অনুপস্থিত প্রকৌশলীকে ফোন করে শাসালেন ওবায়দুল কাদের
ঈদের সময়ে যানজট ও সড়ক দুর্ঘটনা পরিস্থিতি পর্যালোচনা সভায় প্রতিনিধি না পাঠানোয় সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলীকে কড়া ভাষায় সতর্ক করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
রোববার বিকালে তেজগাঁওয়ে বিআরটিএ সদর কার্যালয়ে ওই সভা চলাকালে মোবাইল ফোনে প্রকৌশলী ইবনে আলম হাসানকে অবহেলা করলে দায়িত্বছাড়া করার হুঁশিয়ারিও দেন মন্ত্রী।
একই সময়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এম এ এন সিদ্দিককে ফোন করে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ এ সভায় সওজের প্রতিনিধি না পাওয়ার বিষয়ে খেদ ঝাড়েন ওবায়দুল কাদের।
‘ঈদ পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী যানজট পরিস্থিতি, পরিবহন ব্যবস্থাপনা ও সড়ক দুর্ঘটনা বিষয়ক’ পর্যালোচনা সভাটি ডাকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।
সভায় বিআরটিএ’র পাশাপাশি পরিবহন মালিক-শ্রমিক, হাইওয়ে পুলিশ, সড়ক পরিবহন এবং দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন।
সভার শেষ বক্তব্যে মহাসড়কে ‘কালো তালিকাভুক্ত’ দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মন্ত্রী কাদের জানতে চান- সওজের প্রতিনিধি কে আছেন?
কোনো সাড়া না পেয়ে বিআরটিএ কর্মকর্তাদের কাছে না আসার কারণ জানতে চান তিনি। সদুত্তর না পেয়ে প্রধান প্রকৌশলী ইবনে আলম হাসানকে ফোন করতে বলেন মন্ত্রী।
ফোনে কাদের বলেন, “তুমি চিফ ইঞ্জিনিয়ার, রাস্তায়ও যাও না, একটা মিটিং হচ্ছে, তোমার লোকের কোনো খবর নাই। আমি মন্ত্রী…এখানে তুমি চিফ ইঞ্জিনিয়ার কোনো লোক পাঠাওনি, ব্যাখ্যা দাও।”
অন্যপ্রান্ত থেকে কিছু একটা উত্তর পেয়ে তিনি বলেন, “বিআরটিএ’র মিটিং, আবার কোন মিটিং? কোন মিটিং মানে? তুমি কোন জগতে থাক? বিআরটিএ বলে নাই তোমাকে?”
এরপর বিআরটিএ’র একজন কর্মকর্তা মন্ত্রীকে বলেন, প্রধান প্রকৌশলীকে জানানো হয়েছে। তিনি প্রতিনিধি পাঠাবেন বলে জানিয়েছিলেন।
তখন মন্ত্রী কাদের ফোনে আবার বলেন, “বলছে তো। বিআরটিএ বলছে তো। তুমি বলেছ প্রতিনিধি পাঠাবে। কোথায় তোমার প্রতিনিধি? নিজেও ফাঁকি দাও, অন্যদেরকেও ফাঁকি দিতে তুমি সহায়তা করছ।”
অন্যপ্রান্ত থেকে আরেকটি জবাব পেয়ে মন্ত্রী উত্তেজিত হয়ে বলেন, “কেন আজকে (এটা) করলে? কেন আজকে করলে? সেটার জন্য জবাব দিতে হবে তোমাকে। কেন করছ আজকে, সেটা তোমাকে বলতে হবে।
“…মিস হয় না? আমি জানি না? মন্ত্রণালয়ে অনেক মিটিং হয়, তোমার লোক নাই, তুমি নিজে নাই, এই রকম অনেক মিটিং আমি করেছি। দেশটাকে ফাঁকি দিও না।”
অবহেলার বিষয়ে সতর্ক করে ইবনে আলম হাসানকে মন্ত্রী কাদের বলেন, “সিনিয়রকেই চিফ ইঞ্জিনিয়ার বানিয়েছি। কিন্তু এই রকম কোনো শর্ত নেই, কাউকে পুরো টার্ম রাখতে হবে। কাজ খারাপ করলে, এখানে জনস্বার্থের বিরোধী কিছু হলে অবশ্যই তোমাকে রিজাইন করতে হবে। এটা পরিষ্কার কথা।”
এরপর সচিব এম এ এন সিদ্দিককে ফোন করে মন্ত্রী বলেন, “আপনার চিফ ইঞ্জিনিয়ার তো কখনও এখানে লোক পাঠায় না। এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ মিটিং, সে এখানে লোক পাঠায় নাই। প্রথম অস্বীকার করে, পরে যখন আমি বললাম, না তোমাকে বলা হয়েছে।
“সে লোক পাঠায়নি, সে কি তার জবটাকে খুব পার্মানেন্ট ভাবছে?.. না, ও কোনো লোক পাঠায়নি এখানে। ও খুব ক্ষতি করতেছে আমাদের।”
প্রধান প্রকৌশলী সড়ক পরিদর্শনে সময় না দেওয়ার অভিযোগও করেন ওবায়দুল কাদের।
তিনি সচিবকে আরও বলেন, “আমি আসছি, এখানে ব্ল্যাক স্পটের ব্যাপারে কথা উঠছে। এটাতো সড়ক ও জনপথের ব্যাপার। দেয়ার ইজ নোবডি টু রিপ্রেজেন্ট রোডস অ্যান্ড হাইওয়েজ। টেকনিক্যাল ব্যাপার, কেউই নাই। সে কি ধরেই নিয়েছে সে এখানে আরও চার বছর থাকবে?
“না থাকতে পারবে না। কর্তব্যে অবহেলা কররে বাদ দিয়ে দেন। নতুন লোক আসবে। এখন তো আমি কাউকে ডিঙ্গিয়ে দিই না। সিনিয়রকে দিই। আমি আসার পর থেকে সিনিয়রকে দিই। ঠিক আছে, এটা ঠিক করেন।”
সভায় বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, বর্তমানে সড়কগুলো আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো। দুর্ঘটনার জন্য সড়ক কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে না।
“রাস্তা খারাপ হওয়ায় দুর্ঘটনা হচ্ছে এমন এই অভিযোগ তো কেউ দিচ্ছেন না। ঈদের সময়ে যে দুর্ঘটনাগুলো হয়েছে বেশিরভাগগুলো ফ্রি-স্টাইলে গাড়ি চালানোর কারণে, বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে। অতিরিক্ত ট্রিপের জন্য অতিরিক্ত গতির কারণে।”
মহাসড়কে গাড়ির সর্বোচ্চ গতি ৮০ কিলোমিটার করা হলেও সেটা মানা হচ্ছে না বলে নিজেই জানান মন্ত্রী।
ঈদযাত্রায় মহাসড়কে দুর্ঘটনার জন্য মাইক্রোবাস ও লেগুনার মতো ছোট গাড়িগুলোকেই দায়ী করেন তিনি।
“মাইক্রোবাসের বিষয়ে বিআরটিএ খুবই উদাসীন। কোনো কাগজপত্র নাই, কোনো নিয়ন্ত্রণ নাই। আমি চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞেস করলাম, মাইক্রোর কোনো হিসাবই নাই।”
দুর্ঘটনাপ্রবণ হিসাবে চিহ্নিত ‘ব্ল্যাক স্পটগুলোর’ হালনাগাদের করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান মন্ত্রী।
সভার বক্তব্যে কলামনিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, “কাউকে দোষারোপ করে নয়, যেসব জায়গায় ও যাদের গাড়িতে দুর্ঘটনা ঘটেছে সেই দুর্ঘটনা কেন ঘটেছে সেটা চিহ্নিত করে সমাধানের উদ্যোগ দিতে হবে। বিআরটিএ, মালিক-শ্রমিক আপনারা আপনারা সবাই কথা বলে সেটা নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করুন।”
বক্তব্যে মন্ত্রী কাদের আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ‘দুর্ঘটনাগুলো হলো, সেটা কার কার গাড়িতে হলো, কেন হলো’ সে বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করতে মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিদের অনুরোধ জানান।
‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ঈদের সময়ের তিন দিন মহাসড়কে ট্রাক চলাচল নিষিদ্ধ করা হলেও বেশিরভাগ দুর্ঘটনা ঘটেছে ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে। মুখোমুখি সংঘর্ষের দু’টিতে চালক মাদকাসক্ত ছিল এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে। ভোর ৫টার সময় একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়েছে।
“চালকের ঘুম, ফিটনেসবিহীন গাড়ি বা অতিরিক্ত গতির কারণে নিয়ন্ত্রণ হারানোর ঘটনা ঘটতে পারে। দুর্ঘটনার এসব ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচির নেওয়ার সময় এখন এসেছে।”
চালকদের প্রশিক্ষণ অব্যাহত রাখার সুপারিশ করেন তিনি।
সভায় বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফারুক তালুকদার সোহেল বলেন, “গতি নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে আমরাও মালিকদের চিঠি দিয়েছিলাম, কিন্তু সেটা প্রতিপালন সম্ভব হয়নি। দক্ষ চালক ও অবৈধ লাইসেন্সধারীর অভাবেও দুর্ঘটনা ঘটছে। যে পরিমাণ গাড়ি রাস্তায় আসছে সেই পরিমাণ লাইসেন্স বিআরটিএ থেকে পাওয়া যাচ্ছে না।”
বিআরটিএ চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের সঞ্চালনায় পর্যালোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ, ব্র্যাকের রোড সেফটি প্রকল্পের ব্যবস্থাপক খায়েরুজ্জামান, সড়ক পরিবহন সমিতির কোষাধ্যক্ষ আজমল উদ্দিন আহমেদ বক্তব্য দেন।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
রবিবার যেসব এলাকায় ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না
গ্যাস পাইপলাইনের মেরামত কাজ ও জরুরি স্থানান্তরের জন্য রবিবার দেশেরবিস্তারিত পড়ুন
জেমিনি চ্যাটবটে যুক্ত হলো মেমোরি, যে সুবিধা পাওয়া যাবে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চ্যাটবট জেমিনিতে নতুন সুবিধা যুক্ত করেছে গুগল।বিস্তারিত পড়ুন
ঢাকা সিটি কলেজে ক্লাস বন্ধ রাখা নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত
ঢাকা কলেজের বাস ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বুধবার সংঘর্ষেবিস্তারিত পড়ুন