‘আমার স্বামীকে বাঁচার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে’
প্রায় এক বছর আগে ক্যান্সারের চিকিৎসা করার সময় হঠাৎ করেই মৃত্যুমুখে পতিত হন জুলিয়েট রোসেনফিল্ডের স্বামী অ্যান্ড্রু। কিন্তু তার মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেননি তিনি। কিন্তু কী কারণে তার হঠাৎ করে মৃত্যু হলো, তা এখনও তিনি অনুসন্ধান করছেন। সম্প্রতি গার্ডিয়ানে এক লেখায় তিনি তার সেই করুণ কাহিনী তুলে ধরেছেন। তার বয়ানে তুলে ধরা হলো সেই কাহিনী।
১৫ মাস আগে আমি জন এফ কেনেডি বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম। সে সময় আমি অনাকাঙ্ক্ষিতভাবেই একা ছিলাম। আমি দুটি টিকিট কিনেছিলাম। কিন্তু বিমানটি যখন আমাকে নিয়ে নিউফাউন্ডল্যান্ডের আকাশ দিয়ে উড়ছিল তখন আমার স্বামী ছিল হাজার ফুট নিচে। গত রাতেই সে বলেছিল- আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি। মাত্র একদিন আগের কথা। এরপর তার পালস চলে গেল। শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ হয়ে গেল। ঠাণ্ডা এক শীতলতা ভর করল… হাজার ফুট নিচে।
দুশ্চরিত্র, দখলদার ক্যান্সার তার জীবন কেড়ে নিয়েছে, যেখানে ক্যান্সার চিকিৎসক, বিশেষজ্ঞ ও অন্যান্য ব্যক্তিরা সবাই মিলে আমার স্বামীকে মেরে ফেলেছে। এ ঘটনা ঘটেছে ২০১৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কানেক্টিকাট রাজ্যের ইয়েলের এক হাসপাতালে সে মারা যায়। একটি ড্রাগ ট্রায়ালের সময় রক্তের সমস্যায় সে মারা যায়। সে বিশ্বাস করেছিল এর মাধ্যমে তার আরোগ্য হবে। আমি সন্দেহ করেছিলাম এটি তার মৃত্যু ডেকে আনতে পারে।
তবে তার এ মৃত্যুর ঘটনার জন্য আমাদের মাঝে কেউই প্রস্তুত ছিলাম না। আমরা কখনোই বিশ্বাস করিনি যে, এমন ঘটনা ঘটতে পারে। ক্যান্সারের ক্ষেত্রে আমাদের দুর্বলতা ছিল এটা যে আমরা বেঁচে থাকার আশা করেছিলাম। আমরা কিছুই বলিনি। চিকিৎসার পাশাপাশি শুধু স্বাভাবিক জীবনযাপন করেছি, কাজ করেছি, একে অপরকে ভালোবেসেছি এবং বেঁচে থাকার আশা করেছি।
আমরা যদি জানতাম আমাদের কত কম সময় আছে, তাহলে আমরা ভিন্নভাবে বাঁচতাম। আমি খুবই ভাগ্যবান যে তার চিকিৎসা শুরুর পর ১৪ মাস সময় পেয়েছিলাম। এ সময়ের অধিকাংশই সে স্বাভাবিক ছিল।
সে একজন স্বাভাবিক সুখী মানুষ ছিল। তার স্বাস্থ্য ছিল ভালো। সে কখনোই ধূমপান করেনি। স্বাভাবিক ফিট শরীর ছিল তার। কিন্তু হঠাৎ করেই তার ফুসফুসের ক্যান্সারের খবর পাওয়া গেল। চিকিৎসকের কাছে এ কথা শুনতে পেরে আমরা খুবই অবাক হয়েছিলাম।
আমরা যদি তার ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার খবর জানার সঙ্গে সঙ্গে তার মৃত্যুর বিষয়টি অনুমান করতে পারতাম তাহলে বহু বিষয় নতুন করে চিন্তাভাবনা করতে পারতাম। কিন্তু তার মৃত্যুতে হঠাৎ করেই সবকিছু শেষ হয়ে গেল। সে যখন বেঁচে ছিল তখন আমি তাকে নানা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা থেকে রক্ষা করেছিলাম। কিন্তু এখন আমি নিজেই সম্পূর্ণ একা হয়ে গেলাম।
ক্যান্সার ধরা পড়ার পর তাকে চিকিৎসক কেমো ও রেডিওথেরাপি দিতে বলেন। এগুলো দেওয়ার পরেও তার ক্যান্সার সম্পূর্ণ আরোগ্যলাভ করেনি। তার পরেও আমরা অত্যন্ত আশাবাদী ছিলাম। এ সময় খবর পাওয়া যায় যুক্তরাষ্ট্রে ক্যান্সারের একটি নতুন ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের কথা।
তাকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে নতুন ওষুধের ট্রায়াল চলছিল। সেখানে ৪০ শতাংশ সম্ভাবনা ছিল রোগটিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার। কিন্তু ওষুধটি প্রয়োগ করার পরেও তার রোগ সারেনি। বরং ক্রমেই অবস্থা অবনতি হচ্ছিল।
ওষুধটি প্রয়োগে সে মোটেই ভালো বোধ করছিল না। কয়েক সপ্তাহ পরেই সে সম্পূর্ণ অসুস্থ হয়ে পড়ে। সে খুবই অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়ে এবং অত্যন্ত দুর্বল হয়ে যায়। এতে সে খাবার খেতেও অক্ষম হয়ে পড়ে। এছাড়া তার মেরুদণ্ডেও ব্যথা শুরু হয়।
সে মাসটি আমরা কোনোমতে পার হয়ে যাই। এর পরেও আমরা তার মৃত্যুর বিষয়টি কোনোক্রমেই অনুমান করতে পারিনি। দ্বিতীয়বার আমরা ইয়েলে যাই ট্রায়ালের জন্য। অ্যান্ডিউ দ্বিতীয় রাউন্ড ওষুধের জন্য রাজি হয়ে যায়। যদিও তার ছয় দিন পর সে মারা যায়।
তার জীবনের শেষ দিনটিতে ছোট ছোট টিউমারগুলো ছড়িয়ে পড়েছিল। আমার সামনেই তার দেহের বিভিন্ন অঙ্গের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। তার জীবনের শেষ ঘণ্টায় বড় পিণ্ড তার ধমনি দিয়ে চলাচল করতে থাকে। এগুলোর একটি তার ধমনীতে রক্তচলাচল বন্ধ করে দেয়। মারা যাওয়ার আগের মিনিটে আমার সামনেই তার শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় চিকিৎসকদের টিম ছুটে আসে। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ হয়ে গিয়েছে।
আমি তার দিকে তাকিয়ে থাকি। সে মুহূর্তটি যেন থেমে গিয়েছিল। আমি কল্পনাও করতে পারছিলাম না তাকে বাঁচানো না গেলে কি হতে পারে। আমি অনেকটা যেন বরফ হয়ে গিয়েছিলাম তার সামনে। আর এ সময় বহু মানুষ দৌড়াদৌড়ি করছিল। আমি সে কক্ষ থেকে বের হয়ে আসি।
আমি জানতাম, সে মারা গিয়েছে।
হঠাৎ করে এ মৃত্যুতে আমি যেন অথৈ পানিতে পড়েছিলাম। আমি একে জীবনের কোনো সংজ্ঞায় ফেলতে রাজি নই। এটি আমার কাছে ছিল অসম্ভব, অবিশ্বাস্য একটি বিষয়।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
মানবদেহে আদার অনেক উপকার
আমাদের দিনে কয়েকবার রঙিন খাবার খাওয়া উচিত, কিন্তু আপনি কিবিস্তারিত পড়ুন
হোটেল ঘরে বিছানার চাদর সাদা হয় কেন ?
বেড়াতে গিয়ে হোটেলের ঘরে ঢুকে প্রথম যে বিষয়টি নজরে আসে,বিস্তারিত পড়ুন
ধনিয়া পাতার উপকারি গুণ
চিকিৎসকদের মতে, ধনে বা ধনিয়া একটি ভেষজ উদ্ভিদ যার অনেকবিস্তারিত পড়ুন