বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ১৮, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

তারুণ্যের সংবাদ মাধ্যম

ধর্ষণে লজ্জা নয়, রুখে দাঁড়ান

হালিমা বেগমের জন্য আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আবার ক্ষোভও হচ্ছে। কষ্ট তাঁর অসহায়ত্বের কথা ভেবে। ক্ষোভ তাঁর বোকামি দেখে। পাঠক কি হালিমা বেগমকে চিনতে পেরেছেন? হালিমা বেগম ময়মনসিংহের গৌরীপুর থানায় কনস্টেবল হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন।

২৫ এপ্রিল আমাদের কণ্ঠস্বরসহ কয়েকটি পত্রিকায় হালিমার খবরটি প্রকাশিত হয়। খবরে বলা হয়, ২ এপ্রিল দুপুরে ময়মনসিংহের গৌরীপুর থানার ব্যারাকের নিজ কক্ষে নিজের শরীরে আগুন দেন কনস্টেবল হালিমা। ওই দিন সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়।

৬ এপ্রিল হালিমার বাবা ব্যারাক থেকে তাঁর জিনিসপত্র আনতে গেলে সেখানে হালিমার লেখা একটি ডায়েরি পান। আত্মহত্যা করার আগে হালিমা ডায়েরিতে তাঁর আত্মহত্যা করার কারণ লিখে যান। তিনি লিখেছেন, ‘আমার মরে যাওয়ার একমাত্র কারণ এসআই মোহাম্মদ মিজানুল ইসলাম আমাকে ধর্ষণ করেন। ১৭/০৩/১৭ ইং রাত ২.০০ ঘটিকায়। আমার অভিযোগ অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গ্রহণ করেন না।’

ডায়েরিতে হালিমার লেখা পড়ে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, তার ওপর যে অন্যায় হয়েছে, এর প্রতিকার চেয়ে পাননি। মানুষ যখন কোনো বিপদে পড়ে বা কোনো অন্যায় বা নির্যাতনের শিকার হয়, তখন তারা সাহায্যের জন্য পুলিশের কাছে যায়। অথচ খোদ পুলিশে চাকরি করেও নিজের সম্ভ্রম বাঁচাতে পারলেন না হালিমা। আর এ জন্য বিচার চাইতে গেলেও তা পাননি। ফিরে আসতে হয়েছে তাঁকে। এর চেয়ে বেদনাদায়ক ঘটনা আর কী হতে পারে!

পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, গৌরীপুর থানার এসআই মিজানুল নানা সময় হালিমাকে অশালীন প্রস্তাব দিতেন। ওই সব প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় প্রতিশোধ হিসেবে হালিমাকে ধর্ষণ করা হয়। এ ব্যাপারে হালিমা যখন থানার ওসিকে অভিযোগ করেন, তখন তিনি তো অভিযোগ নেননি, উল্টো তিনিসহ অন্য সহকর্মীরা তাঁকে নিয়ে হাসাহাসি করেন। এত অপমান সহ্য করা হয়তো হালিমার পক্ষে কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। তাই তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।

কিন্তু হালিমার এই আত্মহত্যায় কিছু যাবে আসবে কি এই সমাজের? এসআই মিজানুল কি এ জন্য অনুতপ্ত হবেন? ভবিষ্যতে আর কোনো মেয়েকে ধর্ষণ করবেন না বলে শপথ নেবেন? আর গৌরীপুর থানার ওসি? তিনি কি নিজেকে রাতারাতি বদলে ফেলবেন? আমার তো মনে হয় না। কারণ, তাঁরা তো সেসব পুরুষের দলভুক্ত, যাঁদের কাছে নারীর শিক্ষা, যোগ্যতা, সামাজিক অবস্থান কোনো কিছুরই কোনো মূল্য নেই। তাঁদের কাছে নারী মানেই একটা দেহ, যে দেহটা ভোগের সামগ্রী, তা তিনি যেখানেই কাজ করুন না কেন বা যত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাই হোন না কেন। নারী তাঁর দেহ এমনি দিলে ভালো, আর না হলে তো অন্য রাস্তা আছেই। ধর্ষণ করো তাঁকে।

আর ধর্ষণের শিকার নারী? লজ্জা ও অপমানের হাত থেকে বাঁচতে আত্মহত্যা করাকে শ্রেয় বলে মনে করেন। কিন্তু এটা কোনো সমাধান নয়। এটা স্রেফ বোকামি। আর এই বোকামিই করেছেন হালিমা বেগম। একটা জীবনের অনেক মূল্য। এই মূল্যবান জীবন শেষ করে দেওয়ার অধিকার কারও নেই। এমনকি নিজেরও নেই। কারও জীবন শুধু নিজের জন্য নয়। একজন মানুষের সঙ্গে তার গোটা পরিবার জড়িত থাকে। তারা সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায়। নারীদের বলছি, পরিস্থিতি যতই প্রতিকূল হোক না কেন, আত্মহত্যা করবেন না।

মনে আছে, নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউটের ছাত্রী সিমির কথা? থাকতেন ঢাকার খিলগাঁওয়ে। ক্লাস শেষ করে বাড়ি ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যেত। এ সময় বখাটে যুবকেরা তাঁকে উত্ত্যক্ত করত। প্রতিবাদ করতে গিয়ে তাঁর ভাইয়েরা বখাটেদের মারধরের শিকার হন। এরপর এলাকায় সালিস বসে। এতে রায় হয়, সন্ধ্যার পর সিমি বাড়ি থেকে বের হতে পারবেন না। বিচার না পাওয়ার প্রতিবাদে আত্মহত্যা করেন সিমি। সিমির আত্মহত্যার পর তাঁর পরিবার একবারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বখাটেদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন সিমির বাবা। কিন্তু বখাটেরা উল্টো সিমির পরিবারকেও হুমকি দেওয়া শুরু করে। তাহলে মরে গিয়ে কী লাভ হলো সিমির? বরং বেঁচে থেকে বখাটেদের মোকাবিলা করাই হতো উচিত কাজ। জানি, আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজে কাজটা খুব কঠিন। কিন্তু এত সহজে হার মানারও তো কিছু নেই।

নারীদের এটা মনে রাখতে হবে, ধর্ষণের শিকার হওয়া বা উত্ত্যক্তের শিকার হওয়ার মধ্যে লজ্জার কিছু নেই। বরং এ লজ্জা ধর্ষকের, উত্ত্যক্তকারীর। অন্যায়টা তারাই করেছে। তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। তা না করে যদি আত্মহত্যা করেন, তাহলে তো অন্যায়কারীরা পার পেয়ে গেল। তারা সমাজে আবার বুক ফুলিয় বেড়াবে। আবার মেয়েদের উত্ত্যক্ত করবে, ধর্ষণ করবে। কাজেই আত্মহত্যা করে নিজেকে শেষ করে দেবেন না, বরং রুখে দাঁড়ান উত্ত্যক্তকারীদের বিরুদ্ধে, ধর্ষকদের বিরুদ্ধে।

রোকেয়া রহমান: সাংবাদিক

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

খেলার জগতের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পেশাদারি কাঠামো

লাল-সবুজের তরুণ প্রজন্মের এ সময়ের প্রিয় শ্লোগান, ‘বাংলাদেশের জান, সাকিববিস্তারিত পড়ুন

আগস্টের শোককে শক্তি হিসেবে নিতে পারি আমরা তরুণেরা

“যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তিবিস্তারিত পড়ুন

বাবা যখন ধর্ষক

যেখানে আপন বাবাই ধর্ষণ করে, সেখানে সৎ বাবার ধর্ষণ আমাদেরবিস্তারিত পড়ুন

  • দুই বড় দেশ যখন প্রতিবেশী ও প্রতিযোগী
  • মৌসুমি নৌকা শোরুম
  • ভারতবিদ্বেষ কেন বেড়ে চলেছে?
  • জনগণের কাছে শেখ হাসিনাই জয়ী
  • ‘গুলিস্তান’ নেই, তবু আছে ৬৪ বছর ধরে
  • পদ্মা ব্রিজ দিয়ে কী হবে?
  • যুদ্ধাহতের ভাষ্য: ৭০– “এখন অমুক্তিযোদ্ধারাই শনাক্ত করছে মুক্তিযোদ্ধাদের”
  • আসুন, বড় হই
  • আসুন, পিঠের চামড়া না তুলে পিঠ চাপড়ে দিতে শিখি
  • বাড়িওয়ালা মওদুদ ও বাড়িছাড়া মওদুদ
  • ব্রিটেনের নতুন সরকার নিয়ে যে শঙ্কা!
  • আওয়ামী লীগ ছাড়া কি আসলে কোনো বিকল্প আছে?