পুরস্কার আনতে যেতে ভিসা নিয়ে হয়রানি!

সম্মানজনক ‘কমনওলেথ ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ডস-২০১৬’-এর জন্য মনোনীত হয়েছেন বাংলাদেশের মেয়ে সওগাত নাজবিন খান। কিন্তু সেই পুরস্কারটি আনতে যুক্তরাজ্যে যেতে পারছেন না তিনি। কারণ তাঁকে দেওয়া হচ্ছে না ব্রিটেন যাওয়ার ভিসা।
আগামী ১৭ মার্চ লন্ডনে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান হওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া রাজপরিবারের সাথে রাতের খাবার খাওয়াসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে আগামীকাল সোমবার থেকেই। সেজন্য গতকাল শনিবার লন্ডনে যাওয়ার নির্ধারিত ফ্লাইট ছিল নাজবিনের। কিন্তু ভিসা না পাওয়ায় এখনো বাংলাদেশেই অবস্থান করছেন তিনি। ১৭ তারিখের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া এখনো অনিশ্চিত তাঁর জন্য।
আজ রোববার নাজবিন জানান ভিসা নিয়ে মুখোমুখি হওয়া নানা জটিলতার কথা। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত যুক্তরাজ্য যাওয়ার ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি হয়নি। তাই সম্মানজনক এই পুরস্কার আনতে তাঁর ব্রিটেন যাওয়ার পুরো বিষয়টিই দোদুল্যমান অবস্থায় রয়েছে।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি ভিসার জন্য আবেদন করেন নাজবিন। তার কাগজপত্র পরবর্তী প্রক্রিয়ার জন্য দুই একদিনের মধ্যেই পাঠিয়ে দেওয়া হয় দিল্লির ব্রিটিশ ভিসা অফিসে। ২২ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো নাজবিনের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে চিঠি দেয় দিল্লি অফিস। পরে তিনি আবার আপিল করেন। পরবর্তী আপিলও প্রত্যাখ্যান করা হয় বলে জানান নাজবিন।
নাজবিন বলেন, ‘দুইবারই তারা লিখেছে যে, দে ডাউট অন মাই ইনটেশন। এটা পুরোপুরি আমাকে বা আমার দেশকে অপমান করা। আমার কোনো ক্রিমিনাল রেকর্ড নেই, আমি আরো বহু দেশ ভ্রমণে গেছি। তবু তাদের মনে হচ্ছে যে ব্রিটেনে গেলে আমি আর ফিরব না।’
আবেদন ফরমে যা যা কাগজপত্র দিতে বলা হয়েছে সব জমা দিয়েছেন জানিয়ে নাজবিন বলেন, ‘সেখানে স্পষ্ট লেখা ছিল যে, কেউ যদি কারো আন্ডারে কাজ করে তাহলে পারমিশন লেটার লাগবে। কিন্তু যারা সেলফ এমপ্লয়েড তাদের লাগবে না। আমি লিখেছি যে আমি সেলফ এমপ্লয়েড। তবু তারা রিফিউজাল লেটারে অথরাইজেশন লেটার প্রয়োজন বলে জানিয়েছে। আবেদন ফরমে লেখা ছিল যে যদি ভিসা অফিস প্রয়োজন মনে করে তাহলে তারা ইন্টারভিউ নেবে। কিন্তু প্রথমবার তাদের পক্ষ থেকে কোনো ফোন করা হয়নি। দ্বিতীয় বার ফোন করেছিল। কিন্তু সেই ইন্টারভিউতে সব অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করা হয়েছে। পুরো প্রক্রিয়াটা ইচ্ছেকৃতভাবে করা হয়েছে বলে আমার মনে হচ্ছে।’
টেলিফোন ইন্টারভিউতে কী ধরনের প্রশ্ন করা হয়েছিল জানতে চাইলে নাজবিন বলেন, ‘সম্ভবত ২/৩ মার্চ টেলিফোনে ইন্টারভিউ নেওয়া হয়। আমি কীভাবে পুরস্কার পেলাম, কীভাবে অ্যাপ্লাই করলাম, এই পুরস্কার আমি ডিজার্ভ করি বলে কেন মনে করি, কোথায় পুরস্কারের বিষয়ে জানতে পারলাম, কার থেকে শুনলাম, কোন ওয়েবসাইট থেকে অ্যাপ্লাই করেছি -এসব প্রশ্ন করেছে। এমনকি আমি ময়মনসিংহে যেখানে থাকি সেখানে কয়টি রুম, ঢাকায় যখন উইকেন্ডে যাই সেখানে কোথায় থাকি, ওই বাসায় আমি ঢাকায় না থাকলে কে থাকে, ওই বাসার একটি ফ্লোরে কতটি ফ্ল্যাট আছে এ ধরনের অদ্ভুত বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়।’
যিনি ফোন করেছিলেন তিনি বাংলাতেই এসব প্রশ্ন করেছিলেন বলে জানান নাজবিন।
তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বাজে ব্যাপার ছিল এটা যে, তারা যেসব কারণ দেখিয়ে আমার ভিসা রিফিউজড করেছে সেগুলো নিয়ে কোনো প্রশ্ন করেনি। অন্যসব বিষয়ে প্রশ্ন করেছে, যেগুলো একেবারেই প্রাসঙ্গিক না।’
বারবার তাঁর কাছে ব্যাংক স্টেটমেন্ট চাওয়া হয়েছে অভিযোগ করে নাজবিন বলেন, আমি লন্ডন যাচ্ছি কমনওয়েলথের আমন্ত্রণে। ওরাই সব খরচ বহন করবে। তবু বারবার আমার ব্যাংক স্টেটমেন্ট চাওয়া হয়েছে। সেটাও আমি দিয়েছি। সেখানকার একটি লেনদেনের হিসাব নিয়ে তারা প্রশ্নও তুলেছে।
কিছুদিন আগে জার্মান সরকারের দেওয়া একটি পুরস্কার নিতে সেদেশে গিয়েছিলেন বলে জানান নাজবিন। সেখানে কয়েক বেলা খাবারের টাকা নিজে বহন করেন তিনি। অবশ্য সেই টাকা পরে জার্মান সরকারের পক্ষ থেকে নাজবিনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। যার পরিমাণ ১৩২ ইউরো। যা বাংলাদেশি টাকায় ১১ হাজার টাকার কিছু বেশি। সেই লেনদেনটি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে বলে জানান নাজবিন।
ভিসা প্রত্যাখ্যান করার চিঠিতে এই ১৩২ ইউরোকে অনেক বড় ট্রানজেকশন হিসেবে দেখানো হয়েছে বলে জানান তিনি। এটা কেন করা হয়েছে তাও তিনি বুঝতে পারছেন না। তবে এরপরও এই ট্রানজেকশন সম্পর্কে টেলিফোন ইন্টারভিউতে কিছু জানতে চাওয়া হয়নি বলেও জানান নাজবিন।
নাজবিন জানান, এর আগেও তিনি বিশ্বের বহু দেশ ঘুরেছেন। সবখানেই তিনি গিয়েছেন স্পন্সরের খরচে, ফেলোশিপে, ইভেন্টে। সেসব জায়গা থেকে পাঠানো চিঠিগুলোর মাধ্যমে সহজেই ভিসা পেয়েছেন তিনি। এবারই ব্যতিক্রম হচ্ছে এবং তাঁকে এভাবে হয়রানি করা হচ্ছে বলে এনটিভি অনলাইনকে জানান নাজবিন।
কমনওয়েলথের পক্ষ থেকে ভিসা অফিসে যোগাযোগ করা হলেও আশানুরূপ কোনো ফলাফল পাওয়া যায়নি বলে জানান নাজবিন।
ইউনেস্কো ফেলোশিপ নিয়ে ভারত থেকে লেখাপড়া করে এসেছেন ময়মনসিংহের তারাকান্দার মেয়ে সওগাত নাজবিন খান। ২০১৪ সালের জুন মাসে দেশে ফিরে তাঁর গ্রামের শিক্ষার্থীদের উন্নত শিক্ষার ব্যবস্থা করতে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরির কাজে হাত দেন তিনি। সেই লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করেন এইচএ ডিজিটাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। যেখানে স্থানীয় শিক্ষার্থীদের উন্নত শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আদলে শিক্ষা দেওয়া হবে। প্রথম ছয় মাস চলে শিক্ষকদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ। এরপর ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে যাত্রা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে স্কুলে ৩০২ জন এবং কলেজে ৩৪ জন শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। এটি সম্পূর্ণ অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। নাজবিনের পৈত্রিক ভিটায় পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের চাঁদা এবং স্কুলভবনে ভাড়া দেওয়া কিছু প্রতিষ্ঠানের ভাড়ায় চলে এর কার্যক্রম।
অলাভজনক প্রতিষ্ঠান এটি উল্লেখ করার পরও বারবার ওই টেলিফোন ইন্টারভিউতে নাজবিনের কাছে জানতে চাওয়া হয় যে এই প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি কত টাকা বেতন বা সম্মানি নেন। নাজবিন বলেন, ‘আমি বারবার বলছি যে এটা প্রফিট মেকিং অরগানাইজেশন না। আমি প্রফিট পাওয়ার জন্য এটা খুলিনি। আমরা বিভিন্নভাবে অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করি। কোনো মাসে রেন্ট থেকে কিছু খরচ বাঁচলে বোর্ড অব ডিরেক্টররা কিছু অর্থ নিতে পারেন। কিন্তু সেটাও মাঝে মাঝে। তবু তারা বারবার আমাকে ফোর্স করেছে।’
নাজবিন বলেন, ভিসা আবেদন ফরমে একটা জায়গায় বলা হয়েছিল যুক্তরাজ্যে কোনো টাকা বহন করে নিয়ে যাবেন কি না। আমি বলেছিলাম বাংলাদেশি ১০ হাজার টাকার সমপরিমাণ পাউন্ড বহন করব। কিন্তু রিফিউজাল লেটারে ওরা লিখল আমি না কি ১০ হাজার ব্রিটিশ পাউন্ড নিয়ে যাব। কোথায় ১০ হাজার টাকা আর কোথায় ১০ হাজার পাউন্ড। আমি অবশ্য এসব স্ক্যান করে কমনওয়েলথে পাঠিয়েছি, ব্রিটেনের বাংলাদেশ দূতাবাসেও পাঠিয়েছি।’
তবে এখনো লন্ডন যাওয়ার ভিসা পাননি নাজবিন। ফলে সম্মানজনক এই পুরস্কার নিজ হাতে গ্রহণ করতে পারবেন কি না সে নিয়ে সংশয় এখনো কাটেনি তাঁর।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

ডিএমপি: ৫ আগস্ট পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. সারোয়ার জাহানবিস্তারিত পড়ুন

আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন

সিলেটের জঙ্গি নেতা আব্দুল বারি ও শামসু জামিনে মুক্ত
নিজস্ব সংবাদদাতা: শীর্ষস্থানীয় জঙ্গিবাদী সংগঠন জামাতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) এরবিস্তারিত পড়ুন