অবশেষে টিম পারফরমেন্সের খোঁজে বাংলাদেশ
দ্বিতীয় ম্যাচের ৪৮ ঘন্টা আগে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের মুখেই প্রথম উচ্চারিত হয়েছে, আমরা চাই টিম পারফরমেন্স। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে চরম ব্যর্থ (তিন খেলায় মোটে ৪ রান করা) মাহমুদউল্লাহ নেপিয়ারে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরির পর বুধবার বাংলাদেশ মিডিয়ার সঙ্গে হোটেলে আলাপে বলেছেন, ‘আমাদের লক্ষ্য এখন দল হিসেবে পারফরম করা। আমরা বিশ্বাস করি আমরা যদি টিম পারফরমেন্স দেখাতে পারি, দল হিসেবে খেলতে পারি তাহলে সাফল্য আসবে।`
২৪ ঘন্টা পর একই কথা শোনা গেল অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা ও ড্যাশিং উইলোবাজ সাব্বির রহমানের মুখে। আজ নিউজিল্যান্ড মিডিয়ার সঙ্গে আলাপেও ঠিক ঐ ক্যাসেটই বাজালেন মাশরাফি। একই কথা শোনা গেল সাব্বির রহমানের কণ্ঠেও। শুধু তারা তিনজনই নন। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচের আগে টাইগারদের টিম স্লোগান হয়ে গেছে ‘আমরা দল হিসেবে পারফরম করতে চাই।’ অর্থাৎ কোন ব্যক্তি, বা কোন নির্দিষ্ট ডিপার্টমেন্ট ভাল খেললে চলবে না। পুরো দলকে কম বেশি ভালো খেলতে হবে। মোদ্দা কথা কেউ বিচ্ছিন্নভাবে জ্বলে উঠলে চলবে না। ১১ জনের কম বেশি অবদান দরকার। সব বিভাগের জ্বলে ওঠাও জরুরি।
তবেই না ব্ল্যাক ক্যাপ্সদের ঘরের মাটিতে হারানো সম্ভব। আজ প্র্যাকটিসে সবার মনের কথা এটা। মুখেও উচ্চারিত সংলাপ। সন্দেহ নেই, নিউজিল্যান্ডের মত দলকে তাদের মাটিতে হারাতে ওই ফর্মুলার ওপরে দাওয়াই নেই। টিম পারফরমেন্সই সর্বোত্তম ‘থেরাপি।’
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই কঠিন সত্য উপলব্ধি করতে এতদিন লাগল কেন? সবাাইকে ভালো খেলতে হবে। সবার অবদান জরুরি। এটা এত দেরি করে মাথায় ঢুকলো কেন? কাজেই এটা বিলম্বিত উপলব্ধি। এটাকে উপলব্ধি বলাও কতটা যুক্তিযুক্ত কে জানে ? আসলে এ সফরের সত্যিকার লক্ষ্য-পরিকল্পনায় আছে বড় ধরণের গলদ।
নিউজিল্যান্ডের বর্তমান দলটি কেমন ? তাদের ক্রিকেটারদের খেলার ধরন, প্লাস-মাইনাস নিয়ে তেমন হোমওয়ার্ক হয়েছে কিনা? বলা শক্ত। ক্রিকেট টিম গেম। এখানে সবার পারফরমেন্স দরকার। এই চিন্তা কম ছিল বাংলাদেশ দলে। বোঝাই যাচ্ছে লক্ষ্য-পরিকল্পনা ছিল ব্যক্তি কেন্দ্রিক।
ফর্মের তুঙ্গে থাকা তামিম শুরুতে খেলে দেবেন। মাঝে মাহমুদউল্লাহ আর সাকিব রানের চাকা সচল করে দেবেন। স্কোরবোর্ড হবে মোটা তাজা। বোলিংয়ে কাটার মাস্টার মোস্তাফিজ অ্যাকশনে ফিরবেন আর চিন্তা নেই। সাকিব একাইতো একশো।
কেউ ওভাবে না বললেও এখন বোঝা যায়, এ সফরে টিম পারফরমেন্সের চেয়ে শুরুতে ব্যক্তিগত পারফরমেন্স ও কারিশমা নিয়েই ভাবা হয়েছে বেশি।
কিন্তু তা কাজে দেয়নি। ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টির প্রথম ম্যাচ মিলে চার খেলায় একজন পারফমারও ধারাবাহিকভাবে ভাল করতে পারেননি।
তামিমের ব্যাটে রান খরা। ইংল্যান্ডের সঙ্গে দারুণ খেলা ও বিপিএলের টপ স্কোরার তামিম এবার নিউজিল্যান্ডে এসে যেন রান করতেই ভুলে গেছেন। চার ম্যাচে একটি ফিপটি করলেও বড় স্কোর করতে পারেননি। ফর্মের চুরোয় থাকা এ বাঁহাতি ওপেনার হঠাৎ নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন। সাকিবের বল-ব্যাট দুটিই তুলনামুলক কম আলো ছড়াচ্ছে। মুশফিক হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে পড়ে বাইরে।
সৌম্যও চরম ব্যর্থ। কারো একার বা কয়েক জনের পারফরমেন্সে কুলোচ্ছে না, এখন ঠেকে লক্ষ্য ও পরিকল্পনায় রদ বদল। অবশেষে বিলম্বিত বোধোদয় না হয়, আমাদের ইউনিট হিসেবে খেলতে হবে।
কঠিন বাস্তবতা হলো এই চিন্তা অনেক আগে আসা উচিৎ ছিল। কিন্তু আসেনি। আসবে কি করে ? সেই বিপিএলের সময় থেকে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। নিউজল্যান্ড এখন ঠান্ডা কেমন? শীত বেশি লাগে নাকি ? বাতাস কি খুব জোরে বয় ? বল কি একটু দ্রুত ব্যাটে আসবে? বাউন্স কেমন হবে ? বেশি ? খাট লেন্থ পিচ পড়া ডেলিভারি কি বুক, মুখ ও মাথা সমান উচ্চতায় আসবে ? আচ্ছা সুইং কি বেশি হবে? বাতাসে বল একটু বেশি ম্যুভ করবে ? ঐ মাঠটা কি পাশে ছোট? এখানে বোধ হয় সোজা ব্যাটের চেয়ে সাইড শট বেশি খেললেই লাভ হবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
শুনতে কানে লাগতে পারে, কিন্তু নির্জলা সত্য, নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশন নিয়ে এবার যত কথা হয়েছে, টিম নিউজিল্যান্ড নিয়ে আর ব্ল্যাক ক্যাপ্সদের ব্যক্তিগত পারফরমেন্স, কার কি দূর্বলতা, কার কোনটা প্লাস পয়েন্ট, এসব নিয়ে নিয়ে তার তিন ভাগের এক ভাগ কথাও হয়নি। আলোচনা- পর্যালোচনার বড় অংশ জুড়ে এই আবহাওয়া, কন্ডিশন, আর উইকেটের গতি প্রকৃতি ও চরিত্র নিয়ে হাজারো কথা। ওয়ানডে সিরিজ শেষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ দরজায় কড়া নাড়ছে। রাত পোহালেই দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। এখন দল হিসেবে পারফরম করার কথা মাথায় এসেছে।
আশ্চর্য্য! এই বার্তাটি এতদিন কেউ দেননি? যদি দিয়েই থাকেন, সত্যিই যদি দলের ভিতরে টিম পারফরমেন্স করার জোর তাগিদ থাকতো, তাহলে কোচ, ক্যাপ্টেন ও অন্য যে সব সিনিয়র প্লেয়াররা কথা বলেছেন, তাদের মুখে শোনা যেত। কিন্তু তা শোনা যায়নি। এখন প্রায় অনেক কিছু হারানোর পর মনে হচ্ছে, আসলে হাতে গোনা ক`জন ক্রিকেটরের ওপর নির্ভল করে থাকলে চলবে না। দরকার সম্মিলিত প্রচেষ্টার। সবাই মিলে অবদান রাখতে পারলেই হয়তো সাফল্যের লাল সূর্য উঠবে।
উপলব্ধি ভুল নয়। সঠিক। কিন্তু ঘুরে ফিরে সেই কথা, এত দেরিতে কেন এ উপলব্ধি? দেখা যাক ঠেকে মাথায় ঢোকা এ উপলব্ধিতে অন্তত পরফরমারের সংখ্যা বাড়ে কি না ? ব্যাটিংয়ে দু`তিন একটু বেশি রান করেন কি না ? তাদের সঙ্গে অন্তত দু`জন বোলার বল হাতে সমীহ জাগাতে পারেন কিনা ? তাহলেই চলবে। তা কি হবে?
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
নারী ফুটবল দলের বেতন বকেয়া, দ্রুত সমাধানের আশ্বাস
টানা দ্বিতীয়বার সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেবিস্তারিত পড়ুন
প্রোটিয়াদের রানের পাহাড়, টাইগাররা নামতেই বদলে গেল পিচের ধরন!
চট্টগ্রাম টেস্টে প্রথম ৫ সেশনেরও বেশি সময় ব্যাটিং করেছে দক্ষিণবিস্তারিত পড়ুন
নেপালকে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের ২-১ গোলে হারিয়ে সাফবিস্তারিত পড়ুন