আমার বাবা ব্যাংক ডাকাত,তবে…
মেয়ের কাছে বাবা সব সময়ই দারুণ এক ব্যক্তি। কিন্তু সব সময় যে সেই বিশ্বাস অক্ষুণ্ণ থাকে তা নয়। তেমনই এক পরিস্থিতির কথা বর্ণনা করেন এক নারী। মলি ব্রডাক যখন ১৩ বছর বয়সের কিশোরী, তখন একদিন হঠাৎ তার বাবার ছবি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। সে সময় তার পরিচয় প্রকাশিত হয় যে, তিনি একজন ভয়ংকর ব্যাংক ডাকাত। আর সে ঘটনারই বর্ণনা দিয়েছেন তার কন্যা। এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছে গার্ডিয়ান।
সান্ধ্য পত্রিকার সংবাদে ব্রেকিং হিসেবেই খবরটি পাওয়া গেল। সুপার মারিও ব্রাদার্স ডাকাতদের ধরা হয়েছে। সংবাদপত্রের পাঠকেরা অত্যন্ত আনন্দিত। তাকে ধরা হয়েছে- খেলা শেষ। ১৩ বছরের মেয়েটির জন্য সেটিই ছিল অবাক হওয়া শুরু। কারণ ছবিতে ডাকাতের স্থানে তার বাবাকেই দেখা যাচ্ছিল। তার বাবার মুখে খেলে যাওয়া দুঃখিত ভাবটির দিকে সে অপলক তাকিয়ে ছিল।
খুব সামান্য মানুষই একজন অপরাধীর সন্তানকে নিয়ে চিন্তা করেন। একজন ব্যাংক ডাকাত মানে বাজে মানুষ- এমনটাই সবার ধারণা। যদিও সত্যিটা অনেক সময়েই অতটা সহজ নয়।
বর্তমানে ৩৬ বছর বয়সী মলি তার সে সময়টি পার করে এসেছেন। তিনি বলছিলেন সেই মুহূর্তটির কথা, যখন তিনি সত্যের মুখোমুখি হয়েছিলেন। তার বাবাকে ডাকাত হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘আমার বাবার সবকিছু খারাপ ছিল না। তিনি আমাদের ভালোবাসতেন। তিনি আমাদের যত্ন করতেন। তিনি শুধু একজন খারাপ মানুষ ছিলেন না।’
১৩ বছর বয়সে মলি তার বাবার চোখ দিয়েই বিশ্ব দেখতেন। এ বিষয়টি তার বয়সের জন্য খুবই বিপজ্জনক। আর সে সময়েই তার বাবাকে জেলে যেতে হয়। বেশ কয়েকটা ব্যাংক ডাকাতির কারণে তার বাবার জেল হয়।
স্কুলে অন্য শিশুরা তার দিকে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকত। তারা জানত, মলি একজন ব্যাংক ডাকাতের কন্যা। তারা যে দৃষ্টিতে তাকে দেখতে শুরু করে তাও সে জানত। তার বাবার ১০ বছরের জেল হওয়ায় তার ভবিষ্যৎ অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায়। তার স্কুলে পড়া হবে না, এ বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত।
তবে মলিকে স্কুল থেকে ঝরে পড়তে হয়নি। তিনি জানান, তার খুব একটা বন্ধু-বান্ধব ছিল না। আর তিনি সেসব নিয়ে মাথা ঘামানোও বাদ দেন। বন্ধু-বান্ধব কিংবা সহপাঠীদের সময় দেওয়ার বদলে তিনি লাইব্রেরিতে বই পড়ায় মনোযোগী হয়ে ওঠেন।
পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার কারণে তিনি স্কুলে ভালো রেজাল্ট করেন। পরবর্তীতে তার পড়াশোনা ত্যাগ করার সম্ভাবনাও দূর হয়ে যায়। আর এ কারণে তার পরবর্তী জীবনেও নানা সমস্যা থেকে দূরে থাকা সহজ হয়।
মলি আত্মজীবনী এ সপ্তাহে প্রকাশিত হয়েছে। তাতে তিনি লিখেছেন, ‘আমি জানতাম সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি স্বাভাবিক হয়ে আসবে আমি যদি কোনো ভুল না করি কিংবা নিজেকে অপরাধীর খাতায় না লেখাই। সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আমি নিরব থাকাকেই অগ্রাধীকার দেই।
মলি জানিয়েছেন, বিষয়টি বাস্তবে অতটা সহজ ছিল না। নিজে ভালো থাকার অভিনয় করলেও তিনি নানা সমস্যায় নিপতিত হয়েছিলেন। তার বাবার সমস্যার কারণে তার পুরো পরিবারই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।
তবে প্রতিকূলতার মাঝেও তিনি কখনোই হার মানেননি। এগিয়ে গিয়েছেন। সব সমস্যাকে ধৈর্য ধরে সমাধান করেছেন। বর্তমানে মলি নিজেকে একজন কবি ও প্রফেসর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। মলি যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া রাজ্যের কেনসেও ইউনিভার্সিটির প্রফেসর।
ছোটবেলায় তার জীবনের ওপর দিয়ে যে ঝড়-ঝাপ্টা বয়ে গিয়েছে, তার বর্ণনা করেছেন মলি তার আত্মজীবনীতে। তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বাবার আর যোগাযোগ নেই। তবে তার স্মৃতিগুলো রয়ে গেছে উজ্জ্বল হয়ে।
মলি ব্রড্যাকের সেই আত্মজীবনীমূলক বইয়ের নাম ‘ব্যান্ডিট : এ ডটারস মেমোইর।’ বইটি প্রকাশ করেছে আইকন বুকস। বইটির মূল্য যুক্তরাজ্যে প্রায় ১৫ পাউন্ড।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
আহা চিকুনগুনিয়া !
ঈদের দিন ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে মেঝেতে পা দিয়ে আমিবিস্তারিত পড়ুন
‘দৃষ্টিশক্তি থাকা, কিন্তু জীবনে লক্ষ্য না থাকা অন্ধত্বের চেয়েও খারাপ’
চক্ষু, কর্ন, জিহবা, নাসিকা, ত্বক – মানুষের এই পাঁচটি ইন্দ্রিয়েরবিস্তারিত পড়ুন
ধর্ষিতা মেয়েটির গল্প
পারিনি সেদিন নিজেকে শোষকদের হাত থেকে রক্ষা করতে, পারিনি সেদিনবিস্তারিত পড়ুন