আগে যদি জানতাম, তবে মন ফিরে চাইতাম…
১৯৫৬ সালে বাংলাদেশে জন্ম হয় এক কিংবদন্তীর। বাংলার গানের জগতে জ্বলজ্বল করে জ্বলছিল এক নক্ষত্র। গতকাল ঝরে পড়ে গেল সেই তারকা। কিংবদন্তী সংগীতশিল্পী লাকী আখন্দ আর নেই। ৬১ বছর বয়সে ২১ এপ্রিল শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টার পর পুরান ঢাকার আরমানিটোলার নিজ বাসাতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্মরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীসহ সংগীত জগৎ গভীর শোক প্রকাশ করেন।
গুণী এই তারকা অনেকদিন ধরেই মরণব্যাধী ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলে ক্যানসার ধরা পড়ে। এরপর থাইল্যান্ডের ব্যাংককে চিকিৎসা নিতে যান। সেখানে কেমোথেরাপি নেওয়ার পর শারীরিক অবস্থার অনেকটা উন্নতি হয়েছিল। ছয় মাসের চিকিৎসা শেষে ২০১৬ সালের ২৫ মার্চ দেশে ফেরেন। একই বছরের জুনে আবারও থেরাপির জন্য ব্যাংকক যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে পরে আর তার সেখানে যাওয়া হয়ে উঠেনি। চলতি বছর ৫ ফেব্রুয়ারি এ শিল্পীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর প্যালিয়েটিভ কেয়ারের ভর্তি করা হয়। দুই মাসেরও বেশি সময় হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পর কিছুদিন আগে আরমানিটোলার নিজ বাসায় ফেরেন তিনি। এ সময় তার শারীরিক অবস্থা ভালোই ছিল। হঠাৎ ২০ এপ্রিল বৃহস্পতিবার রাতে জ্বরে আক্রান্ত হন লাকী আখন্দ। এরপর তার না ফেরার দেশে চলে যাওয়ার খবর এলো। তার মৃত্যুতে শোকাহত গোটা সংস্কৃতি অঙ্গন।
লাকী আখন্দ ১৯৫৬ সালের ১৮ জুন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকার পাতলা খান লেনে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র ৫ বছর বয়সেই তিনি তার বাবার কাছ থেকে সংগীত বিষয়ে হাতেখড়ি নেন। তিনি ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত টেলিভিশন এবং রেডিওতে শিশুশিল্পী হিসেবে সংগীত বিষয়ক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। মাত্র ১৪ বছর বয়সেই এইচএমভি পাকিস্তানের সুরকার এবং ১৬ বছর বয়সে এইচএমভি ভারতের সংগীত পরিচালক হিসেবে নিজের নাম যুক্ত করেন। ১৯৭৫ সালে লাকী আখন্দ তার ছোট ভাই হ্যাপী আখন্দের একটি অ্যালবামের সঙ্গীতায়োজন করেন। ১৯৮০ সালে সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী পরিচালিত ‘ঘুড্ডি’ চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা করেন লাকী আখন্দ। এই চলচ্চিত্রে হ্যাপী আখন্দের অ্যালবামের ‘আবার এলো যে সন্ধ্যা’ গানটি ব্যবহৃত হয় এবং ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ পায়। ১৯৮৪ সালে তিনি সরগমের ব্যানারে তার প্রথম একক অ্যালবাম লাকী আখন্দ প্রকাশ করেন। এই অ্যালবামের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গান- ‘আগে যদি জানতাম’, ‘আমায় ডেকোনা’, ‘মামুনিয়া’, ‘এই নীল মনিহার’, ও ‘হৃদয় আমার’। ১৯৬৯ সালে লাকী আখন্দ পাকিস্তানী আর্ট কাউন্সিল হতে ‘বাংলা আধুনিক গান’ বিভাগে পদক লাভ করেন।
লাকী আখন্দ বাংলাদেশের অন্যতম সেরা সুরকার, সঙ্গীতপরিচালক ও গায়ক। লাকী আখন্দের সুরারোপে করা প্রতিটি গানের কথার উপর সুরের যে প্রভাব তা যে কাউকেই সহজে মুগ্ধ করে। লাকী আখন্দকে তাই সুরের বরপুত্র হিসেবে আখ্যায়িত করলে ভুল হবে না। সুর ও সঙ্গীতায়োজনের নান্দনিক ও বৈচিত্র্যময় উপস্থাপনে তিনি কিংবদন্তী। সফট্-মেলোডি, মেলো-রক, হার্ড-রক যেটাতেই হাত দিয়েছেন সেটাই হয়ে উঠেছে এক একটি মাস্টারপিস। ১৯৮৭ সালে ছোট ভাই ‘হ্যাপী আখন্দের’ মৃত্যুর পরপর সঙ্গীতাঙ্গন থেকে অনেকটাই স্বেচ্ছায় নির্বাসন নেন এই গুণী শিল্পী।
মাঝখানে প্রায় এক দশক নীরব থেকে ১৯৯৮-এ ‘পরিচয় কবে হবে’ ও বিতৃষ্ণা জীবনে আমার’ অ্যালবাম দুটি নিয়ে আবারও ফিরে আসেন সঙ্গীতাঙ্গনে। প্রাণের টানে ফিরে আসেন গানের মাঝে। তবে বেশিদিন স্থায়ী হতে পারলেন না ক্ষণজন্মা এই গানের পাখি। প্রকৃতির চিরচারিত নিয়মে তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে। তবে তার গাওয়া গান রয়ে যাবে এই নশ্বর পৃথিবীতে। আগামী প্রজন্মের কাছেও যেন জনপ্রিয় থাকে তার অমর সৃষ্টি। তাই শুনে নিতে পারেন তার গাওয়া গানগুলো নিচের লিঙ্ক থেকে-
https://youtu.be/DaZtkoYqvng
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
সমুদ্র পাড়ে দুর্গারূপে নওশাবা
শুধু ঈদ কিংবা পূজা নয়, বিশেষ ধর্মীয় দিন উপলক্ষে ফটোশুটেবিস্তারিত পড়ুন
শুল্কমুক্ত গাড়ি খালাস করেছেন সাকিব-ফেরদৌস, পারেননি সুমনসহ অনেকে
আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের জন্য আমদানি করাবিস্তারিত পড়ুন
আলোচিত নায়িকা পরীমনির পরিবার সম্পর্কে এই তথ্যগুলো জানতেন?
গভীর রাতে সাভারের বোট ক্লাবে গিয়ে যৌন হেনস্তা ও মারধরেরবিস্তারিত পড়ুন