংক লুটেপুটে খাচ্ছেন। সরকারের দুর্বলতার সুযোগে কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার যোগসাজশে এসব শিল্পপতিকে কৃষি ব্যাংক থেকে ঋণের সুব্যবস্থা করে দেয়া হয়। কিন্তু এসব ঋণ বিশেষ করে খেলাপি হয়ে পড়ে।
কৃষি ব্যাংকের এ পতনের কারণে সরকারে নীতিনির্ধারকেরা ভীষণ উদ্বিগ্ন। অনেকে ব্যাংকটি বন্ধ করে দেয়ার কথাও ভাবছেন। ব্যাংকটি টিকিয়ে রাখার জন্য গত সাত বছরে দুই হাজার কোটি টাকার বেশি মূলধন জোগান দিয়েছে সরকার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গত বছর শেষে কৃষি ব্যাংকের বিতরণকৃত ১৭ হাজার কোটি টাকার মধ্যে চার হাজার ৬৭৮ কোটি টাকাই খেলাপি হয়ে পড়েছে। ওই খেলাপি ঋণের অর্ধেকই রয়েছে শীর্ষ ২০ খেলাপির কাছে। তারা কোনোক্রমেই কৃষক নন, ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত।

কৃষি ব্যাংকের ঋণখেলাপিদের মধ্যে যারা রয়েছেন, তাদের মধ্যে শীর্ষে কেয়ার ইয়ার্ন প্রসেসিং লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী। ২০১০ সালে কাওরান বাজার শাখা থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে ৩২১.৬৬ টাকা (কোটি টাকার অংকে) ঋণ দেয় ব্যাংকটি। বড় অঙ্কের এ ঋণ বিতরণের পর ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে কোনো অর্থ আদায় হয়নি। কৃষি ব্যাংক থেকে ১৩৩.৩৮ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে কেয়ার ইয়ার্ন মিলস লিমিটেড। বড় অঙ্কের এ ঋণ কাওরান বাজার শাখা থেকে দেয়া হয়। এই ঋণও আদায় করতে পারেনি কৃষি ব্যাংক। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। একইভাবে অনিকা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারীর নামে ১০১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ঋণ অনুমোদন দেয় চট্টগ্রামের ষোলশহর কৃষি ব্যাংক শাখা। এই ঋণও ব্যাংকটি আদায় করতে পারেনি, যা মন্দ ঋণ হিসেবে ব্যাংকের ওপর চাপে। এক গাড়ি ব্যবসায়ী কৃষি ব্যাংক বনানী শাখা থেকে ১১৭.৩৬ কোটি টাকা লোপাট করে দিয়েছেন।

ফিয়াজ এন্টারপ্রাইজের নামে ৫১ কোটি ৬০ লাখ, অটো ডিফাইনের নামে ৩২ কোটি ৯২ লাখ, ফিয়াজ ট্রেডিংয়ের নামে ৩২ কোটি ৮৪ লাখ পুরোটাই খেলাপি ঋণে পরিণত হয়। রহমান ট্রেডিংয়ের নিকট পাওনা ৬২ কোটি ৭২ লাখ ও মনোব্যাগ লিমিটেডের কাছে ৫২ কোটি ৩২ লাখ টাকা মন্দ ঋণে পরিণত হয়। ব্যাংকটির শীর্ষ খেলাপির মধ্যে রয়েছে- আব্বাস ট্রেডিংয়ের ৩১ কোটি, মনোব্যাগ ফিড মিলসের নিকট ৩৩ কোটি, এনএ করপোরেশন ২৬ কোটি টাকা। শীর্ষ ২০ ঋণ খেলাপির কাছে ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ এক হাজার ৩১৮ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে।

কৃষক ও কৃষি বাদ দিয়ে বড় বড় ব্যবসায়ীকে দেয়া এসব ঋণই ব্যাংককে বিপর্যয়ে ফেলেছে। ২০১২ সাল পর্যন্ত ব্যাংকটির লোকসান ২০০ কোটি টাকা বছরে থাকলেও পরে তা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যায়। ২০১২-১৩ অর্থবছরে লোকসান হয় ৩৮৮ কোটি ৪৩ লাখ, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৪৯৫ কোটি, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৪৩৪ কোটি এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরে লোকসান দেয় ৬০৫ কোটি টাকা। অব্যাহত লোকসানের কারণে ব্যাংকটি সাত হাজার ৪৮৫ কোটি টাকা মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। তা পূরণের জন্য কৃষি ব্যাংক অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করেছে।

ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে কৃষি খাতের প্রসার আর কৃষকদের উন্নয়নে কাজ করে এলেও সাবেক চেয়ারম্যান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ এবং সাবেক এমডি মো: মোক্তার হোসেনের হাত ধরে ২০০৮ সাল থেকে পুরোপুরি বাণিজ্যিক ব্যাংকিং শুরু করে কৃষি ব্যাংক। কৃষির বদলে বড় বড় ঋণ দেয় ব্যবসায়ীদের, যা খেলাপি হয় পড়ে। ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীরা নিজেদের স্বার্থ পূরণের জন্য দুর্নীতিবাজদের পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছেন। এ কারণে কৃষি ব্যাংকে একটি দুর্নীতির সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে, যা ব্যাংকটিকে লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। বেসিক ব্যাংক, আইসিবিআই ব্যাংক ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক এবং কৃষি ব্যাংকের ঋণের অবস্থা দেখে কবির কণ্ঠে বলতে হয়-
এ জগতে হায়, সেই বেশি চায়, যার আছে ভূরি ভূরি
রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙ্গালের ধন চুরি।

লেখক : সম্পাদক ও উন্নয়ন কর্মী

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

খেলার জগতের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পেশাদারি কাঠামো

লাল-সবুজের তরুণ প্রজন্মের এ সময়ের প্রিয় শ্লোগান, ‘বাংলাদেশের জান, সাকিববিস্তারিত পড়ুন

আগস্টের শোককে শক্তি হিসেবে নিতে পারি আমরা তরুণেরা

“যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তিবিস্তারিত পড়ুন

বাবা যখন ধর্ষক

যেখানে আপন বাবাই ধর্ষণ করে, সেখানে সৎ বাবার ধর্ষণ আমাদেরবিস্তারিত পড়ুন

  • দুই বড় দেশ যখন প্রতিবেশী ও প্রতিযোগী
  • মৌসুমি নৌকা শোরুম
  • ভারতবিদ্বেষ কেন বেড়ে চলেছে?
  • জনগণের কাছে শেখ হাসিনাই জয়ী
  • ‘গুলিস্তান’ নেই, তবু আছে ৬৪ বছর ধরে
  • পদ্মা ব্রিজ দিয়ে কী হবে?
  • যুদ্ধাহতের ভাষ্য: ৭০– “এখন অমুক্তিযোদ্ধারাই শনাক্ত করছে মুক্তিযোদ্ধাদের”
  • আসুন, বড় হই
  • আসুন, পিঠের চামড়া না তুলে পিঠ চাপড়ে দিতে শিখি
  • বাড়িওয়ালা মওদুদ ও বাড়িছাড়া মওদুদ
  • ব্রিটেনের নতুন সরকার নিয়ে যে শঙ্কা!
  • আওয়ামী লীগ ছাড়া কি আসলে কোনো বিকল্প আছে?