`আমার বাবাকে মেরো না, বাবা আর মদ খাবে না’

সন্ধ্যা থেকে ভরপেট মদ গিলে বাপের ইচ্ছে হয়েছিল, মেয়েকে পুজো দেখাতে নিয়ে যাবে। সঙ্গে দুই বন্ধুকে নিয়ে বেরিয়েও পড়ে। বাপ তো বাপ, মদ খেয়ে তার সঙ্গীসাথীদের অবস্থাও তখন একই। কারওরই সোজা পা পড়ছে না মাটিতে।
রবিবার দীপাবলির রাতে ঘড়ির কাঁটা তখন সাড়ে ১১টা ছুঁই ছুঁই। হাবরার রাস্তায় রাস্তায় মানুষের ঢল। থানার কাছেই তবলাপট্টির গলি। সেখানেই তিন মূর্তিমান টলোমলো যুবকের সঙ্গে দেখা গেল বছর সাতেকের ছোট্ট মেয়েটিকে।
এক যুবকের পরনে আবার নতুন গোলাপি রঙের পাঞ্জাবি-পাজামা। সাজগোজে উৎসবের মেজাজটি গুছিয়ে বাঁধা। ফুর্তি উদযাপনে উঁচু গলায় দেদার হল্লাও করছে তারা। কিন্তু কয়েক পা হাঁটতে না হাঁটতেই হোঁচট খাচ্ছে। কেউ আবার নেশার ঘোরে সামনে ঝুঁকে পড়েছে। গোলাপি পাঞ্জাবি থেকে থেকে শক্ত করে মেয়েটির হাত চেপে ধরার চেষ্টা করছে। ছোট্ট মেয়েটির চোখেমুখে তখন ভয়, অস্বস্তি, অসহায়তা।
কালীপুজোর রাতে ভিড়ের বেশির ভাগটাই এমন দৃশ্যের পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিল। কিন্তু চোখ আটকায় দুই মহিলার। তাঁরা দেখেন, তিন যুবকের লাল টকটকে চোখে, চেহারায় বিধ্বস্ত দশা, সকলে পড়ে আছে রাস্তার ধারে। কেউ কেউ ওঠার চেষ্টা করছে, আবার পড়ে যাচ্ছে। কারও সেই শক্তিও নেই। একজন বমি করার চেষ্টা করছে। সব মিলিয়ে ভজকট দশা। এরই মাঝে ছলছল চোখে দাঁড়িয়ে এক শিশু।
মহিলাদের মনে হয়, এই অবস্থায় ওই যুবকেরা মেয়েটিকে সামলাবে কী করে? মেয়ে হারিয়ে যেতে পারে। ভয় পেতে পারে। অন্য কেউ হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলেও তো কিছু করতে পারবে না ওই তিন যুবক। তা ছাড়া, দুর্ঘটনার আশঙ্কা তো আছেই।
এই পরিস্থিতিতে কী কী করবেন ভাবতে ভাবতে এক মহিলা আইসি মৈনাক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করে বিষয়টি জানান। ঘটনাস্থল থানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে। আইসি ওই মহিলাকে পরামর্শ দেন, কোনও ভাবে কথাবার্তা বলে ওই যুবকদের ওখানেই আটকে রাখতে। ফোর্স পাঠানো হচ্ছে।
মিনিট কয়েকের মধ্যে ফোর্স পৌঁছেও যায়। তিন যুবক ও শিশুটিকে পুলিশের হাতে ছেড়ে দুই মহিলা চলে যান। পুলিশ চারজনকে আনে থানায়।
জানা যায়, পাঞ্জাবি লড়িয়ে যে যুবক হড়কাচ্ছিল রাস্তায়, সে ওই মেয়েটির বাবা। শখ করে মেয়েকে ঠাকুর দেখাতে নিয়ে বেরিয়েছিল। কিন্তু নিজের আরও কিছু কিছু বদ শখের জন্যই এই বিপত্তি।
তিনজনকেই ‘পুলিশ কাকু’রা যখন দেদার ঝাড় দিচ্ছেন, তখন মেয়েটিই বদলে দেয় পরিস্থিতি। কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘‘আমার বাবাকে মেরো না। বাবা আর মদ খাবে না। ওকে ছেড়ে দাও।’’ মেয়ের কথা শুনে বাপেরও তখন চোখ ছলছল। পুলিশের ধাতানি খেয়ে ততক্ষণে নেশাও কাটার মুখে। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে সে। ওই অবস্থাতেই বলে, ‘‘মেয়েকে ছুঁয়ে কথা দিচ্ছি, ওই সব ছাইপাঁশ আর ছোঁব না।’’ পরিস্থিতি ক্রমশ আবেগঘন হয়ে উঠলেও পুলিশ তিন যুবককে গ্রেফতার করে। মেয়েটিকে তুলে দেওয়া হয় চাইল্ড লাইনের হাতে।
পরে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে তাকে। সোমবার তিন যুবকও থানা থেকে জামিন পেয়েছে। থানা থেকে বেরনোর মুখে তখন মেয়ের বাপের ভাঁজ খাওয়া চেহারায় ক্লান্তির ছাপ। লজ্জা আর অনুশোচনা মিশিয়ে মুখখানা যেন আরও ম্রিয়মান। তারই মধ্যে উঠেছিল গত রাতের ঘটনার কথা। ‘‘ও সব কথা তুলবেন না। মেয়েকে ছুঁয়ে কথা দিয়েছি, মদ আর ছোঁব না।’’
হেমন্তের সকালের রোদ খেলে যায় বাপের মুখে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে স্বৈরাচারী শাসক বললেন ট্রাম্প
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির দাবি ছিল, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পবিস্তারিত পড়ুন

ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত চলায় এমবাপ্পেকে বিজ্ঞাপন থেকে সরাল রিয়াল
আর্থিক দ্বন্দ্বের মধ্যে পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর একেরবিস্তারিত পড়ুন

মিয়ানমারে বন্যায় মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে ২২৬
ঘূর্ণিঝড় ইয়াগির প্রভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণেবিস্তারিত পড়ুন