আবারও ভেঙে পড়েছে নির্মাণাধীন দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতুর একটি গার্ডার। এতে একজন প্রকৌশলী আহত হয়েছেন। সেতুর পিলারের উপর স্থাপনের সময় গেন্ট্রি ক্রেন (স্থানান্তর যন্ত্র) থেকে স্লিপ করে ১৫৭ টন ওজনের গার্ডারটি ভেঙে পড়েছে বলে দাবি করেছে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার বিকালে সেতুর নির্মাণস্থল থেকে ২২ নম্বর গার্ডারটি মূল সেতুর পিলারের উপর স্থাপনের সময় সেটি উপর থেকে নদীর চরে পড়ে গিয়ে চার টুকরো হয়ে যায়। ঘটনার সময় ওই গার্ডারের উপরে থাকা নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী সাইফুল ইসলামও নিচে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন। পরে তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

জানা গেছে, নির্মাণাধীন সেতুটিতে এখন পর্যন্ত তিনটি গার্ডার স্থাপন করা হয়েছে। গত ১৫ নভেম্বর চতুর্থ গার্ডারটি (১৭ নম্বর) স্থাপনের জন্য মূল সেতুতে নিয়ে যাওয়ার সময় ক্রেনে তুলতেই সেটি নিচে পড়ে গিয়ে ভেঙে যায়। প্রায় এক মাসের ব্যবধানে ১৭ ডিসেম্বর আরও একটি গার্ডার ভেঙে পড়লো।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার আগে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ভেঙ্গে পড়া গার্ডারটি ভেঙ্গে চার টুকরো হয়ে নিচে পড়ে রয়েছে। ভাঙ্গা গার্ডারটি যাতে উৎসুক লোকজন দেখতে না পারে সেজন্য সেতু নির্মাণ এলাকায় সাধারণ লোকজনকে খুব একটা ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। গণমাধ্যমকর্মীদেরও সেখানে না যাওয়ার চেষ্টা তদববির চালাচ্ছেন এলজিইডি ও নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন।

নির্মাণাধীন সেতু এলাকার অনেকে অভিযোগ করেন, শুরু থেকেই সেতুর কাজ চলছে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে। মূলত নির্মাণ ত্রুটির কারণেই বারবার ভেঙে পড়ছে গার্ডার।

বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসা লালমনিরহাট এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আল আমিন খান নিম্নমানের কাজের কথা অস্বীকার করে বলেন, ক্রেন স্লিপ করেই দুুর্ঘটনাটি ঘটেছে।

এদিকে, একই কথা জানিয়েছেন দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান নাভানা কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার সাধন কুমার সাহা।

কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) সূত্র মতে, স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে বৃহত্তর রংপুর-দিনাজপুরে গ্রামীণ যোগাযোগ ও অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প হিসেবে একনেকে অনুমোদন পাওয়ার পর দরপত্রের মাধ্যমে যৌথভাবে সেতুটি নির্মাণের দায়িত্ব পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ডাবি¬উএমসিজি-নাভানা গ্রুপ। আর ২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিতীয় তিস্তা সেতুর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। ১২১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ফুটপাতসহ সাড়ে ৯ মিটার প্রস্থের সেতুটি এলজিইডির অধীনে নির্মাণ করা হচ্ছে। দেশে এলজিইডির অধীনে নির্মিত এটি দ্বিতীয় বৃহত্তম সেতু। লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ ও রংপুরের গঙ্গাচড়ার সঙ্গে সরাসারি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের অংশ হিসেবে নির্মিত হচ্ছে দ্বিতীয় সড়ক সেতুটি।