রোহিঙ্গা নির্যাতন: শান্তিতে নোবেলজয়ীর দেশে এমন অমানবিকতা!
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে মিয়ানমারের মুসলিম অধ্যুষিত রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গাদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনী ও পুলিশের চালানো নৃশংস নির্যাতনের ভংয়ঙ্কর এক চিত্র উঠে এসেছে। সেখানে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও অমানবিক নির্যাতন-পীড়নের কিছু ছবি আর ভিডিওচিত্র পাওয়া গেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচও স্যাটেলাইট থেকে তোলা কিছু ছবি প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা গেছে, রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামগুলোর অনেক বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সংস্থাটির দাবি, অন্তত ৪৩০টি বাড়িতে অগ্নি সংযোগ করা হয়েছে। রোহিঙ্গা মুসলমান সমর্থিত রোহিঙ্গা ভিশন নামে একটি ওয়েবসাইটে পোস্ট করা ভিডিওচিত্রেও আগুনে পোড়া কিছু মৃতদেহ এবং মৃতদেহগুলোকে ঘিরে স্বজনদের আর্তনাদের দৃশ্য দেখা গেছে। লন্ডনভিত্তিক সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম গণমাধ্যমে দাবি করেছেন, গত অক্টোবরের ৯ তারিখ থেকে সেনাবাহিনীর অভিযানে সেখানে কমপক্ষে সাড়ে তিনশো রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। এছাড়াও বহু নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। আর বাড়ি-ঘর হারিয়েছে ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ। অবশ্য দেশটির সেনাবাহিনী বলছে, সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত ৬৯ জনকে হত্যা করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা তদন্তে মানবাধিকার সংস্থাগুলো জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে তদন্তের দাবি জানিয়েছে। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি, যে জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের ‘বিশ্বের অন্যতম নির্যাতিত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে তারা মিয়ানমারের উপর চাপ প্রয়োগ করার পরিবর্তে বাংলাদেশের সীমান্ত খুলে দিতে বলছে। অন্যদিকে সারা পৃথিবীতে যিনি গণতন্ত্রের নেত্রী বলে সুপরিচিত, শান্তিতে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত সেই অং সান সূ চিও ক্ষমতায় আসার পর রোহিঙ্গাদের বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেলেও আজ তার দেশেই চরম সহিংসতার শিকার অসহায় রোহিঙ্গারা। এর মধ্যে তার নোবেল পুরস্কার ফিরিয়ে নিতে আবেদন করেছেন বিশ্বের লাখ লাখ মানুষ। তাদের আবেদনে বলা হয়েছে, নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী যদি শান্তি রক্ষায় ব্যর্থ হন, তখন শান্তির স্বার্থেই নোবেল শান্তি পুরস্কার কমিটির উচিত ওই পুরস্কার হয় জব্দ করা অথবা ফিরিয়ে নেয়া। যদিও গত আগস্টে সূ চি জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানকে প্রধান করে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে একটি কমিশন গঠন করেছেন, কিন্তু এরইমধ্যে তা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করে একে ‘লোক দেখানো আর সময়ক্ষেপণ’ বলে উল্লেখ করেছেন। একটি গোষ্ঠির ওপর দীর্ঘ সময় ধরে সংখ্যাগুরু বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর এমন বর্বোরোচিত পন্থায় চলা অত্যাচরের পরও তার এমন নিরবতায় আমরা লজ্জিত, অপমানিত। মিয়ানমান সরকার রাখাইন প্রদেশে বসবাসকারী ১০ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিমকে ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ উল্লেখ করে সেদেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। গত কয়েক বছর ধরে নানাভাবে বহুসংখ্যক রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের রেজিস্টার্ড ক্যাম্পগুলোতে ৩৩ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাস করছে। বিভিন্ন সংস্থার মতে, তাদের প্রকৃত মোট সংখ্যা পাঁচ লাখের মতো। এ অবস্থায় অনেকেরই আশঙ্কা নতুন করে রোহিঙ্গাদের নির্যাতন করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিতে এটা মিয়ানমারের একটা কৌশল। আমাদের প্রত্যাশা এতকিছুর পর দেরিতে হলেও জাতিসংঘ এবং বিশ্ব সম্প্রদায় মিয়ানমারের এমন নৃশংসতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে নির্যাতিত রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের স্বাভাবিক জীবন-যাপন নিশ্চিত করবে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
মিয়ানমারে বন্যায় মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে ২২৬
ঘূর্ণিঝড় ইয়াগির প্রভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণেবিস্তারিত পড়ুন
ইসরাইলি হামলায় আরও ৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত
গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বাহিনীর তান্ডবে প্রাণ গেছে আরও ৩৮বিস্তারিত পড়ুন
বিক্ষোভকারীদের অধিকার সমুন্নত রাখতে সরকারের প্রতি আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, বিক্ষোভকারীদের অধিকার সমুন্নতবিস্তারিত পড়ুন