অনড় গয়েশ্বর, নানান কথা দলে!
মুক্তিযুদ্ধের সময় বুদ্ধিজীবী হত্যা নিয়ে বিএনপির নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মন্তব্য নিয়ে তার দলের মধ্যে আছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি দাবি করা তার দলের নেতারা এ ব্যাপারে মুখ খুলতে নারাজ। শীর্ষ থেকে শুরু করে মধ্যম সারির নেতারাও প্রকাশ্যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে অপারগতা প্রকাশ করছেন।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে যারা কথা বলছেন, তাদের কেউ কেউ গয়েস্বরের বক্তব্যের পক্ষে মত দিচ্ছেন, আবার অনেকে মৃদু ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। কেউ আবার একে স্পর্শকাতর বলে এ নিয়ে কথাই বলতে চান না।
গত শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় মুক্তিযুদ্ধের সময় বুদ্ধিজীবী হত্যা নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, “পাকিস্তানের যারা বেতন-ভাতা খাইছে, শেষ দিন পর্যন্ত, তারা (শহীদ বুদ্ধিজীবী) নির্বোধের মতো মারা গেল, আমাদের মতো নির্বোধেরা প্রতিদিন তাদের শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে ফুল দেয়। না গেলে আবার পাপ হয়। ওনারা যদি এত বুদ্ধিমান হন, তাহলে ১৪ তারিখ পর্যন্ত নিজের ঘরে থাকেন কী করে, একটু বলেন তো। আর তা ছাড়া নিজ নিজ কর্মস্থলে প্রতি মাসে পাকিস্তানের বেতন খাইল, এটাও তো কথা বলা যায়, যায় না? পাকিস্তান সরকারের তারা বেতন খাইল, তারা হয়ে গেল মুক্তিযোদ্ধা, আর যারা পালায়ে পালায়ে না খেয়ে বেড়াল, তারা হয়ে গেল রাজাকার। তাই না?”
গয়েশ্বর আরো বলেন, “যারা ২৫ মার্চ মারা গেছেন, তারা মারা গেছেন না জানার কারণে। আর যারা ১৪ ডিসেম্বর মারা গেছেন, তারা অজ্ঞতার কারণে মারা যাননি। তারা জ্ঞাতসারে অবস্থান করছিলেন।”
গণমাধ্যমে তার এই বক্তব্য প্রচার ও প্রকাশের পর বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে নিন্দা জানানো হয়। শহীদ পরিবারের কেউ কেউ তাকে সরাসরি মোকাবেলার হুমকি দেন। কেউ আবার গয়েশ্বরকে ক্ষমা চেয়ে বক্তব্য প্রত্যাহারেরও দাবি জানান।
তবে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় তার বক্তব্যে অনড় বলে জানিয়েছেন। ওই বক্তব্যের নিজের অবস্থান জানতে টেলিফোনে যোগাযোগ করলে তিনি তাতে সাড়া দেননি। তবে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমার বক্তব্যে অনড়। সময়মতো প্রমাণ দেব।”
বিজয়ের মাসে শুধু গয়েশ্বরই নন, ২১ ডিসেম্বর বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে এক বক্তব্য দেয়ায় সারা দেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। যদিও খালেদা জিয়া সংখ্যা বাড়া বা কমা নিয়ে কিছু বলেননি।
খালেদা জিয়ার ওই বক্তব্যকে সমর্থন করে গয়েশ্বর বক্তব্য দেন।
এদিকে রবিবার সুপ্রিম কোর্টে এক অনুষ্ঠানে আসা বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা বিষয়টি এড়িয়ে যান। একজন ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের একজন উপদেষ্টা ও দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বিষয়টিকে ‘সেনসেটিভ’ হিসেবে অভিহিত করে কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে নির্বাহী কমিটির একজন সদস্য বলেন, “এই মুহূর্তে এটি ছাড়াও অনেক বিষয় নিয়ে কথা বলার ছিল। হঠাৎ করে তার (গয়েস্বর) এই বক্তব্য দেয়ার মধ্যে নিশ্চয়ই কোনো রহস্য আছে। তিনি হয়তো ফোকাস হওয়ার চেষ্টা করছেন।”
বিএনপির নেতাদের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে হঠাৎ করে শীর্ষপর্যায় থেকে দেয়া বক্তব্যে সমালোচনা হবে এটা তারা স্বাভাবিক বলে মানছেন। এখন চেয়ারপারসনের পর গয়েশ্বর রায় বক্তব্য দেয়ায় এ নিয়ে তারা কথা বলতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ছেন। কারণ পক্ষে কথা বললে সমালোচনা সহ্য করতে হবে। আর বিপক্ষে বললে দলের কাছে বিরাগভাজন হতে হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রদলের একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, “তারা তো মিথ্যা বলেননি। আওয়ামী লীগ তো কথায় কথায় মুক্তিযুদ্ধের বিকৃতি করে। তখন তো আপনারা সাংবাদিকরা চুপ থাকেন। এত বছর পরও শহীদদের চূড়ান্ত তালিকা হয়নি, এটা বলায় মনে হয় পাপ হয়ে গেছে।”
তবে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.)মাহবুবুর রহমান বলেন, “তার এই বক্তব্যে আমি মর্মাহত। এটা অনেকটা নিষ্ঠুর বক্তব্য হয়েছে। আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীদের নৃসংশভাবে হত্যা করা হয়েছে।”
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ফের ২ দিন রিমান্ডে আনিসুল হক
রাজধানীর বাড্ডা থানার স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা আল-আমিন হত্যা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
জামিন পেলেন সাবেক বিচারপতি মানিক
অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের সময় সিলেটের কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকেবিস্তারিত পড়ুন