আমরা ভিটা ছেড়ে কিছুতেই যাবো না!
লোভে পড়ে ভারতে যেতে চেয়েছিলাম। ভালো থাকার আশায় নতুন স্বপ্ন দেখেছিলাম। কিন্তু সেটা শুধু স্বপ্নই। আজ আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। তাই চৌদ্দ পুরুষের ভিটা মাটি ছেড়ে কিছুতেই অন্য দেশে যাবো না। বাপ-দাদার সমাধির পাশেই যেন হয় আমার শেষ ঠিকানা। কান্নাজরিত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন দাশিয়ারছড়ার বাসিন্দা কৃষ্ণকান্ত বর্মণ(৬৫)। একই অনুভুতি ওই উপজেলার আরও ৫৫ নাগরিকের।
তারা জানান, ভারতের ট্রাভেল পাসের মাধ্যমে তারা ওই দেশে থাকার সুযোগ পেয়েছেন। তাই তারা কয়েকজন মিলে গত মাসে ওই দেশে বেড়াতেও গিয়েছিলেন। কিন্তু তারা সেখানে গিয়ে দেখেন ভালো থাকার কোনো উপায়ই নেই তাদের। নানা সমস্যায় জর্জরিত ওখানকার পরিবেশ। তাই তারা ভারতে না গিয়ে দেশেই থাকতে চান।
এ কারণে গত রোববার সন্ধ্যায় দাশিয়ারছড়ার ১৩ পরিবারের এসব সদস্যরা কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবর এবং জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাই কমিশনার বরাবর একটি লিখিত আবেদন করেন। এ সময় তারা ভারতের ট্রাভেল পাশ ফেরত দিয়ে দেন।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমিন বলেন, ‘১৩টি পরিবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে থেকে যেতে চান। তাদের আবেদন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। তবে এটি এখন দুই দেশের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তের বিষয়।’
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সিদ্ধান্ত পরিবর্তনকারী নারায়ণ বর্মণের পরিবারের সদস্য চারজন, রামপ্রসাদ বর্মণের চার, বাবুল বর্মণের চার, শশীভূষণ বর্মণের তিন, গজেন্দ্র বর্মণের ছয়, কৃষ্ণকান্ত বর্মণের পাঁচ, মণীন্দ্র বর্মণে চার, মোহন বর্মণের তিন, মিলন বর্মণের পাঁচ, দধিরাম বর্মণের পাঁচ, কামনী বর্মণের চার, আব্দুল্লাহ রহমানের পাঁচ এবং বদিয়ার রহমানের পরিবারের সদস্য তিনজন।
ভারতে যেতে না চাওয়ার কারণ সম্পর্কে কামিনী বর্মণ (৪৩) বলেন, ‘গত মাসে ট্রাভেল পাস পেয়ে ৩৯ জন এক সঙ্গে ভারতে বেড়াতে গিয়ে দেখি, আমাদের জন্য দিনহাটার কৃষিমেলার পাশে আবাসন গড়ে তোলা হচ্ছে। ১২ ফুট বাই ১৪ ফুট করে একটি ঘর পরিবার প্রতি বরাদ্দ দেওয়া হবে। এলোমেলো পরিবেশে মানবেতর জীবনযাপন করতে হবে। কাজকর্মের কোনো নিশ্চয়তা নেই। এখানে জমিজমা বিক্রি করে ভারতে কোনো জমি পাবো কিনা তারও নিশ্চিয়তা নেই। তাই আমরা সবাই কোচবিহার জেলার ডিএমের সঙ্গে দেখা করি। তিনি জানান, জমিজমা বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়ে ভারত সরকারের এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেই।’
মিলন চন্দ্র নামে আরেকজন বলেন,‘আগে শুনেছিলাম, ভারত সরকার প্রত্যেক পরিবারকে একটি করে ফ্ল্যাটবাড়ি, দুই বছরের শুকনো খাবার, গবাদিপশুর খাবার, পরিবার প্রতি পাঁচ লাখ টাকাসহ আরও অনেক কিছু দেবে। কিন্তু বাস্তবে এসবের কোনো অস্তিত্ব নেই। তাছাড়া ওই দেশের স্থানীয়রা জানান, ভারতে গিয়ে তেমন কোনো লাভ হবে না। কারণ সারাজীবন আমাদেরকে নাকি ভাটিরদেশ হিসেবে গণ্য করা হবে।’
অশীতিপর দধিরাম বর্মণ বলেন,‘বাপ-দাদার ভিটা এটা। জন্ম হইছে এই মাটিত। তাই এই মাটি ছেড়ে যেতে চাই না।’ ওই এলাকার শ্রীমতী দেবযানীর (৭০) এক চোখ অন্ধ। অন্য চোখেও ভালো দেখেন না। তার সাফ কথা, এদেশেই থাকতে চান তিনি।
সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সুবর্ণা। সে জানায়, দেশকে খুব ভালোবাসি। বন্ধুদের ছেড়ে যেতে মন চায় না। পরিবারের ইচ্ছায় ভারতে যাবার জন্য নিবন্ধন করা হয়েছিল। এখন পরিবারের সবার মত পাল্টে গেছে। সবাই এ দেশে থাকতে চায়। এ খবর শুনে আমার খুব ভালো লাগছে। আমার একটাই চাওয়া, আর তা হল বাংলাদেশের নাগরিকত্ব।
প্রসঙ্গত, সদ্যবিলুপ্ত ছিটমহলগুলোর মধ্যে ১২টি কুড়িগ্রাম জেলায়। এখানকার ৩১৭ জন ভারতে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। বাংলাদেশের ভিতরের মোট ১১১টি ছিটমহলের মধ্যে ভারত যেতে নিবন্ধন করেন ৯৭৯ জন। অপরদিকে ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশি ৫১টি ছিটমহলের প্রায় ১৪ হাজার মানুষের কেউ বাংলাদেশে আসতে আগ্রহ দেখাননি।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ডিএমপি: ৫ আগস্ট পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. সারোয়ার জাহানবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
নারায়নগঞ্জে কোটা আন্দোলনকারীর উপর আক্রমন
নিজস্ব প্রতিবেদক : নারায়নগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ এলাকায় কোটা আন্দোলনকারী সংগঠকবিস্তারিত পড়ুন