নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হলে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে: সাখাওয়াত
প্রশ্ন: আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী গতবারের নির্বাচিত মেয়র। আপনি এবারই প্রথম নির্বাচন করছেন। কতটুকু প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করেন?
সাখাওয়াত: আমি মনে করি, আমি বিএনপি তথা ২০-দলীয় জোটের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রার্থী। আওয়ামী লীগের প্রার্থী গণতান্ত্রিকভাবে মনোনীত হননি। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর নাম তৃণমূল আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তে ছিল না। কেন্দ্র থেকে তাঁকে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি মনে করি এটা আমাদের একটা বিজয় যে, গণতান্ত্রিকভাবে তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আমি এটার সুফল পাব। কেননা তৃণমূল আমাকে চেয়েছে, সে হিসেবে আমি মনে করি, এর একটা অ্যাডভানটেজ (সুবিধা) আমি পাব।
প্রশ্ন: বর্তমান কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে বিএনপির নেতারা বলে আসছেন। নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন কেমন হবে বলে আপনার মনে হচ্ছে?
সাখাওয়াত: আমরা এই নির্বাচনকে একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে, টেস্ট কেস হিসেবে গ্রহণ করেছি। এ জন্য যে, দেশে গণতন্ত্র এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে যেখানে জনগণের কোনো ভোটাধিকার নাই। বর্তমান সংসদ থেকে শুরু করে অনেকেই বিনা ভোটে নির্বাচিত। মানুষ সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ। আমরা দেখতে চাই সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হয় কি না। সরকারের মানসিকতার পরিবর্তন হয়েছে কি না, গণতন্ত্রের পথে তাদের মনমানসিকতা এসেছে কি না, সেটা পরীক্ষা করাই আমাদের লক্ষ্য। সে কারণেই আমরা এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি। একটা কথা আছে, শেষ ভালো যার সব ভালো তার। এই নির্বাচন কমিশন যাওয়ার সময় অন্তত একটা ভালো কাজ করে যাবে; যাতে তাদের শুধু গণতন্ত্র হত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত করা না হয়। তারা একটা ভালো নির্বাচন করে দিয়ে গেলে, জনগণের মতের প্রতিফলন যাতে ঘটে সেটাই আমরা চাই। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমরা ৬০-৬৫ ভাগ ভোট পাব।
প্রশ্ন: মানুষ আপনাকে কেন ভোট দেবে?
সাখাওয়াত: প্রথমত মার্কা। এখানে দুটি মার্কা ধানের শীষ আর নৌকা। নৌকা মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। এ কারণে তাদের প্রতি জনরোষ আছে। ধানের শীষ গণতন্ত্র,
ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে আন্দোলন করছে। সুতরাং মানুষ ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে তা কাজে লাগাবে।
আরেকটা দিক হলো, নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি থাকা অবস্থায় সব অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে, মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য আমি সব সময় সোচ্চার ছিলাম।
সর্বশেষ হলো, নারায়ণগঞ্জে যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, একজন প্যানেল মেয়র এবং একজন আইনজীবী যাঁদের হত্যা করা হয়েছে তাঁদের জন্য আমার নেতৃত্বে সারা দেশে, নারায়ণগঞ্জে আন্দোলন হয়েছে। সেই আন্দোলনটা আমি না থাকলে হতো না। কিন্তু আজকে দেখেন, নৌকার প্রার্থী উনি মেয়র ছিলেন। তাঁর প্যানেল মেয়রকে হত্যা করা হয়েছে, এই ব্যাপারে তাঁর কোনো ভূমিকাই ছিল না। নারায়ণগঞ্জে অনেক অন্যায়-অবিচার হয়েছে। এসবের বিরুদ্ধে তিনি (আইভী) কথা বলবেন, এ জন্য কিন্তু গতবার তাঁকে ভোট দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ভোটে পাস করার পরে পূর্ণরূপে তিনি চুপ হয়ে গেছেন। তিনি কোনো কথাই বলেননি। উপরন্তু তিনি মানুষকে অন্যায়, সন্ত্রাস, মাদকের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করতে পারেননি। মেয়র হিসেবে তিনি এই জিনিসটা করতে পারতেন।
প্রশ্ন: তাহলে নারায়ণগঞ্জের উন্নয়ন গত পাঁচ বছরে কেমন হয়েছে বলে মনে করেন? ১০ এ কত দেবেন?
সাখাওয়াত: আমরা মনে করি তাঁর কাজ করার সুযোগ ছিল। আমি তাঁকে মার্কস দেব না। মার্কস দেওয়ার দায়িত্ব জনগণের। জনগণ দেবে। আমি মনে করি তিনি সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছেন। তাঁদের সরকার ক্ষমতায় কিন্তু তিনি দলকেও ঐক্যবদ্ধ করতে পারেননি, নারায়ণগঞ্জের উন্নয়ন করতে পারেননি।
নারায়ণগঞ্জ হলো একটি প্রধান অর্থনৈতিক অঞ্চল, বন্দর। জাতীয় আয়ের একটা বিশাল অংশ এখান থেকে আসে। কিন্তু সে অনুসারে আপনি একটা জিনিস দেখেন, নারায়ণগঞ্জে একটা মেডিকেল কলেজ নেই, একটা বিশ্ববিদ্যালয় নেই, বর্তমানে যানজট প্রকট আকার ধারণ করেছে, একটা ভালো রাস্তা নেই, আগের রাস্তাতেই পিচ ঢালাই করা হয়েছে, ড্রেনেজ অবস্থা খারাপ। একটু বৃষ্টি হলেই নগরবাসী ডুবে যায়।
প্রশ্ন: গতবার ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছিলেন। এবার সে ধরনের কোনো সম্ভাবনা আছে কি না?
সাখাওয়াত: শোনেন, গত বছর আট ঘণ্টা আগে নির্বাচন বর্জন করেছে, সে প্রেক্ষাপটটা আপনারা জানেন। বিএনপিসহ বিভিন্ন সংগঠন, এমনকি যিনি মেয়র হয়েছিলেন আইভীও আবেদন করেছিলেন যে, নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হোক। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন সেনাবাহিনী মোতায়েনের জন্য সরকারের কাছে চিঠি পাঠিয়েছিল। কিন্তু সরকার সাড়া দেয়নি, জবরদস্তিমূলক নির্বাচন করার জন্য।
এবারের নির্বাচনের প্রেক্ষাপটটা হলো এ রকম—ধানের শীষ জাতীয় প্রতীক। মানুষের মনের মধ্যে এই প্রতীক। এর বিশেষ জনপ্রিয়তা আছে। আমরা দেখতে চাই, সরকার আসলে গণতন্ত্র হত্যার পথ থেকে ফিরে আসে কি না। সেটা দেখা, বিশ্ববাসীকে দেখানো এবং জনগণকে দেখানো আসলে তারা সুষ্ঠু নির্বাচন করে কি না। সুতরাং এবার এই নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই।
প্রশ্ন: যদি সেনাবাহিনী মোতায়েন না হয়?
সাখাওয়াত: আমরা সেনাবাহিনী মোতায়েন চাই। এটা জনগণের দাবি। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হলে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করতে হবে। দলবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলি করে নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের মোতায়েন করতে হবে। অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে, বৈধ অস্ত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ দিতে হবে। এগুলো অবশ্যই করতে হবে। আমরা চাই একটা অর্থবহ প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন। একদল সুযোগ-সুবিধা পাবে আর আমাদের হাত-পা বেঁধে সাঁতরাতে দেবে সেটা না। আমরা দেখতে চাই সরকারের মনমানসিকতা কী?
প্রশ্ন: এখন বিএনপিতে আপনার কোনো পদ নেই। আপনাকে সাধারণ সম্পাদক করে মহানগর কমিটির একটি প্রস্তাব ছিল। কিন্তু দলীয় কোন্দলে সেটি চূড়ান্ত হয়নি। এই কোন্দল নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন কি না?
সাখাওয়াত: আমি বিএনপির একজন কর্মী। আমার পদ নেই এটা ঠিক না। অনেক আগ থেকে বিএনপি করি। হয়তো বড় পদে ছিলাম না। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছি।
জেলা বিএনপির সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক ছিলাম। আমার মনোনয়নপত্র নেওয়ার সময় নারায়ণগঞ্জের সব নেতা আমার সঙ্গে ছিলেন। সরকার আজকে আমাদের যে পর্যায়ে নিয়ে গেছে তাতে আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে, কোন্দল নয় এই নির্বাচন আমাদের দলের প্রেস্টিজের বিষয়। আমাদের যে জনপ্রিয়তা আছে এটা জনগণকে দেখানো মূল কাজ।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
জামিন পেলেন সাবেক বিচারপতি মানিক
অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের সময় সিলেটের কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকেবিস্তারিত পড়ুন
হাসিনার পতনে জাতির মনোজগত পরিবর্তন হয়েছে, নতুন রাজনীতি হতে হবে স্বচ্ছ: আমীর খসরু
দেশের মানুষের মনোবাসনা বুঝে স্বচ্ছ রাজনীতির আহ্বান জানিয়ে বিএনপির স্থায়ীবিস্তারিত পড়ুন
বগুড়ায় হাসিনা-কাদেরের বিরুদ্ধে আরও এক মামলা
বগুড়ায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ১৫৭ জনের বিরুদ্ধে আরও একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। শনিবার রাতে বগুড়া সদর থানায় গাবতলীর নিহত বিএনপি নেতা জিল্লুর রহমানের স্ত্রী খাদিজা বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন। গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সরকার পতনের একদফা আন্দোলনে গিয়ে সংঘর্ষের সময় শহরের ঝাউতলা এলাকায় নিহত হনবিস্তারিত পড়ুন