অবশ্যই পড়ুন, যাদের শিশু সন্তান আছে “যৌন হয়রানী ও শিশু”
শিশুরা কোমলমতি। বড়দের আচার আচরন দেখেই তারা শিখে। সেটা মন্দ হোক আর ভালো হোক। একটা শিশু জন্মের পর থেকেই এভাবে তার চার পাশের পরিবেশ ও বাবা মা, ভাই বোন, আত্মীয়-স্বজন এর কাছ থেকে শিখতে শুরু করে। আমাদের সমাাজে আজকাল নিরবে নিভৃতে সবার অজান্তেই এই কোমলমতি শিশুরা নানাভাবে সহিংসতা ও যেীন হয়রানীর শিকার হয়ে থাকে। এমনকি অনেক শিশুই অসৎ চরিত্র নিয়ে বেড়ে উঠে। সুতরাং শিশুদের চরিত্র গঠন ও যৌন হয়রানীসহ বিভিন্ন প্রকার সহিংসতা থেকে রক্ষা করতে নিন্ম বর্নিত বিষয়গুলো ছোট বেলা থেকেই আপনার সন্তানকে শিক্ষা দিন আপনি যানুন এবং সবসময় নজর রাখুন:
১. আপনার মেয়ে শিশুকে অন্য কারো কোলে অপ্রয়োজনে বসা থেকে বিরত রাখুন। তাদের মাঝে লজ্জাবোধ সৃষ্টি করুন। আপাতঃ দৃষ্টিতে আপনি ভাবছেন এটা কোন বিষয়ই নয়। শিশুরা কি বুঝে। কিন্তু আপনি আবার এটাও নিশ্চিত করে বলতে পারছেননা যে, যার কোলে আপনি দিয়েছেন তিনি চরিত্রবান মানুষ। এর মানে এমন নয় যে শিশুকে কারো কোলে দেয়া যাবে না অথবা সবাই খারাপ।
২. লোক সমক্ষে আপনার শিশুর লজ্জাস্থান সমুহ ঢাকিয়ে রাখাতে সচেষ্ট হোন। তাকেও এ বিষয়ে সচেতন করে গেড়ে তুলুন এবং ছোট বেলায় যত্র-তত্র উলঙ্গ অবস্থায় যেতে নিষেধ করুন। হোক আপনার শিশুটি কন্যা সস্তান অথবা ছেলে সন্তান।
৩. আপনার সন্তানের বয়স দুই বছর পুর্ন হবার পর তাদের সামনে কাপড় পরা/বদলানো থেকে আপনি নিজে বিরত থাকুন। অন্যদের ও বিরত থাকতে পরামর্শ দিন। কারন অসাবধানতাবশত শিশুটির সামনে আপনার কাপড় হাত থেকে ছুটে যেতে পারে। এতে শিশুর লজ্জা ভেঙ্গে যাবে।
৪. কক্ষনো কোন সম-বয়সী কিংবা দাদা-দাদী-নানা-নানী শ্রেনীয় কেউ আপনার সন্তানকে “আমার বউ”/”আমার জামাই” বলা থেকে বিরত রাখুন। এমন মশকরা শিশুর লজ্জা ভেঙ্গে দেয়। শিশুকে অসময়েই অস্বাভাবিক চিন্তা ধারা করতে শেখায়। আপনার শিশুর সাথে আপনি জ্ঞানী গুনীদের কথা আলোচনা করুন। তাকে প্রসংশনীয় শব্ধ ব্যবহার করে ডাকুন। তার মধ্যে আত্মবিশ্বাস জাগবে।
৫. আপনার সন্তান যখন বন্ধুদের সাথে খেলতে যায় তখন লক্ষ্য রাখুন সে কি তার চাইতেও প্রাস্ত বয়য়স্ক কারে সাথে খেলছে ? আমাদের দেশে বাচ্চারা “চড়ুই ভাতি” রান্নার সময় স্বামী- স্ত্রী সাজে এবং পরষ্পর বর-কনে সেজে কিংবা পুতুলদের বিয়ে দিয়ে দুষ্টমির ছলে প্রাপ্তবয়স্কদের সাথে খেলে থাকে। এসব বিষয় পরবর্তীতে যৌন হয়রানিতে রুপ নেয়। আবার শিশুদের বিকাশের জন্য খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এর মানে এই নয় যে আপনি আপনার শিশুকে খেলতে দিবেননা।
৬. কখনো আপনার বাচ্চাকে জোর করে অন্য প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ কিংবা মহিলার কাছে পাঠাবেন না। যদি সে ওই লোকটির সাথে কথা বলতে অথবা মিশতে সাচ্ছ্যন্দবোদ না করে। এমনকি অন্য কোন ব্যাক্তির প্রতি আপনার সন্তান অতি আগ্রহী হলেও, তার অতি আগ্রহের কারন আবিষ্কার করার চেষ্টা করুন।
৭. যদি আপনার এ্যাকটিভ বাচ্চাটি হঠাৎ করে চুপচাপ হয়ে যায় তাহলে তাকে প্রশ্ন করে তার কারন বের করার চেষ্টা করুন। বুঝতে চেষ্টা করুন হঠাৎ কি কারনে তার মন খারাপ হয়েছে। অনেক সময় তারা যৌন হয়রানীর শিকার হলে লজ্জায় অন্যের কাছে প্রকাশ করেনা। নিজের কাছে হীনমন্যতায় ভোগে।
৮. আপনার সন্তানের সাথে আপনি বন্ধুত্বপূর্ন আচরন করুন। সে যেন অন্য কারোর চাইতে আপনার সাখেই মিশতে পছন্দ করে। আপনার শিশুকে সময় দিন। তার আনন্দের দিক গুলো খুজে বের করুন এবং সে অনুযায়ী তাকে আনন্দ দিন। শিশুর সাথে সবসময় পজিটিভ কথা বলুন। নিগেটিভ কথা শিশুর মনে না বোধক শিক্ষা দেয়। আত্মবিশ্বাস নষ্ট করে।
৯. সাবধানতার সাথে বয়সন্ধীকালে আপনার সন্তানকে সঠিক যৌন শিক্ষা দেবার চেষ্টা করুন। না হয় বন্ধু-বান্ধব/সমাজ তাকে ভুলভাবে এ বিষয়টি শিক্ষা দিবে। কারন মানুষের জীবনে বয়:সন্ধিকাল এমন একটি সময়, যে সময়ে আপনার সন্তানের শারিরীক, মানষিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক অনেক পরিবর্তন দেখা দেয়। সে সময় অনেক কিছু একান্তভাবে জানার প্রয়োজন থাকে। কন্যা সন্তানকে মাসিকের সময় কিভাবে যত্ন নিতে হয়। আপনি নিজে থেকে শেয়ার করুন। শিখিয়ে দিন।
১০. সন্তান কোন কার্টুন কিংবা ফিল্ম দেখার আগে আপনি সে কার্টুনটি/ ফিল্মটি সম্পর্কে অবগত হয়ে নিন। জেনে নিন তাতে কু-শিক্ষনীয় কিছু আছে কিনা? শিশুদের উপযোগী অনেক ছবি আছে যা অাপনারও ভালো লাগবে। একসাথে দেখুন। বয়স্কদের চ্যানেল দেখার সময় অশালীন কোন দৃশ্য আসার সাথে সাথে চ্যানেল পরিবর্ন করুন। বিষয়টি শিশুর নিকট যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়। সে জন্য খুবই স্বাভাবিক ভাবে আচরন করুন।
১১. আপনার ৩ বছর এর বেশি বয়সী সন্তানকে টয়লেট শেষে নিজে নিজে গোপনাঙ্গ পরিষ্কার করতে শিখান। তাদেরকে সতর্ক করে দিন তাদের গোপনাঙ্গ অন্য কেউ যেন না ধরে। এমনকি আপনি নিজেও আপনার সন্তানের গোপনাঙ্গ ধরবেন না মনে রাখবেন সু-শিক্ষার শুরু আপনার ঘর থেকেই। আমাদের অনেকেই অাছেন দুষ্টুমী করেও অনেক সময় তা করে থাকেন। এসব বিষয়ে শিশুকে কিউরিয়াস করে তোলে। বয়স ভেদে এড়িয়ে চলুন অথবা শেয়ার করুন খুবই পজিটিভি ভাবে।
১২. আপনার সন্তানকে প্রাপ্ত বয়ক্কদের সাথে অন্তরঙ্গ আলোচনায় অংশ নেয়ার সময় আপনিও থাকুন। আপনার শিশুকে আপনার আত্মীয় প্রাপ্ত বয়ক্কদের সাথে একই বিচানায় শুতে না দেয়াটাই ভালো। শিশুকে সব সময় আলাদা বিছানায় শোয়ানোর অভ্যাস করাটাই ভালো।
১৩. আপনারা স্বামী স্ত্রী রাতে অন্তরঙ্গ মুহুর্তগুলোতে শিশুকে আলাদা রাখাই ভালো। অথবা একসাথে থাকলেও আগে ভালোভাবে বুঝে নিন আপনার শিশুটি জেগে আছে না ঘুমে। আপনার সাবধানতা আপনার শিশুর চরিত্র গঠনে সহায়ক। শিশুর সামনে আপনি স্ত্রীকে আদর করছেন তা যেন অতি স্বাভাবিক আচরন হয়। আপনি শিশুকে বুঝতে দেয়া যে ওকে যেভাবে আদর করেন বিষয়টি তাই। সে যেন বিষয়টি একান্তই স্বভাবিক মনে করে। আপনার আচরন তাকে প্রশ্নবিদ্ধ যেন না করে।
১৪. কিছু ব্যাক্তি বা বস্তুর বিষয়ে বাদ দেয়া নীতিতে চলে আসুন-যেটা আপনার সন্তানের মানসিক বিকাশে বাঁধা সৃষ্টি করতে পারে। যেমন বাজে লিরিক এর মিউজিক, মুভি, বই। এমনকি ব্যবহার ভালো নয় এমন আত্মিয়কে আপনার সন্তানের সংষ্পর্শে আসতে বারন করুন।
১৫. আপনার সন্তানকে প্রতিকুল পরিবেশে প্রতিবাদ করার জন্য অনুপ্রেরনা দিন। কিভাবে বাজে পরিস্থিতিতে আত্মরক্ষা করবে তার ধারনা দিন।
১৬. আপনার সন্তান কোন নিদ্ধিষ্ট ব্যাক্তির বিরুদ্ধে নালিশ করলে তা হেলায় উড়িয়ে দেবেন না। তার কথার সত্যতা যাচাই করুন। তাকে বুঝতে দিন সে একা নয়। তাকে সহায়তা করার জন্য আপনি আছেন। এটি তার আত্মবিশ্বাস শক্তিশালী করবে।
১৭. নিজের সন্তানদের ছোট বেলা থেকেই ধর্ম শিক্ষা দিন। কোন ধর্মই মানব কল্যানের বিপরীত নয়। জ্ঞানী গুনীদের বই পড়ুন তার সামনে। গল্প বুলুন।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
কল-কারখানায় কোনো শিশুশ্রম নেই: প্রতিমন্ত্রী
শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, প্রতিষ্ঠানিকবিস্তারিত পড়ুন
বেনাপোলের কিশোরী জোনাকির মরদেহ যশোরে উদ্ধার
যশোর শহরের রেলগেট পশ্চিমপাড়া মডেল মসজিদের পাশে একটি পুকুর থেকেবিস্তারিত পড়ুন
শিশুর স্কুল থেকে শেখা বদভ্যাস থামাবেন যেভাবে
স্কুল থেকে শিশুরা জীবনের দিকনির্দেশনা পেয়ে থাকে। প্রয়োজনীয় বিভিন্ন নিয়মকানুনবিস্তারিত পড়ুন