অন্ধকার পুঁতিগন্ধময় কক্ষে শেকলে বন্দী বৃদ্ধা মা
মীরা দের জীবনে কেটেছে ৬৫টি বছর। এই জীবনে অনেক হেসেছেন, স্বপ্ন দেখেছেন, কষ্টও করেছেন। জীবনের শেষ বেলায় এসে তিনি যা দেখছেন, তা অতিক্রম করে গেছে মানবিকতার সীমা।
বাইরে থেকে তালাবদ্ধ ঘরটির ভেতরে তিন মাস ধরেই পায়ে শেকল পড়া অবস্থায় বন্দি তিন সন্তানের এই জননী। শেকলের একটি অংশ বাঁধা তার পায়ে, অপরটি চৌকির কোনায়। তার এই দশা করেছেন সন্তানরাই।
ঘরটির কাছে যেতেই বৃদ্ধ মীরা বলে উঠেন, ‘ইবা কন, কন আইস্যিাদে, কিল্লা আইস্যিাদে’ (সে কে, কি জন্যে আসছে)। পরক্ষণেই তিন বলে উঠেন ‘অ্যাই ভাত খাইয়ুম, অ্যারে দু’য়া ভাত দে’ (আমি ভাত খাবো, আমাকে অল্প ভাত দাও)।
রাউজান পৌরসভার আটনং ওয়ার্ডের কিশোরী মোহন বাড়ির এই বৃদ্ধার এই দশা কেন হয়েছে? জানতে চাইলে সন্তানরা দাবি করেন, প্রায় দেড়-দুই বছর ধরে তিনি মানসিক সমস্যা ভুগছেন। সামাল দিতে না পেরে তিন মাস ধরে শেকল পড়িয়ে রেখেছেন তারা।
মীরার বাড়িতে গিয়ে ছেলে অঞ্জন দের স্ত্রী শিবু দেকে পাওয়া গেলো। শাশুড়িকে শেকলবন্দি করে রাখার বিষয়ে বলে, ‘দেড় বছরও ধরে তিনি অসুস্থ। ওষুধ খেতে চায় না। ঝোঁপ জঙ্গলে চলে যায়। তাই তাকে গত তিনমাস ধরে শেকল পরিয়ে ঘরের মধ্যে আটকে রাখা হয়েছে। সেই ঘরেই তাকে খাবার দেয়া হয়। তিনি প্রকৃতির ডাকে সারা দেন সে ঘরেই।’
মীরার ছেলে কাঞ্চন দেও মোবাইল ফোনে বলেন ‘মানসিক সমস্যার কারণে তাকে (মাকে) কিছুদিন ধরে শেকল পরিয়ে রাখা হয়েছে। তার চিকিৎসা করাবো।’
মানসিক সমস্যা হলে চিকিৎসা না করিয়ে বৃদ্ধাকে শেকলে বেঁধে রাখার ঘটনায় সমালোচনা করছেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন, মীরা প্রতিবেশী ও স্বজনদের চিনতে পারেন। ভাত খেতে চান, শেকল খুলে দিতে বলেন। ডাক্তারের কাছে যাবে কি না জিজ্ঞেস করলে ‘হ্যাঁ’ বলে উত্তর দেন। তাকে চট্টগ্রাম কলেজ হাসপাতাল বা অন্যকোন হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করা হলে সুস্থ হয়ে উঠবেন। অথচ তার সন্তানরা সেটি করছেন না।
মীরা দের স্বামী বিরেন্দ্র দে মারা যান বহুবছর আগে। তার দুই ছেলে সন্তানের মধ্যে অঞ্জন দের দোকান আছে রাউজানে। অপর সন্তান কাঞ্চন দে চট্টগ্রাম শহরে থাকেন। মীরার মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে।
প্রতিবেশী এক তরুণ বলেন ‘মীরা মাসীর মানসিক কিছু সমস্যা থাকলেও তিনি সবকিছু চিনেন, আমি ডাক দিলে আমার ডাকে সাড়া দেন, খেতে চান, শেকলপড়া থেকে মুক্ত হয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে চান। চিকিৎসা পেলে তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন।’
এই প্রতিবেশী বলেন ‘তার ছেলেরা তাকে মেডিকেলে না নিয়ে গিয়ে কেন শেকল পরিয়ে রেখেছেন বুঝতে পারছি না, সবসময় শেকল খুলে দিতে বলেন মীরা। খারাপ লাগে তার জন্যে।’
প্রতিবেশী রতœা চৌধুরী ও কমলা চৌধুরী বলেন, শেকল থেকে মুক্ত হতে আর্তনাদ করেন বৃদ্ধা মীরা।
স্থানীয় পৌরসভার কাউন্সিলর দীলিপ চৌধুরী বলেন ‘মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ায় ঘরের মধ্যে এক মহিলাকে আটকে রাখার কথা শুনেছি। বিষয়টি আমি সরেজমিনে গিয়ে দেখবো।’
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত চলায় এমবাপ্পেকে বিজ্ঞাপন থেকে সরাল রিয়াল
আর্থিক দ্বন্দ্বের মধ্যে পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর একেরবিস্তারিত পড়ুন
ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর পদ হারালেন গাজীপুর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি
ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে গাজীপুর জেলা ছাত্রদলেরবিস্তারিত পড়ুন
ঢাকা উত্তর সিটির সাবেক মেয়র আতিকুল গ্রেপ্তার
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামকে রাজধানীরবিস্তারিত পড়ুন