নিম্নমানের গম আমদানি!
ব্রাজিল থেকে আমদানি করা গমের মান নিয়ে খাদ্য অধিদপ্তর থেকে আপত্তি তোলা হয়েছিল। ব্রাজিলের কৃষি মন্ত্রণালয় বা অন্য কোনো বিভাগ এর মান নিয়ে কোনো সনদ দেয়নি। বন্দরে অবস্থানকারী খাদ্য অধিদপ্তরের রসায়নবিদেরা এই গমের বেশ কয়েকটি চালানকে ‘বি’ ক্যাটাগরির বা মাঝারি থেকে নিম্নমানের হিসেবে চিহ্নিত করেছিল।
এসব জেনেও খাদ্য অধিদপ্তরের তৎকালীন মহাপরিচালক সারোয়ার খান চট্টগ্রাম বন্দরে আসা ওই গমের ছাড়পত্র দেওয়ার নির্দেশ দেন। অধিদপ্তরের আমদানি-সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতামত, চিঠি ও পর্যালোচনা থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
এই গম আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর রেশন হিসেবে সরবরাহের পর এর মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। পুলিশের সব বিভাগীয় কার্যালয় এই গমকে নিম্নমানের এবং খাওয়ার অযোগ্য হিসেবে বর্ণনা করে একাধিকবার চিঠি দেয়। তার পরও খাদ্য মন্ত্রণালয় শুরু থেকেই বারবার বলছে, এই গম অখাদ্য নয়। খাদ্যমন্ত্রী জাতীয় সংসদে দেওয়া বক্তব্যেও তা-ই বলেছেন। গত বুধবার খাদ্য মন্ত্রণালয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তি একই কথা বলেছে।
খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম গতকাল এ বিষয়ে বলেন, দেশের যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান খাদ্য অধিদপ্তরের যেকোনো গুদাম থেকে গম এনে পরীক্ষা করে দেখতে পারে। খাদ্য বিভাগ এ ক্ষেত্রে সব ধরনের সহযোগিতা করবে। যেকোনো পরীক্ষায় ওই গমে কোনো সমস্যা পাওয়া গেলে মন্ত্রণালয় তা মাথা পেতে নেবে।
খাদ্য বিভাগের দাবি, ৮ জুন দেশের ২৮ জেলার খাদ্য গুদাম থেকে গম সংগ্রহ করে আবারও নিজেদের পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা হয়। এরপর তারা এই গমকে খাওয়ার যোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) পরীক্ষাগারে গমের নমুনা পাঠালেও তার ফলাফল এখনো তাদের হাতে পৌঁছায়নি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে আপত্তি উঠার পর খাদ্য বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরীক্ষাগারে পরীক্ষার জন্য পাঠায়। কিন্তু সেখানে পাঠানো হয় শুধু গমের প্রোটিনের পরিমাণ পরীক্ষা করার জন্য। আর গমের নমুনা ওই ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে সংগ্রহ করা হয়নি। খাদ্য অধিদপ্তর নিজেরা গমের নমুনা পাঠায়।
যোগাযোগ করা হলে পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ও ল্যাবরেটরির প্রধান অধ্যাপক নাজমা শাহীন বলেন, ‘গমের যে নমুনা মন্ত্রণালয় দিয়েছে, তা পরীক্ষা করে আমরা প্রোটিনের মান ভালো পেয়েছি। সে অনুযায়ী আমরা খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রতিবেদন পাঠিয়েছি।’
তবে খাদ্য বিভাগের নিয়ম অনুযায়ী, গমের গ্রহণযোগ্যতার পরিমাপক হিসেবে মোট ১০ ধরনের পরীক্ষা করা উচিত। প্রোটিনের পরিমাণ হচ্ছে তার একটি। অন্য পরীক্ষাগুলো হচ্ছে: তাপের কারণে নষ্ট হওয়া দানার পরিমাণ, ভাঙা দানার পরিমাণ, নির্দিষ্ট ওজন আছে কি না, গম ছাড়া অন্য উপাদানের উপস্থিতির পরিমাণ, পুরোপুরি নষ্ট হওয়া দানার পরিমাণ, ছোট-বড় নানা ধরনের গমের উপস্থিতির পরিমাণ, অন্য জাতের গমের উপস্থিতি, আদ্রতার পরিমাণ ও গমগুলোকে কেটে ছোট করা হয়েছে কি না। স্বাস্থ্য ঝুঁকির আপত্তি উঠলে ওই গমে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক কোনো উপাদান আছে কি না, সেই পরীক্ষাও করা হয়নি।
ব্রাজিল থেকে গম নিয়ে ‘এমভি স্যাম উলভ’ নামের একটি জাহাজ গত ১৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বন্দরে এলে বন্দর কর্তৃপক্ষ চুক্তি অনুযায়ী অনুমতিপত্র ও নথি দেখতে চায়। তৎকালীন মহাপরিচালক ওই গম খালাসের জন্য অনুমতি দিতে বললে খাদ্য অধিদপ্তরের একজন অতিরিক্ত মহাপরিচালক লিখিতভাবে বলেন, ‘ব্রাজিলের কৃষি মন্ত্রণালয় ও বণিক সমিতি রপ্তানিকৃত গমের নিশ্চয়তাপত্র দেয় না। তাই এই গম খালাস করার সুযোগ না দেওয়ার পক্ষে মত দেন তিনি।
এর পরও অধিদপ্তরের তৎকালীন মহাপরিচালক সারোয়ার খান গম আমদানির নির্দেশ দিয়ে লিখেন, আমদানির আদেশ দেওয়া চুক্তির অংশ। সারোয়ার খান এ ব্যাপারে বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব খাদ্য আমদানির বিষয়ে নিয়মিত তদারকি করে থাকেন। তাঁর কাজ হচ্ছে নিয়মিতভাবে মন্ত্রী ও সচিবকে বিষয়গুলো অবহিত করা। ফলে একা আমার ঘাড়ে সব দায়দায়িত্ব চাপানো ঠিক হচ্ছে না। আমি মন্ত্রনালয়ের অনুমতি নিয়েই ওই গম আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
কুমির আতঙ্কে গড়াই নদীর তীরে রাখা হচ্ছে ছাগল-হাঁস
কুষ্টিয়ার গড়াই নদীতে একাধিক কুমিরের “অস্তিত্ব মিলেছে”। ফলে আতঙ্কে নদীতেবিস্তারিত পড়ুন
বিটকয়েনের দাম ১ লাখ ডলার ছাড়িয়েছে
ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিটকয়েনের দাম ১,০০,০০০ ডলার ছাড়িয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পবিস্তারিত পড়ুন
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা: মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর জন্য তাদের মুখেই চুনকালি পড়বে
বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব কোনো ধরনের হুমকির মধ্যে নেই বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রবিস্তারিত পড়ুন