অস্বাভাবিক ব্যয়ে অনুমোদন পাচ্ছে কর্ণফুলী টানেল প্রকল্প
চীনের সাংহাইয়ের ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’-এর আদলে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর জন্য সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ‘কনস্ট্রাকশন অব মাল্টি লেন রোড টানেল আন্ডার দ্য রিভার কর্ণফুলী’ নামে একটি প্রকল্প অনুমোদন পাচ্ছে অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে।
তবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অস্বাভাবিক ব্যয় বরাদ্দ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। এর আগে প্রকল্প প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) অতিরিক্ত ব্যয় দেখানোর অভিযোগ সেতু বিভাগের উপর। এ ছাড়া প্রকল্প অনুমোদনের আগেই কয়েক দফা ব্যয় বাড়ানো হয়েছে বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা যায়।
চলতি বছরে প্রথমে প্রকল্পের প্রস্তাবনায় ব্যয় ধরা হয় ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এই টানেল প্রকল্পে বিদেশি ঋণ ধরা হয়েছিল ৪ হাজার ১৪০ কোটি ১৬ লাখ টাকা ও সরকারি তহবিল থেকে ১ হাজার ৪৬০ কোটি ২৩ লাখ টাকা দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত মার্চে পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্পের মূল্যায়ন কমিটির সভায় (পিইসি) প্রকল্পটির ব্যয় বাড়িয়ে ৭ হাজার ৬০০ কোটি টাকার প্রস্তাব করে সেতু বিভাগ। তবে প্রকল্পের ব্যয় বিভাজন দেখাতে পারেনি সেতু বিভাগ। পরে প্রকল্পটি ফেরত পাঠানো হয়। পরবর্তীতে ব্যয় সংশোধন করে ডিপিপি আবারও পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায় সেতু বিভাগ।
এবার নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী প্রকল্পটির ব্যয় দাঁড়ায় ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৩ হাজার ৬৪৭ কোটি ২০ লাখ আর চায়না এক্সিম ব্যাংকের ঋণ ধরা হয় ৪ হাজার ৭৯৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০১৫ সালের জুন হতে ২০২০ সালের মধ্যে।
এদিকে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রকল্পটি একনেক সভায় উত্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। সেই অনুযায়ী মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) একনেক বৈঠকে প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পেশ করা হবে বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটির আওতায় নদীর তলদেশে ৩ দশমিক ৪০ কিলোমিটার টানেল নির্মাণ করা হবে। টানেলের সঙ্গে নির্মাণ করা হবে ৮০০ মিটারের একটি ব্রিজসহ ৪ দশমিক ৮৯ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ রোড।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানা যায়, চট্টগ্রাম শহর কর্ণফুলী নদী দ্বারা দুই ভাগে বিভক্ত। এই নদীর উপর অবস্থিত দুইটি ব্রিজ দিয়ে যান চলাচল সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। নদীতে পলি জমার কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের কাযক্রমও ব্যাহত হচ্ছে। এ কারণে ব্রিজের পরিবর্তে প্রকল্পের মাধ্যমে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। এর ফলে কর্ণফুলী নদীর দুই পাশে যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নয়ন হবে। এই টানেল চট্টগ্রাম শহরের সঙ্গে প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্রবন্দর এবং কক্সবাজারকে সংযুক্ত করবে। টানেলের মাধ্যমে এশিয়া হাইওয়ের সঙ্গে নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা যাবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার কেন্দ্রস্থল হিসেবে চট্টগ্রামের ভূমিকা শক্তিশালী হবে।
প্রকল্পটি সম্পর্কে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পরিকল্পনা কমিশনের এক কর্মকর্তা জানান, কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পে যে ব্যয় ধরা হয়েছে তা অস্বাভাবিক। দাতা দেশ চীনের নির্ধারণ করে দেয়া প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) ও সেতু বিভাগ মিলে অতিরিক্ত ব্যয়ের এই প্রস্তাব করেছে। অথচ আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মনোনয়ন করা গেলে প্রস্তাবিত ব্যয়ের চেয়ে অর্ধেক ব্যয়ে এই টানেল নির্মাণ সম্ভব হতো। যেখানে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা দিয়ে সারা বাংলাদেশের সড়ক মেরামত করা যেত, সেখানে দুই উপজেলাকে সংযুক্ত করতে বিশাল ব্যয় করা হচ্ছে, এটা বিলাসিতা ছাড়া কিছুই নয় বলে জানান এ কর্মকর্তা।
হিসাব করে দেখা যায়, টানেল নির্মাণে ব্যয় হবে ২ হাজার ২৬০০ কোটি টাকা। দু’পাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণে ব্যয় ৪০০ কোটি টাকা। ফলে ৩ হাজার কোটি টাকায় টানেলটির কাজ শেষ হওয়ার কথা বলে জানান এ কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদ্য অবসরপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত-অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আরাস্তু খান বাংলামেইলকে বলেন, ‘শুরুতেই প্রকল্প প্রস্তাবনায় ব্যয় ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ধরা হলেও আবারও অতিরিক্ত ২ হাজার কোটি টাকা দাবি করেছে সেতু বিভাগ। কিন্তু প্রকল্পের কোন অংশে কত অর্থ ব্যয় হবে তা দেখাতে পারেনি তারা। এ কারণে ওই সময় প্রকল্পের ব্যয় পুনর্গঠন করতে বলা হয়েছিল। এখন এ প্রস্তাবে ব্যয় দেখানো হয়েছে ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা।’
অস্বাভাবিক ব্যয় প্রসঙ্গে সেতু বিভাগ জানায়, নতুন করে জমি অধিগ্রহণসহ প্রকল্পের কিছু অঙ্গ সংযোজনের কথা ডিপিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এ কারণে ব্যয় বেড়েছে বলে জানায় বাস্তবায়নকারী সংগঠন সেতু বিভাগ।
এদিকে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটি অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে বিবেচনা করছে সরকার। এছাড়া চীনের প্রধানমন্ত্রী ঢাকা-বেইজিং কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৪০তম বার্ষিকীর কর্মসূচিতে যোগ দিতে আগামী বছরের শুরুতে বাংলাদেশ সফরে আসার কথা। ওই সময়ে তাকে দিয়েই কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ প্রকল্পটি উদ্বোধন করা হতে পারে। এজন্যে তড়িঘড়ি করে প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হচ্ছে বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা যায়।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
রবিবার যেসব এলাকায় ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না
গ্যাস পাইপলাইনের মেরামত কাজ ও জরুরি স্থানান্তরের জন্য রবিবার দেশেরবিস্তারিত পড়ুন
জেমিনি চ্যাটবটে যুক্ত হলো মেমোরি, যে সুবিধা পাওয়া যাবে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চ্যাটবট জেমিনিতে নতুন সুবিধা যুক্ত করেছে গুগল।বিস্তারিত পড়ুন
ঢাকা সিটি কলেজে ক্লাস বন্ধ রাখা নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত
ঢাকা কলেজের বাস ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বুধবার সংঘর্ষেবিস্তারিত পড়ুন