কোটা পুনর্বহালের রায় দিয়েছেন আদালত, সমাধান আদালতের মাধ্যমেই করতে হবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, কোটা ব্যবস্থা সরকার পুনর্বহাল করে নাই। রায় দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। সমাধান আদালতের মাধ্যমেই করতে হবে, অন্যথায় আদালত অবমাননা হবে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রেসক্লাবে সাপ্তাহিক গণবাংলা ও বাংলাদেশ স্বাধীনতা পরিষদ আয়োজিত ‘ভারসাম্যের পররাষ্ট্রনীতি ও বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নয়ন’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি সহানুভূতি হয়েই সরকার কোটা ব্যবস্থা বাতিল করেছিল উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘ছাত্র-ছাত্রীদের দাবির প্রেক্ষিতে আমাদের সরকার কোটা ব্যবস্থা বাতিল করেছিল। সেই কোটা ব্যবস্থা সরকার পুনর্বহাল করে নাই। এটি আদালত রায় দিয়েছে। আদালত বাংলাদেশের স্বাধীন। দেশের সর্বোচ্চ আদালত রায় দিয়েছেন। তো আন্দোলনটা নিশ্চয়ই আদালতের বিরুদ্ধে হচ্ছে। কারণ সরকার তো বাতিল করে নাই। যেহেতু সরকার করে নাই তাই সমাধানটাও আদালতের মাধ্যমেই করতে হবে। অন্যথায় আদালত অবমাননা হবে।’
নিজেও শিক্ষক ছিলেন বলে আন্দোলনকারী শিক্ষকদের প্রতি সহানুভূতি আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সর্বজনীন পেনশন একটি চমৎকার ব্যবস্থা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এটি করেছেন। যেখানে একজন দিনমজুরও এর আওতায় আসবে। এখন সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়িত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তারা এর আওতায় আসছে। স্বল্প আয়ের মানুষদের বিশেষ প্রণোদনা দেওয়া হবে। প্রবাসীরাও এই পেনশনের আওতায় আসবে। এখানে হয়তো বোঝার ঘাটতি আছে। এ কারণেই সমস্যাগুলো তৈরি হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আজকে শিক্ষকরা বসবেন, সেখানে একটা সমাধান হবে।’
যাদের নিজেদের কিছু করার থাকে না তারা পরজীবী হয় মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘নিজেদের আন্দোলন করার কোনো ক্ষমতা নাই। যাদের নিজেদের কোনোকিছু করার ক্ষমতা থাকে না তারা হয় পরজীবী। বিএনপি এখন পরজীবী রাজনৈতিক দলে রূপান্তরিত হয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা কোটার ব্যাপারে আন্দোলন করতেছে বিএনপি সেখানে ঢুকেছে। শিক্ষকরা পেনশন নিয়ে আন্দোলন করছে বিএনপি সেখানে ঢুকেছে।’
বিএনপির সমালোচনা করে মন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির নেতারা ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে দশ মিনিটে এয়ারপোর্টে গিয়ে বলে শেখ হাসিনা কোনো উন্নয়ন করেনি। পদ্মা সেতু দিয়ে ওপাড় গিয়ে জনসভা করে বলে দেশে কিছুই হয় নাই। তারপর মেট্রোলে চড়ে আরামে এসিতে বাতাস খেতে খেতে প্রেসক্লাব, সচিবালয়ের সামনে এসে গরম বক্তৃতা দিয়ে বলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে কিছুই হয় নাই। প্রেসক্লাব, সচিবালার সামনে প্রতিদিনই তাদের কিছু না কিছু থাকে। আজকেও আছে হয়তো। মেট্রোরেলে এসে এখানে জমায়েত হয়ে তারা বক্তৃতা করবে।’
‘বর্তমানে বিএনপিতে প্রচণ্ড অস্থিরতা চলছে। বিএনপিতে এখন তারেক ভূত। কারণ আতংক। বিএনপিকে এখন তারেক আতংক, তারেক ভূতে পেয়েছে। কখন কার পদবি চলে যায়। মধ্যরাতের পর সকাল বেলা উঠে হঠাৎ দেখে কি না আমি দলীয় পদে নাই। তো তারেক আতংক, অনেকেই একে তারেক ভূত বলছে।’
দেশে কানেক্টিভিটি বাড়ানোর জন্য ভারতের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ইউরোপে কোনো সীমান্ত নেই। সীমান্ত চৌকিগুলো এখন মিউজিয়াম। আপনি যদি ট্রেনে আসেন, ট্রেনে যদি আপনি কোনো কারণে তন্দ্রাচ্ছন্ন হন তাহলে হয়তো আপনি বেলজিয়াম যাচ্ছিলেন দেখা গেল আপনি জার্মানি চলে গেছেন। কারণ কোনো চেক নাই কিছু নাই। এরকম অনেকের ক্ষেত্রে ঘটেছে। আমাদের বন্ধুবান্ধবের ক্ষেত্রেও এরকম ঘটনা ঘটেছে। এরকম আপনি গাড়ি চালিয়ে যে কখন এক দেশ থেকে আরেক দেশে ঢুকে গেছেন এটি বুঝা যায় না। বোঝা যায় তখন যখন মোবাইলে একটা এসএমএস আসে যে আপনি এখন অমুক টেলিকমের অধীনে আছেন। তখন কেউ যদি আপনাকে নোটিশ করে তাহলে বুঝা যাবে। আদারওয়াইজ বুঝার কোনো উপায় নেই। সেখানে কি দেশগুলোর সর্বভৌমত্ব নষ্ট হয়ে গেছে? সেখানে কি বেলজিয়াম জার্মানির অধীনে হয়ে গেছে? মানে নেদারল্যান্ড বেলজিয়ামের অধীনে হয়ে গেছে? সেখানে তো কারো সার্বভৌমত্ব নষ্ট হয় নাই। আমাদের দেশে এই যে কানেক্টিভিটি বাড়ানোর জন্য সমঝোতা স্মারকগুলো করেছি এরপর বিএনপি যেভাবে রব তুলেছে যে আমরা ভারতের অধীনে হয়ে গেছি, আমাদের সার্বভৌমত্ব নষ্ট হয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন যে হনুমান যখন একজনে ডাক দেয় তখন সব হনুমান পেছন থেকে একসঙ্গে ডাক দেয় কোনো সময়। বাংলাদেশে ৮ প্রকার হনুমান বা বানর আছে। আমি কাউকে হনুমান বা বানরের সঙ্গে তুলনা করছি না। কিছু দুষ্টু লোকের মুখ তো কোনোভাবে বন্ধ করা যায় না। আর আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা যেভাবে ফেসবুকে, সোশ্যাল মিডিয়াতে লিখে সেগুলোও তো বন্ধ করা যায় না। এখন অবাধ মত প্রকাশের যুগ। তো সেদিন দেখলাম যে বিএনপির এই হাকডাককে হনুমানের সঙ্গে তুলনা করেছে একজন। আমি তুলনা করছি না। এটি ফেসবুকে যে, লিখেছে ছেলেরা আমি সেটিই বলছি। আসলে যাদের নেত্রী সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে যুক্ত হলে দেশের সার্বভৌমত্ব নষ্ট হবে বলেছিল? তারা আসলে কানেক্টিভিটির মূল্য বুঝতে পারে না। আমরা কানেক্টিভিটি শুধুমাত্র ভারতের সঙ্গে নয়, আমরা কানেক্টিভিটি আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি আমরা শুরু করেছি। বাংলাদেশ থেকে গাড়ি যাবে নেপালে, বাংলাদেশ থেকে গাড়ি যাবে ভোটানে ভারতের উপর দিয়ে। ভারতের ওপর দিয়ে যদি আমাদের দেশে আসতে পারে তাহলে ভারতের পণ্য আমাদের দেশ দিয়ে, ভারতের যাত্রী আমাদের দেশ দিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমরা বাক স্বাধীন। আমরা আঞ্চলিক কানেক্টিভেটির কথা বলছি। এতে করে বাংলাদেশ উপকৃত হবে, এ অঞ্চলের মানুষ উপকৃত হবে। বিএনপি সেটি বুঝেও বোঝে না।’
আওয়ামী লীগ নেতা এম এ করিমের সভাপতিত্বে ও বাংলাদেশ স্বাধীনতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহাদাত হোসেন টয়েলের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান, আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য বলরাম পোদ্দার, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব শফিকুল বাহার মজুমদার টিপু প্রমুখ।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
নুর ইস্যুতে রনি: তারেক রহমানের সিদ্ধান্তের বাইরে কিছু হবে না
পটুয়াখালী-৩ আসনে গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হকের নুরকে সাংগঠনিকবিস্তারিত পড়ুন
বুধবার ফের অবরোধের ঘোষণা দিয়ে সড়ক ছাড়লেন শিক্ষার্থীরা
অধিভুক্তি বাতিল করে আলাদা স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম শুরু করতেবিস্তারিত পড়ুন
৩৮তম বিসিএসের ফল কোটামুক্ত প্রকাশ করতে হাইকোর্টের রুল
৩৮তম বিসিএসের ফল কোটামুক্তভাবে পুনর্মূল্যায়ন করে প্রকাশ করতে রুল জারিবিস্তারিত পড়ুন