মঙ্গলবার, এপ্রিল ১৬, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

তারুণ্যের সংবাদ মাধ্যম

ব্রিটেনের নতুন সরকার নিয়ে যে শঙ্কা!

নানা ধরনের অসন্তোষ, অনাস্থা ও ব্যর্থতার দায় নিয়েই সরকার গঠন করতে যাচ্ছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় ঝুলন্ত পার্লামেন্ট জুটছে তাঁর ভাগ্যে। ঝুলন্ত এই পার্লামেন্টকে স্তব্ধ পার্লামেন্ট হিসেবেও আখ্যা দেওয়া যায়। ব্রিটেনের ইতিহাসে এটি হবে অন্যতম দুর্বল প্রকৃতির সরকার। সরকারের ভবিষ্যৎ নিয়ে সবারই একটি শঙ্কা রয়েছে। অনেকেই মনে করছে, খুবই ক্ষণস্থায়ী হবে এই সরকারের ভবিষ্যৎ। আইন প্রণয়ন থেকে শুরু প্রতিটি কাজে আসবে বাধা। নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে সরকারকে। এককথায় বলা যেতে পারে, এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য। বিশেষ করে সবচেয়ে বেশি যে শঙ্কাটি আমাদের চোখে ধরা পড়ছে সেটি হলো, প্রধানমন্ত্রীর নিজ দলের এমপিও তাঁকে পদত্যাগ করতে আহ্বান জানিয়েছেন প্রকাশ্যে এবং গোপনে। এ কারণে টেরিজা মে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করা যায়।

নির্বাচনের ফলকে তাই ব্রেক্সিট ম্যান্ডেট হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। লক্ষ করা গেছে, ব্রেক্সিট-বিরোধী আসনগুলোতে ভোটাররা কনজারভেটিভদের তুলনায় লেবার পার্টির এমপিদের ভোট দিয়েছেন বেশি, যা এই ইস্যুতে জনগণের অবস্থান নমনীয় হওয়ার সাক্ষ্য দিচ্ছে। উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে ডেভিড ক্যামেরনের নেতৃত্বে দলটি ৩৩১টি আসনে জয়ী হয়েছিল। কিন্তু আগাম নির্বাচনে টেরিজার দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের জন্য ৩২৬ আসন পেতেই ব্যর্থ হওয়ায় রাজনীতির মেরু ভিন্ন দিকে যাওয়াই স্বাভাবিক। অন্যদিকে ২৬১টি আসনে জয় পেয়ে আগের তুলনায় শক্তিশালী হয়েছে লেবার পার্টি। ২০১৫ সালের তুলনায় এবার ২৯টি আসন বেশি পেয়েছে দলটি।

আমরা জানি, ব্রেক্সিট প্রশ্নে কনজারভেটিভ ও লেবার দুই দলই বিভক্ত। বলতে গেলে গোটা ব্রিটিশ জাতিই বিভক্ত। কারণ, গণভোটে খুব কাছাকাছি শতাংশে ভোটের ভাগাভাগি হয়েছিল। আর এই বিভক্তির মধ্যে একটি ঝুলন্ত পার্লামেন্ট ব্রিটেনকে যে গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেবে এবং ইউরোপের রাজনীতিতেও আরো অশ্চিয়তা সৃষ্টি করবে, সেটাই এই নির্বাচনের রায়ের নেতিবাচক চিত্র।

মে তাঁর নেতৃত্ব টিকিয়ে রাখতে পারবেন কি-না, সেটাও এখন এক প্রশ্ন। ব্রেক্সিট গণভোটে ব্রেক্সিট সমর্থকদের জয়লাভের পর ক্যামেরন প্রধানমন্ত্রীর পদে ইস্তফা দেন এবং ব্রেক্সিটপন্থী টেরিজা মে নতুন টোরি সরকার গঠন করেন। এ সময় গণমাধ্যমে প্রচার ছিল, টেরিজা মে মার্গারেট থ্যাচারের চেয়েও অনেক বেশি জনপ্রিয়। কিন্তু তাঁর সেই জনপ্রিয়তার হাল নির্বাচনেই প্রমাণ হলো। তিনি সাধারণ নির্বাচনে জয়ী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না। পার্লামেন্টারি দলের সদস্যদের ভোটে জয়ী হয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। আর এ কারণে নিজের জনপ্রিয়তা প্রমাণ করতে নিজেকে এক সংকটের মুখে এনেছেন। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের জুনে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) যুক্তরাজ্যের থাকা না-থাকা নিয়ে গণভোট হয়। এতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ইইউতে থাকার পক্ষে ছিলেন। জনগণ বিচ্ছেদের পক্ষে রায় দিলে ক্যামেরন পরাজয় মেনে নিয়ে পদত্যাগ করেন। ওই সময়ে টেরিজা মে প্রধানমন্ত্রী হন।

এখন অনেকেই ধারণা করছেন, ব্রিটেনে ঝুলন্ত পার্লামেন্টের অনিশ্চয়তা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য শিগগিরই আরেকটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। যদি হয়, তাহলে আবার কোনো ইতিহাস সৃষ্টি হতে পারে। এরই মধ্যে টেরিজা মে আরো জানিয়েছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ব্রিটেনের আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদ বা ব্রেক্সিটের আলোচনা ১০ দিনের মধ্যে শুরু হবে। কিন্তু প্রকৃত অবস্থা কোন দিকে যাবে, তা এখনই পরিষ্কার বলা যাচ্ছে না।

যুক্তরাজ্যের পরবর্তী নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালে। নির্বাচনের কোনো প্রয়োজন না থাকলেও প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে ইচ্ছামাফিক ব্রেক্সিট বাস্তবায়নে (ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ) নিজের ক্ষমতাকে আরো নিরঙ্কুশ করতে হুট করে মধ্যবর্তী নির্বাচন দেন। তিনি সরকারকে শক্তিশালী করতে নির্বাচন দিয়েছিলেন; কিন্তু তাতে ব্যর্থ হলেন। ফলে নীতিগতভাবে তাঁর পদত্যাগের দাবি ওঠে। মূলত টেরিজা মে আসন হারিয়েছেন। ভোট হারিয়েছেন। সমর্থন হারিয়েছেন। তিনি যে জনরায় পেয়েছেন, তা তাঁর জন্য খুব বেশি ইতিবাচক নয়। ব্রিটেনের রাজনীতিতে এটি খুবই অমর্যদাকর।

প্রধানমন্ত্রী যতই আশার বাণী শুনিয়ে থাকুক না কেন, প্রকৃতপক্ষে ঝুলন্ত পার্লামেন্ট হওয়ায় ব্রেক্সিট সমঝোতার বিষয়টি নিয়ে নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি হবে। কারণ, ব্রেক্সিট ইস্যুতেই তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। এখন যেহেতু নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টির (ডিইউপি) সঙ্গে জোট করে সরকার গঠন করছেন, সেহেতু সবার মনে ব্রেক্সিট প্রশ্নটি বেশি জাগ্রত হয়েছে। কারণ, ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন প্রশ্নে দুই দলের একমত হওয়ার সমীকরণ অত্যন্ত জটিল। মূলত ঝুলন্ত পার্লামেন্ট তথা দুর্বল সরকার হলে এ বিষয়ে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়াটাই স্বাভাবিক।

গত বছর ব্রেক্সিটের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন মে। তবে ডেভিড ক্যামেরনের পদত্যাগের পর যখন তিনি দায়িত্ব নেন, তখন ব্রেক্সিটের পক্ষে কথা বলতে থাকেন। এরপর তিনি নিজের সমর্থন শক্ত করতে আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেন। ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নেও সবাই এর প্রশংসা করে। তারাও চাইছিলেন, মের অবস্থান আরো শক্ত হোক। ইইউ পার্লামেন্টের জার্মান কনজারভেটিভ সদস্য এলমার ব্রুক বলেন, ইউরোপীয়ারা মের এই সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোয় হতাশ হয়ে পড়বে। তিনি বলেন, ‘এখন কোনো প্রধানমন্ত্রী শক্তভাবে মতামত প্রকাশ করতে পারবে না। ফলে এখন আলোচনা করা কঠিন।’

যে ব্রেক্সিট ইস্যু এক প্রধানমন্ত্রীর বিদায়ঘণ্টা বাজিয়েছিল এবং একজনের আগমন ঘটিয়েছিল। সেই ব্রেক্সিট ইস্যু নতুন কোনো ইতিহাস তৈরির সূত্রপাত টানল। রাজনীতি কোন দিকে যায়, তা এখন ব্রিটেনবাসীর দেখার পালা। অন্যদিকে লেবার পার্টি শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে লড়াই চালিয়ে যাবে। যেকোনো কৌশলে রাজনীতিতে বাজিমাত করতে লেবারপ্রধান করবিনও পিছিয়ে থাকবেন না। তবে যে সমীকরণই হোক না কেন, ব্রিটেনের এই নির্বাচনের ফল আন্তর্জাতিক বিশ্বে ইতিবাচক ফল বয়ে আনুক—এটিই আমাদের প্রত্যাশা।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

খেলার জগতের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পেশাদারি কাঠামো

লাল-সবুজের তরুণ প্রজন্মের এ সময়ের প্রিয় শ্লোগান, ‘বাংলাদেশের জান, সাকিববিস্তারিত পড়ুন

আগস্টের শোককে শক্তি হিসেবে নিতে পারি আমরা তরুণেরা

“যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তিবিস্তারিত পড়ুন

বাবা যখন ধর্ষক

যেখানে আপন বাবাই ধর্ষণ করে, সেখানে সৎ বাবার ধর্ষণ আমাদেরবিস্তারিত পড়ুন

  • দুই বড় দেশ যখন প্রতিবেশী ও প্রতিযোগী
  • মৌসুমি নৌকা শোরুম
  • ভারতবিদ্বেষ কেন বেড়ে চলেছে?
  • জনগণের কাছে শেখ হাসিনাই জয়ী
  • ‘গুলিস্তান’ নেই, তবু আছে ৬৪ বছর ধরে
  • পদ্মা ব্রিজ দিয়ে কী হবে?
  • যুদ্ধাহতের ভাষ্য: ৭০– “এখন অমুক্তিযোদ্ধারাই শনাক্ত করছে মুক্তিযোদ্ধাদের”
  • আসুন, বড় হই
  • আসুন, পিঠের চামড়া না তুলে পিঠ চাপড়ে দিতে শিখি
  • বাড়িওয়ালা মওদুদ ও বাড়িছাড়া মওদুদ
  • আওয়ামী লীগ ছাড়া কি আসলে কোনো বিকল্প আছে?