অধ্যাপক ইয়াহ্ইয়া আখতারকে নিয়ে যে আদর্শ গল্পে পড়েছে সাড়া
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য (ভিসি) হতে যাচ্ছেন রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মোহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিলেন। অত্যন্ত নীতিবান এবং শিক্ষা ও ছাত্রবান্ধব শিক্ষক হিসেবে অনেকের কাছে সমাদৃত এই অধ্যাপক।
চবি থেকে স্নাতকোত্তরের পর কানাডার নামকরা ইউনিভার্সিটি অব ওয়াটারলু থেকে রাজনীতি বিজ্ঞানে দ্বিতীয় মাস্টার্স সম্পন্ন করেন অধ্যাপক আখতার। পিএইচডি সম্পন্ন করেন বিশ্বের আরেক নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব সিডনি থেকে।
এই অধ্যাপকের উপাচার্য হতে যাওয়ার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর তাকে নিয়ে একটি আদর্শ গল্প ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ব্যাপক সাড়া জাগানো গল্পটি লিখেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) একজন সদস্য, তিনিও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া গল্পটি ঢাকাটাইমসের পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো—
গল্পটা বলেই ফেললাম স্যার
আজ থেকে প্রায় বছর দশেক আগে। আমি তখন চট্টগ্রামে কর্মরত। ইয়াহিয়া স্যার আমার অফিসে হন্তদন্ত হয়ে আসলেন। একটি ফাইল এগিয়ে দিয়ে বললেন: “এই নাও আমার সকল আর্থিক লেনদেনের কাগজ। আমি করের হিসাব বুঝি না। একজন প্রতি বছর আমার রিটার্ন প্রস্তুত করে আমাকে দিয়ে সই করিয়ে নেয়। সব ঠিক আছে কিনা তুমি দেখে দাও।”
আমি স্যারের সব কাগজ পরীক্ষা করলাম। বহু পুরনো একটি কাগজ আমার নজরে পড়লো। জিজ্ঞেস করলাম, কাগজটির হালনাগাদ কোনো কপি আছে কিনা। জবাবে স্যার জানালেন, “নেই”। তিনি বললেন, “খুলনা থেকে হালনাগাদ কপি সংগ্রহ করে আমি আবার আসবো।”
এত পুরোনা হিসাব বের করতে অনেক কষ্ট হবে বললেও স্যার জানালেন যে, তিনি চেষ্টা করে দেখবেন। কয়েকদিন পর স্যার সেই কাগজ নিয়ে আসলেন। এ কাগজ সংগ্রহে স্যারের অনেক কষ্টের কথাও বললেন। আমাকে বললেন, “এবার দেখো সব ঠিক আছে কিনা”। আমি পরীক্ষা করে দেখলাম, অনেকদিন থেকে একটু একটু করে কম পরিমাণে কর দেওয়া হয়েছে। আজ সে অংকের পরিমান কেবল চাকরির বেতনের উপর নির্ভরশীল একজন শিক্ষকের জন্য অনেক বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আনুমানিক অংকটা কত হতে পারে তাও জানালাম। স্যারের চোখেমুখে উদ্বেগের চাপ লক্ষ্য করলাম। এখন কী করণীয় তা তিনি জানতে চাইলেন।
আমি দুটি অপশনের কথা বললাম। প্রথমে জানালাম “ঝামেলা মুক্ত থাকতে চাইলে এত জটিল ও পুরনো হিসাব না টেনে আগের মত করেই কর দিয়ে যেতে পারেন।” আমাকে কথা শেষ করতে না দিয়েই স্যার নিজেই বলে উঠলেন , “এটাতো অনৈতিক হবে”। জবাবে আমিও সম্মতিসূচক অভিব্যক্তি প্রকাশ করলাম। দ্বিতীয় অপশনটি যে সমুদয় কর পরিশোধ করা তা আর বিস্তারিত বলতে হলো না। আমি স্যারকে সময় নিয়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য পরামর্শ দিলাম। আমারও ইচ্ছে ছিলো স্যার যেনো ভেবেচিন্তেই সিদ্ধান্ত নিন।
স্যার বেশি দিন অপেক্ষা না করে একদিন পরেই আমার অফিসে এলেন। সামনের চেয়ারে বসে ধীর কণ্ঠে বললেন, “কেউ জানুক বা না জানুক আমিতো আজ জেনেছি, সরকার আমার কাছে করের টাকা পাবে। আমার কষ্ট হলেও সরকারের এই পাওনা আমাকে পরিশোধ করতেই হবে। এর অন্যথা হলে কেউ টের পাক বা না পাক আমিতো টের পাবো আমার সকল অর্জন ছিলো মিথ্যা; তোমাদেরকে যে শিক্ষা দিয়েছি অথবা যত ভালো ভালো কথা বলেছি সে সব কিছুই ছিলো প্রহসন।”
তারপর অনেকটা দৃঢ় কণ্ঠেই বলে উঠলেন, “আর সময় নেওয়ার প্রয়োজন নেই; তুমি হিসেব করে আমাকে জানাও ঠিক কত টাকা দিতে হবে।”
আমার পেছনের জানালা দিয়ে আসা শেষ বিকেলের আলোটা তখন ফিকে হয়ে আসছিলো। স্যার চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। আমিও দাঁড়ালাম। আমাকে উইশ করে স্যার দরজার দিকে এগিয়ে গেলেন। আমি হঠাৎ অনুভব করলাম, বিকালের ফিকে আলোকে দূরে ঠেলে দিয়ে একটি জীবন্ত প্রদীপ আলো ছড়াতে ছড়াতে চলে গেলো। কিছুক্ষণ ঠায় দাঁড়িয়ে থাকলাম। ততক্ষণে হালকা পাতলা গড়নের এ শিক্ষাগুরু আমার কাছে হিমালয় হয়ে উঠলেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদে স্যারের সাফল্য কামনা করছি।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
এইচএসসির ফল প্রকাশ মঙ্গলবার, জানা যাবে যেভাবে
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করাবিস্তারিত পড়ুন
ড. ইউনূস: নির্বিঘ্নে সব জায়গায় পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “এবার দুর্গাপূজারবিস্তারিত পড়ুন
ডিএমপি: ৫ আগস্ট পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. সারোয়ার জাহানবিস্তারিত পড়ুন