অমিয় ফল তালের গুণাগুণ
আমাদের গ্রামবাংলার অতি পরিচিত ফল তাল। তালের নানাবিধ ব্যবহার আমাদের জীবনের সাথে মিশে আছে। তালগাছে বাসা বেঁধে থাকা বাবুই পাখি আর বানর নিয়ে ইশপের সেই যে মজার গল্প। মনে পড়লেই তো ফিক করে হাসি চলে আসে। তালগাছ নিয়ে কত শত যে কিচ্ছা-কাহিনী কিন্তু তাল নিয়ে সত্যিকারের তথ্যগুলো কি আমরা জানি।তাল একটি ভারতীয় উপমহাদেশীয় গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালীন ফল। তালগাছ পাম গোত্রীয় গাছ। তালগাছ পাম গোত্রের অন্যতম দীর্ঘ গাছ যা উচ্চতায় ৩৫ ফুট পর্যন্ত পৌঁছতে পারে। তালের পাতা পাখার মত ছড়ানো তাই বোরাসাস গণের পাম গোত্রীয় গাছগুলিকে একত্রে ফ্যান-পাম বলা হয়।তাল দক্ষিণ এশিয় দেশ ভারতীয় উপমহাদেশীয় অনেক অঞ্চলেরই জনপ্রিয় গাছ, কারণ এর প্রায় সব অঙ্গ থেকেই কিছু না কিছু কাজের জিনিষ তৈরি হয়, কিছুই ফেলা যায় না।তাল পাতা দিয়ে ঘর ছাওয়া, হাতপাখা, তালপাতার চাটাই, মাদুর, আঁকবার পট, লেখবার পুঁথি, কু-লী, পুতুল ইত্যাদি বহুবিধ সামগ্রী তৈরি হয়। তালের কা- দিয়েও বাড়ি, নৌকা, হাউস বোট ইত্যাদি তৈরি হয়।তালের ফল এবং বীজ দুইই বাঙালির খাদ্য। তালের ফলের ঘন নির্যাস থেকে তাল ফুলুরি তৈরি হয়। লেপা বা তালশাঁস নামে তালের বীজও খাওয়া হয়। তাল গাছের কা- থেকেও রস সংগ্রহ হয় এবং তা থেকে গুড়, পাটালি, মিছরি, তাড়ি ইত্যাদি তৈরি হয়। তালগাছ কিন্তু দীর্ঘজীবী। পৃথিবীর বহু দেশে তালগাছ আছে। এই গাছ কমবেশি ১০০ বছর বাঁচে। আর এই দীর্ঘজীবনের প্রায় পুরোটা সময়ই ফল দেয়। তাল যখন কাঁচা থাকে, তখনো খাওয়া যায়, তখন বাজারে পানি-তাল হিসেবেই বিকোয়। যখন পাকে, ঘনকালো রং ধারণ করে; স্বাদও পাল্টে যায় সম্পূর্ণ। তালের নির্যাস চুলায় জ্বাল দিয়ে নিয়ে ঘন করে খেতে হয়। আবার না জ্বালিয়েও খাওয়া যাবে। এই তালের রস থেকেই স্বাদের সব পিঠাপুলি তৈরি হয়।অতিপরিচিত এই তালের পুষ্টিগুণের কথা জানতে চাইলে রাজধানীর গ্যাস্টোলিভার হসপিটাল এন্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট-এর চীফ ডায়েটিশিয়ান সেলিনা বদরুদ্দিন বলেন, তাল যেমন নানাভাবে খাওয়া যায়, তেমনি তালের পুষ্টিগুণের উপস্থিতিতে আছে ব্যাপক বৈচিত্র্য। তালে থাকে প্রচুর পরিমাণ খনিজ ও আঁশ। প্রোটিন, শর্করা, চর্বি, অ্যামাইনো অ্যাসিডেরও ভালো উৎস তাল। এ ছাড়া আছে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক ও আয়রন। তাল অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণসমৃদ্ধ হওয়ায় ক্যানসার প্রতিরোধে সক্ষম। এ ছাড়া স্বাস্থ্যের সুরক্ষায়ও তাল উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। স্মৃতি মুছে যাওয়া রোগের জন্যও তাল ভালো। সত্যি কথা বলতে, গ্রামে না গেলে এখন আর তালগাছ খুব একটা চোখে পড়ে না। আর তাল-ফল তো শহরে বিরলই হয়ে গেছে। তাই কখনো তাল হাতের কাছে পেলে কিনে ফেলুন। পুষ্টি পূরণও হবে, সঙ্গে স্বাদেও আনবে বৈচিত্র্য।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
মানবদেহে আদার অনেক উপকার
আমাদের দিনে কয়েকবার রঙিন খাবার খাওয়া উচিত, কিন্তু আপনি কিবিস্তারিত পড়ুন
রেড মিট খাওয়ার আগে কিছু পরামর্শ জেনে নিন
কোরবানি ঈদে বেশ কয়েকদিন টানা খাওয়া হয় গরু বা খাসিরবিস্তারিত পড়ুন
জাপান ও ইউরোপে বিরল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ
জাপানে, একটি বিরল “মাংস খাওয়া ব্যাকটেরিয়া” এর কারণে এক রোগবিস্তারিত পড়ুন