শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

তারুণ্যের সংবাদ মাধ্যম

হাতের লেখা খারাপ হলে চিকিৎসক কী করবেন?

ছোটবেলায় আমি ভাবতাম, ওষুধ বিক্রেতারা নিশ্চয়ই বিশাল মাপের পণ্ডিত। কারণ, একটাই। ডাক্তারের দেওয়া প্রেসক্রিপশন বাসার কেউ বুঝতে না পারলেও ওষুধ বিক্রেতা কিন্তু ঠিকই বুঝতে পারেন এবং ওষুধ দেন। এমন দেখতে দেখতেই বড় হলাম। এক সময় বুঝলাম, ওষুধ বিক্রেতারা আসলে আর দশজন বিক্রেতার মতোই, চিকিৎসা বিষয়ে তাদের আদৌ কোনও লেখাপড়া নেই। তখনই মনে প্রশ্ন জাগে, তাহলে ওরা ডাক্তারদের ওই অস্পষ্ট প্রেসক্রিপশন দেখে ওষুধ দেয় কিভাবে?

উত্তরটা খুব সহজ। দীর্ঘদিন ওষুধ বিক্রি করতে করতে তাদের অভিজ্ঞতা হয়ে যায়। আর ওই অভিজ্ঞতা থেকেই তারা প্রেসক্রিপশন দেখে ওষুধের নাম বুঝে নেয়। কিন্তু সাধারণ মানুষ তো আর সারাক্ষণ প্রেসক্রিপশন নিয়ে থাকে না, তাই হঠাৎ কোনও প্রেসক্রিপশন পেয়ে তা পড়তেও পারে না। আমার ধারণা আমাদের প্রায় সবারই অবস্থা এই রকম। কিন্তু খুব হাস্যকর বিষয়টি হলো, একজন ওষুধ বিক্রেতার চেয়ে আপনি হয়তো বেশি শিক্ষিত, কিন্তু নিজের প্রেসক্রিপশনে চিকিৎসক কী কী ওষুধের নাম লিখেছেন তা আপনি পড়তে পারছেন না! যখনই এমন প্রেসক্রিপশন আমার হাতে এসেছে তখনই দোকান থেকে ওষুধ কিনে খাওয়ার সময় অস্বস্তি বোধ করেছি। বার বার মনে হয়েছে, দোকানদার প্রেসক্রিপশনটা ঠিক মতো পড়তে পেরেছে তো? ওষুধগুলো ঠিকমতো দিয়েছে তো?

একটা সময় পর্যন্ত আমি ডাক্তারের দেওয়া প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধ কেনার পর বাসায় এসে আবার সেই ওষুধগুলোর নাম গুগলে সার্চ দিয়ে দেখতাম, কোনও কোনও উপসর্গের জন্য ডাক্তার এই ওষুধগুলো দিয়েছেন। যদি দেখতাম, আমার অসুস্থতার ধরন এই উপসর্গগুলোর সঙ্গে মিলে যাচ্ছে, তবে একটু স্বস্তি পেতাম।

এখন থেকে হয়তো সেই কষ্ট আর করতে হবে না। এটা খুবই ইতিবাচক যে, আদালত চিকিৎসকদের পড়ার উপযোগী প্রেসক্রিপশন লিখতে বলেছেন, যাতে করে আর দোকানদারদের ওপর নির্ভরশীল হতে না হয়, রোগীরাই যেন বুঝতে পারে তাকে কী কী ওষুধ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে সবকিছু নিয়ম মেনে হয় না, জানি এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হবে না। আদালতের নিদের্শনা থাকলেও আমাদের এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। চিকিৎসক প্রেসক্রিপশন দেওয়ার পর আপনি যদি তা পড়তে না পারেন, তবে সঙ্গে-সঙ্গেই চিকিৎসককে প্রশ্ন করুন, স্পষ্ট অক্ষরে প্রেসক্রিপশন লিখতে বলুন। চিকিৎসক আপনার অফিসের বড় কর্তা নয় যে, তাকে ভয় পেয়ে চুপ করে বসে থাকতে হবে। অর্থের বিনিময়ে আপনি একজন চিকিৎসকের কাছ থেকে সেবা নিচ্ছেন। কাজেই সেবার মান যাচাই করা আপনার ন্যায্য অধিকার।

বাইরের দেশে চিকিৎসকরা কী কারণে কী ওষুধ দিচ্ছে তার সবকিছুই রোগীদের বিস্তারিত জানায়। এমনকি একটা অপারেশন করলেও তার বিস্তারিত রোগীকে বা রোগীর স্বজনকে জানায়। কিন্তু আমাদের দেশের ক’জন চিকিৎসক এভাবে সেবা দিয়ে থাকেন? তেমনি রোগীরাও চিকিৎসকদের কাছে কিছু জানতে চায় না। এখন থেকে ওষুধগুলোর নাম অন্তত জেনে নিন। কারণ দেশের বাইরে চিকিৎসা করাতে গেলে প্রায়ই শোনা যায় বাংলাদেশের চিকিৎসকদের দেওয়া ভুল ওষুধ খেয়ে রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গেছে। এমন তো হতেই পারে, চিকিৎসক হয়তো ঠিকমতই ওষুধ দিচ্ছেন, কিন্তু তাদের অস্পষ্ট প্রেসক্রিপশন বুঝতে না পেরে দোকানদার ভুল ওষুধ দিয়েছে।

এসব বিষয় ভাবলে মনে হয়, দেরিতে হলেও মহামান্য আদালত চিকিৎসকদের পড়ার উপযোগী প্রেসক্রিপশন লিখতে বলে একটি প্রশংসনীয় কাজ করছেন। কিন্তু সমস্যা এখানেই শেষ নয়। অনেক মানুষেরই তো হাতের লেখা খারাপ থাকে, কেউ কেউ খুব পেঁচিয়ে লেখে, কেউ বাঁকা করে আবার কেউ গোলগোল অক্ষরে লিখে থাকে। হাতের লেখায় স্টাইলের ভিন্নতা থাকা যেমন খুবই স্বাভাবিক, তেমনি আবার অসুন্দর লেখাও অনেকে লিখে থাকেন। চিকিৎসকরা তো আর সুন্দর হাতে লেখা প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ হয়ে ডাক্তারি করতে আসেন না। মেধা যাচাইয়ের মাধ্যমে তারা চিকিৎসক হয়ে ওঠেন। কাজেই একজন চিকিৎসকেরও হাতের লেখা খারাপ হতে পারে। আবার সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীর এত চাপ থাকে যে চিকিৎসকরা হয়তো ইচ্ছা থাকার পরও সুন্দর করে প্রেসক্রিপশন লেখার সময় পান না। অনেকে আবার বেশ সময় নিয়ে লিখেও স্পষ্ট করে প্রেসক্রিপশন লিখতে পারেন না। একেকজন মানুষের পঠন যোগ্যতাও একেক রকম। হয়তো দেখা যাবে, একই চিকিৎসকের লেখা একজন রোগী পড়তে পারছেন, কিন্তু আরেকজন পড়তে পারছেন না। তাহলে উপায়?

আসলে কম্পিউটারে টাইপ করা প্রেসক্রিপশনের কোনও বিকল্প নেই। সরকারকেই এই ব্যবস্থা নিতে হবে। আমি বেশ কয়েক মাস যাবৎ সিঙ্গাপুরে বাস করছি। এখানকার মাউন্ট এলিজাবেথ, মাউন্ট আলভার্নিয়াসহ বড় বড় হাসপাতালগুলোতে গেছি। বাইরে থেকে দেখতে এসব হাসপাতাল বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোর চেয়ে খুব একটা আলাদা নয়। মূল পার্থক্যটা হলো সেবা প্রক্রিয়ায়। সিঙ্গাপুরের হাসপাতালগুলোতে শুধু প্রেসক্রিপশনই কম্পিউটারে টাইপ করা নয়, প্রতিটি ওষুধের গায়ে টাইপ করে লেখা নির্দেশনা লাগিয়ে দেওয়া হয়। এসব নির্দেশনায় ওষুধ খাবার নিয়মাবলি লেখা থাকে। আর এসব কাজ করার জন্য চিকিৎসকের সহযোগী দুই-তিনজন থাকেন। বাংলাদেশে কী অবস্থা, খবর নিয়েছেন কেউ?

আমার তো মনে হয়, এখন শুধু চিকিৎসকরাই হাতে লিখে কাজ করছেন। সরকারি নথিপত্র তো অনেক আগে থেকেই টাইপরাইটার অথবা কম্পিউটারে টাইপ করে লেখা শুরু হয়েছে। চিঠিপত্রের যুগও তো অনেক আগেই গত হয়েছে। আমি নিজেও শেষ কবে হাতে লিখে কোনও দাফতরিক কাজ করেছি, মনে করতে পারছি না! তাহলে শুধু চিকিৎসা খাতটিই কেন এত অবহেলিত রয়ে গেছে? আদালতের নির্দেশনা মানতে গেলে তো, নিশ্চয়ই ওই চিকিৎসককে কম্পিউটারে টাইপ করে প্রেসক্রিপশন লিখতে হবে। চিকিৎসক কম্পিউটার পাবে কই? সরকার কি চিকিৎসকদের কম্পিউটার দেয়? যদিও বাংলাদেশে অনেক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক কম্পিউটারে টাইপ করে প্রেসক্রিপশন দিচ্ছেন। কিন্তু সেসব হাসপাতাল তো আবার অধিকাংশ মানুষের সাধ্যের বাইরে।

যাইহোক, আমরা কথায় কথায় আমাদের চিকিৎসা সেবার ত্রুটিগুলো ধরিয়ে দিয়ে চিকিৎসকদের ওপর দায় চাপাই। আসলে চিকিৎসকরা এই সেক্টরে কতটা সুযোগ-সুবিধা পেয়ে কাজ করতে পারছেন, সে বিষয়গুলোও দেখা উচিত।

লেখক: সাংবাদিক

[email protected]

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

খেলার জগতের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পেশাদারি কাঠামো

লাল-সবুজের তরুণ প্রজন্মের এ সময়ের প্রিয় শ্লোগান, ‘বাংলাদেশের জান, সাকিববিস্তারিত পড়ুন

আগস্টের শোককে শক্তি হিসেবে নিতে পারি আমরা তরুণেরা

“যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তিবিস্তারিত পড়ুন

বাবা যখন ধর্ষক

যেখানে আপন বাবাই ধর্ষণ করে, সেখানে সৎ বাবার ধর্ষণ আমাদেরবিস্তারিত পড়ুন

  • দুই বড় দেশ যখন প্রতিবেশী ও প্রতিযোগী
  • মৌসুমি নৌকা শোরুম
  • ভারতবিদ্বেষ কেন বেড়ে চলেছে?
  • জনগণের কাছে শেখ হাসিনাই জয়ী
  • ‘গুলিস্তান’ নেই, তবু আছে ৬৪ বছর ধরে
  • পদ্মা ব্রিজ দিয়ে কী হবে?
  • যুদ্ধাহতের ভাষ্য: ৭০– “এখন অমুক্তিযোদ্ধারাই শনাক্ত করছে মুক্তিযোদ্ধাদের”
  • আসুন, বড় হই
  • আসুন, পিঠের চামড়া না তুলে পিঠ চাপড়ে দিতে শিখি
  • বাড়িওয়ালা মওদুদ ও বাড়িছাড়া মওদুদ
  • ব্রিটেনের নতুন সরকার নিয়ে যে শঙ্কা!
  • আওয়ামী লীগ ছাড়া কি আসলে কোনো বিকল্প আছে?