ছোট কাঁধে সংসার চলছে লেখাপড়াও
বাবা বাক প্রতিবন্ধী। মা অসুস্থ। সংসারের খরচ চালাতে রিকশা চালানো শুরু করেছিল দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময়। অষ্টম শ্রেণির এই ছাত্র বিদ্যালয় ছুটির পর রিকশা নিয়ে বের হয় রোজ। সংসারের খরচের পাশাপাশি তুলে আনতে হয় ঋণের টাকা। অদম্য এই তরুণের নাম মো. সোহেল।
কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরসভার গ্রামার স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র সোহেলের ছোট কাঁধেই সংসারের ভার। কাজের পাশাপাশি রুটিন করে পড়তেও বসে সে। সপ্তাহের পাঁচ দিন এক বেলা ও দুই দিন দুই বেলা করে রিকশা চালায়। মাল বহন করতে গিয়ে তিন বছর আগে হাত ভেঙে ঘরে বসে আছেন বাক্প্রতিবন্ধী বাবা বশির আহমদ। মা শাকেরা বেগম গৃহকর্মীর কাজ করতেন এক সময়। পেটে টিউমার ধরা পড়ার পর ২০১০ সালে অস্ত্রোপচার হয়েছে। এরপর চিকিৎসকেরা নিষেধ করেছেন ভারী কাজ করতেন। বড়ভাই নুর কামালও লেখাপড়ার পাশাপাশি নছিমন চালাতেন। তবে এসএসসি পরীক্ষায় ফল খারাপ হওয়ায় আপাতত কাজ বন্ধ। এখন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তিনি।
গতকাল শনিবার সকাল ১০টায় বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে সোহেল l প্রথম আলোকেবল িবদ্যালয়ে আসা–যাওয়া নয়। ভালো ছাত্র বলে পরিচিতিও আছে সোহেলের। এমন পরিশ্রম করেও মনে কোনো খেদ নেই তার। নেই কারও বিরুদ্ধে অনুযোগও। সোহেল বলে, ‘২০১০ সালে আমি দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিলাম। ধার করে ওই সময় মায়ের চিকিৎসা করানো হয়। চিকিৎসার কাজে ব্যস্ত থাকায় ও টাকার অভাবে দুই বছর পড়ালেখা করতে পারিনি। ২০১২ সালে বাবার হাত ভেঙে যায়। উপায় না দেখে রিকশা চালাতে শুরু করি। তখন ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পাওয়া যেত। চিন্তা করলাম ফাঁকে ফাঁকে পড়ালেখাটা চালিয়ে নিই। আবার ভর্তি হলাম লক্ষ্যারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে।’
সোহেলের সংগ্রাম শুরু সেই থেকে। ২০১৪ সালে পিএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ৪ দশমিক ৮৩ পায় সে। তখন পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। নিজের জমানো টাকা দিয়ে ভর্তি হয় উপজেলার নামী বিদ্যালয় চকরিয়া গ্রামার স্কুলে। বিদ্যালয়ের ভর্তি ফি ছিল ২ হাজার ৫০০ টাকা।
চকরিয়া পৌরসভার ঘনশ্যাম বাজার এলাকায় টিনের ছাউনি দেওয়া দুই কক্ষের একটি বেড়ার ঘরে থাকে সোহেলরা। ১ সেপ্টেম্বর ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙা বেড়া দিয়ে ঘরের ভেতরে এসে পড়া বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করছেন সোহেলের মা শাকেরা বেগম।
শাকেরা বলেন, ‘২০১৫ সালের শুরুতে গ্রামীণ ব্যাংকের চকরিয়া শাখা থেকে ৭০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে সোহেলকে একটা রিকশা কিনে দিই। প্রতি সপ্তাহে ঋণের কিস্তি হিসেবে ১ হাজার ৮০০ টাকা পরিশোধ করতে হয়। পাশাপাশি সংসারের খরচও জোগাড় করতে হচ্ছে তাকে। এত পরিশ্রম করেও লেখাপড়া ছাড়েনি। কাজ শেষে প্রতিদিন নিয়ম করে পড়তে বসে সে।’
সোহেল জানায়, প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে ক্লাস শুরু হয় তার। বিকেল চারটায় বিদ্যালয় ছুটি হয়। এরপর চারটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত রিকশা চালায় সে। রাতে বাড়ি গিয়ে ১১টা পর্যন্ত পড়ালেখা করে তবেই ঘুমাতে যায়। ভোরে ঘুম ভেঙে আবারও পড়তে বসে। তবে বৃহস্পতিবার সে বিদ্যালয়ে যায় না। শুক্রবারসহ সপ্তাহে দুই দিন আট ঘণ্টা রিকশা না চালালে কিস্তির টাকা উঠে আসে না। তাই বাধ্য হয়ে বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়ে যায় না সে।
চকরিয়া গ্রামার স্কুলের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ছেলেটি খুব মেধাবী, নিয়মিত ক্লাস করে। পড়ালেখার প্রতি আগ্রহও বেশ। তবে জানতাম না, সে এত কষ্ট করে। সে যাতে বিনা বেতনে পড়তে পারে সে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা হয়েছে, সোহেলকে তাঁরা পড়াবেন।’
আজকাল বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর লক্ষ্য থাকে চিকিৎসাবিজ্ঞান, প্রকৌশল বা ব্যবসায় প্রশাসন বিষয়ে পড়ার। কিন্তু সোহেল সে রকম কোনো ইচ্ছের কথা বলে না। সে চায় মানুষ হতে। বিষয়টা ব্যাখ্যা করে সে, ‘আমাদের এলাকায় অনেক লোক আছেন যাঁরা রিকশাচালকসহ শ্রমজীবী মানুষকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেন। এঁদের অনেকেই লেখাপড়া করে বড় ডিগ্রি নিয়েছেন। ভালো চাকরিও করেন। আমি চাই এমন শিক্ষা অর্জন করতে, যাতে সব মানুষকে সমান ভাবতে পারি। সম্মানও করতে পারি। আমি কেবল মানুষের মতো মানুষ হতে চাই।’
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
সাময়িক বরখাস্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঊর্মির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনেবিস্তারিত পড়ুন
কমলা হ্যারিসের ভোটের প্রচারণায় বাজবে এ আর রহমানের গান
আগামী নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন উপলক্ষে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিসেরবিস্তারিত পড়ুন
উপদেষ্টা আদিলুর: পূজায় বিশৃঙ্খলাকারীদের ছাড় দেওয়া হবে না
দুর্গাপূজায় বিশৃঙ্খলাকারীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না বলে সতর্ক করেবিস্তারিত পড়ুন