শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

তারুণ্যের সংবাদ মাধ্যম

চিঠি আর আসে না

post

‘চিঠি কেন আসে না, আর দেরি সয় না/ভুলেছ কি তুমি আমাকে, ভুলেছ কি নাম-ঠিকানা’- বাংলা সিনেমার এই গানটির বাস্তবতা এখন বাংলাদেশের ডাক বিভাগের। মোবাইল-ইন্টারনেটের এই যুগে চিঠি সত্যিই যেন আসে না। কাগজে লেখা চিঠির পরিবর্তে আসে মোবাইলে লেখা ক্ষুদে বার্তা বা এসএমএস, আর ইন্টারনেটে ই-মেইল বা বৈদ্যুতিক বার্তা। প্রয়োজনীয় আলাপ সেরে নেওয়া হয় মোবাইল বা টেলিফোনে।

ইন্টারনেট বা মোবাইলে আলাপে প্রয়োজনীয় তথ্যের আদান-প্রদান দ্রুত এবং যথাযথভাবে হয় ঠিকই, কিন্তু চিঠির সঙ্গে যে আবেগ-অনুভূতি জাড়িয়ে থাকত- তা পাওয়া যায় না। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর প্রিয়জনের খবর সম্বলিত চিঠি যখন হাতে আসত, সেই চিঠির আলাদা আবেদন ছিল। চিঠির প্রতিটি অক্ষরের সঙ্গে আবেগ জড়িয়ে থাকত। এখনকার ক্ষুদে বার্তায় তথ্য আছে, কিন্তু সেই আবেগ বা আন্তরিকতার ছাপ নেই। তবে ক্ষুদে বার্তা বা ই-মেইল পাওয়ার জন্য চিঠির মতো দিনের পর দিন অপেক্ষায় থাকতে হয় না, মুহূর্তে সেরে নেওয়া যায় আদান-প্রদান। প্রযুক্তি মানুষকে দিয়েছে বেগ, কিন্তু কেড়ে নিয়েছে আবেগ।

একটা সময় ছিল যখন ডাকপিওন বা রানার হাতে লণ্ঠন-বর্শা এবং কাঁধে চিঠির ঝোলা নিয়ে খুব ভোরে ডাকঘরে পৌঁছে যেত। সেই ঝোলায় শুধু যে চিঠি থাকত না নয়, তখন প্রত্যন্ত এলাকার প্রিয়জনের কাছে টাকা পাঠানো হতো ডাক ব্যবস্থার মাধ্যমে। এই প্রায় এক দশক আগেও, যখন মোবাইল ফোন বা ইন্টারনেট মানুষের হাত হাতে পৌঁছায়নি- তখন বস্তা বস্তা চিঠি আদান-প্রদান হতো। ২০০৪ সালেও দেশে ২৩ কোটি চিঠি লেনদেন হয়েছে। কিন্তু ক্রমে চিঠির সংখ্যা কমতে থাকে। কমতে কমতে ২০১৫ সালে সেই সংখ্যা এসে ঠেকেছে ৪ কোটিতে।

সরকারি ডাকের মাধ্যমে এখন যে সব চিঠি আদান-প্রদান হয়, সেটির বেশির ভাগ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের বা সরকারি-বেসরকারি সংস্থায় নিয়োগ সংক্রান্ত চিঠি। ব্যক্তিগত চিঠির আদান-প্রদান বহুলাংশে কমে গেছে।

এক সময় ব্যক্তিগত পর্যায়ে যেসব চিঠি লেখা হতো, সেগুলো নিছক চিঠিই ছিল না। এর মাধ্যমে তৎকালীন আর্থ-সামাজিক এবং রাজনৈতিক বিষয়গুলোও উঠে আসত। বিখ্যাত মানুষের এমন বহু চিঠি পরবর্তীকালে সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। বহু চিঠি ব্যাপক মূল্যে নিলামে বিক্রি হয়েছে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম বা শরৎচন্দ্র চট্টোপ্যাধায়ের কয়েক হাজার চিঠি সাহিত্যের সম্পদ। আত্মউদ্ঘাটনমূলক বা প্রয়োজননির্ভর এসব পত্রে তাদের জীবনের অনবদ্য অনুভূতি উপলদ্ধি ব্যক্ত করেছেন। রবী ঠাকুর ৫ হাজারের বেশি চিঠি লিখেছেন। যার মধ্যে প্রায় ৪ হাজার সাময়িক পত্র-পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। ৩ শতাধিক ব্যক্তির সঙ্গে তার পত্রে যোগাযোগ হয়েছে। এমন চিঠি এখন লেখা হয় না বললেই চলে।

চিঠির সংখ্যা কমতে কমতে এমন পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে যে, ডাক বিভাগের টিকে থাকার জন্য নতুন নতুন পরিসেবা চালুর দিকে নজর দিতে হচ্ছে। ডাক বিভাগে প্রথম থেকে চিঠি আদান-প্রদানের পাশাপাশি বই, ছোট জিনিস বা অর্থ পাঠানোর মতো পরিসেবা চালু আছে।

অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য এর পাশাপাশি এখন পোস্টাল ক্যাশ কার্ড বা ইলেকট্রনিক মানি ট্রান্সফার সার্ভিসের মতো সেবা চালু করা হয়েছে। ২০১১ সালে শুরু হওয়া পোস্টাল ক্যাশ কার্ড সার্ভিসটি ১ হাজার ৪৪৬টি পোস্ট অফিসে চালু থাকলেও প্রাইভেট ব্যাংকগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে তেমন সফল হতে পারেনি। এর এক বছর পরে, দ্রুত টাকা পাঠানোর ইলেকট্রনিক মানি ট্রান্সফার সেবা চালু হয়, যেটি এখন কিছুটা সফলতা পেয়েছে।
post_220160920213522

নতুন কিছু পরিসেবা চালু করলেও লোকসানের ধকল থেকে মুক্ত হতে পারছে না- এক সময়ে ব্যাপক জনপ্রিয় ও লাভজনক ডাক বিভাগ। দেশের চারটি জেনারেল পোস্ট অফিসের (জিপিও) অধীনে সারা দেশের ৯ হাজার ৮৮৬টি পোস্ট অফিসের মাধ্যমে চালু থাকা এই সেবা খাতে গত পাঁচ বছরে লোকসান গুনতে হয়েছে ১ হাজার কোটি টাকারও বেশি। সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে লোকসান হয়েছে ২৩৪ কোটি টাকা। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, প্রতিষ্ঠানটি টিকিয়ে রাখতে যুগের চাহিদার সঙ্গে মিল রেখে নতুন নতুন পরিসেবা চালুর গত্যন্তর নেই। জাপান তাদের ডাক বিভাগের মাধ্যমে ই-কমার্স চালু করে সফল হয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে হয়ত খোলনলচে পাল্টে সাজাতে হবে এ খাতকে।

একটা সময় ছিল যখন- রানার ছুটত তাই ঝুম ঝুম ঘণ্টা বাজত রাতে, রানার চলত, খবরের বোঝা হাতে- পরবর্তীকালে রানার চলত আধুনিক যানবাহনে। এখন অত্যাধুনিক প্রযুক্তির প্রভাবে সেই দিন বেশি দূরে নয়, যখন হলুদ খামের চিঠির দেখা আর মিলবে না। ভবিষ্যত প্রজন্মকে চিঠি জিনিসটা কী- সেটা বোঝাতে জাদুঘরে নিয়ে চিঠির খাম দেখাতে হবে। কিন্তু দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর প্রিয়জনের খবর বহন করে নিয়ে আসা সেই চিঠি পাওয়ার যে আনন্দ, চিঠির প্রতিটি অক্ষরে যে অনুভূতি জড়িয়ে থাকত- তা নতুন প্রজন্মের কাছে অজানাই থেকে যাবে।

চিঠি

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

আহা চিকুনগুনিয়া !

ঈদের দিন ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে মেঝেতে পা দিয়ে আমিবিস্তারিত পড়ুন

‘দৃষ্টিশক্তি থাকা, কিন্তু জীবনে লক্ষ্য না থাকা অন্ধত্বের চেয়েও খারাপ’

চক্ষু, কর্ন, জিহবা, নাসিকা, ত্বক – মানুষের এই পাঁচটি ইন্দ্রিয়েরবিস্তারিত পড়ুন

ধর্ষিতা মেয়েটির গল্প

পারিনি সেদিন নিজেকে শোষকদের হাত থেকে রক্ষা করতে, পারিনি সেদিনবিস্তারিত পড়ুন

  • যা হবে কবিতা লিখে…!
  • কাটাপ্পা বাহুবলির পর এইবার হিরো আলম ড্রেস?
  • দর্শক যেভাবে বুঝলেন যে মাশরাফির স্ত্রী ক্রিকেট খেলেন না!
  • ‘‘আজকাল আইসিসির সহযোগিতা ছাড়া মাশরাফি-তামিমদের বিপক্ষে জেতা যায় নাকি’’
  • গরু খোঁজা (একটি গল্প)
  • যেসব খাতে ভ্যাট বসানো অতি জরুরি
  • ভাড়া ১০০ টাকা, ভ্যাট-ট্যাক্স মিলে ২৪০!
  • দুদকের হয়ে কেস লড়তে চান কেডি পাঠক
  • শততম টেস্টে আম্পায়ার কেন ওই রকম করলেন?
  • রিক্সা চালাই বিয়ে করেছিলাম, আমার মতই এক গরীবের মেয়েকে বউ করে এনেছিলাম —
  • নারীর দাস জীবন এবং একজন সাদিয়া নাসরিন
  • আজকের এ দিনে রক্তে রঞ্জিত হয়েছিলো ঢাকার রাজপথ