আজ নীলুর বিয়ে, লাল রঙের বেনারসিটা পরার অপেক্ষায়!
বিয়ের লাল বেনারসিটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ও । শাড়িটা অসম্ভব রকমের সুন্দর । নীলুর বান্ধবীরা থেকে শুরু করে পাড়ার খালা নানী চাচী সবাই শাড়িটা দেখে প্রসংশা করেছে । প্রসংশা করেনি এমন একজন পাওয়া মুসকিল । নীলুর বড় চাচী রত্না বাণু ; যে মানুষ পৃথিবীর সকল কিছুর মাঝেই খুতঁ খুঁজে পান । পৃথিবীর এমন একটি বিষয় বা জিনিস নেই যা দেখে তিনি নাক কুচকাননি । আর বলেননি – ‘ এইটা কিছু হইল? মানুষের পছন্দ এতো খারাপ ক্যামনে হয়?’
সেই মানুষ পর্যন্ত নীলুর বিয়ের শাড়িটি দেখে চোখ বড় বড় করে বললেন – ‘ শাড়ি তো দারুণ হয়েছে । ছেলের পছন্দ তো বলতে হব খারাপ না । ’
রুমে নীলু একা বসে আছে । টিপ টিপ শব্দ করে পানি পরেই চলছে কল থেকে । পানির এই শব্দ একদমই সহ্য করতে পারে না ও । অন্য সময় হলে চিৎকার করে মন্তুর মাকে বলত – ‘পানি বন্ধ কর মন্তুর মা ।’
কিন্তু আজ শব্দটা অসম্ভব ভাল লাগছে নীলুর । শুনতে ইচ্ছে করছে শুধুই শুনতে ইচ্ছে করছে ওর ।
: কাল তোমার বিয়ে । আমার সাথে ।
নিরব বলেছিল নীলুকে । হালকা হেসে নীলু জিজ্ঞেস করেছিল
: কি রঙের শাড়ি পরব?
: নীল , তুমি নীল শাড়ি পরবে ।
শাড়ি আমি এখন তোমাকে কিনে দিতে পারব না । তবে পরে দিব । তোমাকে নীল রঙের একটা জামদানী শাড়ি কিনে দিব ।
: দিও । কিনে দিও ।
: কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে পরে ফেলব । কিছু টাকা হয়তো লাগবে , পাঁচ হাজারের মত ।
টাকা আমি জোগাড় করে ফেলব ।
: ও নীলু এখনও তৈয়ার হ নাই ক্যা?
মেজ মামীর কণ্ঠ শুনে তার দিকে তাকাল নীলু ।বর্তমানে থেকেও ও যেন বর্তমানে ছিল না । ফিরে আসল ফরিদা বেগমের ডাকে ।
নীলুর মেজ মামী ফরিদা বেগম । পান খেয়ে সব সময়েই তার ঠোঁট লাল করে রাখেন । নীলুর ধারণা অন্য সব মানুষের তুলনায় ফরিদা বেগমের ঠোঁট একটু বেশীই লাল হয় ।
ফরিদা বেগমও তার লাল ঠোঁটের মাঝে আরও পান গুজতে গুজতে বলেন – ‘তরও ঠোঁটও লাল হইব । স্বামী ভালোবাসলে ঠোঁট এমন লাল হইব । ’
: হুম মামী তৈরি হচ্ছি ।
: হ! তাড়াতাড়ি হ । তর হাত খান দেখি নীলু । সামনে মেইল্যা ধর ।
নীলু ওর হাতটা সামনে ধরতেই ফরিদা বেগম বেশ চিৎকার করেই বলে উঠলেন
: চমৎকার রং হইছেরে নীলু । তর উনি তরে অনেক ভালোবাসবে ।
: অনেক ভালোবাসবে মামী ।
নীলুর চিবুক বেয়ে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরছিল । ফরিদা বেগম তা দেখতে পেলেন না । আচ্ছা নীলু কি সেই উষ্ণ পানির স্রোত অনুভব করতে পেরেছিল ? সত্যিই কি পেরেছিল ?
‘যে কাল পিছনে ছিল
যে কাল সম্মুখে ফিরে আসে-’
কোন এক বইয়ে পড়েছিল নীলু । কার বই তা ওর মনে নেই । মনে রাখার মত করেও পড়েনি । কিন্তু হঠাৎ মনে পরে গেল লাইন দুটি । অবচেতন মন বহু কিছু জমিয়ে রাখে । প্রকৃতির মত মানুষের মনও অদ্ভুত ।
কে জানে হয়তো প্রকৃতি মানুষের অবচেতন মনে জমিয়ে রাখে কালের পরিক্রমায় সেই অপ্রয়োজনীয় বিষয়টি বর্তমান হয়ে দাঁড়ায় । অপ্রয়োজনীয় কিছু কেন জমিয়ে রাখবে মন । প্রকৃতি তো মানুষের অনেক দূর পর্যন্ত দেখতে পায় ।
: নীলু!
চমকে উঠল ও । বুকের ভিতরটা দপ্ করে উঠল । কেমন যেন কাতর হয়ে উঠল নীলু । স্মৃতি কাতর ; ঐ মানুষটির মুখে নীলু ডাকটি বারবার বহুবার শোনার জন্যে কাতর ।
: নীলু!
ঘোর লাগা চোখে নীলু তাকলো নিরবের দিকে । নিজেকে খুব অসহায় লাগছে ওর । পিছন আজ ওর সামনে এসে দাঁড়িয়েছে ।
নীলু যে কখনো এমন ভাবেনি তা নয় । বহু বার বহু ভাবে কল্পনা করেছে । কি বলবে কি করবে ও সেই দিন , যে দিন অতীত সামনে এসে দাঁড়াবে । আর প্রশ্ন করবে
: নীলু তোমার বিয়ের শাড়ির রঙটা কি ছিল? তুমি কি নীল শাড়ি পরেছিলে সেই দিন?
: জানি না ।
: বল না নীল পরী ।
নীলুর বুকের ভিতরটা আবার দপ্ করে উঠল । তাকিয়ে রইল বিষ্ময় নিয়ে সামনে দাঁড়ানো মানুষটির দিকে ; বহু পরিচিত মানুষটির দিকে ।
বদলে গিয়েছে মানুষটি । চোখগুলো গর্তে ঢুকে গিয়েছে আরও ; আরও শুকিয়ে গিয়েছে । তবে নাকটা বদলায়নি । এখনও টিয়ে পাখির ঠোঁটের মতই আছে ।
নীলু ডুব লাগলো অতীতের মাঝে ।
: না হবে না এমন নাক হবে না ।
: কেন ? সমস্যা কি?
:ছিঃ! তোমার নাক হবে না । ঠিক আছে চুল তোমার মত , চোখও না হয় হল । কিন্তু নাক না । এমন টিয়ে পাখির মত নাক হলে হবে না । লোকে আমার মেয়েকে নিয়ে মজা করবে ।
: নীলু !
: হুম!
আবারও তাকলো নিরবের দিকে ।
: নীল শাড়িতে তোমাকে নিশ্চয়ই অনেক সুন্দর লেগেছে । বললে না নীল শাড়ি পরেছিলে কি ?
: জানি না ।
: তুমি বলবে না । তাই তো ?
: কি বলব? বলার কি আছে?
: আমি জানি নীল শাড়িতে তোমাকে অসম্ভব সুন্দর লেগেছে । গান শুনবে নীলু? আমার গানের গলা আগের থেকে অনেক সুন্দর হয়েছে ।
নীলুর উত্তরের অপেক্ষা না করেই নিরব গাইতে শুরু করল ওর অসম্ভব প্রিয় গানটি –
“আনন্দ হাসি মুখ চেনা চেনা সবখানে
এরই মাঝে চলো মোরা হারিয়ে যাই…
তুমি চেয়ে আছো তাই
আমি পথে হেটে যাই
হেটে হেটে বহুদুর বহুদুর যেতে চাই…”
নীলু তাকিয়ে দেখল নিরব চলে যাচ্ছে । অতীত হারিয়ে যাচ্ছে আর দূরে সরে যাচ্ছে । অতীতকে হারিয়ে যেতে দিতে হয় ।
“গল্পটা ভালো লেগেছে তাহলে এখানে ক্লিক করুন”
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
আহা চিকুনগুনিয়া !
ঈদের দিন ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে মেঝেতে পা দিয়ে আমিবিস্তারিত পড়ুন
‘দৃষ্টিশক্তি থাকা, কিন্তু জীবনে লক্ষ্য না থাকা অন্ধত্বের চেয়েও খারাপ’
চক্ষু, কর্ন, জিহবা, নাসিকা, ত্বক – মানুষের এই পাঁচটি ইন্দ্রিয়েরবিস্তারিত পড়ুন
ধর্ষিতা মেয়েটির গল্প
পারিনি সেদিন নিজেকে শোষকদের হাত থেকে রক্ষা করতে, পারিনি সেদিনবিস্তারিত পড়ুন