২০০৯ এবং তারপরে অস্ত্র লাইসেন্স পেয়েছেন? আপনি বেসরকারি ব্যক্তি? কীভাবে থানায় জমা দেবেন অস্ত্র
ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বা আত্মরক্ষার জন্য দেশের যেকোনো বৈধ নাগরিক আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স নিতে পারেন। বেসামরিক কোনো ব্যক্তি অস্ত্র কেনার জন্য আগে সরকারের অনুমতি বা লাইসেন্স নিতে হয়।
২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে অনেকেই অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়েছেন। সম্প্রতি এসব অস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে। একইসঙ্গে অস্ত্র আর সংশ্লিষ্ট গোলাবারুদ ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে থানায় জমা দিতে বলা হয়েছে। নইলে সেসব অস্ত্র অবৈধ গণ্য হবে।
অস্ত্র জমা দেওয়ার প্রক্রিয়াটা আসলে কি, সেই জিজ্ঞাসাও আাছে অনেকের। আবার কোনো ব্যক্তি যে ঠিকানায় লাইসেন্স নিয়েছেন, ঠিকানা পরিবর্তন হলে বা আগের ঠিকানায় অবস্থান না করলে, অস্ত্র জমা দেওয়ার বিষয়ে তিনি কি করবেন? এমন সব জিজ্ঞাসাও আছে সংশ্লিষ্টদের।
একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে ঢাকা টাইমস এসব জিজ্ঞাসার উত্তর খুঁজেছে। তারা বলছেন, অস্ত্র জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া জটিল কিছু নয়। কয়েকটি নিয়ম মেনে এটি সহজে সারা যায়।
অস্ত্র যেভাবে জমা দিতে হবে
ঢাকা মহানগর পুলিশসহ দেশের বিভিন্ন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ঢাকা টাইমসকে জানান, সংশ্লিষ্ট থানায় অস্ত্রসহ লাইসেন্সের কাগজ নিয়ে জিডি করে অস্ত্র জমা দিতে হবে। এছাড়া কোনো ব্যক্তি চাইলে তার পরিবারের সদস্য বা প্রতিনিধির মাধ্যমেও অস্ত্র জমা দিতে পারবেন।
আর ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে অস্ত্র জমা না দিলে, প্রতিটি জেলা উপজেলায় অস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়া ব্যক্তিদের তালিকা অনুযায়ী অস্ত্র উদ্ধার অভিযান চালানো হবে। সেক্ষেত্রে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে তাদের বিরুদ্ধে।
অস্ত্র জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, অস্ত্রে জমা দেওয়ার সময় দুই কপি ঘোষণাপত্র থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বরাবর দিতে হবে এবং জিডি করতে হবে।
ঘোষণাপত্রে লিখতে হবে— ‘বরাবর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সরকারি প্রজ্ঞাপনবলে আমি (নাম) আমার লাইসেন্সকৃত অস্ত্র (নম্বর উল্লেখ করে) জমা দিয়ে যাচ্ছি। ভবিষ্যতের জন্য ডায়রিভুক্ত করলাম (নম্বর)।’
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘এ রকম দুই কপি নিয়ে থানায় এলে আমরা অস্ত্র জমা নেব। লাইসেন্সধারী ব্যক্তি সরাসরি থানায় আসতে না চাইলে অথরাইজ পেপার দিয়ে তার মনোনীত ব্যক্তির মাধ্যমে আবেদন ও জিডি করে অস্ত্র জমা দিতে পারবেন।’
এই কদিনে পিস্তল ও শর্টগান মিলিয়ে ধানমন্ডি থানায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২১টি অস্ত্র জমা পড়েছে বলেও জানান ওসি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন।
কারা কোথায় অস্ত্র জমা দেবেন
তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোবারক হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, সংশ্লিষ্ট থানায় অস্ত্র জমা দিতে হবে। যেমন তেজগাঁও থানা এলাকায় যারা বসবাস করেন, তারা তেজগাঁও থানায় অস্ত্র নিয়ে এলে জমা রাখা হবে।’
‘অস্ত্রের সঙ্গে লাইসেন্স ও দরখাস্ত দিতে হবে। দরখাস্তে লাইসেন্সধারীর নাম, অস্ত্রের বর্ণনা, সরকারি নির্দেশনা ও তারিখ লিখতে হবে। পরে জিডি নম্বর দিয়ে এই অস্ত্র জমা নেব।’
যার নামে অস্ত্র লাইসেন্স করা, তিনি উপস্থিত না হয়ে কি অস্ত্র জমা দিতে পারবেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ব্যক্তি সরাসরি উপস্থিত না হয়ে প্রতিনিধির মাধ্যমে থানায় অস্ত্র পাঠাতে পারবে। তবে সেক্ষেত্রে তার চিঠি লিখে দিতে হবে।’
আবার কেউ অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়েছেন চট্টগ্রামে কিন্তু থাকেন ঢাকায়, তার ক্ষেত্রে অস্ত্র জমা দেওয়ার বিষয়টি কেমন হবে জানতে চাইলে ওসি মোবারক বলেন, ‘যে ঠিকানায় লাইসেন্স করা সেখানে দিতে হবে এমন কোনো কথা নেই। বর্তমান ঠিকানা মানে যেখানে থাকেন সেখানকার থানায়ও জমা দেওয়া যাবে।’
এই কদিনে তেজগাঁও থানায় এখন পযন্ত তিনটি অস্ত্র জমা পড়েছে জানিয়ে ওসি বলেন, ‘আজ (বৃহস্পতিবার) আরও কয়েকটি অস্ত্র জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।’
অস্ত্র জমা দেওয়ার বিষয়ে একই রকম কথা বললেন নরসিংদী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীর আহমেদ। তার থানায় এখন পর্যন্ত ৩টি অস্ত্র জমা পড়েছে বলে জানালেন তিনি।
রাজধানীর মডেল থানা রমনায় এরইমধ্যে ১২টি অস্ত্র জমা পড়েছে বলে জানালেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম ফারুক। বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০০৯ সাল থেকে যেসব অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে সেগুলোই আমরা জমা নিচ্ছি। জিডি করে লাইসেন্সধারীরা থানায় অস্ত্র জমা দিচ্ছেন।
৩ সেপ্টেম্বরের পর অস্ত্র উদ্ধার অভিযান
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দশনা মতো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অস্ত্র জমা না দিলে সেটি অবৈধ হয়ে যাবে জানিয়ে চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওয়াসীম ফিরোজ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এই সময়ের ভেতর অস্ত্র জমা না দিলে আমাদের কাছে যে তালিকা আছে, সেটা অনুযায়ী অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চালানো হবে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, দেশে এখন বৈধ অস্ত্রের সংখ্যা কমবেশি ৫০ হাজার। এর মধ্যে ১০ হাজারের বেশি অস্ত্র রয়েছে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের হাতে। তাদের বেশির ভাগই আবার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী।
অস্ত্র জমা নেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন থানায় বৈধ অস্ত্র ব্যবহারকারীদের হালনাগাদ হওয়া তালিকা সংগ্রহ করা হচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে তাদের অস্ত্র জমা না হলে তালিকা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত ২৫ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে এ নির্দেশনা দেয়। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই নির্দেশনার পর অনেকটা ধীরগতিতেই অস্ত্র জমা পড়ছে বলে বিভিন্ন থানা পুলিশের সূত্রে ঢাকা টাইমস জানতে পেরেছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘বিগত ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি হতে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট পর্যন্ত যে সমস্ত আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বেসামরিক জনগণকে প্রদান করা হয়েছে তাদের প্রদানকৃত লাইসেন্স স্থগিত করা হলো।’
আরও বলা হয়, এ নির্দেশনার পর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। তিনি ‘দ্যা আর্মস অ্যাক্ট ১৮৭৮’ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা ২০১৬ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
এইচএসসির ফল প্রকাশ মঙ্গলবার, জানা যাবে যেভাবে
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করাবিস্তারিত পড়ুন
ড. ইউনূস: নির্বিঘ্নে সব জায়গায় পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “এবার দুর্গাপূজারবিস্তারিত পড়ুন
ডিএমপি: ৫ আগস্ট পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. সারোয়ার জাহানবিস্তারিত পড়ুন