অস্বাভাবিক চেহারা নিয়ে বেড়ে উঠছে বায়োজিদ

জন্মের সময়ই শিশুটি ছিল অস্বাভাবিক। তাকে দেখে ভয়ে আঁতকে উঠতো অনেকেই। তার গায়ে চামড়া ছিল না। দেখতে ছিল ভয়ঙ্কর। যেন ৮০ বছরের রোগাক্রান্ত বৃদ্ধ!
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার খালিয়া গ্রামে অস্বাভাবিক ওই শারীরিক অবস্থা নিয়ে বেড়ে উঠছে চার বছর বয়সী শিশু বায়োজিদ। অনেকে কটূ কথা বললেও পরম মমতায় বাবা-মা আগলে রেখেছেন তাদের আদরের সন্তানকে।
কিন্তু বায়োজিদের এই অস্বাভাবিক অবস্থা দিনদিন বাবা মায়ের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছেলেকে নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছেন তারা। কিন্তু চিকিৎকরা তার এই রোগের কারণ নির্ণয় করতে পারছেন না।
শিশুটির বাবা লাবলু সিকদার জানান, বছর পাঁচেক আগে ১৭-১৮ বয়সে তিনি অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া খালাতো বোন তৃপ্তি খাতুনকে বিয়ে করেন। বিয়ের এক বছরের মাথায় মাগুরা ম্যাটারনিটি হাসপাতালে বায়োজিদের জন্ম হয়। শরীরের চামড়াবিহীন ভয়ঙ্কর চেহারায় জন্ম নেওয়া শিশুটিকে দেখে তখন মানুষ ভয়ে আঁতকে উঠতো। জন্মের পর থেকেই শিশুটিকে দেখতে ৮০ বছরের রোগগ্রস্ত বৃদ্ধের মত দেখাতো। বর্তমানে তার মুখের ও শরীরের চামড়া বৃদ্ধ মানুষের মত ঝুলে গেছে। এ অবস্থায় তাকে মাগুরা ও ফরিদপুরসহ বিভিন্ন জেলায় চিকিৎসকদের দেখানো হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা তার রোগ নির্ণয় করতে পারেননি।
তবে চিকিৎসকসহ অনেকের ধারণা, অল্প বয়স ও নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে বিয়ের কারণে জিনগত সমস্যায় এ ধরনের অস্বাভাবিক শিশুর জন্ম হতে পারে।
শিশুটির দাদা হাসেম সিকদার জানান, একমাত্র ছেলের প্রথম পুত্র সন্তান হওয়াতে যেখানে দাদা হিসেবে খুশি হবেন, সেখানে তিনিসহ তার পরিবারের সদস্যরা এক ধরনের কষ্টের মধ্যে রয়েছেন। হাসেম শিকদার বলেন, তিনি অতি দরিদ্র মানুষ। ভিটে-মাটি বিক্রি করেও তিনি নাতির চিকিৎসা করাতে প্রস্তুত। এ জন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের সহায়তা কামনা করেন।
শিশুটির মা তৃপ্তি খাতুন জানান, এলাকাবাসী তার বিকৃত চেহারার সন্তানটিকে নিয়ে নানা সময় নানান কথা বলেন। অনেকে নানান কুসংস্কার রটান। কিন্তু বৃদ্ধ মানুষের মতো চেহারা ও সারা শরীরে বার্ধক্যের ছাপ নিয়ে জন্ম নিলেও বয়োজিদের মানসিক গঠন ঠিক আছে বলে জানান তিনি। সমবয়সী অন্য শিশুদের মত স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলা ও খাওয়া-দাওয়া করতে পারে সে। কথা বলতে পারে ও সবকিছু মনে রাখতে পারে।
মাগুরায় মায়ের সঙ্গে বিরল রোগে আক্রান্ত শিশু বায়েজিদতৃপ্তি আক্ষেপ করে বলেন,সব বাবা-মা প্রত্যাশা করেন তার সন্তানের চেহারা ভালো হোক। সুস্থ ও সবল থাকুক। তবে সৃষ্টিকর্তা তাদের সন্তানকে এইভাবে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। সন্তান তা যেমনই হোক,তাকে ঠিকই পরম মমতায় আগলে রেখেছেন তিনি।
ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. আব্দুল্লাহেল কাফি বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, এ ধরনের শিশু সারা পৃথিবীতেই দুর্লভ। এ রোগকে বলা হয় হাচিনসন গিলফোর্ড প্রজেরিয়া সিনড্রম। ১৮৮৬ সালে প্রথম হাচিনসন এধরনের রোগীকে আবিষ্কার করেন। সারা পৃথিবীতে এ পর্যন্ত এ ধরনের সর্বোচ্চ একশ’ রোগীকে শনাক্ত করা গেছে। কয়েকবছর আগে উত্তরবঙ্গে বাংলাদেশের প্রথম প্রজেরিয়া রোগীর সন্ধান মেলে। বায়োজিদ বাংলাদেশে এ ধরনের দ্বিতীয় রোগী।
তিনি আরও জানান, বংশগত বা জিনগত কারণে এই রোগ হয়ে থাকে। বায়োজিদের বাবা-মা নিকটাত্মীয় হওয়ায় এ রোগ হতে পারে। সাধারণত: এ ধরনের শিশুর গড় আয়ু ১৩ বছর। এখন পর্যন্ত এর কোনও ফলপ্রসু চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়নি।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

ব্যাংকক থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা
ষষ্ঠ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ শেষে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদবিস্তারিত পড়ুন

বিশ্বকবির ম্যুরাল থেকে কালি মুছে দিল উপজেলা প্রশাসন
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ম্যুরালে কালি দিয়ে মুখবিস্তারিত পড়ুন

ফখরুল: ইউনূস–মোদির বৈঠক আশার আলো দেখাচ্ছে
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন