অবশেষে জানা গেল যে কারনে নারায়নগঞ্জে হারলেন বিএনপি !
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভরাডুবিতে বিএনপি হতাশ ও বিস্মিত। এতো বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজয় কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না দলটির হাইকমান্ড। ফল ঘোষণার পর থেকেই কেন্দ্রীয় নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের ভূমিকা নিয়ে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার রাতেই দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে গোপনে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। নির্বাচনে স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতাদের ভূমিকা নিয়ে কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। অবশ্য নির্বাচনের ফল নিয়ে বিএনপির প্রকৃত মূল্যায়ন এক ধরনের হলেও প্রকাশ্যে প্রতিক্রিয়া ভিন্ন। দলের ভেতরে পরাজয়ের জন্য দলের স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলা হলেও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় ফল ঘোষণায় অনিয়মের অভিযোগ তুলছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
নাসিকের ফল নিয়ে কারচুপির আশঙ্কা প্রকাশ করে গতকাল শুক্রবার বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়েছে বিএনপি। দু’একদিনের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের নেতারাও ভোটের এমন ব্যবধান ও পরাজয়ের কারণ সম্পর্কে দলের চেয়ারপারসনকে লিখিতভাবে অবহিত করবেন।
সূত্র জানায়, নাসিক নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশা ছিল বিপর্যস্ত বিএনপির। বিশেষ করে এ নির্বাচনে হারলেও লাভ, জিতলেও লাভবান হওয়ার আশা করেছিল তারা। নির্বাচনে হারলে ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন সম্ভব নয় বলে অভিযোগ তোলার পরিকল্পনা ছিল। আবার বিজয়ী হলে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তায় ধস নেমেছে বলে দ্রুত নির্বাচন দেওয়ারও দাবি তুলত দলটি। কিন্তু নির্বাচনী প্রচারের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সুন্দর পরিবেশ এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন
সম্পন্ন হওয়ায় কার্যত ওইসব পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে বিএনপির। এ পরিস্থিতিতে দল চাঙ্গা এবং নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হওয়ার বদলে সারাদেশে তাদের মধ্যে কিছুটা হলেও হতাশা দেখা দিয়েছে।
নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় গতকাল বলেছেন, নির্বাচনটা ফেয়ার হলেও ফলটা হয়েছে আনফেয়ার। এই ফল অপ্রত্যাশিত, মিডিয়া ক্যু হয়েছে। বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থী পাস করেছেন, অথচ মেয়র প্রার্থীর ফলটা গেল কোথায়। ভোটের ব্যবধানের এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে নাসিক নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি করে বলেছেন, বাহ্যিকভাবে সুষ্ঠু নির্বাচনের বাতাবরণ সৃষ্টি করে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নাসিক নির্বাচন শেষে বৃহস্পতিবার রাতে ফল নিয়ে দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতাকে নিয়ে বৈঠক করেন। সেখানে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, নির্বাচনের প্রধান সমন্বয়কারী গয়েশ্বর চন্দ্র রায় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে দলীয় প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের ভরাডুবিতে বিস্ময় প্রকাশ করেন খালেদা জিয়া। এ সময় কয়েকজন নেতা নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার, সাবেক এমপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবুল কালাম ও সাবেক এমপি কেন্দ্রীয় সদস্য মো. গিয়াস উদ্দিন, নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামালের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
সূত্র জানায়, বৈঠকে একজন নেতা খালেদা জিয়াকে বলেন, আসলে স্থানীয় এই চার নেতা চাননি, সেখানে বড় নেতা হিসেবে তৃতীয় কারও আবির্ভাব ঘটুক। তাই তারা আন্তরিকভাবে কাজ করেননি। তারা আন্তরিকভাবে কাজ করলে ফল উল্টো হতে পারত। উপস্থিত নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে নাসিক নির্বাচনে দলের কোন নেতার কী ভূমিকা ছিল সেটা জানতে একটি গোপন তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন খালেদা জিয়া। ওই কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর তিনি নারায়ণগঞ্জ বিএনপি নেতাদের তিরস্কার এবং পুরস্কার দুটিই করবেন বলে জানান।
নাসিক নির্বাচনকে বিএনপি হাইকমান্ড সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। সে লক্ষ্যে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্যদের প্রচারে অংশ নেওয়ার কথা ছিল। মির্জা ফখরুল এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদসহ হেভিওয়েট নেতারা প্রচারে অংশ নিলেও খালেদা জিয়াকে প্রচারে না নেওয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। প্রথম দিকে বিএনপি চেয়ারপারসনকে প্রচারে না নিয়ে শেষ দিন কেন তাকে নেওয়ার কথা বলা হলো_ এর পেছনে অন্য কোনো ‘উদ্দেশ্য’ ছিল কি-না তাও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করেন নেতারা। কেউ কেউ নির্বাচনের প্রধান সমন্বয়কারীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন।
নারায়ণগঞ্জের নেতাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে জেলা বিএনপির সভাপতি ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার সমকালকে বলেন, প্রার্থী নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে পছন্দ-অপছন্দ থাকতে পারে। কিন্তু সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে ধানের শীষের পক্ষে কাজ করেছেন। আগেই বলেছিলাম, নির্বাচনে ভোটাররা ভোট দিলেও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে ধানের শীষের প্রার্থীকে পরাজিত করা হবে। তাই করা হয়েছে। স্থানীয় বিএনপি নেতাদের কোন্দলের কারণে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী জিততে পারেননি বলে যে অভিযোগ উঠেছে সে প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যিনি অপরিচিত ব্যক্তি, নারায়ণগঞ্জে যার কোনো হোল্ডিং নম্বর নেই, দলীয় কোন্দল থাকলে এই প্রার্থী এতো ভোট পেলেন কীভাবে। কী কী কারণে সাখাওয়াত হোসেন খান পরাজিত হয়েছেন তার বিস্তারিত তথ্য একটি চিঠির মাধ্যমে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অবহিত করা হবে বলে তিনি জানান।
নারায়ণগঞ্জ শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল সমকালকে বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। কোনো ধরনের সহিংসতা ছিল না। বলা হয়েছে, ভোটারদের উপস্থিতি কম ছিল। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। বিকেল ৪টায় ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। তাহলে ৬২ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে কীভাবে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই এক ঘণ্টার মধ্যে কীভাবে বাকি ৩০ শতাংশ ভোট পড়েছে। মূলত ধানের শীষের বিজয় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।
অবশ্য বিএনপির কয়েকজন নেতা সমকালকে জানান, যে আশা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিয়েছিল তা বুমেরাং হয়েছে। সঠিকভাবে নির্বাচনী মাঠ ও প্রার্থী এবং দলীয় অবস্থান জরিপ করা হয়নি। সেখানে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে না থাকা আইনজীবী নেতা সাখাওয়াত হোসেন খানকে প্রভাবশালী নেতারা মন থেকে মেনে নেননি এবং বিজয়ী করতে চাননি। তারা দাবি করেন, এমনিতে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী জনপ্রিয় ও শক্তিশালী প্রার্থী। সেখানে দলের মূল স্রোতের নেতাদের মনোনয়ন না দিয়ে শুধু আইনজীবী নেতার পরিচয়ে সাখাওয়াতকে মনোনয়ন দেওয়াটাও সঠিক হয়নি বলে অনেকে মনে করেন। সাখাওয়াতকে প্রার্থী হিসেবে মেনে নিতে না পারা, দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণেই মূলত বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজয় হয়েছে বলে মনে করেন তারা। এমনকি কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছ থেকে নির্বাচনী প্রচারের টাকা নিয়েও তা সঠিকভাবে কর্মীদের মধ্যে বণ্টন করেননি অনেক নেতা। ঠিকমতো পোস্টার ও লিফলেটও বিতরণ করা হয়নি বলে অভিযোগ করেন তারা।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ফের ২ দিন রিমান্ডে আনিসুল হক
রাজধানীর বাড্ডা থানার স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা আল-আমিন হত্যা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
জামিন পেলেন সাবেক বিচারপতি মানিক
অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের সময় সিলেটের কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকেবিস্তারিত পড়ুন