এক বিপ্লবীর কত কাহিনী
চে। চে গুয়েভারা। কাগজে-কলমে পুরো নাম আর্নেস্তো গুয়েভারা ডেলা সেরনা। চে গুয়েভারার নাম শুনলেই চোখে ভাসে একজন রোমান্টিক-বিপ্লবীর অবয়ব। সারা বিশ্বের শোষিত, নিপীড়িত ও মুক্তিকামী মানুষের প্রদীপ্ত প্রতীক তিনি। সাম্রাজ্যবাদী শাসকদের কাছেও সমানভাবে পরিচিত এই নামটি। ল্যাটিন আমেরিকার এই বৈপ্লবিক বরপুত্র দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের কাছেও সমানভাবে পরিচিত। ১৯৬৭ সালে তাকে হত্যা করা হয়, কিন্তু বছরের পর বছর- দশকের পর দশকজুড়ে রয়ে গেছেন তারুণ্যের প্রতীক হয়ে। যে তরুণ স্বপ্ন দেখে, যে তরুণ সবার জন্য সমান একটি পৃথিবীকে আলিঙ্গন করতে চায়, তার সবচেয়ে বড় অবলম্বন চে। ৯ অক্টোবর চলে গেল চের প্রয়াণ দিবস। বিপ্লবী চেতনার অনির্বাণ শিখা হয়ে জ্বলতে থাকা চেকে নিয়ে আমাদের এ আয়োজন।
চে, তোমার মৃত্যু আমাকে অপরাধী করে দেয়
আমার ঠোঁট শুকনো হয়ে আসে, বুকের ভিতরটা ফাঁকা
আত্দায় অভিশ্রান্ত বৃষ্টিপতনের শব্দশৈশব থেকে বিষণ্ন দীর্ঘশ্বাস
চে, তোমার মৃত্যু আমাকে অপরাধী করে দেয়
বলিভিয়ার জঙ্গলে নীল প্যান্টালুন পরা
তোমার ছিন্নভিন্ন শরীর
তোমার খোলা বুকের মধ্যখান দিয়ে
নেমে গেছে
শুকনো রক্তের রেখা
চোখ দুটি চেয়ে আছে
সেই দৃষ্টি এক গোলার্ধ
থেকে ছুটে আসে অন্য গোলার্ধে
চে, তোমার মৃত্যু আমাকে অপরাধী করে দেয়…’
এতক্ষণে বুঝে যাওয়ার কথা কার মৃত্যু সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে অপরাধী করে দিয়েছে! তিনি একজনই। তার পুরো নাম আর্নেস্তো চে রাফায়েল গুয়েভারা ডেলা সেরনা। আর বিশ্বজুড়ে তার পরিচিতি চে গুয়েভারা কিংবা শুধু চে নামেই। চে গুয়েভারা বিশ্বের মানুষের কাছে এক জীবন্ত বিপ্লবের নাম। বিশ্বের নিপীড়িত, শোষিত মানুষের মুক্তির অগ্রদূত তিনি। সাম্যবাদী চিন্তা আর শোষিতের বঞ্চনার বিরুদ্ধে অবিনাশী সংগ্রামের মূর্ত প্রতীক তিনি। সংগ্রাম আর আদর্শের লড়াইয়ে অপরিসীম আত্দত্যাগ চে নামটিকে অমরত্ব এনে দিয়েছে। ষাট ও সত্তর দশকে ল্যাটিন আমেরিকা, আফ্রিকা, এশিয়া তথা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের কাছে বিপ্লবের সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছেন। শুধু তখনকার বিশ্বই নয়, আজকের আধুনিক বিশ্বেও বৈশ্বিক আর আদর্শিক চেতনার প্রতিশব্দ চে।
জন্মসূত্রে আর্জেন্টিনীয় চে গুয়েভারা একাধারে একজন মার্কসবাদী, বিপ্লবী, চিকিৎসক, লেখক, বুদ্ধিজীবী, গেরিলা নেতা, কূটনৈতিক, সামরিক তত্ত্ববিদ এবং কিউবার বিপ্লবের প্রধান ব্যক্তিত্ব ছিলেন। চে গুয়েভারা ১৯২৮ সালের ১৪ জুন আর্জেন্টিনার রোসারিও শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আর্নেস্তো গুয়েভারা লিঞ্চ এবং মা সিলিয়া দ্য লা সেরনা। চের বাবা ছিলেন একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে চে ছিলেন সবার বড়। মাত্র দুই বছর বয়সে তিনি মারাত্দক অ্যাজমায় আক্রান্ত হন, যা তাকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ভুগিয়েছে। ছোটবেলা থেকেই চের চরিত্রে বিপ্লব আর প্রতিবাদের চিহ্ন পাওয়া যায়।
আর সেই প্রতিবাদী মানসিকতার কারণেই একজন পেশাদার চিকিৎসক থেকে বিপ্লবী গেরিলায় পরিণত হন তিনি। বিপ্লবের প্রয়োজনে চে ছুটে গেছেন গুয়াতেমালা, কিউবা, পেরু, কঙ্গো, কোস্টারিকা, ইকুয়েডর, পানামা, এল সালভেদর, ভেনেজুয়েলা, ভিয়েতনাম এবং বলিভিয়ায়। আর এই বিপ্লব সংঘটিত করতে গিয়ে ১৯৬৭ সালের ৮ অক্টোবর মার্কিন সমর্থনপুষ্ট বলিভীয় সেনাবাহিনীর হাতে আহত অবস্থায় বন্দী হন চে গুয়েভারা। পরদিন ৯ অক্টোবর বলিভিয়ার সেনাবাহিনীর এক মদ্যপ সৈনিক তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। মৃত্যুর আগে চে বলেছিলেন, ‘আমি জানি তোমরা আমাকে গুলি করে মারবে। আমি জীবিতাবস্থায় বেরোতে পারব না। ফিদেলকে বলো এই পরাজয় বিপ্লবের শেষ হয়ে যাওয়া নয়। বিপ্লবের বিজয় হবেই। সালেইদাকে (চের স্ত্রী) বলো ব্যাপারটি ভুলে যেতে, সুখী হতে বলো, বাচ্চাদের লেখাপড়ার ব্যাঘাত না ঘটে, আর সৈন্যদের বলো, যেন আমার দিকে ঠিকভাবে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে।’
কী অকুতোভয় অবিচল বিপ্লবী। সেদিন তার দৈহিক মৃত্যু হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু আসলে সেটা ছিল চের পুনরুত্থান। তিনি জীবন দিয়ে প্রমাণ করেছেন, বিপ্লবীর মৃত্যু আছে, কিন্তু বিপ্লবের মৃত্যু নেই। শহীদ হওয়ার পর বিপ্লবী আদর্শের অবিচল প্রতীক হয়ে ওঠেন চে। ল্যাটিন আমেরিকাই শুধু নয়, গোটা বিশ্বের শোষিত-বঞ্চিত-মুক্তিকামী মানুষের আদর্শে পরিণত হন মহান বিপ্লবী কমরেড চে গুয়েভারা। গোটা বিশ্বের মানুষের কাছে তিনি অবিনাশী মৃত্যুঞ্জয়ী আদর্শ হিসেবে ছিলেন, আছেন এবং থাকবেনও! সবাই হয়তো সেই মৃত্যুঞ্জয়ীর ছায়ার ভিতর খুঁজবে মুক্তির উল্লাস।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
মানবদেহে আদার অনেক উপকার
আমাদের দিনে কয়েকবার রঙিন খাবার খাওয়া উচিত, কিন্তু আপনি কিবিস্তারিত পড়ুন
হোটেল ঘরে বিছানার চাদর সাদা হয় কেন ?
বেড়াতে গিয়ে হোটেলের ঘরে ঢুকে প্রথম যে বিষয়টি নজরে আসে,বিস্তারিত পড়ুন
ধনিয়া পাতার উপকারি গুণ
চিকিৎসকদের মতে, ধনে বা ধনিয়া একটি ভেষজ উদ্ভিদ যার অনেকবিস্তারিত পড়ুন