আত্মহত্যা কেন করেন ভারতের কৃষকরা ?
নয়াদিল্লি: এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাম রাও নারায়ণ পঞ্চলেনভর বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
বৃষ্টিতে চাষ করা তুলা ধ্বংস হয়ে যাবার পর, মহারাষ্ট্র প্রদেশের এই কৃষক তার জমি থেকে কোনো আয়ের আশা হারিয়ে ফেলেন। এ নিয়ে টানা তৃতীয় বছরের মতো তার জমিতে ফসল হয়নি। প্রথম বছর হয়নি খরার কারণে, আর এর পরের দুবছর হয়নি অসময়ে বৃষ্টির কারণে। কৃষিকাজ এবং মেয়ের বিয়ের জন্য নেয়া প্রায় ২৭ লাখ ২২,০০০ টাকার (৩৫,০০০ ডলার) সমান দেনায় এখন ডুবে আছেন পঞ্চলেনভর। জানেন না কিভাবে আবার নিজের পায়ে দাঁড়াবেন।
তিনি আশায় আছেন, কর্তৃপক্ষ হয়তো তার মতো কৃষকদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে। পঞ্চলেনভর বলেন, ‘সরকারের উচিত কৃষকদের ঋণ মওকুফ করে দেয়া। এখন আমরা যে ক্ষতিপূরণ পাচ্ছি তা তিনগুণ করা উচিত।’
তিনি বলেন, সরকার যে দামে ফসল কিনে নেয়, সেই দামেই ফসল বিক্রি করতে তিনি বাধ্য। অন্তত তার আত্মহত্যার চেষ্টাটা ব্যর্থ হয়েছে, সবাই তার মতো ভাগ্যবান নয়। ভারতের অপরাধ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসেবে, গত ২০ বছরে দেশটিতে প্রায় ৩ লাখ কৃষক আত্মহত্যা করেছেন।
অসময়ে বৃষ্টি এবং শিলাবৃষ্টির কারণে গত কয়েক সপ্তাহে ভারতের বিভিন্ন অংশে অনেক ফসল ধ্বংস হয়েছে, দারিদ্র্যপীড়িত কৃষকরা পড়েছেন আরো হতাশায় এবং তাদের অনেকে নিজেকে ঠেলে দিয়েছেন মৃত্যুর মুখে।
রাজ্য সরকারের হিসাবে, এ বছরের প্রথম চার মাসেই মহারাষ্ট্রের ২৫৭ জন কৃষক নিজেদের জীবন কেড়ে নিয়েছেন। মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে এর পরের গ্রামটির বাসিন্দা, জানাবারি ঘোদাম সেই ব্যথা এখন টের পাচ্ছেন। তার স্বামী রমেশ ঘোদাম দুমাস আগে আত্মহত্যা করেছেন। রমেশ ঘোদাম বলছেন, অর্থচিন্তাই স্বামীকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। তার প্রায় ২ লাখ ৩৩ হাজার (৩,০০০ ডলার) টাকার ঋণ ছিল এবং তার ফসলও নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
তিনি বলেন, এখন অন্যের জমিতে দিনমজুরের কাজ করেই তাকে জীবন অতিবাহিত করতে হচ্ছে।
রমেষ ঘোদাম বলেন, ‘আমার জীবনে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। জমির ফসল ধ্বংস হয়ে গেছে, এখন সেটি একটি শূন্য জমি এবং এ মৌসুমেও নতুন করে চাষ করা যাবে না। বাড়িতে রান্না করার মতো খাবার নেই বললেই চলে। ছেলে-মেয়েকে নিয়ে একা হয়ে পড়েছি আমি।’
ঘোদামের ঘরটি অন্ধকার। গত দুমাস যাবত বিদ্যুৎ বিল দিতে না পারায় সংযোগও কেটে দেয়া হয়েছে। আর ২০ বছর বয়সী কন্যাসন্তানের বিয়ে দেয়ার মতোও কোনো টাকা তার কাছে নেই।
‘তার বিয়ের জন্য আমাদের কিছুই করার নেই। ওর জন্য আমার কিছুই নেই’, বলেন রমেষ ঘোদাম। পঞ্চলেনভারের গ্রামে একদল কৃষক ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করছিলেন। এখানকার প্রধান কৃষিপণ্য তুলা। কিন্তু বিশ্ববাজারে তুলার দাম কমে যাওয়া এবং চীনের তুলার চাহিদার কারণে তাদের আশা খুব ক্ষীণ।
সরকার এবং মিল মালিকদের বেঁধে দেয়া দামের বাইরে তাদের যাবারও উপায় নেই। ওই দলের একজন কৃষক, ভাস্কর দেওভালভার ব্যাখ্যা করে বলছিলেন যে, ুরো গ্রামটি নির্ভর করে কৃষিকাজের ওপরে। অধিকাংশ কৃষকই স্থানীয় মহাজনদের কাছে দেনাগ্রস্ত, যারা ২৫ শতাংশ সুদে ঋণ দিয়ে থাকে। তার স্বপ্ন এখন কলেজপড়ুয়া ছোট ছেলেকে নিয়ে। ভাস্কর দেওভালভার প্রার্থনা করেন, তার পুত্র যেন পড়ালেখা করে শহরে একটি চাকরি পায়। তিনি বলেন, ‘কৃষিকাজ করে কোনো ভবিষ্যৎ নেই। অনেক বিনিয়োগ করেও কোনো লাভ নেই এখানে।’ ভাস্কর দেওভালভার বলেন, ‘জমিতে কোনো উৎপাদন নেই। অপরদিকে ব্যাংক এবং মহাজনদের চাপের মুখে কৃষকদের জন্য নিজেদের জীবন কেড়ে নেয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না।’
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত চলায় এমবাপ্পেকে বিজ্ঞাপন থেকে সরাল রিয়াল
আর্থিক দ্বন্দ্বের মধ্যে পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর একেরবিস্তারিত পড়ুন
মিয়ানমারে বন্যায় মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে ২২৬
ঘূর্ণিঝড় ইয়াগির প্রভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণেবিস্তারিত পড়ুন
ইসরাইলি হামলায় আরও ৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত
গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বাহিনীর তান্ডবে প্রাণ গেছে আরও ৩৮বিস্তারিত পড়ুন