পিছু ছাড়ছে না ‘সমস্যা’ : ডেমু ট্রেন নিয়ে বিপাকে রেল বিভাগ

ডেমু ট্রেন নিয়ে বিপাকে রেল বিভাগ। অব্যাহত লোকসানের পরও এর মেরামতের নামে ৩০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন প্রকল্প হাতে নিতে চায় রেল বিভাগ। সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। রেলের আয় বাড়ানোসহ স্বস্তি ও দ্রুততার সঙ্গে যাত্রীকে তার গন্তব্যে পৌঁছে দিতেই এই ট্রেন আনা হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য নতুন এ ট্রেন কেনার পর থেকেই সমস্যা পিছু ছাড়ছে না। প্রতি বছর লোকসান গুণতে হচ্ছে রেলওয়েকে। এখন এই রেল মেরামতে ওয়ার্কশপ নির্মাণে প্রকল্প নিতে হচ্ছে।খবর জাগো নিউজের।
২০১৩ সালে ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট বা ডেমু ট্রেন কেনে রেলওয়ে। ৪২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০ সেট ডেমু কেনার চুক্তি হয় চীনের তাংশান রেলওয়ে ভেহিকল কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে। এর সঙ্গে শুল্ক, কর, কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, বিদেশ ভ্রমণ ও ভাতাও সংযুক্ত করা হয়। সব মিলিয়ে প্রকল্প ব্যয় দাঁড়ায় ৬৫৪ কোটি টাকা।
তবে আয় বৃদ্ধি বা যাত্রীদের স্বস্তি কোনোটাই দিতে পারেনি দুই দিকে ইঞ্জিনবিশিষ্ট এ ট্রেন। বরং ঘন ঘন বিকল হওয়ায় এগুলো মেরামতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করছে রেলওয়ে। কখনো একই সঙ্গে কয়েক সেট ডেমু বিকল হয়ে পড়ছে। তখন বন্ধ হয়ে যায় এসব ট্রেনে যাত্রী পরিবহন। তাই ডেমু মেরামতে এবার পৃথক ওয়ার্কশপ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে রেলওয়ে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, ‘সম্ভাব্যতা যাচাইসহ ডেমুর জন্য পৃথক ওয়ার্কশপ নির্মাণ’ শীর্ষক ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে সম্ভাব্য বৈদেশিক সহায়তা ধরা হয়েছে ২৬৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা। বাকি টাকা সরকারের তহবিল থেকে সরবরাহ করতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এক্ষেত্রে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ কোটি টাকা। ওয়ার্কশপের জন্য মেকানিক্যাল যন্ত্রপাতি কেনা, স্থাপন ও কমিশনিংয়ে ব্যয় হবে ১০৮ কোটি টাকা। আর ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতি কেনা, স্থাপন ও কমিশনিংয়ে ব্যয় হবে ২৭ কোটি টাকা। ওয়ার্কশপের জন্য ভবন ও অন্য অবকাঠামো নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪৫ কোটি টাকা। তবে রেলওয়ের নিজস্ব জমি থাকায় এ খাতে অতিরিক্ত কোনো অর্থ ব্যয় হবে না। এর বাইরে প্রশিক্ষণ এবং সাপ্লাই ও সেবা খাতে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে আট কোটি টাকা।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন বলেন, চীন থেকে কেনা ডেমুগুলো মূলত স্বল্প দূরত্বে চলার কথা ছিল। কিন্তু চাহিদা বাড়ায় এগুলো দূরপাল্লার রুটে চালু করা হয়। ফলে কিছু সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া ডেমু প্রতিদিন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয়। তবে সে ব্যবস্থা নেই। বরং এগুলো মেরামত করতে গিয়ে ওয়ার্কশপের জায়গা দখল করে রাখছে। এছাড়া ভবিষ্যতে আরও ডেমু কেনা হবে। তাই পৃথক ওয়ার্কশপ নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে। এতে ডেমু মেরামত অনেক সহজ ও দ্রুত হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে দেশের বিভিন্ন রুটে চালুর দুই বছর না যেতেই আট সেট ডেমু বিকল হয়ে পড়ে। সম্প্রতি দুই সেট মেরামত করে চালু করা হয়েছে। ডেমুর যান্ত্রিক ত্রুটি মেরামত করার মতো ওয়ার্কশপ ও প্রকৌশলী না থাকায় বাকিগুলো এখনো বিকল। বিকলের পথে অন্য ১২ সেট ডেমুও।
গত বছর ডেমু লোকসান দিয়েছে ৩৬ কোটি টাকা। এ সময়ে ১৬ সেট ডেমুতে জ্বালানি ও মেরামত খরচ হয়েছে ৩৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা। জনবল বাবদ খরচ হয়েছে প্রায় ৮৪ লাখ টাকা। দেশের বিভিন্ন ওয়ার্কশপে জোড়াতালি দিয়ে মেরামতে খরচ হয়েছে ২ কোটি টাকার বেশি। সব মিলিয়ে ব্যয় হয় ৩৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। অথচ আয় হয়েছে মাত্র দুই কোটি টাকা। লাভের আশায় কেনা ডেমু এখন রেলওয়ের গলার কাঁটা। রেলের লোকসানের বোঝা বাড়াচ্ছে ডেমু।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (আরএস) মোহাম্মদ শামসুজ্জামান বলেন, ডেমু মেরামতে আমরা একটি প্রকল্প হাতে নিতে যাচ্ছি। এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি, এটি একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ডেমু মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণসহ যন্ত্রপাতি কেনা হবে। যেন যথাযথভাবে সঠিক সময়ে অকেজো ডেমু মেরামত করে যাত্রীসেবায় নিয়োজিত করা যায়।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

মির্জা আব্বাস: রাজনৈতিক দলগুলোকে বিভক্ত করার অপচেষ্টা চলছে
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কৃত্রিম বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগবিস্তারিত পড়ুন

প্রেস সচিব: মডেল মসজিদ নির্মাণে সৌদি আরব কোনো টাকা দেয়নি, হয়েছে দুর্নীতি
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণে অনেক অনিয়মবিস্তারিত পড়ুন

মাগুরায় শিশু ধর্ষণে অভিযুক্তদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ
মাগুরায় ধর্ষণের শিকার আট বছরের শিশু মৃত্যুর খবরে অভিযুক্ত আসামিদেরবিস্তারিত পড়ুন