আমাদের বাংলায় আরেক পরিমলের উত্থান! নাম তার শ্রীবাস কুমার মণ্ডল।
রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুলের বসুন্ধরা শাখার ছাত্রী ধর্ষণের মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া শিক্ষক পরিমল জয়ধরের মতো আরেকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার নাম শ্রীবাস কুমার মণ্ডল।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, পরীক্ষায় বেশি নম্বর দেয়া ও ফেল করানোর ভয় দেখিয়ে ছাত্রীদের সঙ্গে অনৈতিক কার্যক্রমে লিপ্ত হতেন। এভাবে এক ছাত্রীর সঙ্গে তিন বছর ধরে অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এসএসপি পাস করার পর ওই ছাত্রী থানায় এ সংক্রান্ত একটি জিডি করেছেন।
শ্রীবাস কুমার মণ্ডল গোপালগঞ্জের ‘শেখ হাসিনা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে’র গণিতের শিক্ষক ছিলেন। এই স্কুলেই তিনি এসব অনৈতিক কাজ করেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর তাকে শরীয়তপুরের একটি স্কুলে বদলি করা হয়েছে।
এছাড়া ওই স্কুলের অভিভাবকদের লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক তদন্ত করে এসব ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন। অভিযুক্ত শিক্ষকও ঘটনার সত্যতা লিখিতভাবে স্বীকার করেছেন।
জানা গেছে, সম্প্রতি স্কুলের অভিভাবকরা স্কুলের সভাপতি ও গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগে বলা হয়েছে, আমরা আমাদের মেয়েদের নিয়ে খুবই চিন্তিত। কারণ স্কুলের শিক্ষকরা আমাদের মেয়েদের লাঞ্ছিত করছেন। স্কুলের গণিত শিক্ষক শ্রীবাস কুমার মণ্ডল পরীক্ষায় বেশি নম্বর দেয়া এবং ফেল করানোর ভয় দেখিয়ে ছাত্রীদের সঙ্গে অসামাজিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন।
এমনকি শারীরিক সম্পর্ক করতেও বাধ্য করেছেন। স্কুলের অষ্টম ও নবম শ্রেণির একাধিক ছাত্রীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলেন শ্রীবাস। স্কুলের তিনতলার ল্যাবে নিয়ে তিনি ছাত্রীদের যৌন নির্যাতন করতেন। চক্ষুলজ্জা ও কলঙ্কের ভয়ে ছাত্রীরা তার অত্যাচারের বিষয়ে মুখ খুলত না।
সম্প্রতি তার অসামাজিক কার্যকলাপ এতটাই বাড়ে যে ছাত্রীরা স্কুলে যেতে ভয় পেত। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন। তদন্ত প্রতিবেদনটি গত মাসে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তদন্তকালে স্কুলের নবম শ্রেণির এক ছাত্রী অভিযোগ করে বলেছেন, ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই শ্রীবাসকে স্কুলের উপরের শ্রেণির ছাত্রীদের জড়িয়ে ধরে কিস করতে দেখেছেন। অনেক ছাত্রীকে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে বাধ্য করেছেন। কেউ যদি তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করতে অস্বীকার করেন তাকে ফেল করিয়ে দেয়ার ভয় দেখাতেন। স্কুলের মধ্যেই এসব অনৈতিক কার্যক্রম করতেন। স্কুলের ল্যাবের মধ্যেই এক ছাত্রীর সঙ্গে এমন কাজ করতে দেখেছেন ওই ছাত্রী। নির্যাতিত ছাত্রী বর্তমানে অন্য একটি কলেজে পড়েন। শ্রীবাসের ভয়ে কোনো ছাত্রী প্রতিবাদ করতেন না। অন্য শিক্ষকরা জানলেও তারা প্রতিবাদ করেননি।
অপর এক ছাত্রীর অভিযোগ, শ্রীবাস অনেক ছাত্রীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করে তাদের পড়াশোনা ধ্বংস করেছেন। শ্রীবাসের যৌন নির্যাতনের ভয়ে বর্তমানে আতঙ্কে থাকতেন অনেক ছাত্রী। এমনকি স্কুলে যেতেও ভয় পেতেন।
তদন্তকালে শ্রীবাস ছাত্রীদের যৌন নির্যাতনের ঘটনা লিখিতভাবে স্বীকার করে বলেছেন, ‘একজন শিক্ষক হিসেবে তিনি যা করেছেন তা সম্পূর্ণ অনৈতিক।’
এর আগে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে ওই স্কুলের সাবেক এক ছাত্রী গোপালগঞ্জ জেলার সদর থানায় গত ২২ সেপ্টেম্বর একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে।
জিডিতে বলা হয়, অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় তাকে বাসায় প্রাইভেট পড়াতেন শিক্ষক শ্রীবাস কুমার মণ্ডল। ২০১৪ সালের ২২ অক্টোবর সন্ধায় পড়ানো শেষে তাকে জড়িয়ে ধরে কিস করেন শ্রীবাস। এসময় তিনি জোর করে ছবিও তোলেন। যৌন নির্যাতনের কথা কাউকে বললে ওই ছবি ফেসবুকে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেন। এরপর হুমকি ও ভয় দেখিয়ে অসংখ্যবার যৌন নির্যাতন করেন।
নবম ও দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় স্কুলের মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমে ক্লাস শেষে জড়িয়ে ধরে কিস করতেন। গত বছরের ৮ ডিসেম্বর স্কুলের শিক্ষক মিলনায়তন খালি পেয়ে ওই ছাত্রীকে ডেকে নিয়ে জড়িয়ে ধরেন শিক্ষক শ্রীবাস। একপর্যায়ে দৌড়ে সেখান থেকে ওই ছাত্রী বেরিয়ে আসেন। এরপর ঘটনা কাউকে বললে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ দিতে দেবেন না বলে ভয়ভীতি দেখাতে থাকেন ওই শিক্ষক। হত্যারও হুমকি দেয়া হয় ছাত্রীকে। ভয়ে ওই ছাত্রী কাউকে তা জানায়নি।
এসএসসি পাস করার পরে নির্যাতিত ছাত্রী থানায় জিডি করেন। জিডিতে আরও বলা হয়েছে, শ্রীবাস কুমার মণ্ডল আরও অনেক ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন করেছেন। শ্রীবাসের মতো আরও শিক্ষক ছাত্রীদের যৌন নির্যাতন করছেন।
ওই ছাত্রীর মা বলেন, এ ব্যাপারে আমার অভিযোগ থানায় জিডিতে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি (শ্রীবাস কুমার মণ্ডল) একজন খারাপ শিক্ষক। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ছাত্রীদের নানাভাবে নির্যাতন করেন।
এ প্রসঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে গত ২ নভেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরকে (মাউশি) একটি চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠিতে শ্রীবাসকে দুর্গম অঞ্চলে বদলি করে সাময়িক বরখাস্তপূর্বক ব্যবস্থা নিয়ে মন্ত্রণালয়কে জানাতে বলা হয়।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শিক্ষক শ্রীবাস কুমার মণ্ডলের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের জন্য বারবার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে তার মোবাইল ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনা সত্য। বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার পর আমরা ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। জেলা প্রশাসকের তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে শরীয়তপুরের একটি স্কুলে বদলি করা হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে তিনি এসব অনৈতিক কাজ করেন, এ ব্যাপারে আপনি আগে জানতেন না? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান শিক্ষক বলেন, না আমরা আগে তা জানতাম না। পরে অভিভাবকদের অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা জেনেছি।
কথা বলার সময় স্কুলের প্রধান শিক্ষক বারবার বলছিলেন, অনুরোধ আমার নামটা পত্রিকায় লিখবেন না।
প্রসঙ্গত, রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুলের বসুন্ধরা শাখার বাংলার শিক্ষক পরিমল জয়ধর অসংখ্য ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করেছিলেন। আপত্তিকর অবস্থায় ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইলের চেষ্টা করেছেন। একপর্যায়ে এক ছাত্রী শিক্ষকের এমন নিপীড়ন সহ্য করতে না পেরে প্রথমে সহপাঠী পরে পরিবারকে জানায়। পরে অভিযুক্ত পরিমলের শাস্তির দাবিতে ছাত্রী ও অভিভাবকরা একজোট হয়ে আন্দোলন করেন। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ সালের ৬ অক্টোবর গোয়েন্দা পুলিশ পরিমলকে গ্রেফতার করে। ২০১৫ সালের ২৫ নভেম্বর পরিমলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত চলায় এমবাপ্পেকে বিজ্ঞাপন থেকে সরাল রিয়াল
আর্থিক দ্বন্দ্বের মধ্যে পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর একেরবিস্তারিত পড়ুন
ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর পদ হারালেন গাজীপুর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি
ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে গাজীপুর জেলা ছাত্রদলেরবিস্তারিত পড়ুন
ঢাকা উত্তর সিটির সাবেক মেয়র আতিকুল গ্রেপ্তার
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামকে রাজধানীরবিস্তারিত পড়ুন