প্লাস্টিক খাতকে অগ্রাধিকার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে: আমু
২০১৬ সালের জাতীয় শিল্পনীতিতে প্লাস্টিক খাতকে অগ্রাধিকার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু।
একইসঙ্গে পরিবেশবান্ধব সবুজ শিল্পায়নের লক্ষ্য অর্জনে যেসব কারখানায় পরিবেশ দূষণকারী বর্জ্য উৎপাদন করা হয়, সেগুলোতে বাধ্যতামূলক বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি) স্থাপনের আহ্বান জানান মন্ত্রী।
বুধবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) ১১তম আন্তর্জাতিক প্লাস্টিক মেলা-২০১৬’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
প্লাস্টিক কারখানায় বর্ শোধনাগার স্থাপনের আহ্বান জানিয়ে শিল্পমন্ত্রী বলেন, পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্র্য ধ্বংস করে কোনো ধরনের শিল্পায়নের প্রতি সরকারের সমর্থন নেই, থাকবেও না। আপনারা পরিবেশবান্ধব শিল্প স্থাপনে এগিয়ে আসুন, সরকার আপনাদের সব ধরনের নীতি সহায়তা দেবে। দেশের উদীয়মান শিল্পখাত হিসেবে সরকার প্লাস্টিক শিল্পের উন্নয়নে শুরু থেকেই বিভিন্ন ধরনের সহায়তা দিয়ে আসছে। ২০১০ সালের জাতীয় শিল্পনীতিতে একে অগ্রাধিকার শিল্পখাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ২০১৬ সালের জাতীয় শিল্পনীতিতেও এখাতকে অগ্রাধিকার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
আমু বলেন, ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সময়ে বলে আসছেন পণ্য বহুমুখীকরণসহ প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা পেলে প্লাস্টিক শিল্পখাতে রপ্তানি আয় ২০২১ সালের মধ্যে একশ কোটি ডলারে উন্নীত করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, এ আয়োজন প্লাস্টিক শিল্পখাতের বিকাশ ও উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। এ ধরনের অনুষ্ঠানে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের প্লাস্টিক উদ্যোক্তা ও বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণের ফলে বাংলাদেশের প্লাস্টিক শিল্পখাতে প্রযুক্তি স্থানান্তরের সুযোগ তৈরি হবে। একইসঙ্গে বাংলাদেশে উৎপাদিত প্লাস্টিক পণ্যের গুণগতমান সম্পর্কে দেশি-বিদেশি ক্রেতারা সম্যক ধারণা পাবেন। এ ধরনের সৃজনশীল উদ্যোগ দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব প্লাস্টিক শিল্প গড়ে তোলার অভিযাত্রাকে বেগবান করবে।
প্লাস্টিক শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি বিকাশমান শিল্পখাত উল্লেখ করে তিনি বলেন, কাঠের বিকল্প হিসেবে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার দেশে-বিদেশে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে। বাংলাদেশে গুণগতমানের প্লাস্টিক পণ্যের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। দেশে বর্তমানে প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারের পরিমাণ ২০ শতাংশ বেড়ে চলেছে। ক্রমবর্ধমাণ এ চাহিদার যোগান দিতে দেশেই আন্তর্জাতিক মানের প্লাস্টিক শিল্প কারখানা গড়ে ওঠছে। এরইমধ্যে দেশে ছোট-বড় মিলিয়ে পাঁচ হাজার ৩০টি প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রি গড়ে ওঠেছে। এখাতে সরাসরি পাঁচ লাখ ও পরোক্ষভাবে ১৩ লাখ লোক কাজ করছে। এখন অভ্যন্তরীণভাবে ১৮ হাজার কোটি টাকার প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন ও বিপণন হচ্ছে। এখাত রাষ্ট্রীয় কোষাগারে প্রতি বছর প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা রাজস্ব দিয়ে থাকে।
তিনি বলেন, আমাদের প্লাস্টিক পণ্য দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপিয় ইউনিয়নভুক্ত বিভিন্ন দেশসহ ইউরোপে ও এশিয়ার চীন, ভারত, নেপালসহ অন্যান্য দেশে বাংলাদেশি প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে। বাংলাদেশ থেকে প্লাস্টিকের তৈরি পণ্যের রপ্তানির পরিমাণ বছরে প্রায় তিন হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এখাতে সরাসরি রপ্তানি হচ্ছে এক হাজার কোটি টাকার ওপরে। পণ্যের ফ্যাশন ও ডিজাইন বৈচিত্র্য এবং গুণগতমানের জন্য আমাদের প্লাস্টিক দ্রব্য রপ্তানি প্রতিবছর বাড়ছে।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, রপ্তানি প্রবৃদ্ধির সুযোগ কাজে লাগাতে বর্তমান সরকার পরিবেশবান্ধব সবুজ প্লাস্টিক শিল্পখাত গড়ে তুলতে অঙ্গীকারবদ্ধ। এ লক্ষ্যে আমরা মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখানের ধলেশ্বরী সেতুর পশ্চিম পাশে বড়বর্ত্তা মৌজায় ৫০ একর জমির ওপর একটি প্লাস্টিক শিল্পনগরী গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি। এ প্রকল্প প্রস্তাব এরইমধ্যে একনেকে অনুমোদন পেয়েছে। ১৩৩ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে এ শিল্পনগরীর ৩৭০টি প্লটে কম-বেশি ৩৬০টি প্লাস্টিক শিল্প ইউনিট স্থাপন করা হবে। এসব শিল্প ইউনিটে এক হাজার ৮০০ নারীসহ মোট ১৮হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। এটি দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে শিল্প মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
তিনি আরো বলেন, প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানিতে আর্থিক প্রণোদনা প্রদান এবং পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন-২০১০ কার্যকর করার ফলে প্লাস্টিক/পিপি ওভেন ব্যাগ খাত ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বলে আপনারা তুলে ধরেছেন। এসব বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের কোনো করণীয় থাকলে, আমি তা অবশ্যই করব।
আন্তর্জাতিক এ মেলায় বাংলাদেশসহ ১৩টি দেশের তিন শতাধিক প্লাস্টিক পণ্য, প্যাকেজিং ও প্রিন্টিং সামগ্রী, যন্ত্রপাতি এবং প্রযুক্তি উদ্ভাবনকারী প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। মেলার পাশাপাশি এখানে এশিয়া প্লাস্টিক ফোরামের ২৫তম কাউন্সিল সভা এবং ‘বাংলাদেশে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।
বিপিজিএমইএ চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেছিলেন, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, এফবিসিসিআই সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদ, চ্যান চাও ইন্টারন্যাশনালের এশিয়া প্লাস্টিক ফোরামের জেনারেল সেক্রেটারি কল্লাম চেনসহ আরো অনেকে।
চারদিনব্যাপী এই মেলার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস্ ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিপিজিএমইএ) ও তাইওয়ানের প্রতিষ্ঠান চ্যান চাও ইন্টারন্যাশনাল।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
মাস্ক-স্যানিটাইজার-দূরত্বে কি এইচএমপিভি ঠেকানো সম্ভব?
চীনের উত্তর অঞ্চলে হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস বা এইচএমপিভি ভাইরাস আক্রান্ত মানুষেরবিস্তারিত পড়ুন
‘জুলাই ঘোষণাপত্রে’ কিছুটা সময় লাগতে পারে, ধৈর্য ধরার আহ্বান
শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলমবিস্তারিত পড়ুন
শফিকুল আলম: ফেব্রুয়ারির মধ্যে সবাই নতুন বই পাবে
আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে সবার হাতে নতুন বই দেওয়া হবেবিস্তারিত পড়ুন