অর্থমন্ত্রীকে এড়িয়ে চলছেন আ. লীগ নেতারা!
নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রশংসা করে কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তাকে এড়িয়ে চলছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। এমনকি মন্ত্রিসভায় সহকর্মীরাও তার থেকে দূরে থাকছেন।
তড়িঘড়ি সাত দিনের ছুটির পাশাপাশি রোববার দফতরে না যাওয়ায় মুহিত আর অর্থমন্ত্রী থাকছেন না- এমন আলোচনাও ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। অর্থমন্ত্রীর দফতরের কর্মকর্তাদের মধ্যে এমন কানাঘুষা শোনা গেছে।
বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠরা এক রকম উদ্বিগ্ন। তবে রোববার সন্ধ্যায় সংসদে যোগ দেন মুহিত। উদ্দেশ্য ছিল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা। কিন্তু রাত ৮টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিনি দেখা করতে পারেননি। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ক্ষুদ্রঋণের কারণে দেশে দারিদ্র্য দূর হয়েছে এবং এজন্য ড. ইউনূস প্রশংসার দাবিদার উল্লেখ করে বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী বক্তব্য দেয়ার পর শনিবার এর তীব্র সমালোচনা করেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ক্ষুদ্রঋণে নয়, বরং আওয়ামী লীগ সরকারের নেয়া উন্নয়ন পদক্ষেপগুলোর কারণে দারিদ্র্য দূর হয়েছে।
অন্যদিকে ক্ষুদ্রঋণে মানুষ সর্বস্বান্ত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য আসার পরদিন এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, সরকারের নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বিশেষ করে একটি বাড়ি, একটি খামার’ এবং পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের কার্যক্রমের মাধ্যমে ক্ষুদ্র অনুদানে দেশের মানুষ নিজেদের উন্নতি ঘটিয়েছে। অন্যদিকে ক্ষুদ্রঋণ তাদের পথে বসার উপক্রম করেছিল। এ নিয়ে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যকে একান্তই তার নিজের বক্তব্য উল্লেখ করে হাছান বলেন, অর্থমন্ত্রী মাঝেমধ্যেই এমন উল্টা-পাল্টা বক্তব্য দিয়ে থাকেন।
এদিকে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, এখনও অর্থমন্ত্রীর এ বিতর্কিত বক্তব্য নিয়ে দলের কোনো ফোরামে আলোচনা হয়নি। প্রধানমন্ত্রীও কারও সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। তবে প্রধানমন্ত্রীর প্রকাশ্য বক্তব্যে যে ইঙ্গিত এসেছে তাতে আস্তে আস্তে অনেকেই মুখ খুলবেন।
ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতাই অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করে বক্তব্য দিতে সরব হবেন। কেননা ড. ইউনূসের কারণেই পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করেছিল বিশ্বব্যাংক। তার কারণে দেশের অনেক বড় ক্ষতি হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সেটা মেনে নেবে না। এমনকি ড. ইউনূস অন্যায়ভাবে গ্রামীণ ব্যাংকে থাকতে চেয়েও না পেরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে যুক্তরাষ্ট্রের হুমকির মুখে পড়তে হয়েছিল।
আর সেই ইউনূসের প্রশংসা করে বক্তব্য দিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত কার্যত সরকারের সামগ্রিক সেন্টিমেন্টকে অগ্রাহ্য বা উপেক্ষা করেছেন।
এরপর তিনি এ সরকারের মন্ত্রী থাকতে পারেন না। অথবা এক্ষেত্রে তার নৈতিক অবস্থান অনেকটা ফিকে হয়ে গেছে।
সূত্র জানায়, রোববার সংসদ অধিবেশনে যোগ দিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। এরপর গুঞ্জন আরও ডালপালা মেলতে শুরু করে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন, কোনোভাবেই পার পাচ্ছেন না অর্থমন্ত্রী। আসছে বাজেট অধিবেশন পর্যন্ত তার সময়কাল থাকবে কিনা, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ ও সংশয় আছে।
অর্থমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী (এপিএস) তানভীর বাসার বলেন, গত বৃহস্পতিবার থেকেই অর্থমন্ত্রী ছুটিতে আছেন। চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি ৭ দিন বিশ্রামে থাকবেন। তবে জরুরি বৈঠক হলে সেগুলোয় উপস্থিত থাকবেন এবং জরুরি ফাইল বাসায় বসে নিষ্পত্তি করবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা বলেন, দলের নেতাকর্মীরা প্রথম থেকেই অর্থমন্ত্রীকে পছন্দ করতেন না। শেষমেশ সুদখোর ড. ইউনূসকে নিয়ে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে নেতাকর্মীরা তীব্রভাবে ক্ষুব্ধ ও হতাশ। সাধারণ মানুষও আওয়ামী লীগের একজন সিনিয়র মন্ত্রী হিসেবে তার এমন বক্তব্যের হেতু খুঁজে পাচ্ছেন না।
তিনি বলেন, মুহিত সাহেব প্রায় এমন আবোল-তাবোল বক্তব্য দিয়ে থাকেন। কিন্তু এবার তিনি আঘাত করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।
আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, আসলে যারা রাজনীতি করেননি, যাদের রাজনীতিতে ত্যাগ ও অবদান নেই, তারা এসি রুমে বসে বড় বড় কথা বলেন। তাদের মুখেই এমন উল্টা-পাল্টা কথা শোভা পায়। তাই নেতাকর্মীরা কোনোভাবেই চান না আবুল মাল আবদুল মুহিত অর্থমন্ত্রী থাকুক।
আরেক নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের ঘরের মধ্যে ছাড়াও ড. ইউনূসকে নিয়ে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যটি এখন টক অব দ্য কান্ট্রিতে রূপ নিয়েছে। দলীয়ভাবে যাদের অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তারা এরই মধ্যে তার সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন। অনেকেই অর্থমন্ত্রীর এমন বিস্ময়কর বক্তব্যের পেছনে আসল হেতু কী, তা জানার চেষ্টা করছেন।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর অবকাঠামো খাতসহ বিভিন্ন সেক্টরে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। রিজার্ভ বেড়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে।-যুগান্তর
কিন্তু অর্থমন্ত্রী বলে ফেললেন, ড. ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণের কারণে দেশের দারিদ্র্য দূর হয়েছে, যা দলের কেউ মেনে নিতে পারছেন না।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ফের ২ দিন রিমান্ডে আনিসুল হক
রাজধানীর বাড্ডা থানার স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা আল-আমিন হত্যা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
জামিন পেলেন সাবেক বিচারপতি মানিক
অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের সময় সিলেটের কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকেবিস্তারিত পড়ুন