অন্ধকারে চিঠিশুন্য ডাকঘরঃ “নাই টেলিফোন নাইরে পিয়ন নাইরে টেলিগ্রাম”
৯ অক্টোবর পালিত হয়ে গেল বিশ্ব ডাক দিবস। ১৮৭৪ সাল থেকে এ দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। ১৯৬৯ সালে জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ডাক ইউনিয়নের ১৬ তম অধিবেশনে প্রতি বছরের ৯ অক্টোবর বিশ্ব ডাক ইউনিয়ন দিবস নির্ধারণ করা হয়।
১৯৮৪ সালে জার্মানির হামবুগে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ডাক ইউনিয়নের ১৯ তম অধিবেশেনে বিশ্ব ডাক ইউনিয়ন দিবসের নাম বিশ্ব ডাক দিবস হিসাবে বদলে যায়।
বাংলদেশ ১৯৭৩ সালের ৭ ফের্রুয়ারি ওই সংস্থার সদস্য হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয়। বিশ্ব ডাক দিবসে আমাদের ডাক বিভাগের নাজুক পরিস্থিতি হয়েছে। তাইতো মনে পড়ে পুরনো দিনের একটি গানের কলি ’নাই টেলিফোন , নাইরে পিয়ন , নাইরে টেলিগ্রাম , বন্ধুর কাছে মনের খবর কেমনে পোঁছাইতাম, বন্ধুরে তোর লাগি পরবাসী হইলাম ।
এই গানটি আগামীর মানুষ শুনলে ডাক কি তা জানতে ইতিহাস খুঁজবে । এগানটি শুনে ছিলাম প্রায় ৩০ বছর আগে বিষাদ সিন্ধু অবলম্বনে ও নবী জিবনী আংশিক থেকে নিয়ে লেখক মৃত আকিন উদ্দিনের লেখা অভিশপ্ত নিয়তী যাত্রা পালার এক শিল্পির মুখে। রাত যখন গভীর তখন শিল্পীর মুখে গানটি শুনে হাজারও শ্রোতা পুরুষ্কৃত করে ছিলেন শিল্পীকে। আনমনে শ্রবণশক্তিতে আজও কড়া নাড়ে সেই সুর ওই গানটি আজও মানুষের কাছে টানে । এটি শুধু গানই নয় বলা যায় বিরহের অঙ্গার এক প্রেমিকার মনের শুন্যতার বর্হিপ্রকাশ ।
বিরহী প্রেমিকা তার প্রিয় মানুষটির উদ্দ্যেশে এভাবেই নিবেদন করেছে ছন্দময় সুর মনের অঙ্কিত কথা গুলো তুলে ধরতে না পেরে ব্যথিত প্রাণের এই আকুলতা। সত্যিই কি টেলিফোন , টেলিগ্রাম ,পিয়নের অপ্রতুলতা ছিল । না অবুঝ মনকে সান্তনা দিতে প্রেমিকা মনের কন্ঠ র্চচা । এসব কিছুই না মনে হয়। সেই প্রাচীনতায় সামাজিক যোগায়োগ মাধ্যম ফেসবুক, মোবাইল , টুইটার, স্কাইপ, কিছুই ছিল না।গীতিকবি হয়তো সেই পরনো দিনের সঙ্গী হতে চেয়েছেন ।
আর তখনকার বাস্তবতায় প্রেমিক পাগলিনী মনে শেষে আশ্রয়স্থল হিসাবে বেছে নিয়েছিল গানটিকে। তাই তো অভিমানী সুরে গেয়ে ওঠে বন্ধু রে তোর লাগী পরবাসী হইলাম । হ্যাঁ সত্যিই পরবাসী হয়েছে ডিজিটাল এই যুগে আমাদের ডাক বিভাগ সম্পুর্ণ পরবাসী । এক সময়ের প্রিয় মাধ্যমটি আজ ডুবতে বসেছে । আগের মতো নেই তার কদর ।
তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার ,অব্যবস্থপনা .দুর্নীতি সবই গিলে খাচ্ছে ডাক বিভাগকে। রাস্তার পাশে ,গাছের সাথে অযত অবহেলায় পড়ে থাকা ডাকবাক্রা গুলো নিজের অস্বিত্ব রক্ষায় নীবর ক্রন্দন শুনিয়ে যাচ্ছে। নিচে ময়লা আবর্জনার স্তুপ আর গায়ে লেগে আছে পানের পিক। সব কিছু মিলিয়ে অসহায়ত্বের চাহনি ফুটে উঠছে ক্ষুধার্ত পোস্ট বক্সগুলোতে।
কোথাও দেখা যায় গাছে গিলে খাচ্ছে বক্সগুলো বিজ্ঞানের তড়িগড়িতে মানুষও যেন অনেকটা অসহায় । মুহুর্তের মধ্যেই যোগাযোগ কিংবা অল্প সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় বস্তটি অতি সহজে প্রেরন করা সম্ভব সেখানে কেনই বা পোস্ট অফিসে অনর্থক সময় ব্যয় করবে ।
মানুষ এখন বিভিন্ন পন্য আদান প্রদান করতে ব্যবহার করছে কুরিয়ার সাভির্সগুলো। যেভাবে টাকা কামাচ্ছে সে অনুযায়ী আমাদের ডাক বিভাগ রয়েছে একেবারে শুন্য আবাস্তব ভেঙ্গে পড়া এই সরকারি মাধ্যমটি সময়োপয়োগী করে তুলতে নেই কোন জোড়াল উদ্যোগ। লোকসানে লোকসানে অনেকটাই কাহিল এক সময়ের বার্তাবহনকারী জনপ্রিয় এ মাধ্যমটি পৃথিবী হাতের মুঠোয় ।
এমন বাস্তবতায় যদি কুরিয়ার সার্ভিসগুলো মোটা অঙ্কের মুনাফা অর্জন করতে পারে তাহলে সরকারি এ খাতটি কেন আয়ের মুখ দেখবে না । আর কেনই বা ডাক অফিসের নিয়োজিত কর্মচারীরা থাকবেন সুযোগ সুবিধাবঞ্চিত। যোগাযোগের প্রধানতম মাধ্যম হিসাবে ডাক বিভাগের কোন জুড়ি ছিল না ।
স্বামী-স্ত্রী ,প্রেমিক-প্রেমিকা , বন্ধু-বান্ধব , পিতা-মাতা ও ছেলে-মেয়ের মনের আবেগময় কথাগুলো পত্র পাতায় ভর করে দুর দুরান্তে নিজস্ব ঠিকানায় পৌছে দেওয়ার কাজটি বেশ যত সহকারের সম্পাদন করতো সরকারি জনপ্রিয় এ মাধ্যমটি ।
খাম পোষ্টকার্ড ডাক টিকিট চিঠি আদান প্রদান , মনি অর্ডারসহ নানা পরিসেবা যুক্ত ছিল । এখন ছেলে মেয়েরা যেন চিঠি লিখতে ভয় পায় অনেকেই আজ ব্যস্ত এসএমএস আর ফেসবুক চ্যাটিংয়ে । তাদের কাছে চিঠি লেখা ভারী অসহ্য ব্যাপার ।
সংবাদপত্রে প্রচারিত বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে আসে ডাক বিভাগের করুন বাস্তবতার চিত্র । ২৮ বছরে ডাক বিভাগ লোকসান দিয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি ২০০২-০৩ অর্থবছর থেকে লোকসানের ধকল বেশি মাত্রায় শুরু হয়। ওই বছরে লোকসান ছিল ৮৭কোটি ৯ লাখ । ২০০৩-০৪ অর্থবছরই লোকসানের পরিমান বেড়ে দাড়ায় ১২৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ।
২০০৮-০৯ সালে এর পরিমান ২০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায় ।অর্থনৈতিক তথ্য অনুযায়ী ২০০১২-১৩ অর্থবছরে ডাক বিভাগ ২৪১ কোটি ২৬ লাখ টাকার রাজস্ব আয় করেছে । এ সময় সংস্থাটি ব্যয় করেছে ৪১৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা এই হিসাবে এক অর্থবছরে ডাক বিভাগের লোকসান হয়েছে ১৭৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা । ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রাজস্ব আয় ২১ কোটি ১৩ লাখ টাকায় নেমে আসে ।
ব্যয় বেড়ে দাড়ায় ৪৪৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এই হিসাবে এক বছরে ডাক বিভাগের লোকসান দাড়িয়েছে ২২৯ কোটি ৩৩লাখ টাকা। জানা যায় আন্তর্জাতিক মনি অর্ডারের প্রায় ৮০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক।
ডাক বিভাগের সোনালি দিনগুলো এখন কেবলই অতীত। আগামীর মানুষের কাছে এই ডাক বিভাগের কথা জানতে বা দেখতে যেতে হবে চিড়িয়াখানায় বা জাদুঘরে। তাই আজই উদ্দ্যোগ গ্রহন করার প্রতিশ্রুতি নেওয়া উচিত।
![](https://amaderkonthosor.com/wp-content/uploads/2024/06/cats6-1.jpg)
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
![](https://amaderkonthosor.com/wp-content/uploads/2024/07/1-39-622x350.jpg)
কুড়িগ্রামে ভয়াবহ বন্যায় ২ লাখ মানুষ পানিবন্দী
কুড়িগ্রামে টানা ৬ দিন বন্যায় ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। মানুষজনবিস্তারিত পড়ুন
![](https://amaderkonthosor.com/wp-content/uploads/2024/07/1-13-622x350.jpg)
এসএমই ফাউন্ডেশনের নতুন এমডি আনোয়ার হোসেন চৌধুরী
এসএমই ফাউন্ডেশনের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে যোগ দিয়েছেন সাবেকবিস্তারিত পড়ুন
![](https://amaderkonthosor.com/wp-content/uploads/2024/06/1-160-601x350.jpg)
কক্সবাজারে পাহাড় ধসে প্রাণ গেল মসজিদের মোয়াজ্জেম ও অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর
কক্সবাজারে পাহাড় ধসে মারা গেলেন মসজিদের এক মুয়াজ্জিন এবং তারবিস্তারিত পড়ুন