হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি
রাশেদ খান মিলন,রাজবাড়ী প্রতিনিধিঃ গ্রামের পথে গরুর গাড়ি, বউ চলেছে শ্বশুর বাড়ি। কথাটি কবিতার লাইন হলেও এক সময় তা বাস্তব ছিল। এখন এমন দৃশ্য এক কথায় দুর্ভেদ্য ব্যাপার। কারণ গ্রাম-গঞ্জে গেলেও এখন এমন গরুর গাড়ির দেখা পাওয়া দুষ্কর।
এমন এক সময় ছিল যখন গ্রামের মানুষদের একমাত্র বাহন ছিল এই গরুর গাড়ি। সেটি খুব বেশি সময় আগের কথা নয়। ৩০/৩৫ বছর আগেও এইসব গরুর গাড়ির কদর ছিল। কিন্তু এখন কালের গহবরে হারিয়ে যেতে বসেছে গরুর গাড়ি। হয়তো খুব খুঁজে দু’একটি গরুর গাড়ি পাওয়া যাবে। আজকের সকালে বিলুপ্ত প্রায় গরুর
প্রতিযোগিতাঃ এক সময় গ্রাম বাংলায় নতুন ধান কাটার নবান্নের উৎসবের সময় গরুর গাড়ির প্রতিযোগিতার খেলা। গ্রামের মানুষের কাছে নির্মল আনন্দের উপকরণ এই খেলে। কার গাড়ি আগে যাবে এই প্রতিযোগিতা হত খোলা মাঠে। এই খেলাটিও হারিয়ে গেছে কালের আবর্তে।
মানুষ এক সময় যা কল্পনা করেনি তাই এখন পাচ্ছে হাতের কাছেই ইট-পাথরের মত মানুষও হয়ে পড়ছে যান্ত্রিক মানুষ তার নিজস্ব ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলছে। তারই ধারাবাহি কতায় এক সময়ের ব্যাপক জনপ্রিয় গ্রাম-বাংলা ও বাঙালির ঐতিহ্য এবং যোগাযোগ ও মালামাল বহনের প্রধান বাহন গরুর গাড়ি কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাবার পথে।
যান্ত্রিক আবিস্কার ও কৃষকদের মাঝে প্রযুক্তির ছোঁয়া লাগার কারণে গরুর গাড়ির স্থান দখল করে নিয়েছে ভ্যান, বাস, অটোরিকশা, নছিমন, করিমন, ভুটভুটি ইত্যাদি। কৃষকসহ সর্ব শ্রেণীর মানুষ এখন যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনের জন্য এ সকল যান্ত্রিক পরিবহণের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
এক সময় গ্রাম-বাংলায় কৃষকের ঘরে ঘরে শোভা পেত নানা ধরনের গরুর গাড়ি।এখন আর গ্রাম গঞ্জে আগের মতো গরুর গাড়ি চোখে পড়ে না।এ কারণে শহরের ছেলে- মেয়েরা দূরের কথা, বর্তমানে গ্রামের অনেক ছেলে- মেয়েরাও গরুর গাড়ির শব্দটির সাথে পরিচিত নয়।
বেশির ভাগ রাস্তাঘাট পাকা হওয়ার কারণে গরুর গাড়ী আর চালানো সম্ভব হয়না। তবে মাঠ থেকে ধান আনার ক্ষেত্রে বা গ্রামের দূর্গম এলাকায় ও রাস্তা ঘাট ভালো না থাকায় গরুর গাড়ি ছাড়া ওখান থেকে জিনিসপত্র আনা নেওয়া করা সম্ভব হয়না। এ কারণে গরুর গাড়ির উপরই তাদের ভরসা।
তবে রাস্তা ঘাটের উন্নয়ন হলে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই গরু গাড়ী গুলো আগামী প্রজন্ম হয়তো আর দেখতে পাবে না। এমন এক সময় আসবে যখন বাংলাদেশে আর কোন গরুর গাড়ি অবশিষ্ট থাকবে না। গরুর গাড়ি হবে শুধুই ইতিহাস।
কিন্ত বর্তমানে হারিয়ে গেছে গরুর গাড়ী আগেকার দিনে মানুষেরা বিয়ে সাদি থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এক স্থান থেকে অন্ন স্থানে যাতাযাত করতো গরুর গাড়ীর মাধ্যমে। কিন্তু বর্তমানে যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রাচিনতম গরুর গাড়ীটি হারিয়ে যেতে বসেছে।
মানুষেরা মালামাল বহন, নবান্ন উৎসবে কৃষকদের ধান বহনকারী একমাত্র বাহক ছিল গরুর গাড়ী। এমন কি নতুন বৌ আনা-নেয়া করা হত গরুর গাড়ীতে করে। পহেলা বৈশাখ সহ সকল অনুষ্ঠানে পরিবার পরিজন নিয়ে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে মেলা দেখতে যাওয়া গরুর গাড়ীতে বসে গাড়ী ওয়ালার ভাটিয়ালী গান শোনা সে যেন এক অন্য রকম অনুভূতি । কিন্ত বর্তমান গ্রাম বাংলা থেকে গরুর গাড়ী হারিয়ে যাওয়ায় এসব অনুভূতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বর্তমান যুগের ছেলে/মেয়েরা
ঐতিহ্যের ধারকবাহক এই গরুর গাড়ি একদিন বইয়ের পাতায় জায়গা করে নেবে। বর্তমান প্রজন্মের কেউ গরুর গাড়ি চিনবে না।
গরুর গাড়ি ঐতিহ্যেরই একটা অংশ। গ্রামীণ পরিবেশে গরুর গাড়ির প্রচলন থাকলেও বর্তমানে তেমন একটা চোখে পড়ে না। ইতিহাস-ঐতিহ্যের অনেক কিছু আমরা ক্রমান্বয়ে হারাচ্ছি। কালের গতিধারায় উন্নয়নের গতি থেমে নেই। আমাদের জীবন থেকে হারাচ্ছে এরকম নানা ঐতিহ্য।
পরিকল্পনা অনুসারে মোকাবেলা করা গেলে কিছুটা হয়তো রক্ষা পেতো। এজন্য দরকার সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সফল উদ্যোগ গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়ন। এভাবে করা গেলে গণ-হারে ঐতিহ্য ধ্বংস না-ও হতে পারতো।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
টাঙ্গাইলে ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা
টাঙ্গাইলের নাগরপুরে ছাত্রলীগ নেতা জাহিদ হাসান ঝলককে বাড়ি থেকে ডেকেবিস্তারিত পড়ুন
সন্ত্রাসী হামলায় আইনজীবী আহত
নিজস্ব সংবাদদাতা : কোর্টে বিরোধীদলীয় মামলা পরিচালনা করার কারনে সন্ত্রাসীবিস্তারিত পড়ুন
রাজধানীতে হাতিরপুলের আগুন নিয়ন্ত্রণে
রাজধানীর হাতিরপুলে কাঁচাবাজার সংলগ্ন ‘রাজ কমপ্লেক্স’ ভবনের দ্বিতীয় তলায় লাগাবিস্তারিত পড়ুন