শনিবার, জুলাই ২৭, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

তারুণ্যের সংবাদ মাধ্যম

ময়লার বাক্স না মানুষের আস্ত দেহ!

ছেলেবেলায় শুনতাম মা মারা গেলে বাবা হয় তাওই (তালুই)। এখন দেখছি বাবা না থাকলে মা হয় খুনি। মা না থেকে বাবা থাকলেতো তবু তাওই পাওয়া যায়। কিন্তু বাবা না থাকলে? আধুনিক মুক্তবাজার অথর্নীতিতে এসে বাবা না থাকলে মা হয় খুনি। তাহলে কি দরকার ছিল এই মুক্তবাজার অর্থনীতির। এই উন্নতির? সত্যি মানুষ আগাচ্ছে! নির্মমতার ঘাড়ে চেপে বড্ড বেশি তাড়াতাড়ি।

জানুয়ারি থেকে অক্টোবর এই দশ মাসে ঢাকাসহ সারা দেশে নবজাতক উদ্ধার হয়েছে ৭৫২টি। এটি কি কেবল সংখ্যা? একজন মা তার সন্তানকে পরিবারের সহযোগিতায় কীভাবে খুন করেছে তার নির্মম কাহিনী এখন শুধুই পরিসংখ্যান? ভাবা যায় এই এক বছরে জমা হয়েছে ৭৫২টি নিষ্ঠুর নির্মম খুনের রোমহষর্ক গপ্প। একটি নবজাতক শিশু যেমন নিজের পায়ে হেঁটে এসে ডাস্টবিনে পড়ে না তেমন সদ্য প্রসব বেদনা নিয়ে মা তার সন্তানকে ফেলে দিতে আসে না, এটা স্পষ্ট। তাহলে পরিবারের অন্য যে কোন সদস্য বা সদস্যরাই এই কাজটি করেন। তিনি তবে কে? নবজাতকের নানা? নানি? মামা? নাকি খালা? নাকি সবাই একসাথে, একদলে?
আমি ভীষণ আতংকিত এই ভেবে যে, এই সংখ্যা এখন কেবল বাড়বে। বাড়বেই। যে খুনের সাথে পরিবার জড়িয়ে থাকে। পরিকল্পিত ভাবে খুন করা হয় সেই খুনকে রুখবে কে? কোন আইন? পরিত্রাণের উপায় আছে কি তবে? সত্যি নেই। আজ সকালে আয়নায় নিজের প্রতিচ্ছবিকে তাই বলতে হলো এই নিষ্ঠুর সংসারে এখন আমার বসবাস। যেখানে নবজাতকের নাক কামড়ে খায় কুকুর। যেখানে একজন মা পরিবারের আর সকলের সহযোগিতায় হয়ে ওঠে খুনি। মা এখন খুনি। মা এর কাছে এখন সন্তান থেকে প্রেম, প্রেম থেকে সংসার, সংসার থেকেও সমাজ বড়। মাতৃত্ব এখন ঠুনকো। সন্তান এখন ডাস্টবিনের আবর্জনা।

রবীন্দ্রনাথ বলেছেন যে বাঘ একবার নরমাংসের স্বাদ পেয়েছে তাকে ফিরিয়ে আনা কঠিন। তবে কি! যে কিশোর কিশোরী কিংবা যুবক যুবতী নৈতিকতাহীন এই শরীরের খেলায় মেতেছে কিংবা খুন করবার এই হোলি খেলায় নাচছে পরিবারের সাহায্যে সেই পথ থেকে আর ফিরবে কী? শরীরের নেশা এত সহজে ছাড়বে কি? শরীর এখন শরীরে নেশায় ছোটে।

নিষ্ঠুর প্রেমহীন সংসারে মানবিকতা জাগাবার জন্য কেউ আছে কি? কেউ নেই। পরিবারের সবাই এখন একজোট হয়ে ঠাণ্ডা মাথায় বসে এঁকে নেয় ছক। খুন করবার ছক। কে কীভাবে জন্মাবার মিনিট খানেকের মধ্যেই ডাস্টবিনে ফেলে আসবে এক দেবদূতকে! খুন করতে এখন হাত কাঁপে না। বুক কাঁপে না। দৃঢ় পায়ে এগিয়ে যায় লক্ষ্যবস্তু ডাস্টবিনের দিকে।

আহা কি অসম্ভব ঠাণ্ডা মাথায় রেকি করে নেয়া আসন্ন নবজাতকের পরিবারের সদস্যদের। কে কখন কোথায় কোন সময়ে এই নিষ্ঠুর কাজটি করবেন তার ছক করা। রেকি করা। নিখুঁত পরিকল্পনার নিখুঁত রূপায়ন। কই ৭৫২টি নিউজের কোথাও তো এমন কথা লেখা হয়নি- নবজাতক ফেলতে এসে হাতেনাতে ধরা? মানবিকতা নৈতিকতা এখন ভেসে যাচ্ছে হাতের মুঠোয় থাকা মুঠোফোনের ইন্টারনেটে। শরীর এখন শরীর খোঁজে। মন এখন মৃতপ্রায় এক শব্দ।

নিষ্ঠুর এই খেলার এখনই সমাপন ঘটাতে না পারলে খুনের হোলি খেলায় নিমজ্জিত এই গোষ্ঠী রাষ্ট্রের গলা টিপে ধরবে অচিরেই। এরা বড় ভয়ংকর। এরা নিজেদের লেবাস খুলে যাওয়ার ভয়ে যে কোনো কাজ করতে পারে অনায়াসে। একসাথে পরিবারের সকলে মিলে এরা সিদ্ধান্ত নেয়। এরা সিদ্ধহস্ত। এরা চতু। এরা ধরা পড়ে না। এরা একজন কিংবা দু’জন নয় ৭৫২ বা তারও বেশি। নেহাতই কম নয় সংখ্যাটা। রাষ্ট্রের মনোযোগ দেওয়ার সময় এসেছে এদের দিকে। বিষ মহামারী রকমের ছড়াবার আগে এই বিষ উপড়ে ফেলতে হবে। নষ্ট করতে হবে এই নষ্ট বীজের পুরো পরিবারকে।

খুব কঠিন না কিন্তু এদের খুঁজে বের করা। একটু চোখ কান খোলা রাখলেই ধরা সম্ভব। খুব ধনী আর খুব দরিদ্র এই দুই দলের মানুষ সমাজ সংসারের খুব ধার ধারে না। এরা ইচ্ছেমতো চলে। ইচ্ছে স্বাধীনতায়। অন্যের মনোরঞ্জনের জন্য এরা খুব একটা টলেও না নাচেও না। রাস্তার পাশে পলিথিন জড়িয়ে রাতে ঘুমায় যে মানুষ তার কাছে সমাজ সংসার সত্যি উপহাসের। আবার যিনি ডাবল এসি করা ঘরে নরম বিছানায় মখমলের চাদর জড়িয়ে ঘুমায় তার সংসার সমাজ মেইনটেইন করে চলার সময় নেই। তাই ধার ধারে না সমাজের। সংসারের। এরা তাই পরোয়াহীন। সুখী এবং মানবিকও। অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তান জন্ম দিলেও তাই এড়িয়ে চলে না। অন্তত মেরে তো ফেলে না!

প্রমাণ করতে রাস্তার পাশে চলতি পথে চোখ রাখুন দেখবেন চুলে জট ধরে গেছে ময়লা কাপড়ে স্তূপ জমে গেছে কিন্তু কোলের মধ্যে সন্তান নিয়ে বসে আছে। যেন সকল সুখের সন্ধান পেয়ে গেছে। ভাত নেই। কাপড় নেই। খাবার নেই তবু সন্তান আঁকড়ে বসে আছে। সন্তানের বাবা কে তা বলতেও পারে না। তবু সে সন্তানের মুখে চুমু দিয়ে আদরে ভরিয়ে দিচ্ছে। পরোয়া নেই কারো। সন্তানের বাবা দিয়ে কী হবে? সন্তানই আসল। আর সব তুচ্ছ। অনুভূতি সব। এই পথভিক্ষুকের কাছে তার সন্তানটি চেয়ে দেখুন তেড়ে আসবে মারতে। এরা আর যাই হোক মানুষ। মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন মানুষ। খুনি নয়।

অন্যের ইচ্ছায় অন্যের মান বজায় রেখে চলে কেবল মধ্যবিত্তরা। পরিবার সংসার সমাজ নিয়ে চলতে হয় এদের। পরিবার আর সমাজের মন জুগিয়ে চলতে সন্তানকে বলি দিতে এরাই পারে। এদের কাছে সন্তান তুচ্ছ। সম্মান অনেক বড়। আস্ত মানুষকে কুকুরের খাবার করে দিলেও এদের কিছু যায় আসে না। বরং এদের সম্মান বাঁচে। সম্মান হলো সব। জীবন তুচ্ছ। এরা ভাবে মানবিকতা দিয়ে কে কবে কী করতে পেরেছে? মানবিক হয়ে লাভ নেই বরং সংসার করো। স্বামী থাকলে সন্তান পাবা গণ্ডায় গণ্ডায়। একটা যাবে তো আর একটা আসবে। অসংখ্য সন্তান জন্ম দেওয়া তো কেবল অসংখ্য মিলনেরই ইঙ্গিত! আহা সেইতো জীবন। সেইতো সুখ। সেইতো সংসার। সমাজ।

এখনই এই নষ্ট স্রোতকে থামাতে হবে। ধরতে হবে হাতে নাতে। পিষে মারতে হবে খুনিগুলোকে। একটা নষ্ট স্রোতকে মূল জনস্রোতে মিশতে দেওয়া কিছুতেই ঠিক হবে না।

মূল্যবোধের চাকায় চড়ে জীবনে জয়ী হওয়ার শিক্ষা দিয়ে কী হবে? বরং ‍লুকিয়ে চুকিয়ে নিজেকে ঝালিয়ে নাও। প্রেমের হাওয়ায় ওড়ো আর রাস্তা ঘাটে ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলো। ময়লার বাক্স না মানুষের আস্ত দেহ! সংখ্যাটা জানুয়ারি থেকে অক্টোবের মাঝামাঝিতে এসে ৭৫২। বছর শেষে এ সংখ্যা কতো দাঁড়াবে?

হে প্রিয় রাষ্ট্র, জন্মভূমি আমার, তোমার ঘাড়ে বসে থাকা সরকারের মাথায় একটু বুদ্ধি দাও। এই হত্যাকারীদের শাসন করবার শক্তি দাও। নয়তো উন্মুক্ত করো শরীরের সকল রহস্যময়তা স্কুলের পাঠ্যবই থেকেই। তুমি ডাস্টবিনে ফেলে রেখো না তোমার সন্তানকে। মাথা তুলে বাঁচবার সাহস দাও। সংসার, সমাজ থেকে মানুষ বড় সে শিক্ষার পথ তৈরি করতে সরকারকে সাহসী করো। নইলে যে, এই সংখ্যা ৭৫২ তে থাকবে না বাড়বে কেবল, বাড়বে। আমরা তা চাই না।
লেখক : ফারহানা লাকি, তরুণ উদ্যোক্তা

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

হত্যাকাণ্ডসহ সব অনভিপ্রেত ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত হবে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অহেতুক কতগুলো মূল্যবান জীবন ঝরে গেল।বিস্তারিত পড়ুন

রাজধানীর শনির আখড়া ও ধনিয়ায় গুলিবিদ্ধ ৬

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর শনিআখড়া ও ধনিয়া এলাকায় ৬ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে।বিস্তারিত পড়ুন

বিমানের লাগেজ থেকে সাড়ে ৪ কোটি টাকার স্বর্ণ উদ্ধার

 ৪ কেজি ৪২০ গ্রাম স্বর্ণের বার হযরত শাহজালাল আন্তর্জা‌তিক বিমানবন্দরবিস্তারিত পড়ুন

  • মোবাইল ফোনে প্রশ্নপত্রের ছবি তোলায় শিক্ষকের কারাদণ্ড
  • বেনজীরের ঢাবি’র পিএইচডি ডিগ্রি বাতিলের প্রস্তাব
  • মতিউর গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যে দেশেই আছেন 
  • কারাগারের ছাদ ফুটো করে পালানোর সময় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৪ কয়েদি গ্রেফতার
  • রাজধানীতে পৃথক ঘটনায় দুই নারীর আত্মহত্যা
  • চাঁদা তুলে পরিবার চালানোর অধিকার রাজনীতিবিদদের নেই: ওবায়দুল কাদের
  • চাঁদপুরে যৌথ অভিযানে ১১ মণ জেলিযুক্ত চিংড়ি জব্দ
  • কুড়িগ্রামে অবৈধ জাল বিক্রি ও মজুদের দায়ে তিনজনকে কারাদণ্ড
  • নোয়াখালীতে অস্ত্র ঠেকিয়ে কিশোরীকে অপহরণের অভিযোগ
  • নান্দাইলে চাচাতো ভাইয়ের হাতে চাচাতো ভাই খুন
  • আছাদুজ্জামান মিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির তেমন অভিযোগ আসেনি, হলে বিচার হবে: ওবায়দুল কাদেরের
  • সাবেক কমিশনার ওয়াহিদা রহমানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা