উত্তর প্রদেশে মাদ্রাসা চালু রাখতে বাধা কেটে গেল
ভারতের উত্তর প্রদেশে ২০০৪ সালে তৎকালীন রাজ্য সরকারের তৈরি মাদ্রাসা আইন বৈধ ও সাংবিধানিক বলে রায় দিয়েছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। এলাহাবাদ হাইকোর্টের এ সংক্রান্ত আগের একটি রায় খারিজ করে মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট এ রায় দেন।
এই রায়ের ফলে উত্তর প্রদেশের সাড়ে ১৬ হাজার স্বীকৃত মাদ্রাসার প্রায় ১৭ লাখ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ ঘিরে অনিশ্চয়তা কেটে গেল। মাদ্রাসাগুলো চালু রাখতেও আর কোনো বাধা থাকল না।
প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জে বি পর্দিওয়ালা ও বিচারপতি মনোজ মিশ্রর এজলাস রায় দেওয়ার পাশাপাশি জানিয়েছেন, মাদ্রাসাগুলো দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষার সনদ দিতে পারবে। তবে তারা ফাজিল ও কামিল, অর্থাৎ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দিতে পারবে না। কারণ, এটি ইউনিভার্সিটি গ্র্যান্ট কমিশনের (ইউজিসি) বিধিনিয়মের পরিপন্থী।
২০০৩ উত্তর প্রদেশে সালে ক্ষমতায় আসার পরের বছর ২০০৪ সালে সমাজবাদী পার্টির নেতা মুখ্যমন্ত্রী মুলায়ম সিং যাদব মাদ্রাসা বোর্ড আইন চালু করেছিলেন। ২০১৭ সালে বিজেপি নেতা যোগী আদিত্যনাথ মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর রাজ্যের মাদ্রাসাগুলোর সমীক্ষা করান। খতিয়ে দেখা হয়, মাদ্রাসাগুলোয় বেআইনিভাবে বিদেশি অনুদান আসছে কি না। তিনি মাদ্রাসা শিক্ষাকে মূলধারার শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে জুড়ে দিতেও উদ্যোগী হন।
মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়ে সরকারি স্তরে বিতর্ক শুরুর পর অংশুমান রাঠোর নামে এক ব্যক্তি এলাহাবাদ হাইকোর্টে মামলা করেন। তিনি আবেদনে বলেন, “মাদ্রাসা আইন অসাংবিধানিক, কারণ তা দেশের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রবিরোধী।”
এরপর গত মার্চে ওই আইন অসাংবিধানিক বলে রায় দেন এলাহাবাদ হাইকোর্ট। সেই রায়ে বলা হয়েছিল, ওই আইন ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি লঙ্ঘন করছে। রায়ে মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত শিশুদের সাধারণ স্কুলব্যবস্থার অধীনে নিয়ে আসার নির্দেশও রাজ্য সরকারকে দেওয়া হয়েছিল।
মঙ্গলবার রায় ঘোষণার সময় বিচারপতিরা জানান, হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছিল, উত্তরপ্রদেশের মাদ্রাসা আইন ভারতীয় সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রের পরিপন্থি। কিন্তু বাস্তবে তা ঠিক নয়। শিক্ষার অধিকার সবার আছে এবং মাদ্রাসা বোর্ড সাধারণ বা জেনারেল শিক্ষার সঙ্গে মাদ্রাসা শিক্ষার সমন্বয় তৈরি করেছে। ফলে এই আইনকে কখনোই অসাংবিধানিক বলা যায় না। মাদ্রাসা বোর্ডে পড়াশোনা করার পরে ছাত্রছাত্রীদের সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। সেই সার্টিফিকেট নিয়ে পরবর্তী স্তরে যেকোনো সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করতে পারেন ছাত্রছাত্রীরা। ফলে আইনটি কখনোই অসাংবিধানিক নয়।
একইসঙ্গে কওমি এবং খারিজি মাদ্রাসা নিয়ে মন্তব্য করেছে সুপ্রিম কোর্ট। এই ধরনের মাদ্রাসা কতটা আইনসংগত তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
এ বিষয়ে জামিয়াত উলেমায় ইসলামের মুখপাত্র ফজলুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, “মাদ্রাসা নিয়ে একাধিক মামলা চলছে আদালতে। এদিন সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছে, তা কেবলমাত্র উত্তর প্রদেশ নিয়ে। এই রায়কে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি।”
তার অভিযোগ, একাধিক বিজেপি রাজ্যে মাদ্রাসা বন্ধ করার চেষ্টা চলছে। উত্তরপ্রদেশের পাশাপাশি মধ্যপ্রদেশ এবং আসামে একাধিক মাদ্রাসা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে সেখানকার রাজ্য সরকার। অনেকে মাদ্রাসাকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। আদালতে তা নিয়েও মামলা চলছে। সেই মামলায় আজকের এই রায় প্রভাব ফেলবে বলেও মনে করেন তিনি।
এদিকে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়েছে সমাজবাদী পার্টি। কংগ্রেসও এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে। বিজেপি বলেছে, তারা সুপ্রিম কোর্টের রায়কে সম্মান জানাবে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
পোষ্য কোটাকে ‘লাল কার্ড’ দেখালেন রাবি শিক্ষার্থীরা
পোষ্য কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব করায় রাজশাজী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)বিস্তারিত পড়ুন
ভারতীয় হাইকমিশনারকে দেওয়া বিএনপির ৩ সংগঠনের স্মারকলিপিতে যা রয়েছে
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা, জাতীয় পতাকারবিস্তারিত পড়ুন
বাশার আল-আসাদের পতনের নায়ক কে এই জোলানি?
সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছেন ইসলামপন্থী সশস্ত্রবিস্তারিত পড়ুন