আগেই পুরুষ শূন্য এবার গ্রাম ছাড়ছে নারী-শিশুরাও
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মর্দানা গ্রাম থেকে বেশ আগেই পুরুষেরা পালিয়েছে। সন্ত্রাসীদের কারণে ও মামলার ভয়েই তাদের এই আত্মগোপন। এবার পালাচ্ছে নারী এবং শিশুরাও। তারা জীবনের ভয়ে ঘরবাড়ি ফেলে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছেন। কারণ, এলাকায় অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প থাকলেও গত ১৫ আগস্ট শনিবার সন্ত্রাসীরা এক নিরীহ কৃষককে কুপিয়ে হত্যা করেছে।
এই ঘটনার পর এলাকায় আতঙ্কাবস্থা বিরাজ করছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে শিবগঞ্জ পৌর এলাকার একটি গ্রামের নাম মর্দানা। এই গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই আওয়ামী লীগ নেতার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে। এদের মধ্যে একজন হলেন শিবগঞ্জ পৌর সভার বর্তমান কাউন্সিলর ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস সালাম এবং অপরজন প্রাক্তন কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম পাশবান। তিনিও নিজেকে আওয়ামী লীগের নেতা বলে দাবি করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আব্দুস সালামকে পৃষ্ঠপোষকতা করছেন শিবগঞ্জ উপজেলার সরকারি দলীয় একজন ক্ষমতাধর ব্যক্তি এবং শফিকুল ইসলাম পাশবানকে পৃষ্ঠপোষকতা করছেন ক্ষমতাসীন দলের চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের একজন ক্ষমতাধর ব্যক্তি।
এই পৃষ্ঠপোষকতার কারণেই এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে। বরং দিন দিন আরো বেড়েই চলেছে। আর তার খেসারত দিতে হচ্ছে এলাকার নিরীহ জনগণকে। ইতিপূর্বে সাধারণ মানুষকে গ্রাম ছাড়া করতে এলাকায় কয়েক হাজার হাত বোমা ফোটানো হয়েছে। বাড়ি ঘরে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে মূল্যবান জিনিসপত্র। সুযোগ বুঝে সংঘবদ্ধ ওই চক্রটি প্রকাশ্যে লুটপাট চালিয়েছে।
এসব ঘটনায় একাধিক মামলা হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে গডফাদাররা। সন্ত্রাসী কার্যক্রম অব্যাহত থাকায় এলাকায় শৃংখলা বজায় রাখতে সম্প্রতি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প বসানো হয়েছে। তারপরও সন্ত্রাসীরা গত শনিবার রবিউল ইসলাম নামে এক কৃষককে কুপিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসী পাশবানের লোকজন। রবিউলের অপরাধ সে আব্দুস সালামের সমর্থক। সন্ত্রাসীরা এতই ক্ষমতাধর যে তারা রবিউলের লাশ দাফনেও বাধা দেয়।
তারা হুমকি দিয়ে বলে, যারা জানাযায় অংশ গ্রহণ করবে, তাদেরও একই কায়দায় হত্যা করা হবে। ফলে তাদের ভয়ে অনেক মানুষ জানাজায় অংশ নিতে পারেনি। তবে শিবগঞ্জ থানা পুলিশের সহায়তায় মাত্র কয়েকজন আত্বীয় স্বজন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লাশ দাফন করেন।
এ ঘটনায় নিহত রবিউলের বাবা নজরুল ইসলাম রোববার রাতে পাশবানসহ ২৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরো ৩০ জনকে আসামি করে শিবগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বর্তমানে গ্রামটিতে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এদিকে এই ঘটনার পর থেকে প্রতিদিন শত শত নারী ও শিশু তাদের বাড়ির ব্যবহৃত সমস্ত মালামাল- এমনকি গৃহপালিত গরু ছাগল, হাঁস মুরগি নিয়ে বাড়ি থেকে চলে যাচ্ছেন।
তাদের দাবি, সন্ত্রাসীরা এমনই নির্যাতন চালাচ্ছে যে- তাদের হাতে কেউ নিরাপদ নয়। লুটপাটসহ নানা ধরনের অত্যাচার এমকি পাশবিক নির্যাতনেরও ঘটনা ঘটাচ্ছে তারা। ঘরবাড়ি ফেলে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে বেরিয়ে পড়া এক বৃদ্ধা মরিয়ম বেগম।
তিনি জানান, গ্রামটিতে সন্ত্রাসীদের ভয়ে কেউ থাকতে পারছে না। তাদের হাত থেকে বাঁচতে বাড়ির মালামাল নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে শিবগঞ্জ থানার অফিসার ইনর্চাজ এমএম ময়নুল ইসলাম জানান, সন্ত্রাসীদের ধরতে থানা পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশও কাজ করে যাচ্ছে। এ ছাড়া ওই গ্রামটিতে যাতে আর কোনো সহিংস ঘটনা না ঘটে, সেজন্য সেখানে একটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এতে দুই জন উপ পরিদর্শক (এসআই) এর নেতৃত্বে ৫৩ জন পুলিশ সদস্য দিন রাত দায়িত্ব পালন করছেন। তবে তাতেও সাধারণ গ্রামবাসীদের ভয় কাটেনি। বরং দিন দিন পরিস্থিতি আরো খারাপ হচ্ছে। ঘরবাড়ি ছেড়ে নারী-শিশুদের পলায়নও সেটিই প্রমাণ করে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
রবিবার যেসব এলাকায় ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না
গ্যাস পাইপলাইনের মেরামত কাজ ও জরুরি স্থানান্তরের জন্য রবিবার দেশেরবিস্তারিত পড়ুন
জেমিনি চ্যাটবটে যুক্ত হলো মেমোরি, যে সুবিধা পাওয়া যাবে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চ্যাটবট জেমিনিতে নতুন সুবিধা যুক্ত করেছে গুগল।বিস্তারিত পড়ুন
ঢাকা সিটি কলেজে ক্লাস বন্ধ রাখা নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত
ঢাকা কলেজের বাস ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বুধবার সংঘর্ষেবিস্তারিত পড়ুন