শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

তারুণ্যের সংবাদ মাধ্যম

প্রথম আলো একটি অসৎ পত্রিকা

খুব কষ্ট করে সাংবাদিকতা করি। সেটা কি আমি একাই? অন্য সাংবাদিকরা কি তা করেন না? কেউ কেউ করেন, তবে অনেকে করেন না। সমাজের অনেক এবং ‘বরেণ্য’ বলে পরিচিত অনেকের রুঢ় সত্য আচরণ, চর্চা সম্পর্কে জানি কিন্তু বলি না। মুখ ফুটে না বলাটাই নাকি সভ্যতা, সৌজন্য বোধ। বলে ফেললে তা অনেক সুশীল, ভদ্র লোকদের যে সফেদ ভাবমূর্তি তা নষ্ট করে দেবে। থাক, কি দরকার? ঝামেলা করে লাভ কি, মুখ বুজে সব মেনে নাও, সবার সাথেই তো মিলে মিশে চলতে হবে- এই তো শেখায় অনেকে। মুখ বুজে চুপ করে থাকলেই আমি ভালো। এমন ভালো আমি কোনো দিনই থাকতে চাইনি, আজও চাই না।

ঘণ্টাখানেক আগে ফেসবুকের বুকে বলেছি, দেশের সবচে’ বেশি পঠিত বাংলা দৈনিক প্রথম আলো একটি অসৎ পত্রিকা। বন্ধুরা অনেকে নিজের জ্ঞান থেকে একমত প্রকাশ করেছেন, কেউ কেউ আগ্রহ ভরে জানতে চেয়েছেন আমি হঠাৎ কেন এমন কথা বলছি। কাজে ব্যস্ত ছিলাম, বলেছি যত দ্রুত সম্ভব বিস্তারিত বলব, এখন বলছি-

২৬ বছর আমার সাংবাদিকতার বয়স, চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি আমার কাজের সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলবার সাহস কোনোদিন কারও ছিল না, আজও নেই, কোনোদিন কারও হবে না। এতটা নিষ্ঠার সাথে সাংবাদিকতা করার পর যখন নিজের চারপাশে পরিচিত, অপরিচিত, নবীন, প্রবীণ অনেক সাংবাদিককে অসৎ মানসিকতা নিয়ে সাংবাদিকতা করতে দেখি সেটা আমার ভেতরকে ক্ষয় করে, লজ্জিত করে। কষ্টে চুপই থাকি। বন্ধুরা পছন্দ করে না যে, এইসব নিয়ে আমি মুখ ছুটাই। কিন্তু আজ প্রকাশ্যে ছুটালাম, কারণ ঘটনাটা প্রকাশ্য এবং দেশের শীর্ষ পত্রিকা প্রথম আলো করেছে অসততা। মতামত প্রিয়.কম

১৯৯৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর ঐ সময়ের অন্যতম শীর্ষ স্থানীয়, মর্যাদা সম্পন্ন বাংলা দৈনিক পত্রিকা ভোরের কাগজে আমার ক্ষুদ্র পেশাগত সাংবাদিকতা জীবনের প্রথম অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল। যেখানে আমি অনুসন্ধান করে প্রথম বের করেছিলাম দেশের বরেণ্য বুদ্ধিজীবী জহির রায়হান ৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি নিখোঁজ হননি, মুক্তিযুদ্ধের শেষ রণাঙ্গন মিরপুরে পাকিস্তানি-বিহারিদের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের কিছু সেনা ও পুলিশ সদস্যদের সাথে। যদিও ঘটনাটি ছিল ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের দেড় মাস পর, তবু সেটা ছিল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের শেষ রণাঙ্গন এবং সে যুদ্ধে নিহতরা একাত্তরের শহীদ। আর মিরপুর সবার শেষে পকিস্তানি শত্রুদের দখল থেকে মুক্ত হয়েছে। তাই ১৯৭২ সালের ৩১ জানুয়ারি মিরপুর মুক্ত দিবস হিসেবে পালিত হয়। ইতিহাসের এই অধ্যায়টি ১৯৯৯ সালে আমি সাংবাদিক হিসেবে অনুসন্ধান করে আরও বিস্তারিত প্রতিবেদন করেছি, যা সেই বছর ডিসেম্বরে ধারবাহিকভাবে ১৬ দিন ছাপা হয়েছিল ভোরের কাগজে।

১৯৯৯ সালে ভোরের কাগজে প্রকাশিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের কপি

মিরপুরে একাত্তরের শেষ রণাঙ্গন থেকে বেঁচে আসা বাঙালি সৈনিকদের মধ্যে আমি অন্তত ৩ জন প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী পেয়েছিলাম, যারা জহির রায়হানকে গুলি খেয়ে পড়ে যেতে দেখেছিলেন, দেখেছিলেন তার দেহ ফেলে দেবার জন্য টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যেতে। সাংবাদিক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে এটা আমার মৌলিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা। আমি জানি, এবং আমার সেই সময়ের ভোরের কাগজের সহকর্মীরা জানেন, সেই অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করা কত কঠিন একটি কাজ ছিল। তখন ইন্টারনেট ছিল না, মোবাইল ছিল না হাতে হাতে। ছিল না সেলফি যুগ। সাংবাদিকতার নামে এখনকার মতো এত ফাজলামি ছিল না। আমার সেই মৌলিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার পর ভোরের কাগজ ছেড়ে চলে গিয়ে প্রথম আলো বের করা সাংবাদিকদের কেউ কেউ কী করেছিলেন সেই গোমড় ফাঁস করে দিতে চাই না, ভদ্রতাটা দেখাতে চাই। আমার সেই প্রতিবেদনগুলো নিয়ে ২০০২ সালের একুশে বইমেলায় আমার প্রথম বই প্রকাশিত হয়েছে। সে বই নিয়ে এক অক্ষর লিখেনি প্রথম আলো। কেন লিখেনি সেই সত্যটাও এখন লিখছি না।

প্রকাশিত বইয়ের প্রচ্ছদ ও বইয়ের ইনার পেজের ছবি

আমার গ্রন্থের ভূমিকা লিখেছেন জহির রায়হানের অনুজ শাহরিয়ার কবির। অথচ কয়েক ঘণ্টা আগে, ২০১৬ সালের ১৪ ডিসেম্বর প্রথম আলো ‘যেখানে শহীদ হয়েছিলেন জহির রায়হান’ শিরোনাম দিয়ে এক প্রতিবেদন এমনভাবে করল, যেখানে আমার মৌলিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে গোপন করল, লুকাল। প্রথম আলোর এই প্রতিবেদনে তথ্যসূত্র হিসেবে যেই গ্রন্থের কথা বলা হয়েছে, সেই গ্রন্থ আমার অনুসন্ধান থেকে তথ্য নিয়ে ছেপেছে, অথচ প্রথম আলো আমার অনুসন্ধানের সত্যতা গোপন করেছে। শাহরিয়ার কবির এর উদ্ধৃতি এমনভাবে ব্যবহার করেছে প্রথম আলো যেন শাহরিয়ার কবির এটা অনুসন্ধান করেছেন। আমি শাহরিয়ার কবিরের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছি যে, তিনি বার বার আমার অনুসন্ধানের কথা বলেছিলেন প্রথম আলোর প্রতিবেদককে, কিন্তু প্রথম আলো সেটা না লিখে শাহরিয়ার কবিরের উদ্ধৃতি পাল্টে লিখেছে এভাবে- ‘বহু অনুসন্ধানের পরে জহির রায়হানের জীবনের শেষ মুহূর্তের কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর খোঁজ আমরা পেয়েছি। তার শহীদ হওয়ার আগে-পরের বিবরণ আমরা তাদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি।’ যেন শাহরিয়ার কবির অনুসন্ধান করেছেন সবার প্রথম। শাহরিয়ার কবিরের সাথে কথা বলে আমি আরও নিশ্চিত হয়েছি, তিনি এভাবে বলেননি প্রথম আলোকে। প্রথম আলো শাহরিয়ার কবিরের উদ্ধৃতি বিকৃত করে আমার অনুসন্ধানের কথাটা গোপন করল। এমনকি একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ‘১০টি বধ্যভূমি’ নিয়ে যেই বইয়ের উদ্ধৃতি দিয়েছে প্রথম আলো, শাহরিয়ার কবির আমাকে বলেছেন, সেই বইতে আমার অনুসন্ধানের উদ্ধৃতি দিয়েই সেগুলো লেখা হয়েছে। প্রথম আলোর সত্য গোপন করে অসততা করার ঘটনা কি এইটাই প্রথম? না, অল্প কিছুদিন আগেও আমেরিকার নির্বাচন নিয়ে কলকাতার এক সাংবাদিকের দুটো লেখা প্রথম আলো’র সাংবাদিকের নামে ছেপে দেয়া হয়েছে। পরে প্রথম আলো চুরি করার সত্য স্বীকার করার সাহস না থাকায়, মিথ্যা কথা বলে তা তুলে নিয়েছে। ১৮ বছর ধরে প্রথম আলো এমন আরও কত অসততার আশ্রয় নিয়েছে, তা নিয়মিত খোঁজ রেখে লিখতে গেলে আমার আর নিজের কাজ করা হবে না, আমাকে ‘দৈনিক প্রথম আলোর অসততা’ বলে একটা পত্রিকা বের করতে হবে।

আরও অনেক কিছু এখানে লিখলাম না এখন। শুধু এটুকু বলি, যেই সাংবাদিকরা নিজের সততা বজায় রাখতে পারেন না, যারা সৎ সাংবাদিকতা করতে পারেন না, অন্যের ভালো সাংবাদিকতাকে প্রশংসা করবার যোগ্যতা, সাহস রাখেন না, তারা খামোখা ছোটলোকের মতো সেটা নিয়ে সংকীর্ণ মানসিকতার প্রকাশ ঘটান কেন? হুদাহুদি, আপনার ‘মহান’ রূপের আড়ালের দৈন্যতাটা উৎকটভাবে আমাদের কাছে প্রকাশ পায়।

পাদটীকা: সঙ্গে আমার প্রতিবেদন ও গ্রন্থের ছবি দিলাম প্রমাণ হিসেবে। নিজের কাজকে এইভাবে প্রচার করা আমার স্বভাব বিরুদ্ধ, কিন্তু করলাম সত্য প্রতিষ্ঠার স্বার্থে। প্রথম আলোর রিপোর্টের কপির প্রিন্ট নিয়ে রেখেছি, যেন কৌশলে পরে কিছু পরিবর্তন করলে ধরতে পারি।

[প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। আমাদের লেখকের মতাদর্শ ও লেখার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত মতামতের সঙ্গে আমাদের -এর সম্পাদকীয় নীতির মিল নাও থাকতে পারে।]

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

খেলার জগতের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পেশাদারি কাঠামো

লাল-সবুজের তরুণ প্রজন্মের এ সময়ের প্রিয় শ্লোগান, ‘বাংলাদেশের জান, সাকিববিস্তারিত পড়ুন

আগস্টের শোককে শক্তি হিসেবে নিতে পারি আমরা তরুণেরা

“যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তিবিস্তারিত পড়ুন

বাবা যখন ধর্ষক

যেখানে আপন বাবাই ধর্ষণ করে, সেখানে সৎ বাবার ধর্ষণ আমাদেরবিস্তারিত পড়ুন

  • দুই বড় দেশ যখন প্রতিবেশী ও প্রতিযোগী
  • মৌসুমি নৌকা শোরুম
  • ভারতবিদ্বেষ কেন বেড়ে চলেছে?
  • জনগণের কাছে শেখ হাসিনাই জয়ী
  • ‘গুলিস্তান’ নেই, তবু আছে ৬৪ বছর ধরে
  • পদ্মা ব্রিজ দিয়ে কী হবে?
  • যুদ্ধাহতের ভাষ্য: ৭০– “এখন অমুক্তিযোদ্ধারাই শনাক্ত করছে মুক্তিযোদ্ধাদের”
  • আসুন, বড় হই
  • আসুন, পিঠের চামড়া না তুলে পিঠ চাপড়ে দিতে শিখি
  • বাড়িওয়ালা মওদুদ ও বাড়িছাড়া মওদুদ
  • ব্রিটেনের নতুন সরকার নিয়ে যে শঙ্কা!
  • আওয়ামী লীগ ছাড়া কি আসলে কোনো বিকল্প আছে?