আটকে আছে ছাত্রলীগের রিফর্ম কমিটি, পদবঞ্চিতদের ক্ষোভ
ছাত্রলীগের রিফর্ম কমিটি গঠনে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে কেন্দ্রের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন, ২১ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন এবং সর্বশেষ গত ১৩ ডিসেম্বর হল কমিটি গঠন করা হয়।
সাধারণত হল কমিটি গঠনের পরপরই রিফর্ম কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু হল কমিটি গঠনের দীর্ঘ চার মাস পার হলেও এখনো রিফর্ম কমিটি না করায় পদপ্রত্যাশীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। দীর্ঘদিন থেকে সাংগঠনিক পরিচয় না থাকায় হতাশ হয়েছেন অনেকে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে ফেসবুকে ট্যাগ দিয়ে নেতাদের হেলিকপ্টারে চড়ার সমালোচনাও করেছেন অনেকে।
জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে পদ পাওয়ার আশায় অনেক ত্যাগী নেতা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের সময় কেন্দ্রের পদ নেননি। আশা করেছিলেন হলেই কাঙ্ক্ষিত পদ মিলবে। সে হিসেবে প্রতিটি হলে প্রার্থী ছিল ৫-৭ জন করে। এছাড়া অনেকে গোপনে জোর তদবির করেছেন হল কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে। কিন্তু সর্বশেষ গত ১৩ ডিসেম্বর হল কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করে কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। ফলে ১৮টি হলে পদপ্রত্যাশীরা বাদ পড়েন।
এরপরও আশায় বুক বাঁধেন অনেকে। হল কমিটিতে জায়গা পাননি, তবে রিফর্ম কমিটিতে জায়গা পাবেন। কিন্তু হল কমিটি গঠনের চার মাসের অধিক সময় অতিবাহিত হলেও রিফর্ম কমিটি না দেয়ায় পদপ্রত্যাশীরা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি মো. সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনের সমালোচনা করেন।
গত ৮ মার্চ দুপুরে মধুর ক্যান্টিনে দুই নেতার ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বঞ্চিতরা। এ সময় তারা মধুর ক্যান্টিনে দুই নেতাকে নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করেন। ঘোষণা দেন বিক্ষোভ করার। কিন্তু পরে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি কাজী এনায়েত ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসানের চেষ্টায় পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে আসে। ওই সময় পদবঞ্চিতরা অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের আগের দিন রাতে ৮ মার্চ দুপুরে মধুর ক্যান্টিনে কথা বলবেন বলে আশ্বস্ত করেন। কিন্তু তারা কথা রাখেননি। বিষয়টি ‘কাপুরুষোচিত’ বলে মন্তব্য করেন পদবঞ্চিতরা।
ওই সময় হট্টগোল করে একজন বলেন, ‘সাহস থাকলে কথা বলা যেত। তাদেরতো সাহস নেই, যার কারণে পালিয়েছে।’ প্রসঙ্গত, পদবঞ্চিতরা আসার আগে ওই দিন দুপুর ১টার দিকে মধুর ক্যান্টিন ত্যাগ করেন সোহাগ-জাকির।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে সদ্য সাবেক হল কমিটির এক নেতা বলেন, ‘গরুর মতো খাটানোর সময় গড়িমসি করেনি নেতারা। কিন্তু এখন কেন এত গড়িমসি? দীর্ঘদিন আমাদের কোনো সাংগঠনিক পরিচয় নেই। তারা জমিদারের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছেন।’
শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বুলবুল ফেসবুকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশ্যে এক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘বাংলার ফাটাকেস্টখ্যাত মাননীয় মন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ভাই, আজ ছাত্রলীগ নিয়ে একটা চক্র ব্যবসা করছে। এখন মাছ ভাগ করার মতো পদ ভাগ করে নেয়া হয়। রাজনীতি করি মাঠে, আর নেতা বানানো হয় ঘরে বসে। এসব বাদ দিলাম, এক একজন ছাত্রলীগনেতা দামি গাড়িতে চড়েন। নেতা হবার আগে কখনও এদের গাড়িতে চড়ার দৃশ্য চোখে পড়েনি। আমাদের পকেটেতো তিন বেলা ভাত খাবারের টাকাও থাকে না। বাড়ি থেকে টাকা না দিলে উপোস থাকতে হয়। হলের ক্যান্টিনে আমার ২৫,০০০ টাকা বাকি। কিভাবে তারা হেলিকপ্টারে চড়ে? শুনি, ভাড়ার টাকা কেউ দিয়ে দেয়। কই কর্মীদের খোঁজতো কেউ রাখে না। নেতার মাথায় সবাই তেল মাখায়। কি কারণে? কিসের জন্য?’
তিনি আরও লেখেন, ‘হল কমিটি হয়েছে আজ কতদিন হলো। কেন আমাদের এতগুলো হলপ্রার্থীর সঙ্গে এমন বাজে ব্যবহার করা হলো? কোনো কেন্দ্রীয় নেতা কি তাদের প্রশ্ন করেছেন?’
৮ এপ্রিল আরেক স্ট্যাটাসে নিজেকে ‘শিবির’ আখ্যা দেয়ারও অভিযোগ করেন তিনি। লেখেন, ‘ছাত্রলীগের ভেতরে যদি কোনো অন্যায় ও অনৈতিক কাজ হয় যা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বিরোধী, আমি তার বিরোধিতা করবই। এতে যদি কোনো নেতা জামায়াত শিবির বলে, বলুক। ক্ষমতা থাকলে কত কি মানুষ বলে! আমি জানি, আমি কে, কী আমার পরিচয়।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রকিব হাসান তার ফেসবুকে লেখেন, ‘হল ক্যান্ডিডেটদের মধ্যে যারা নেতা হতে পারেনি, তাদের ফাঁসি দেয়া হোক ছাত্রলীগ করার অপরাধে। দেশরত্ন শেখ হাসিনার জন্য যারা জীবনের মায়া-মমতা ত্যাগ করে, তাদের এমন অপমান সহ্য হয় না। তাই মহামান্যদের কাছে অনুরোধ, তাদের ফাঁসি দেন। আপনাদের সঙ্গে রাজনীতি করার চেয়ে বড় কোনো অপরাধ তাদের জীবনে নেই। আপনারা হিপোক্রেট।’ এরপর ওই স্ট্যাটাসের নিচে মোশাররফ হোসেন রেজা নামে একজন কমেন্টে জানতে চান, হিপোক্রেট কারা? রিপ্লাইয়ে রকিব বলেন, ‘কারা আবার, সভাপতি-সেক্রেটারি। তাদের নামে শ্লোগান আছে, ছাত্রলীগের দুই বীর সোহাগ আর জাকির।’
জিয়াউর রহমান হলের এক পদপ্রত্যাশী বলেন, ‘ছাত্রলীগে এখন আর আদর্শ নেই। ৫ জানুয়ারির আগে যারা ছাত্রদলের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল তারা এখন বড় আদর্শবান। আর আমরা যারা দুঃসময়ে ছিলাম তারা কিছুই না। সাংগঠনিক পরিচয়হীন আর কতদিন চলবে? নেতাদের মাথা ব্যাথা নেই!’
ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটিতে সিনিয়র-জুনিয়রে কোনো শৃঙ্খলা নেই বলে ফেসবুকে প্রতিবাদ করেন কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সায়েম খান। তিনি লেখেন, ‘এ পার্টিতে পদের বিবেচনায় বা অবৈধ অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধার বিবেচনায় যদি বৈষম্য বিরাজ করে তাহলে আহত হবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আহত হলে আহত হবেন শেখ হাসিনার বিশ্বাস।’
কবে নাগাদ রিফর্ম কমিটি দেয়া হবে- এমন বিষয়ে জানতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি মো. সাইফুর রহমান সোহাগের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। তবে সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন কয়েক দিনের মধ্যেই কমিটি দেবেন বলে জানান।
তিনি বলেন, ‘আমরা বসতে পারছি না। যার কারণে দেরি হচ্ছে। নির্বাচনসহ বেশকিছু ব্যস্ততার কারণে ঢাকার বাইরে থাকায় দু’জন একসঙ্গে বসতে পারছি না। খুব শিগগিরই কমিটি দেয়া হবে।’
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ফের ২ দিন রিমান্ডে আনিসুল হক
রাজধানীর বাড্ডা থানার স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা আল-আমিন হত্যা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
জামিন পেলেন সাবেক বিচারপতি মানিক
অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের সময় সিলেটের কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকেবিস্তারিত পড়ুন