আজ দাশিয়ারছড়ায় যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর সামনে রেখে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলার সাবেক ছিটমহল দাশিয়ারছড়া এখন প্রায় প্রস্তুত। অপেক্ষা শুধু বরণের।
প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের মধ্যে দিয়ে পাল্টে যাচ্ছে ঐতিহাসিক ছিটমহল দাশিয়ারছড়ার নাম। যার নতুন নাম হবে মুজিব-ইন্দিরা দাশিয়ারছড়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি)।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ (বৃহস্পতিবার) দাশিয়ারছড়া এসে এ ইউপি কমপ্লেক্স ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। ৬৮ বছরের ইতিহাসে কোনো সরকার প্রধানের এই প্রথম ছিটমহলে আগমন। ছিটমহল হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলের মানুষের মনে যে আশার আলো দেখেছে প্রধানমন্ত্রীর আগমনের মধ্য দিয়ে তা পূরণ হবে। শুরু হবে এক নতুন অধ্যায়ের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দাশিয়ারছড়ায় সাজ সাজ রব চলছে। প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করে নিতে চলছে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও প্রস্তুতি।
প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার-২ এসএম খুরশিদ-উল আলম স্বাক্ষরিত সফরসূচিতে জানানো হয়েছে, সকালে হেলিকপ্টারে করে ফুলবাড়ি হেলিপ্যাডে নামবেন। এরপর সড়ক পথে দাশিয়ারছড়া যাবেন। প্রধানমন্ত্রী দাশিয়ারছড়া কালীহাট বাজারসংলগ্ন প্রস্তাবিত শেখ হাসিনা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সমাবেশে যোগ দেবেন। সেখানে তিনি মুজিব-ইন্দিরা দাশিয়ারছড়া ইউপি কমপ্লেক্স ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং বিদ্যুৎ-সংযোগসহ ১৬টি কাজের ফলক উন্মোচন ও ১৬টির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি হচ্ছে বিগত ৬৮ বছরের ছিটমহলবাসীর বন্দিদশা থেকে মুক্তি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে প্রবাস জীবন যাপন করেছেন। তিনি জানেন রাষ্ট্র ছাড়া জীবন যাপনের কষ্ট। স্বাধীনতা ছাড়া বাঁচার যন্ত্রণা। সে উপলব্ধি থেকে তার সফল কুটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে আজকে ছিটমহলবাসীর মুক্তি ঘটেছে।’
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমিন জানান, প্রধানমন্ত্রীর সফর সফল করার লক্ষ্যে সার্বক্ষণিক দাসিয়ারছড়া ছিটমহলে মনিটর করা হচ্ছে। ফুলবাড়ী, নাগেশ্বরী ও ভুরুঙ্গামারীর ইউএনওকে দাসিয়ারছড়ায় সম্পৃক্ত করা হয়েছে।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে দাশিয়ারছড়ায় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, দল ও ব্যক্তির শতাধিক তোরণ, ফেস্টুন ও ব্যানারে ছেয়ে গেছে। সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে নাগেশ্বরী-ফুলবাড়ি সড়কের সঙ্গে দাশিয়ারছড়ার সংযোগ সড়ক তৈরি করেছে। পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ প্রায় শেষের পথে।
প্রধানমন্ত্রী দাশিয়ারছড়া থেকে সুইচ টিপে একযোগে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও পঞ্চগড় জেলায় অবস্থিত সদ্য বিলুপ্ত ছিটমহলের এক হাজার ৮২৯ পরিবারের বিদ্যুৎ সংযোগের উদ্বোধন করবেন।
এছাড়া, রাস্তা সংস্কার ও পরিষ্কার, কালীরহাট বাজারের বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠ ভরাট, বাজারের পুরোনো রাস্তার ওপর তৈরি স্থাপনা পরিচ্ছন্নকরণ, নীলকমল নদীর ওপর অস্থায়ী বেইলি সেতু নির্মাণ, দাশিয়ারছড়া-কালীহাট রাস্তা প্রশস্তকরণ এবং অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে টেলিফোন ও ইন্টারনেট সংযোগের কাজ চলছে। এর আগে সেখানে ভূমি কার্যালয়, তিনটি কমিউনিটি ক্লিনিক, ডিজিটাল সাব সেন্টার, সোশাল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের বুথ স্থাপন, কমিউনিটি লাইব্রেরি, কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র ও অস্থায়ী পুলিশ ফাঁড়ি বসানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সফর ঘিরে সাবেক ছিটবাসীদের মধ্যে একটা উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। শুধু দাশিয়ারছড়া নয়, জেলার ১২টি ছিটমহলের মধ্যেও চলছে আনন্দ উৎসব আর দাশিয়ারছড়ার প্রধানমন্ত্রীর মতবিনিময় সভায় যোগদানের তোড়জোড়। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে কখন প্রধানমন্ত্রী তাদের মাঝে আসবেন। একনজর দেখতে পাবেন তাকে। দীর্ঘ ৬৮ বছরের অন্ধকার জীবনকে পিছনে ফেলে সুন্দর আগামীর স্বপ্ন দেখছেন বিলুপ্ত ছিটবাসীরা। মিছিল, স্লোগান আর বাহারি তোরণের বর্ণিল সাজে সেজেছে ফুলবাড়ী থেকে দাশিয়ারছড়া।
ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সফরে জেলাজুড়ে নেয়া হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিভিন্ন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠছে পরিবেশ। ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলা প্রশাসনসহ জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। দিনরাত চলছে মাইকিং। বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন প্রতিদিন মিটিং মিছিল করছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বরণ করে নেয়ার জন্য প্রায় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ছিটমহলবাসী। ঠেলা শ্রমিক শামসুল (৩৮), দারোগ আলী (৫৫) জানান, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ছিটমহলে আসবেন। আমরা সেদিন কাজ বন্ধ রেখে তার কথা শুনতে যাবো। তিনি আমাদের ধরলা সেতু দিয়েছেন।
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মানিক মিয়া (৫০) জানান, জননেত্রী শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে সারা জেলায় আনন্দের বন্যা বইছে। জেলার শহর বন্দর আর গ্রামে আলোচনার ঝড় বইছে। মানুষের জিজ্ঞাসা তিনি কুড়িগ্রামের উন্নয়নের জন্য নতুন কিছু উপহার দিবেন। যার মাধ্যমে এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটবে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ হাসান লোবান জানান, বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে জেলার প্রায় ১শ ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৬টি সমাপ্ত প্রকল্পের উদ্বোধনের পাশাপাশি আরও ১৫টি প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া কুড়িগ্রামবাসীর ভাগ্য উন্নয়নে বড় ধরনের প্রকল্পের ঘোষণা দিয়ে চমক দেখাতে পারেন। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যতোবার কুড়িগ্রামে এসেছেন ততোবার এলাকার মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছেন।
জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমিন জানান, বিলুপ্ত ছিটবাসীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সফরকে ঘিরে দীর্ঘ ৬৮ বছরের অন্ধকার জীবনের অবসানের স্বপ্ন দেখছে। তিনি এখানে সমাবেশে যোগ দেয়ার আগে ১৬টি উন্নয়ন কাজের সফল সমাপ্তির উদ্বোধন এবং ১৫টি প্রকল্পের কাজ শুরু করতে ভিত্তিপ্রস্তরের উদ্বোধন করবেন। এছাড়া সদ্য বিলুপ্ত ছিটমহলের এক হাজার ৮২৯ পরিবারকে বিদ্যুৎ সংযোগের উদ্বোধন করা হবে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
কুড়িগ্রামে তিন উপজেলার ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি
কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, ধরলার ও তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ায় জেলার তিনবিস্তারিত পড়ুন
কুড়িগ্রামে সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার
কুড়িগ্রামে মটর মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান বকসীরবিস্তারিত পড়ুন
স্কুলছাত্রীর সঙ্গে পরকীয়া, জামায়াত নেতাকে গণধোলাই
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে স্কুলছাত্রীর সঙ্গে পরকীয়া হাতেনাতে ধরা পড়ার পর একবিস্তারিত পড়ুন