বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

তারুণ্যের সংবাদ মাধ্যম

বাংলা বই: শিশুদের উপযোগী করা প্রয়োজন

বর্তমান সরকার ‘ভিশন ২০২১’-এর আওতায় শিক্ষার মান উন্নত করতে সচেষ্ট রয়েছে। শিক্ষার মান নিশ্চিতকরণে গত কয়েক বছর ধরে সরকার নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। শিক্ষা হচ্ছে একমাত্র বিনিয়োগ, যা জাতির উন্নয়নে কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। বাংলাদেশে একমুখী শিক্ষার বদলে প্রাইমারি-মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বহুমুখী শিক্ষাব্যবস্থা বিরাজমান। শিক্ষা আর সেবামূলক নয়।

অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষা আজ পণ্যের বিপণনব্যবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছেলেবেলায় পড়ায় একটি প্রবাদ মনে পড়ে: “দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য।”

আসলে এসব শিক্ষাবিদ ইচ্ছামতো মনগড়া পাঠ্যপুস্তক তৈরি করেন, দেশ ও জাতির ভবিষ্যতের কথা মোটেও ভাবেন না। বরং তাঁরা দেশে এমন একটি অব্যবস্থাপনা ও শিক্ষা ক্ষেত্রে মাফিয়া চক্র তৈরি করেছেন তা ভেঙে ফেলা দরকার।

সরকারকে ধন্যবাদ তারা সময়মতো বই পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। শুদ্ধভাবে মাতৃভাষা চর্চা করার ব্যবস্থা করা উচিত, কিন্তু মানসিক চাপ সৃষ্টি করে শিশুদের মনে কষ্ট দেওয়া হচ্ছে।

শিশুদের মনস্তত্ত্ব ও আনন্দঘন পরিবেশে পাঠদানের ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে বই। গত সাড়ে সাত বছরে শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য সরকার নানাবিধ কার্যক্রম তৈরি করেছে। প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন, সুযোগ-সুবিধা ও মর্যাদা বৃদ্ধি করা, যুগোপযোগী শিক্ষা প্রদানের জন্য ডিজিটাল সিস্টেম প্রবর্তনের চেষ্টা, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম চালুকরণ, প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরির প্রয়াস নিয়েছে।

আশা করা যাচ্ছে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষাকে উন্নীত করতে পারলে পঞ্চম শ্রেণিতে যে সম্মিলিতভাবে পরীক্ষা হচ্ছে সেটি বাতিল হয়ে স্কুলভিত্তিক বার্ষিক পরীক্ষা হবে। প্রাইমারিতে ‘ড্রপ আউট’-এর পরিমাণ কমে গেছে। সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অসাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে পড়াশোনার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। অথচ যারা শিশুদের জন্য বই প্রণয়ন করছেন তাদের দায়িত্ব সুন্দরভাবে পালন করা উচিত।

কয়েকদিন ধরে প্রাইমারি পর্যায়ের প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণির বইগুলো দেখছিলাম। বাংলা বই দেখতে গিয়ে একটু অবাকই হলাম। প্রথম শ্রেণির বাংলা বইয়ের কথা ধরা যাক। বইয়ের শুরুতে জাতীয় পতাকা দেওয়া হয়েছে এবং জাতীয় পতাকা ভবনে ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়েছে। উল্টো পিঠে জাতীয় সঙ্গীত দেওয়া হয়েছে, যা যথাযথ। তবে প্রসঙ্গ কথা এবং পাঠ্যপুস্তক ব্যবহার সম্পর্কে নির্দেশিকা উক্ত বইয়ে দেওয়া যথাযথ হয়নি।

পাঠ-১-এ চিত্র সুস্পষ্ট নয় এবং বাচ্চাদের বোধগম্য হবে না। পাঠ-২ বাচ্চাদের উপযুক্ত নয়। সহপাঠীদের সঙ্গে পরিচিত হই এবং পাঠ-৩ ছোটদের প্রথমদিকে দেওয়া যুক্তিযুক্ত নয়। পাঠ-৪-এ ডালিম গাছটি মানানসই হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল। পাঠ-৫-এর দৃশ্য সুস্পষ্ট হওয়া দরকার। পাঠ-৯-তে উটের দৃশ্য দেখানো হয়েছে, যা আসলে আমাদের দেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল। সাগরের ছবিটিও সুস্পষ্ট হওয়া দরকার। বর্তমানে ‘ঐরাবত’ কতজন ব্যবহার করে থাকে? স্বরবর্ণ পাঠ-১৩-তে দেওয়া হয়েছে। এটি পাঠ-১-এ দেওয়া যেত। পৃষ্ঠা নং ২৪ ও ২৫-এ ‘চরণ’ ব্যবহার করা হয়েছে। অথচ ইদানীং এ ধরনের শব্দ ব্যবহার করা উচিত নয়। ডাবের ছবিটিও সুস্পষ্ট হওয়া বাঞ্ছনীয়। পৃষ্ঠা ২৮-এ যে ভালুকের ছবি দেওয়া হয়েছে তা আসলেই বাস্তবসম্মত নয়। একই অবস্থা পৃষ্ঠা ৩০-এ। পাঠ-২৯-এ দেওয়া হয়েছে ব্যঞ্জনবর্ণ। এটি পাঠ-২-এ দেওয়া গেলে ভাল হত। পাঠ-৩৭-এ ‘বৃষ’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। ইদানীং কি শব্দটি সচরাচর ব্যবহার করা হয়?

পাঠ-৪৫-এর বক্তব্য আরও সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা যেত। পৃষ্ঠা ৬৫-তে ব্যবহৃত মোষের ছবিটি মোটেই বাস্তবসম্মত নয়। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় প্রথম শ্রেণিতে যুক্তবর্ণ ব্যবহার করা হয়েছে। ছয় বছরের বাচ্চাকে যুক্তবর্ণ শেখানোর যৌক্তিকতা কোথায়?

পাঠ-৫৫-তে মুক্তিযোদ্ধাদের কথা শিরোনামে আরও সুস্পষ্ট করে জাতীয় ইতিহাস, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব, বঙ্গবন্ধুর রঙিন ছবি, বাংলাদেশের মানচিত্র, পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত রাজাকারদের কথা উল্লেখ করা উচিত ছিল। পাঠ-৫৬-এ শব্দ বলার খেলাটি সুস্পষ্ট হওয়া উচিত ছিল। প্রথম শ্রেণির বই আকর্ষণীয় হওয়া উচিত ছিল। এ পর্যায়ে খেলতে খেলতে মাতৃভাষা শেখার ব্যবস্থা করা দরকার।

দ্বিতীয় শ্রেণির বাংলা বইতে প্রসঙ্গ কথা, পাঠ্যপুস্তক ব্যবহার সম্পর্কে নির্দেশনা দেওয়ার প্রয়োজন ছিল না। আগের পাঠ থেকে জেনে নিই ছবিটি সুস্পষ্ট নয়। পৃষ্ঠা ৭-এ বাঘ ও হরিণের ছবি এক ধরনের বিকৃত করা হয়েছে। পৃষ্ঠা ২৩-এর প্রশ্ন ১ ও ২ নম্বরে অংক লেখানোর প্রয়াস পৃথক করে না নিলে ভাল হত।

‘দুখুর ছেলেবেলা’ অনেকটা এলোমেলোভাবে লেখা এবং লেখকের নাম নেই। এটি জাতীয় কবির প্রতি অবজ্ঞাস্বরূপ। ‘খামারবাড়ির পশু-পাখি’ প্রবন্ধে এত বেশি পশু-পাখির নাম দেওয়া হয়েছে যা মোটেই বাচ্চাদের পক্ষে হজমযোগ্য নয়। ‘ছয় ঋতুর দেশ’ আরও সহজ করা বাঞ্ছনীয়। মুক্তিযুদ্ধের একটি সোনালী পাতা আরও সুন্দর ও সাবলীল ভাষায় বর্ণনা এবং ছবিগুলো সুস্পষ্ট করা যেত। ক্লাস-২-তে ‘শব্দের অর্থ জেনে নিই’-এর প্রয়োজন নেই। বরং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের তত্ত্বাবধানে ছেড়ে দেওয়া বাঞ্ছনীয়। এ দেশটি মুসলমান-হিন্দু-খ্রিস্টান-বৌদ্ধদের সম্মিলিতভাবে গড়ে ওঠা একটি রাষ্ট্র– এ বিষয়ে একটি নিবন্ধ থাকলে ভালো হত।

তৃতীয় শ্রেণির বইতেও প্রসঙ্গ কথা এবং নির্দেশনা থাকা উচিত ছিল না। ছবি ও কথা (পৃষ্ঠা ১-৪) কোনো ছবিই স্পষ্ট নয়। ভাষা শহীদদের কথায় সুচতুরভাবে জিন্নাহ ও পশ্চিম পাকিস্তানিদের কথা তোলা হয়নি। ভাষা শহীদদের ছবি স্পষ্ট হওয়া বাঞ্ছনীয়। রণসঙ্গীত হিসেবে ‘চল্ চল্ চল্’ গাওয়ার কথা, সেটির উল্লেখ থাকা উচিত ছিল। পৃষ্ঠা ২৬-এ ‘স্বাধীনতা দিবসকে ঘিরে’ লেখায় অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করি যে, ২৬ মার্চ ১৯৭১ স্বাধীনতার সংগ্রাম শুরু হয়, বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়া, পাকিস্তানি রাজাকারদের অত্যাচার সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি। মনে হয়, পঁচাত্তরের প্রেতাত্মাদের কেউ এটি লিখেছে।

‘কুঁজো বুড়ি’ গল্পটি বাদ দেওয়া গেলে ভাল হয়। ‘একাই একটি দুর্গ’ লেখাটি অনেক বেশি গুছিয়ে লেখা উচিত ছিল। পৃষ্ঠা ৭২-এ ‘একজন পটুয়ার কথা’ এটি তৃতীয় শ্রেণির উপযোগী করে লেখা উচিত। যে গদ্য কবিতাটি আছে তা বর্জন করা যেত। ‘স্টিমারের সিটি’ গল্পটির নাম পরিবর্তন করা বাঞ্ছনীয়। ‘গাল্লা দেওয়ার খবর’ শিরোনাম না হয়ে ‘পাল্লা দেওয়ার খবর’ শিরোনাম হওয়া উচিত ছিল। ‘শব্দের অর্থ জেনে নিই’ না দেওয়াই বাঞ্ছনীয়। বরং অপরিচিত শব্দ না ব্যবহার করাই ভালো।

চতুর্থ শ্রেণির বইতে দশ বছরের শিশুকে ‘বাংলাদেশের প্রকৃতি’ প্রবন্ধটিকে আরও সুন্দর ও আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করা উচিত ছিল। অনুশীলনীর প্রশ্ন ৫ ও ৭ মোটেই শ্রেণির উপযুক্ত নয়। পৃষ্ঠা ১৫-এর ছবিটি স্পষ্ট হয়নি। ‘বীরশ্রেষ্ঠ বীরগাথা’ প্রবন্ধে বীরশ্রেষ্ঠদের ছবি সুস্পষ্ট হওয়া উচিত। পৃষ্ঠা ৩১-এ প্রশ্ন ৬-এর ছবিটি স্পষ্ট হওয়ার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে লেখার জন্য কিছু ইঙ্গিত দেওয়া হলে ভালো হত।

‘মহীয়সী রোকেয়া’ প্রবন্ধটিতে ছবিটি অস্পষ্ট। প্রবন্ধটি সুপঠিত হতে পারত। ‘পাঠান মুলুক’-এর বদলে সৈয়দ মুজতবা আলীর আরও আকর্ষণীয় ও বর্তমান সময়ের উপযোগী প্রবন্ধ দেওয়া যেত। ‘শব্দের অর্থ জেনে নিই’ এ পর্যায়ে না দেওয়াই উচিত। শুদ্ধভাবে মাতৃভাষা চর্চার ব্যবস্থা করা উচিত। কিন্তু মানসিক চাপ সৃষ্টি করে শিশুমনকে কষ্ট দেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে নাগরিক সমাজ একটি ভালো উদ্যোগ নিতে পারে। শিশুমনের বিকাশে ভীতির সঞ্চার রোধ করা উচিত।

জননেত্রী যে শিক্ষার গুণগতমান চাইছেন তার জন্য সর্বাগ্রে বইগুলোর সংস্কার সাধন করা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে সবাইকে সহজ হতে হবে।

পঞ্চম শ্রেণিতে পাঠ্যপুস্তক ব্যবহার সম্পর্কে নির্দেশিকা দেওয়া প্রয়োজন ছিল না। ‘এই দেশ এই মানুষ’ প্রবন্ধে আরও সুন্দর করে দেশের মানুষের প্রতি ভালবাসা, বিশ্বাস ও সম্প্রীতি সম্পর্কে লেখা দরকার। পাশাপাশি কীভাবে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হয় সে সম্পর্কে আলোচনা করা উচিত ছিল।

সাধু-কথ্যের মিশ্রণ দূষণীয়। সংকল্প কবিতাটি সংক্ষিপ্ত না করে সবটুকু দেওয়া উচিত ছিল। ‘সুন্দরবনের প্রাণী’ প্রবন্ধটি আরও সুন্দরভাবে সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রাণীর বর্ণনা আরও সহজভাবে দেওয়া উচিত। ১৩ পৃষ্ঠার ৩ নং প্রশ্নটি শিশুদের বয়স অনুযায়ী উপযোগী নয়। হাতি আর শেয়ালের গল্পটি কাল্পনিক। এর চেয়ে দেশমূলক বাস্তব গল্প ‘বিদ্যাসাগরের জীবনকথা’ দেওয়া যেত।

জসিমউদ্দিন পল্লী কবি হিসেবে খ্যাত। অথচ এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ‘ফুটবল খেলোয়াড়’ শীর্ষক প্রবন্ধ। এটির বদলে জসিমউদ্দীনের পঞ্চম শ্রেণি উপযোগী কবিতা দেওয়া উচিত ছিল। ‘বীরের রক্তে স্বাধীন এ দেশ’ প্রবন্ধটি আরও ভালভাবে লেখা উচিত ছিল। বীরশ্রেষ্ঠদের ছবি স্পষ্ট হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল। ‘শখের মৃৎশিল্প’ পঞ্চম শ্রেণি উপযুক্ত নয়।

বুদ্ধিজীবীদের ছবি সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা উচিত ছিল। ‘কাঞ্চনমালা’র গল্পটি না থাকলে ভালো হয়। ‘মাটির নিচে যে শহর’ শিরোনামটি বদল করে ‘ওয়ারী বটেশ্বর’ দেওয়া যেত। পৃষ্ঠ ৮৯-এর ৫, ৬ ও ৭ নং প্রশ্ন উপযুক্ত নয়।

শিশুমনকে সৃজনশীল করে দেশপ্রেমে উদ্ধুদ্ধ করার চেতনা সংযুক্ত হওয়া দরকার। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘দুই তীরে’ কবিতাটির পূর্ণরূপ থাকলে ভালো হত। শরৎচন্দ্রের ‘শ্রীকান্ত’ থেকে নতুনদার অংশ বিশেষ দেওয়া যেত। ‘বর্ণমালা আমার দুঃখিনী বর্ণমালা’ কবিতাটি অন্তর্ভুক্ত করা যেত। একটি প্রবন্ধ থাকা উচিত যেখানে বাংলাদেশে বসবাসরত চারটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির বীজ বপন করা যায়। ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর একটি আলাদা প্রবন্ধ থাকা বাঞ্ছনীয়।

বাংলা ভাষা আমাদের মাতৃভাষা। এই ভাষা ‘গুরুচণ্ডালী’ দোষমুক্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়। চিত্রগুলো আকর্ষণীয় ও সুস্পষ্ট হওয়া দরকার। জীবনান্দ দাশের কবিতা অন্তর্ভুক্ত করা যেত।

শৈশব থেকে প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর মধ্যে গেঁথে দিতে হয় দেশপ্রেম। আদর্শ মাটির সন্তান হতে হলে দেশকে ভালবাসা শিখতে হয়। কিন্তু এ দেশে বহুমুখী শিক্ষাব্যবস্থার বদৌলতে কেউ কেউ ভুলে যান, এ দেশের সুন্দর ইতিহাস-কৃষ্টি-সংস্কৃতির কথা, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এ রাষ্ট্র স্বাধীন হওয়ার কথা। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের কথা; ছয় দফা আন্দোলনের কথা, আবার ছাত্রদের দেওয়া ১১ দফার কথা।

শিক্ষাকে অবশ্যই ছাত্রছাত্রীদের মান উন্নয়নের সূচক হিসেবে বিবেচনা করা উচিত, যাতে করে পাঠ শেষে চাকরি পায়। দেশে চাকরি নিশ্চিত করতে হলে অবশ্যই সৃজনশীলতার সৃষ্টি করতে হবে।

আমার পড়াশোনা শুরু হয়েছিল আমেরিকান সিস্টারদের কাছে। এখনও মনে পড়ে তাঁরা কখনও ছেলে-মেয়েতে প্রভেদ শেখাননি। তাঁরা ছেলেবেলায় শিক্ষা দিয়েছিলেন মেধা দিয়ে, মনন দিয়ে, প্রতিভা দিয়ে একজন আরেকজনকে পরাস্ত করতে। ফলে গোড়াতে আমাদের মধ্যে শিক্ষার বীজ বপন হয়েছিল। সেটি পরবর্তী জীবনে মানস গঠনে অনেক সহায়তা করেছে। অন্যদিকে পরিবার থেকে অসাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করেছিল, সেটি এখনও সত্যিকারে মানুষ হিসেবে চলতে সহায়তা করে থাকে। অথচ এখন এমনও প্রগতিবাদী ব্যক্তিত্বকে টিভি টকশোতে বলতে শোনা যায় যে, সনাতন ধর্মাবলম্বী। অথচ আমরা ছেলেবেলায় এমনটি শুনিনি।

এ দেশের শিক্ষার মান উন্নয়নে জননেত্রীর যে বিশেষ উদ্যোগ তা সাফল্যমণ্ডিত হলে দেশ ও জাতির উন্নয়ন, অগ্রগতি, প্রগতি আরও বেগবান হবে। মানুষের মধ্যে চিন্তা-চেতনা ও কুসংস্কারমুক্ততা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সাধিত হবে। এ জন্য ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ সবসময়ই শিক্ষার উন্নয়নে দিশারীর ভূমিকা পালন করে আসছেন। দেশে যে সুন্দর একটি ‘জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০’ প্রণীত হয়েছে তা আরও বেগবান হওয়া দরকার। নচেৎ মনুষত্বের বিকাশ ঘটা সম্ভব নয়।

সরকার প্রাইমারি স্কুলকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত করতে যাচ্ছে। এটি একটি শুভবুদ্ধির পরিচায়ক। তবে প্রাইমারি পর্যায়ে না মাতৃভাষা, না ইংরেজি, না অংক, বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ঠিকমতো বীজ বপন করা হয় না। এটি অবশ্য শেষ পর্যন্ত সমস্যার সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে ইংরেজি ও অংক দুটি বিষয়েই দক্ষ শিক্ষকের অভাব রয়েছে।

মাতৃভাষা বাংলাও অনেকে সঠিকভাবে পড়ি না। মাতৃভাষা ঠিকঠাকভাবে জানা থাকলে ইংরেজি শিক্ষাও সহজে আয়ত্ত করা যায়। এ ব্যাপারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভালো শিক্ষক তৈরির সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার। ইংরেজি ও অংক শিক্ষক তৈরির জন্য ‘ডেটাবেজ’ তৈরি করে প্রাথমিক এবং মাদ্রাসা পর্যায়ের সব শিক্ষক-শিক্ষিকাকে বাধ্যতামূলকভাবে মান উন্নয়নে সচেষ্ট করা দরকার।

‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই শিক্ষার মান উন্নয়নে কার্যপরিধি বৃদ্ধি করা বাঞ্ছনীয় হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি প্রাথমিক পর্যায়ের অধিকাংশ বইয়ে কেমন যেন লেজেগোবরে অবস্থা। অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের মর্যাদা দিতে কুণ্ঠাবোধ করে। বর্তমান সরকার যে সুন্দর, বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠন করতে চাইছে তার প্রথম পাঠের জন্য প্রাথমিক পর্যায় থেকেই শুরু করতে হবে। বইগুলোর ব্যাপক সংস্কার করতে হবে।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হৃদয়ে ধারণ করতে হবে, পাশাপাশি ছড়িয়ে দিতে হবে মেধা ও মনন। কিন্তু চালাক-চতুর শিক্ষক সূক্ষ্ম বুদ্ধি ও ভ্রষ্ট নীতি দ্বারা অনেকে গিরগিটির মতো রং বদল করতে পারে। এসব গিরগিটি ও তোষামদকারীদের হাত থেকে আমাদের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

একটি সমীক্ষা পরিচালনা করে দেখেছি ৫০% ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ‘অ্যাসেম্বলি’ করানো হয় না এবং ‘জাতীয় সঙ্গীত’ গাওয়া হয় না। অধিকাংশ মাদ্রাসায় ‘জাতীয় সঙ্গীত’ গাওয়া হয় না। দেশে নব্য রাজাকাররা বহুদিন ধরেই গোপনে কাজ করে চলেছে। তারা দেশ ও জাতির উন্নয়ন সহ্য করতে পারে না। ফলে ‘ব্রেনওয়াশ’ করে থাকে বলে বিভিন্ন পত্রপত্রিকার রিপোর্টে দেখা যায়। আজ কেবল তা মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রী নয়, বরং ইংরেজি মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে। মাদ্রাসার মান উন্নয়নের জন্যও চিন্তাভাবনা করা বাঞ্ছনীয় হয়ে পড়েছে।

দেশের সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন ধীরে ধীরে সাধিত হবে। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি বিদ্যালয়কে তাদের নিজস্ব ভৌত অবকাঠামো তৈরি করতে হবে। ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার সুযোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি থাকা-খাওয়ার মান বাড়াতে হবে।

আশা করি কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে সত্যিকার অর্থে একটি বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেবে। ছোটদের সুন্দরভাবে তাদের বয়স অনুপাতে বই প্রণয়ন করা বাঞ্ছনীয়। সরকারকে ধন্যবাদ তারা সময়মতো বই পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে।

dr-mahbub-ali2
ড. মুহম্মদ মাহাবুব আলী
অধ্যাপক, ব্যবসা প্রশাসন বিভাগ, ডেফোডিল ইন্টারন্যাশ্যানাল ইউনিভার্সিটি এবং ম্যাক্রো ও ফিন্যান্সিয়্যাল ইকোনোমিস্ট

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

খেলার জগতের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পেশাদারি কাঠামো

লাল-সবুজের তরুণ প্রজন্মের এ সময়ের প্রিয় শ্লোগান, ‘বাংলাদেশের জান, সাকিববিস্তারিত পড়ুন

আগস্টের শোককে শক্তি হিসেবে নিতে পারি আমরা তরুণেরা

“যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তিবিস্তারিত পড়ুন

বাবা যখন ধর্ষক

যেখানে আপন বাবাই ধর্ষণ করে, সেখানে সৎ বাবার ধর্ষণ আমাদেরবিস্তারিত পড়ুন

  • দুই বড় দেশ যখন প্রতিবেশী ও প্রতিযোগী
  • মৌসুমি নৌকা শোরুম
  • ভারতবিদ্বেষ কেন বেড়ে চলেছে?
  • জনগণের কাছে শেখ হাসিনাই জয়ী
  • ‘গুলিস্তান’ নেই, তবু আছে ৬৪ বছর ধরে
  • পদ্মা ব্রিজ দিয়ে কী হবে?
  • যুদ্ধাহতের ভাষ্য: ৭০– “এখন অমুক্তিযোদ্ধারাই শনাক্ত করছে মুক্তিযোদ্ধাদের”
  • আসুন, বড় হই
  • আসুন, পিঠের চামড়া না তুলে পিঠ চাপড়ে দিতে শিখি
  • বাড়িওয়ালা মওদুদ ও বাড়িছাড়া মওদুদ
  • ব্রিটেনের নতুন সরকার নিয়ে যে শঙ্কা!
  • আওয়ামী লীগ ছাড়া কি আসলে কোনো বিকল্প আছে?