উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছে ভারত!
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপেং ২০১৫ সালে পাকিস্তান সফর করেন। এ সফরে চীনের প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ চীন-পাকিস্তান সম্পর্ককে মধুর চেয়েও মিষ্টি বলে উল্লেখ করেন। পাকিস্তানের সাথে চীনের মধুর সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হয় চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর স্থাপনের ব্যাপারে দুই দেশের একমত হওয়ার মধ্য দিয়ে। চীনা প্রেসিডেন্টের এ সফরে বিভিন্ন প্রকল্পে ৪৬ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়, যার বেশির ভাগ দেশটির বিভিন্ন স্থানে রাস্তা ও বিদ্যুৎকেন্দ্রের অবকাঠামো নির্মাণে ব্যয় হবে।
চীনা এই বিনিয়োগের একটি অংশ ব্যয় হচ্ছে বেলুচিস্তানের গোয়াদর বন্দর থেকে জিনজিয়াং প্রদেশের কাশগড় পর্যন্ত সড়ক ও রেলপথ নির্মাণে। এ রাস্তাটি যাবে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মির ও গিলগিট বাল্টিস্তান হয়ে। গোয়াদর বন্দরে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজের সাথে চীন আগেই সম্পৃক্ত ছিল। মধ্যপ্রাচ্য থেকে জ্বালানির ট্যাংকারগুলো এখন ঘুরপথে সঙ্কীর্ণ মালাক্কা প্রণালী হয়ে চীনে প্রবেশ করে। গোয়াদর বন্দরের সাথে চীনের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হলে আরব সাগরে ঢোকার সুযোগ পাবে চীন। স্বাভাবিকভাবে চীনের জ্বালানি খরচ শুধু সাশ্রয় হবে না, চীনা পণ্যের বাজার মধ্যপ্রাচ্য আর আফ্রিকার দেশগুলোতে সম্প্রসারণের কাজও সহজ হবে।
পাকিস্তানে চীনের এই বন্দর নির্মাণ ও সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের সিদ্ধান্তে শঙ্কায় পড়েছে ভারত। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের পর থেকে বিভিন্নভাবে ভারত উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। ভারতের ভয়, এই অর্থনৈতিক করিডোর আসলে চীন-পাকিস্তানের সামরিক করিডোরে রূপ নেবে। এই সড়ক অবকাঠামো গড়ে ওঠার মাধ্যমে এ অঞ্চলে সামরিক ভারসাম্য বদলে যাবে। চীনের প্রভাব আরো বাড়বে। এর পর থেকে ভারতের কৌশল হয়ে দাঁড়িয়েছে পরোক্ষভাবে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরের কাজে বিভিন্নভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা। এ জন্য বেলুচিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাথে ভারতের আগের যোগাযোগ বাড়ানো হয়েছে।
বিভিন্ন সময় চীনা প্রকৌশলীদের ওপর বালুচ বিদ্রোহীরা হামলা চালিয়েছে। এতে একাধিক চীনা নাগরিক নিহত হয়েছে। এ বছরের মার্চে বেলুচিস্তান থেকে ভারতীয় নৌবাহিনীর একজন সাবেক কর্মকর্তা কুলভুষন যাদবকে বিদেশী পাসপোর্টসহ আটক করা হয়। পাকিস্তানের দাবি এই কর্মকর্তা ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে বালুচ বিদ্রোহীদের সহায়তার জন্য ইরান হয়ে বেলুচিস্তানে এসেছিলেন। এখনো ভারতীয় এই নাগরিক পাকিস্তানের হেফাজতে আছে। গত ১৪ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বালুচ বিদ্রোহীদের পাশে দাঁড়ানোর প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন। ভারতের এ ঘোষণাকে চীন-পাকিস্তান সম্পর্কের ওপর আঘাত হানার একটি মরিয়া প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ভারতের জন্য সমস্যা হচ্ছে, পাকিস্তান-চীন অর্থনৈতিক করিডোর বন্ধ করার ক্ষেত্রে করণীয় কিছু নেই। বালুচ বিদ্রোহীদের দিয়ে বাধা সৃষ্টির প্রচেষ্টায় চীন বিক্ষুব্ধ। যদিও দেশটির পুরনো নীতি অনুযায়ী প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করছে না। পাকিস্তানের নিরাপত্তাবাহিনীর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে চীন। একই সাথে অর্থনৈতিক করিডোরের কার্যক্রম আরো জোরদারের নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কাশ্মির নিয়ে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার মধ্যে গত সপ্তাহে করাচি থেকে পেশোয়ার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণে ৫ বিলিয়ন ডলারের নতুন ঋণের ব্যাপারে একমত হয়েছে দুই দেশ। অর্থনৈতিক করিডোরের অংশ হিসেবে এই রেলপথ নির্মাণ করা হবে। চীনের বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়াবে ৫১ বিলিয়ন ডলার।
গোয়াদর ও করাচি বন্দরকে ঘিরে যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে চীনা বিনিয়োগ এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে ইরান এই অর্থনৈতিক করিডোরে সম্পৃক্ত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। গোয়াদর বন্দরের উল্টো পাশে ইরানের চাবাহারে ভারতের আর্থিক সহায়তায় আরেকটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরে ইরানের সম্পৃক্ত হওয়ার এই আগ্রহ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। শুধু ইরান নয়, সৌদি আরবও অর্থনৈতিক করিডোরে সম্পৃক্ত হতে চায়। ইরান ও সৌদি আরবের এ আগ্রহের কারণ হলো চীনে জ্বালানি তেলের বাজারে নিজেদের অংশগ্রহণ বাড়ানো। কারণ ইরান ও সৌদি আরব উভয়ই চীনে আরো বেশি জ্বালানি বিক্রি বৃদ্ধি করতে আগ্রহী। এ ক্ষেত্রে গোয়াদর বন্দর হয়ে উঠতে যাচ্ছে বড় বাণিজ্য কেন্দ্র। আর এ থেকে লাভবান হবে পাকিস্তান ও চীন।অন্য দিকে অর্থনৈতিক করিডোরকে কেন্দ্র করে চীন-পাকিস্তান সম্পর্কে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছে ভারত।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত চলায় এমবাপ্পেকে বিজ্ঞাপন থেকে সরাল রিয়াল
আর্থিক দ্বন্দ্বের মধ্যে পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর একেরবিস্তারিত পড়ুন
মিয়ানমারে বন্যায় মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে ২২৬
ঘূর্ণিঝড় ইয়াগির প্রভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণেবিস্তারিত পড়ুন
ইসরাইলি হামলায় আরও ৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত
গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বাহিনীর তান্ডবে প্রাণ গেছে আরও ৩৮বিস্তারিত পড়ুন