জাতিসংঘ: বাংলাদেশে চরম দারিদ্র্যে ৪ কোটি ১৭ লাখ মানুষ
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে চরম দারিদ্রসীমায় বাস করছেন ৪ কোটি ১৭ লাখ মানুষ। এর মধ্যে ৬.৫% মানুষের অবস্থা গুরুতর।
বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) “বৈশ্বিক বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক-২০২৪: সংঘাতের মধ্যে দারিদ্র্য” শিরোনামের প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে।
ইউএনডিপি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কেন্দ্র অক্সফোর্ড পোভার্টি অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভের সঙ্গে যৌথভাবে এটা প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বহুমাত্রিক দারিদ্র্য পরিস্থিতি বুঝতে বিশ্বের ১১২টি দেশের ৬৩০ কোটি মানুষের ওপর গবেষণা করা হয়েছে। তাতে ২০২২–২৩ বছর পর্যন্ত এক দশকের বেশি সময়ের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এখানে মানুষের পর্যাপ্ত আবাসন, পয়োনিষ্কাশন, বিদ্যুৎ, ভোজ্যতেল ও পুষ্টির মতো অতি প্রয়োজনীয় সেবাসমূহ পাওয়ার ক্ষেত্রে কেমন ঘাটতি রয়েছে, তা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। শিশুরা কী হারে স্কুলে উপস্থিত হচ্ছে, সেটাও এখানে বিবেচনায় এসেছে।
সূচক অনুযায়ী, বিশ্বের ১১০ কোটি মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছেন। তাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই সংঘাতকবলিত দেশের বাসিন্দা। চরম দারিদ্র্যে থাকা জনগোষ্ঠীর ৮৩% এর বেশি বসবাস করেন আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে। দক্ষিণ এশিয়ায় ২৭ কোটি ২০ লাখ দরিদ্র মানুষ এমন পরিবারে আছেন, যে পরিবারের অন্তত একজন অপুষ্টিতে ভুগছেন।
বৈশ্বিক বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক-২০২৪ অনুযায়ী, বাংলাদেশে দারিদ্র্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে মানুষের জীবনযাত্রার মান (৪৫.১%)। এরপর রয়েছে শিক্ষা (৩৭.৬%) ও স্বাস্থ্য (১৭.৩%)।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২২ সালের তথ্যমতে, বাংলাদেশের ১৮.৭% মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছেন। তাদের মধ্যে অতি দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছেন ৫.৬% মানুষ। সর্বশেষ জনশুমারি অনুসারে, দেশে বর্তমানে জনসংখ্যা আছে ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার। সে হিসাবে, দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৩ কোটি ১৭ লাখ ৫৭ হাজার।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক কে এ এস মুর্শিদ এ বিষয়ে বলেন, “ইউএনডিপির এই সমীক্ষায় যেভাবে বাংলাদেশের দারিদ্র্য পরিমাপ করা হয়েছে, তার সঙ্গে বাংলাদেশের বিবিএস বা অন্যান্য সংস্থার সমীক্ষার তুলনা করা ঠিক হবে না। এই সমীক্ষার মাধ্যমে বাংলাদেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতি বৈশ্বিক তুলনায় কী অবস্থায় আছে, তার একটি চিত্র পাওয়া গেল। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের ডলার সংকট এবং নানা ধরনের আর্থিক সমস্যার কারণে দারিদ্র্য পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। তা নানা সূচকের মাধ্যমে এই সমীক্ষায় বোঝা গেছে। এখান থেকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি অনুযায়ী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের সুযোগ তৈরি হয়েছে।”
সূচক অনুযায়ী, বিশ্বে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক দরিদ্র মানুষের বসবাস ভারতে। দেশটির ১৪০ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ২৩ কোটি ৪০ লাখই চরম দারিদ্র্যের মধ্যে আছেন। এরপরই রয়েছে পাকিস্তান (৯ কোটি ৩০ লাখ), ইথিওপিয়া (৮ কোটি ৬০ লাখ), নাইজেরিয়া (৭ কোটি ৪০ লাখ) ও কঙ্গো প্রজাতন্ত্র (৬ কোটি ৬০ লাখ)। বিশ্বে চরম দারিদ্র্যে থাকা জনগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধেকই এই ৫ দেশের বাসিন্দা।
ইউএনডিপির সূচক অনুযায়ী, চরম দারিদ্র্যের মধ্যে থাকা ৪৫ কোটি ৫০ লাখ মানুষ সংঘাত-সহিংসতার মধ্যে বসবাস করছেন। সংঘাতপূর্ণ দেশগুলোয় শিশুমৃত্যুর হার ৮%। অন্যদিকে শান্তিপূর্ণ দেশগুলোয় এই হার মাত্র ১.১%। যুদ্ধ চলা দেশগুলোর মানুষ পুষ্টি, বিদ্যুৎ, পানি ও পয়োনিষ্কাশন সুবিধা থেকে চরমভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন।
ইউএনডিপি প্রকাশিত সূচকে আরও দেখা গেছে, দারিদ্র্যের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী শিশুরা। চরম দারিদ্র্যে থাকা মানুষের মধ্যে প্রায় ৫৮ কোটি ৪০ লাখের বয়স ১৮ বছরের কম। এই সংখ্যাটা বিশ্বের মোট শিশুর ২৭.৯%। এর তুলনায় চরম দারিদ্র্যে রয়েছে বিশ্বের মোট প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের ১৩.৫%।
এই সংঘাত বন্ধ ছাড়া দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব নয় বলে মনে করেন অক্সফোর্ড পোভার্টি অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভের পরিচালক সাবরিনা আলকায়ার। তিনি বলেন, “সংঘাতপূর্ণ দেশগুলোয় দারিদ্র্য বিমোচনের গতি তুলনামূলক কম। তাই বলা যায়, এসব দেশের দরিদ্র মানুষকে দূরে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিনিয়োগ ছাড়া দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব নয়।”
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
পোষ্য কোটাকে ‘লাল কার্ড’ দেখালেন রাবি শিক্ষার্থীরা
পোষ্য কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব করায় রাজশাজী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)বিস্তারিত পড়ুন
ভারতীয় হাইকমিশনারকে দেওয়া বিএনপির ৩ সংগঠনের স্মারকলিপিতে যা রয়েছে
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা, জাতীয় পতাকারবিস্তারিত পড়ুন
বাশার আল-আসাদের পতনের নায়ক কে এই জোলানি?
সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছেন ইসলামপন্থী সশস্ত্রবিস্তারিত পড়ুন