সার্ক সম্মেলন বর্জনে উত্তেজনা বেড়েছে

বাংলাদেশসহ সার্কের চার সদস্য দেশের আসন্ন শীর্ষ সম্মেলন বর্জনের সিদ্ধান্তে চরম ক্ষুব্ধ হয়েছে পাকিস্তান। তাদের সব ক্ষোভ গিয়ে পড়েছে ভারতের ওপর। এ কারণে পাক-ভারত উত্তেজনা আরো বেড়েছে।
সার্ক সনদ অনুযায়ী সদস্যভুক্ত কোনো একটি দেশের রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান অনুপস্থিত থাকলে শীর্ষ সম্মেলন হতে পারে না। বাংলাদেশ, ভারত, আফগানিস্তান ও ভুটান শীর্ষ সম্মেলনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত গত মঙ্গলবার সার্কের চেয়ারকান্ট্রি নেপালকে জানিয়ে দিয়েছে।
এ দিকে নেপাল গতকাল পর্যন্ত ইসলামাবাদ শীর্ষ সম্মেলন আনুষ্ঠানিকভাবে স্থগিত ঘোষণা করেনি। আগামী শনিবার দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র সচিব জাতিসঙ্ঘ সাধারণ অধিবেশনে যোগদান শেষে নিউ ইয়র্ক থেকে কাঠমান্ডু ফিরে এলে এ ঘোষণা দেয়া হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে গত রাতে সার্ক সম্মেলন স্থগিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে পাকিস্তানের শামা টেলিভিশন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা সারতাজ আজিজকে উদ্ধৃত করে এই খবরটি নিশ্চিত করা হয়। সারতাজ আজিজ বলেন, সার্ক শীর্ষ সম্মেলন যখনই হবে, তা পাকিস্তানেই হবে।
এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের সব ক্ষোভ গিয়ে পড়েছে প্রতিবেশী ও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের ওপর। তারা ভিন্ন ইস্যুতে ভারতের প্রতি হুঙ্কার দিয়ে বলেছে, দুই দেশের অভিন্ন নদী থেকে পানি প্রত্যাহারের যেকোনো প্রচেষ্টা ‘যুদ্ধ ঘোষণা’র শামিল হিসেবে বিবেচনা করা হবে। কূটনৈতিকভাবে পাকিস্তানকে একঘরে করার পাশাপাশি ভারত থেকে পাকিস্তানে প্রবাহিত তিনটি নদী থেকে পানি প্রত্যাহারের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে ভারত ।
পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গতকাল রেডিও পাকিস্তানকে জানিয়েছেন, সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে কোনো দেশের যোগ না দেয়ার ব্যাপারে আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে এ সংক্রান্ত ভারতের ঘোষণা দুঃখজনক।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের উরিতে সেনা ব্রিগেড সদর দফতরে সন্ত্রাসী হামলায় ১৮ জন সৈন্য নিহত হওয়ার পর পাক-ভারত উত্তেজনা বাড়তে থাকে। ভারত এ জন্য সরাসরি পাকিস্তান সরকার সমর্থিত উগ্রবাদীগোষ্ঠীকে দায়ী করে এবং পাকিস্তানে সামরিক অভিযান চালানোর জন্য ভারতের অভ্যন্তর থেকে চাপ বাড়তে থাকে। তবে ভারত সরকার এটিকে কূটনৈতিকভাবে মোকাবেলা করার সিদ্ধান্ত নেয়।
উরির ঘটনা নিয়ে দিল্লিতে নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত আবদুল বাসিতকে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দ্বিতীয়বারের মতো তলব করার পরেই সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে নরেন্দ্র মোদির যোগ না দেয়ার ঘোষণা আসে। কাছাকাছি সময়ে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও ভুটানও সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে অপারগতা প্রকাশ করে।
এ ব্যাপারে গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, য্দ্ধুাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়াসহ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অব্যাহতভাবে পাকিস্তানের হস্তেেপর কারণেই ইসলামাবাদে অনুষ্ঠেয় সার্ক শীর্ষ সম্মেলন বর্জন করছে বাংলাদেশ। আর এ সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের একেবারেই নিজস্ব।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার আমরা সার্কের সভাপতি নেপালকে পত্রের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছি নভেম্বরে পাকিস্তানে অনুষ্ঠেয় ১৯তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করছে না। বাংলাদেশ আরো জানিয়েছে, সার্কের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ আঞ্চলিক সহযোগিতা, মূল্যবোধ, সার্ক সনদ, কানেকটিভিটিসহ সার্বিক সহযোগিতায় বিশ্বাস করে। তাই সময় সুযোগ এলে বাংলাদেশ সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে একটি রাষ্ট্রের অব্যাহতভাবে হস্তপে এ ধরনের সম্মেলন অনুষ্ঠানের জন্য উপযোগী নয়। স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, বঙ্গবন্ধু, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিচার ও পরবর্তীতে ফাঁসির প্রশ্নে বাংলাদেশ কখনোই কারো সাথে আপস করেনি, করবেও না।
কূটনৈতিকভাবে পাকিস্তানকে একঘরে করার যে ঘোষণা ভারত দিয়েছে, সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে অংশ না নেয়ার বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত তার অংশ কি না- জানতে চাইলে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘অন্য কোনো রাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের সাথে আমাদের সিদ্ধান্তের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি আমাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত’।
ইসলামাবাদে হওয়ার কারণেই কি বাংলাদেশ সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছে না- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, স্থান নয়, পরিবেশটাই গুরুত্বপূর্ণ। নতুন করে আবার যদি কোনো প্রস্তাব আসে তখন বিবেচনা করা হবে।
এর ফলে দণি এশীয় দেশগুলোর আঞ্চলিক সংস্থার সার্কের অস্তিত্ব বিলীন হতে যাচ্ছে কি না- জানতে চাইলে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘১৮তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের আগেও দীর্ঘদিন সার্ক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি। সার্কের জন্ম ৩০ বছর হলেও এখন মাত্র ১৯তম শীর্ষ সম্মেলন চলছে।’
পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করবে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, সময়ই সেটা বলে দেবে।
অন্য দিকে ভুটান বলেছে, সার্ক প্রক্রিয়া ও আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার করার ব্যাপারে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে সম্প্রতি এ অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদের উত্থান ইসলামাবাদে সফলভাবে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে গুরুতর নেতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। সন্ত্রাসবাদের কারণে আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার ব্যাপারে সার্কের কয়েকটি সদস্যরাষ্ট্রের উদ্বেগের অংশীদার ভুটান। এ অবস্থায় সার্ক সম্মেলনে যোগ দেয়া ভুটানের পক্ষে সম্ভব নয়।
আর আফগানিস্তান বলেছে, চাপিয়ে দেয়া সন্ত্রাসবাদের কারণে আফগানিস্তানে সহিংসতা ও হানাহানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অবস্থায় কমান্ডার ইন চিফ হিসেবে প্রেসিডেন্ট ঘানি খুবই ব্যস্ত। তাই তিনি সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে পারবেন না।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ সার্ক সম্মেলনে তার দেশের যোগ না দেয়ার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে টুইটার অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, আঞ্চলিক সহযোগিতা ও সন্ত্রাস এক সাথে চলতে পারে না। ইসলামাবাদে অনুষ্ঠেয় সার্ক শীর্ষ সম্মেলন থেকে সরে দাঁড়াল ভারত। তিনি লিখেছেন, সার্কের সভাপতি দেশ নেপালকে ভারত জানিয়েছে এ অঞ্চলে আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসী হামলা বেড়ে যাওয়ায় এবং সদস্য দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে একটি দেশের হস্তক্ষেপের কারণে এমন এক পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে, যা নভেম্বরে ইসলামাবাদে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের জন্য সহায়ক নয়। আঞ্চলিক সহযোগিতা, কানেকটিভিটি ও যোগাযোগের ব্যাপারে ভারত তার অঙ্গীকারের ব্যাপারে অবিচল আছে। তবে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ভারতের পক্ষে ইসলামাবাদে অনুষ্ঠেয় শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেয়া সম্ভব নয়।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে স্বৈরাচারী শাসক বললেন ট্রাম্প
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির দাবি ছিল, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পবিস্তারিত পড়ুন

ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত চলায় এমবাপ্পেকে বিজ্ঞাপন থেকে সরাল রিয়াল
আর্থিক দ্বন্দ্বের মধ্যে পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর একেরবিস্তারিত পড়ুন

মিয়ানমারে বন্যায় মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে ২২৬
ঘূর্ণিঝড় ইয়াগির প্রভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণেবিস্তারিত পড়ুন