বর্ষবরণে মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্য তৈরি হচ্ছে চারুকলা

পড়ন্ত বিকালে বসন্ত বাতাস মনে বইয়ে দিচ্ছে আনন্দের দোলা। নতুন বছর আসার আগমন বার্তাও দিচ্ছে এই বাতাস। আর শেষ সময়ে বর্ষবরণে প্রস্তুতি এখন শেষ পর্যায়ে। এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পহেলা বৈশাখের আনুষ্ঠানিকতায় নানা বিধিনিষেধ থাকলেও জমকালো আয়োজনের প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছেন আয়োজকরা। দিন রাত খাটছেন ছাত্র-শিক্ষক, সাংস্কৃতিক কর্মীরা।
গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে পহেলা বৈশাখ তারিখটি ১৪ এপ্রিল। সেই দিন ভোর থেকে রমনা বটমূলে হবে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। তবে সেদিনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় আনুষ্ঠানিকতা মঙ্গল শোভাযাত্রা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরাই থাকেন এই আয়োজনের মধ্যমণিতে।
১৯৮৯ সাল থেকে শুরু হয়ে এখন এ শোভাযাত্রা নববর্ষ উদ্যাপন সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে। ‘অন্তর মম বিকশিত করো অন্তরতর হে’- এই স্লোগানকে প্রতিপাদ্য করে মঙ্গল শোভাযাত্রাকে সফল করার জন্য ব্যস্ত সময় পার করছেন চারুকলার শত শত শিক্ষার্থী।
চারুকলা গেট ডিঙিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা যায় মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি। কান পাতলেই অনুষদের চারদিকে শোনা যাচ্ছে ঠুকঠাক আওয়াজ। বড় যে নৌকাটা মাত্র অর্ধাকার পেয়েছে এবং সেটাকে একদল খুব মনোযোগ নিয়ে পূর্ণ আকার দেয়ার চেষ্টা করছে। এমনি ভাবে ঘোড়া ও পাখিসহ নানা প্রতীক নির্মাণের প্রস্তুতিও শেষ পর্যায়ে।
এবারের বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা অন্যবারের উৎসবকে ছাপিয়ে যাবে-বলছেন আয়োজকরা। কেউ তালপাখা বানাচ্ছে, কেউ বাসন আঁকছে নিজের রঙ তুলিতে, কেউ কৃষকের ফসলের হাসির কোলাজটা রঙ তুলিতে পূর্ণতা দিচ্ছে। এই দৃশ্য যেন আবহমান বাংলার সেই গোলাভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু আর কৃষকের অমীয় হাসির স্ক্রিনপ্লে। নববর্ষ উদযাপন কমিটির সদস্য সুদিপ্ত শিকদার জয়সহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ব্যস্ত নিজ নিজ কাজে। বিভিন্ন কাজের জন্য জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থীরা নির্দেশনা দিচ্ছেন ছোটদের। একসঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করছেন বর্তমান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাবেক শিক্ষার্থীরাও।
নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক বছর শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীরাই এই কাজে নেতৃত্ব দেন। এবারের নববর্ষ উদ্যাপন কমিটির সমন্বকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ১৭ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী খালিদ হাসান রবিন। তিনি জানান, শোভাযাত্রার মূল অনুষঙ্গ ও আনুষঙ্গিক কাজের জন্য শিক্ষার্থীদের পাঁচটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
নববর্ষ উদ্যাপন অনুষ্ঠানের আয়োজনের জন্য প্রয়োজন হয় বিপুল অর্থের। কিন্তু চারুকলা অনুষদ কোনো অনুদান গ্রহণ করে না। অতীতের মতো এবারও কোনো প্রতিষ্ঠানের অনুদান নেয়নি চারুকলা। অনুষ্ঠানের খরচ বহনের জন্য একটি তহবিল গঠন করা হয়।
চারুকলার সাবেক শিক্ষার্থী মানবেন্দ্র বলেন, ‘কেবল মনের টান, সকলের মঙ্গল কামনায় আমাদের একটু হাতের ছোয়া থাকাটাই চাওয়া। আমরা পারিশ্রমিকের আশায় এই শোভাযাত্রার কাজ করি না। একটাই চাওয়া সম্প্রীতি বন্ধনে কাটুক বাঙালির প্রতিটি দিন’।
১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী খালিদ হাসান রবিন বলেন, ‘তহবিলের ব্যবস্থা চারুকলা বিভাগই করে থাকে। আমরা শিক্ষার্থীরা একটা চাঁদার ব্যবস্থা করি। সঙ্গে সঙ্গে বিক্রির জন্য আমরা অনেক প্রডাক্ট (মুখোশ, পাখি, হাঁস, বিড়াল, শখের হাঁড়ি, শিশু হরিণ, পেঁচা, কাগুজে বাঘ ইত্যাদি) তৈরি করে বিক্রি করি, যা থেকে অনেক আয় হয়। তাছাড়াও আমাদের তহবিলের একটা বড় অংশ আসে শিক্ষকদের তৈরি শিল্পকর্ম ও চিত্রকর্ম বিক্রি থেকে।’
শোভাযাত্রায় সমাজের নানা অবিচার, অসঙ্গতিও নানাভাবে তুলে ধরেন আয়োজকরা। এবার শিশু নির্যাতন, মা কর্তৃক শিশু হত্যা, নারীর প্রতি সহিংসতাসহ নানা বিষয় শোভাযাত্রার ভাবনায় উঠে আসবে। উঠে আসবে মূল্যবোধের অবক্ষয়, মা ও শিশুর সম্পর্কও।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান বলেন, ‘আমরা সব সময় চাই পহেলা বৈশাখের শোভাযাত্রা দ্বারা কিছু বিষয়কে ফুটিয়ে তুলতে, নিছক আনন্দের জন্য কিছু করতে নয়। আমরা চাই মঙ্গল শোভাযাত্রায় যে মোটিভ তৈরি হয়, তার মাধ্যমে যেন মানুষের কাছে একটা বার্তা যায়’।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

ফারুকী: আমরা মব জাস্টিসে বিশ্বাস করি না
সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী বলেছেন, “আমরা কোনো ধরনেরবিস্তারিত পড়ুন

কুষ্টিয়ায় মাংসের বদলে ঝোল দেওয়ায় সংঘর্ষ, আহত ৪
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে খতনার দাওয়াতে মাংসের বদলে বারবার ঝোল দেওয়া নিয়েবিস্তারিত পড়ুন

উপদেষ্টা: অন্তর্বর্তী সরকার বিশ্বব্যাপী বিপুল সমর্থন পেয়েছে
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, “গত ছয় মাসে বাংলাদেশবিস্তারিত পড়ুন